♣
অধিকাংশ সময় পৃথিবীজুড়ে রাজনীতির এমন এক স্বভাব পরিলক্ষিত হয় যে, কী একনায়কতান্ত্রিক, কী সমাজতান্ত্রিক আর কী গণতান্ত্রিক সকল তান্ত্রিকই যেন হত্যা ও হিংসার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচর্চার প্রতিযোগিতায় নামতে বাধ্য। পারমাণবিক অস্ত্র বলেন আর যে-কোনও অস্ত্র বলেন, কোনও সমাধান দেবে না জেনেও মারণাস্ত্র উৎপাদন বা ক্রয়ে কেউ পিছিয়ে নেই।
♣
সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপর নাই — এ-কথাপুষ্পটি দিয়ে সংবিধানসূচনা হলে বাঙালিত্বের বিশ্বজনীন সৌন্দর্যের অন্তর্গত স্বরূপটিই প্রকাশ পায়।
♣
তোমরা যেমন ধর্ম শব্দটির উচ্ছেদ চাও আমি তেমনই ঘৃণা করি রাজনীতি শব্দটিকে। রাজনীতির পেট থেকে যেমন ধর্মের জন্ম তেমনই জন্ম নিয়েছে পারমাণবিক বোমার মতো অজস্র আত্মঘাতী উপকরণ। রাজনীতি ও রাষ্ট্রধারণা অখণ্ড মানবতার শত্রু।
♣
বিদ্যালয়গুলোতে ধর্মশিক্ষা বিষয়টি ঐচ্ছিক করুন। কেউ যদি চায় পড়বে নাহয় পড়বে না।
♣
অনেকে দেখি যে মীরজাফর গালি দিয়া জাত বাঙালি হয়ে ওঠে! মন জানতে চায় সিরাজ অথবা মীরজাফর কে কবে বাঙালি ছিল?
♣
কল্পনাশ্রিত ইতিহাস থেকে বেরিয়ে এসে মুক্ত হও মানুষ।
♣
এই দেশে এখন মানুষ সম্প্রদায়টি হচ্ছে মূলত সংখ্যালঘু। তাই হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান, আউল-বাউল পির-ফকির, উপজাতি-আদিবাসী-বাঙালি সবাই অভিশপ্ত (মালাউন)।
♣
কোথাও পালিয়ে যাওয়ার নেই। সবখানে ছড়িয়ে আছে আততায়ী, ছুরিতে বন্ধুর মতো চোখের মায়া। আমরা সেই মায়াদানবের হাঁটুর নিচে আছি।
♣
যুক্তি-তর্কের পাতানো আসর থেকে বেরিয়ে আসা টাকাগুলোর কিন্তু কোনও দোষ নাই! আপনাদের টেলিভিশনচ্যানেলগুলোর ধর্মকথা বা সিরিয়াল আপনাদের সম্প্রচারের জুয়াড়ি অসৎ মনোভাবটিই শুধু মূর্ত করে তোলে যা একমাত্র বলদদের চোখে ধরা পড়ে না!
♣
ধর্ম যখন বোঝা, ধার্মিক তখন গাধা। গাধা বোঝা বহন করছে নিশ্চিন্ত মনে।
♣
কেউ ধর্মের নামে মানুষ খুন করে আর কেউ জলে পতিত পিঁপড়েকে ডাঙায় তুলে দেয়। বোধহীনের ধর্মকর্ম যে-দেশে প্রবল সে-দেশ অবশ্যই স্বৈরাচারের কবলে আক্রান্ত।
♣
ধর্মকে সংস্কৃতি করে রাজনীতি করে ধান্দাবাজরা। সংস্কৃতিকে ধর্ম করে রাজনীতি করে প্রকৃত মানুষ। গণতন্ত্র বা সমাজতন্ত্র সকল তন্ত্রেই ক্ষমতালিপ্সু ধান্দাবাজের অভাব নাই।
♣
সকল তন্ত্র নিপাত যাক। পৃথিবী তান্ত্রিকে ভরে গেছে, কোথাও মানুষের দম ফেলার জায়গা নাই।
♣
মানুষের কোনও দেশ নাই! একনায়কেরা ভাগ করে নিয়েছে গোটা বিশ্ব!
