বেইলি রোডের আগুনে সেইফ মার্কিং ও বইমেলার দুইতিনটি দিন ||  সুমন রহমান

বেইলি রোডের আগুনে সেইফ মার্কিং ও বইমেলার দুইতিনটি দিন ||  সুমন রহমান

মার্চ ০১, ২০২৪
বেশ! ফেসবুক বলেছে, আর কেউ কেউ বেইলি রোডের আগুন থেকে নিজেদের ‘সেইফ’ মার্ক করতে লেগে গেছেন! এটা বেরাজনৈতিক আচরণ। বেইলি রোডে যা ঘটেছে তা দুর্ঘটনা নয়, স্ট্রাকচারাল হত্যাকাণ্ড। আমরা কেউই এই আগুন থেকে দূরে নিরাপদে নাই।

এই আগুন যদি আপনাকে না পোড়ায়, যদি আপনি খুব বেশি ‘নিরাপদ’ বোধ করেন, তবে বুঝতে হবে আপনি আগেই মরে গেছেন!
.

ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০২৪
জীবিত বা মৃত কোনো অবস্থাতেই ওসব পুরষ্কার তেমন কোনো কাজে আসে না। তবু জীবিত অবস্থায় হয়ত আপনি আপনার রাজনীতি বা লাইফস্টাইল দিয়া এইগুলা ঠেকায়া রাখতে পারবেন। নীরব থাকতে কিংবা মশকরা করতে পারবেন। কিন্তু মরে যাওয়ার পর এসব গু গায়ে মাখায়া দিলে আপনি কী করবেন? এই মরণোত্তর ক্যাটাগরিটা ভীষণ রিস্কি। এই ক্যাটাগরির মাধ্যমেই আপনার অসাহিত্যিক কিন্তু আগেই-পদক-বাগানো প্রভাবশালী বন্ধুরা আপনার সাহিত্যের বিরূদ্ধে প্রতিশোধ নিবে।
.

ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪
৭০% বইই সোশ্যাল প্রেসারে বিক্রি হয়। এর মধ্যে ১০% বই পিয়ার-প্রেসারে পঠিত হয়। পড়ুন না পড়ুন, কিন্তু বই কিনুন, কারণ বই একটা মতাদর্শ! আপনার ঘরে সে আসবে গুনগুনিয়ে, তেমন কোনো গুরুতর কারণ ছাড়াই। তারপর আপনার আধখানা ঘর জুড়ে সে পচতে থাকবে। অন্যান্য গৃহস্থালি সামগ্রীর মতো তাকে সহজে রিসাইকল করাও যাবে না। না-পড়া বইয়ের আভায় আপনি এভাবেই ধীরে ধীরে একজন আলোকিত মানুষ হয়ে উঠবেন।
.

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪
বই প্রকাশ প্রথমত একটা উদযাপনের মামলাই। ২২ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫.৩০ ইউপিএল-এর প্রধান কার্যালয়ে ‘মাইগ্রেশন অব মেটাফরস’ বইয়ের প্রকাশনা উৎসব। ঢাকা যে-রকম চলাচলের অগম্য শহর, তাতে জোর দিয়ে নিমন্ত্রণ জানানোর ভরসা পাই না। ভরসা এটাই, এই বই প্রচুর লোকে পড়বে না। কিন্তু যারা পড়বেন, তাদের অনেকেই এই অনুষ্ঠানে বলতে এবং শুনতে আসতে চাইবেন।

মাহরুখ মহিউদ্দীন ইউপিএল-এর জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যটাকে মর্মে মর্মে অনুসরণ করেন। যার ফলাফল, একটা সামান্য বইয়ের এই বর্ণিল উদযাপন।

Migration of Metaphors নিয়ে আলোচনা ২২ ফেব্রুয়ারি ছয়টায় ফার্মগেট ইউপিএল কার্যালয়ে (এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির পাশে আরএইচ হোম সেন্টার-এর লেভেল ৩)। আলোচকবৃন্দ হলেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, গীতিআরা নাসরিন এবং মোহাম্মদ আজম।
.

ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪
দীপেশ চক্রবর্তী ভূমিকা লিখেছেন আমার বইয়ের — এই উত্তেজনা গোপন করার সুযোগ আমার নাই। এ যাবতকাল এটাই আমার পাওয়া সবচে বড় স্বীকৃতি। উনার বই পড়েছি, পৃথিবীর নানা দেশে তার বক্তৃতা শুনেছি। কখনো পরিচয় হয়নি, যেচেপরে আলাপ করতেও যাওয়া হয়নি মুখচোরা স্বভাবের কারণে। খুব ক্যাজুয়ালি তাকে পাণ্ডুলিপিটি পাঠিয়েছিলাম। এর জবাবে তিনি যে-ভূমিকাটি লিখে দিলেন, তাতে বই বের না করার আর উপায় থাকল না। যারা বইটা উল্টেপাল্টে দেখেছেন তারা নিশ্চয়ই ভূমিকাটি পড়ে থাকবেন।

গতকাল মেলায় ছিলাম কিছু সময়। এক পাঠক কথা বলতে এলেন। তিনি বইয়ের মেথোডোলোজি নিয়ে খুব চমৎকার একটা মন্তব্য করলেন। ভীষণ ভালো লাগল। যতটা ভেবেছিলাম, তারচে বেশিই পড়ছে লোকে এই বই। এর আগের দিন সুলেখক সুবক্তা বন্ধু মোহাম্মদ আজম বইটি নিয়ে খুব মনোজ্ঞ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন তার বক্তৃতায়। এই তো প্রাপ্তি! একজন ক্রিটিককে আর কী দেবে তোমরা!
.

মার্চ ০২, ২০২৪
বইমেলার আজকে শেষ দিন। তবে আমি আর যাচ্ছি না। এবারের মেলায় পড়বার মতো কিছু বই পেয়ে গেছি। এর মধ্যে আগ্রহ নিয়ে যেসব ফিকশন পড়ব তার মধ্যে আছে আসিফ নজরুলের ‘আমি আবুবকর’, আলভী আহমেদের ‘ঘোস্টরাইটার’, মাহবুব মোর্শেদের ‘বুনো ওল’ এবং লুনা রুশদীর ‘বইবাহিক’।

কিছু অনুবাদের বই জোগাড় হয়েছে : তুহিন খানের অনুবাদে আকরাম নদভির ‘আল মুহাদ্দিসাত’, তাসনীম আলমের অনুবাদে মাহমুদ দারবিশের বই ‘দুঃখকালের দিনলিপি’, জাভেদ হুসেনের অনুবাদে ‘আল্লামা ইকবালের নোটবই’, মশিউল আলমের অনুবাদে দস্তয়েভস্কির ‘তলকুঠরির কড়চা’, শিবলী নোমানের অনুবাদে নগুগির ‘মনোজগতের বিউপনিবেশিয়ায়ন’।

ননফিকশনের মধ্যে ইলোরা শেহাবউদ্দীনের ‘সিস্টারস ইন দ্য মিরর’, সাবিহা হকের ‘দ্য মুঘল আভিয়ারি’, আজফার হোসেনের ‘চিহ্ন ভাসে অবশেষে’, আ আল মামুনের ‘সিনেমার সাংস্কৃতিক রাজনীতি’, ইত্যাদি।

আরো কিছু বই নিশ্চয়ই চোখ এড়িয়ে গেছে। আপনাদের চোখে পড়লে জানিয়েন।

কবিতার বই কিনি নাই। কবিদের অনেকেই টিকটকারের মতো লাফালাফি করতেছেন, আপাতত এটাই আনন্দ নিয়া দেখতেছি।
.

মার্চ ০৩, ২০২৪
বইমেলা শেষ। বই প্রকাশের উত্তেজনাও থিতু হয়ে আসছে। অনেকের কাছেই ‘মাইগ্রেশন অব মেটাফরস’ পৌঁছেছে খেয়াল করেছি। আমার ফিকশনের যারা পাঠক, তারা কিছু কম ঘেঁষেছেন এই বইয়ের আশপাশে, মনে হয়। তবে আমার কাছে ফিকশন আর নন-ফিকশনের মধ্যে খুব পার্থক্য নাই। দুটোই আমি সমান আনন্দ নিয়ে লিখি। আমার ফিকশনেও প্রচুর থিওরি থাকে, অনেকে জানেন। তেমনি, এই বইয়েও প্রচুর ফিকশনাল মোমেন্ট আছে, কারণ ফ্যাক্ট অলওয়েজ স্ট্র্যাঞ্জার দ্যান ফিকশন। সেই মোমেন্টগুলোই এই বইয়ের প্রাণ। থিওরি উপলক্ষ মাত্র। যারা পড়তে শুরু করেছেন, তারা জানিয়েছেন যে এই বইয়ের ইংরেজি বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। এটাও আমার জন্য আনন্দের বিষয়।

দেশ ও বিদেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতোমধ্যেই আমাকে ‘মাইগ্রেশন অব মেটাফরস’ নিয়ে বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুমান করি, আগামী দুই-তিনমাস এগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকব। এর মধ্যে হয়ত অনেকেই বইটা পড়ে ফেলবেন। তাঁদের পঠন-প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করে থাকব।

এ-বছরের মাঝামাঝি এই বইয়ের দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু করব।


সুমন রহমান রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you