♣
ধর্ম বোঝে তারা, তারা রাজনীতি বোঝে, মাগার মানুষ বোঝে না। মানুষ অভিধাটি আজও বিশ্বজনীন হয়ে উঠতে পারেনি, মহাজাগতিক হয়ে ওঠার পথ পাওয়া যাবে কি এত সহজে? দেশেদেশে জাতিতে জাতিতে নানান কায়দায় মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে আরেক শ্রেণির মানুষের হাতে। মানুষ ছাড়া মানুষের আজ আর কোনও প্রতিপক্ষ নেই।
♣
পৃথিবীর সংকট একটাই। কোনও নায়ক নেই। খলনায়কেরাই নায়কের ভূমিকায় নামে খণ্ডকালীন।
♣
বলো হে মানুষ! কতটা লম্পট মিলে পৃথিবীকে করছে ধর্ষণ? হত্যাটি সমাপ্ত করতে আর লাগে কয়জন?
♣
যাদের ঈশ্বর আকাশে, যাদের নির্বাণ আকাশে, আর যাদের বিপ্লব টেবিলে এই তিনপ্রজাতির প্রাণী থেকে যেন নিরাপদে থাকতে পারি। আমিন।
♣
অহিংস ঈশ্বরের কল্পনা তেমন টিকেনি। হিংসাশূন্য ঈশ্বর যেন শুঁটকিবিহীন বিড়াল!
♣
ঈশ্বরের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নেই বলেই ঈশ্বরের চাপাতি আপনাদের বগলে?
♣
সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, সমস্যা নেই। ধর্মেন্দ্রিয় সচল আছে তো? ধর্মানুভূতি ঠিক থাকলেই হলো! কিন্তু, সমস্যা হলো, ধর্মেন্দ্রিয় নামক মালটা আমার এখানে অচল। অতএব, কী করা যায়, মাননীয়গণ?
♣
ধর্মানুভূতির পাহারাদার হওয়া পুরোটাই রাজনৈতিক, কখনোই মানবিক নয়।
♣
যেখানে সত্যের অভাব প্রকট সেখানেই বিশ্বাসের রাজত্ব।
♣
জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মহানায়ক গৌতম বুদ্ধকে অবতার বানানো থেকেই বোঝা যায় হিন্দুত্ব কত চাতুর্যপূর্ণ বিষয়। হিন্দুঘরে হিন্দুমন্দিরে আমি কখনওই বুদ্ধপূজা দেখিনি। হিসেবে তো কলির অবতার বুদ্ধ (কল্কি তো আসে নাই)!
♣
পৃথিবীতে শান্তির স্বপক্ষে যারা কথা বলছে তারাও যদি ধান্দাবাজ না হয়, তবে কি তাদের মানায়?!
♣
অস্ত্র-ব্যবসা, মানুষ-ব্যবসা, মাংস-ব্যবসা, মাদক-ব্যবসা আর বিষ-ব্যবসা এই পঞ্চ-ব্যবসাই পৃথিবীর মূল সমস্যা নয় কি? পারমাণবিক অস্ত্র কেন, বারুদের উদ্ভবের পূর্বেই আড়াই হাজার বছর আগে এগুলো চিহ্নিত হয়েছে। এই পঞ্চ-বাণিজ্য বর্জন করে সম্যক জীবিকার কথা বলে গেছেন বুদ্ধ।
♣
নিরীশ্বরবাদও অধিকাংশের কাছে এক ধরনের বিশ্বাস, যা শুধুই ধর্ম-বিরোধিতা ঈশ্বর-বিরোধিতায় মত্ত রাখে — এবং এগুলোকেই তারা মুক্তির শেষ সীমানা হিশেবে চিহ্নিত করে।
♣
যেখানে আস্তিকও কট্টর, নাস্তিকও কট্টর, সেখানে মানুষই দুর্লভ মনে হয়!
♣
নাস্তিকতা মানবধর্মের পাঠশালা হতে পারে; বিশ্ববিদ্যালয় বানিয়ে দেয়া হাস্যকর।
কথাফুল অথবা ফুটন্ত ম্যাক্সিম পর্বগুলো
জয়দেব কর রচনারাশি
গানপার সদুক্তিনিচয়
- কথাফুল অথবা ফুটন্ত ম্যাক্সিম ২ || জয়দেব কর - June 7, 2025
- কথাফুল অথবা ফুটন্ত ম্যাক্সিম ১ || জয়দেব কর - May 30, 2025
- ছুরির ডগায় মধু / শিন ইউন :: ভাষান্তর / জয়দেব কর - May 16, 2025
COMMENTS