মিলান কুন্ডেরা থেকে বাংলায় || আল ইমরান সিদ্দিকী

মিলান কুন্ডেরা থেকে বাংলায় || আল ইমরান সিদ্দিকী

দ্য কনশাসনেস অব কন্টিন্যুয়িটি
তারা মাঝেমধ্যে আমার বাবাকে নিয়ে একটি গল্প বলত; তিনি সংগীতজ্ঞ ছিলেন। তিনি তার বন্ধুদের নিয়ে কোনো-একজায়গায় গেলে, হঠাৎ রেডিও বা ফোনোগ্রাফে তারা একটি সিম্ফনির বিস্তার শুনতে পেলেন। সেই বন্ধুরা, প্রত্যেকেই সংগীতশিল্পী বা সংগীতপিপাসু ছিলেন, সহজেই ধরে ফেললেন এটি বেটোফেনের নবম সিম্ফনি।
তারা বাবাকে বললেন, — ‘বলো তো, এটি কোন বাজনা?’’
বেশ ভেবেচিন্তে তিনি বলেন — ‘বেটোফেনের মতোই’।
তারা হেসে খুন, বাবা নবম সিম্ফনি ধরতে পারেনি!
‘তুমি নিশ্চিত?’
‘হ্যাঁ’ — বাবা বললেন, — ‘প্রবীণ বেটোফেন’।
‘প্রবীণ মনে হলো কেন?’
তিনি একটি হারমোনিক শিফট্ চিহ্নিত করেন, যা নিয়ে তরুণ বেটোফেন কখনোই কাজ করেননি।

হতে পারে এই ঘটনা, এটি একটি ফালতু আবিষ্কার কিন্তু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী একজন ব্যক্তির সচেতন ধারাবাহিকতার কথা বলে, যিনি একটি সভ্যতার অংশ, যা আমাদের আছে বা ছিল। আমরা সবকিছুর মূল্যায়ন একটি ইতিহাসের প্রেক্ষিতে করি, মনে হয় আচরণ বা কাজের অল্প অথবা খুব যৌক্তিক প্রবাহ। আমি তরুণ বয়স থেকেই আমার প্রিয় লেখকদের কাজের পর্যায়ক্রম ভালোমতো জানতাম। আপোলিনেয়ার ক্যালিগ্রামের পরে এলকোল লিখেছেন এটা ভাবাই যায় না, কারণ, ঘটনা যদি সত্যিই তেমন হতো, তাহলে তিনি অন্যরকম কবি হতেন, তার কাজের অন্যরকম মানে দাঁড়াত।

পিকাসোর প্রত্যেকটি কাজ আমার আলাদা-আলাদাভাবেই ভালো লাগে। আমি তার সামগ্রিক কাজেরও ভক্ত, এক দীর্ঘ সফর, যার প্রত্যেকটি পর্যায় আমি হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করি। শিল্পে, ধ্রুপদী অধিবিদ্যক জিজ্ঞাসা — ‘আমরা কোথা থেকে এলাম? কোথায়-বা যাচ্ছি?’ — এর একটি পরিষ্কার, সংগঠিত উত্তর আছে, মোটেও উত্তরবিহীন নয়।

ভ্যালু অ্যান্ড হিস্ট্রি
ধরা যাক, এই সময়ের একজন কম্পোজার একটি সোনাটা লিখল এবং সোনাটার ফর্ম, হারমোনি ও মেলোডি হুবহু বেটোফেনের মতোই। আরও ধরা যাক, এটিতে এমনি মুনশিয়ানা আছে, যদি এটি বেটোফেনের কাজ হতো, তাহলে এটিকে তার সেরা কাজগুলোর একটি ধরা হতো এবং তা কোন মানের হয়েছে সেটি কোনো ব্যাপার নয়, আমাদের সমসাময়িক একজন কম্পোজারের হবার কারণে এটি হাসির খোরাক হবে। এর স্রষ্টা বড়জোর একজন মেধাবী অনুকারক হিসাবে হাততালি পেতে পারে। আশ্চর্য! আমরা বেটোফেনের একটি সোনাটা থেকে যে নান্দনিক প্রশান্তি পাই, ঠিক একই ধাঁচের, সমান শক্তিশালী অন্য একটি থেকে পাই না, যদি এটি আমাদের সমসাময়িকদের কারো কাছ থেকে আসে? এ কী বিশাল ভণ্ডামি হয়ে গেল না? সুতরাং, সৌন্দর্যের অনুভূতি স্বতঃস্ফূর্ত নয় বরং আমাদের ইন্দ্রিয় দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কিন্তু মেধার পরিবর্তে রচনাকাল জানার শর্তসাপেক্ষে। এর বাইরে কোনো রাস্তা নেই : ইতিহাসসংক্রান্ত সচেতনতা আমাদের শিল্পসম্বন্ধীয় ধারণায় এমনভাবে মিশে গেছে, ফলে, এই অ্যানার্কিজম (আজকে রচিত সোনাটা) স্বতঃস্ফূর্ত হলেও (ন্যুনতম ভণ্ডামি ব্যতিরেকে) এটি বিদ্রুপাত্মক, ভূয়া, বেখাপ্পা এমনকি সাংঘাতিক হয়ে ধরা দিতে পারে। ধারাবাহিকতার ব্যাপারে আমাদের অনুভূতি এতই শক্তিশালী, তা যে-কোনো শিল্পকর্ম সম্পর্কে আমাদের ধারণায় নাক গলায়।

নভেম্বর ২০১৩


‘মিলান কুন্ডেরা থেকে’ শিরোনামে বাংলায় ভাষান্তরিত রচনাটা ‘লাল জীপের ডায়েরী’ লিটারেরি সাইটে ছাপা হয়েছিল ২০১৩ নভেম্বরে। অনুবাদকের অনুমতি নিয়া গানপারে এইটা আর্কাইভড হলো। কুন্ডেরা ছাড়াও দুনিয়াবরেণ্য অন্যান্য সমালোচক-সাহিত্যিকদের রচনাবলি থেকে সংগীতসংক্রান্ত অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ কথাবার্তা ভাষান্তরের মাধ্যমে আমরা গানপারে নিয়মিত প্রকাশ করতে আগ্রহী। অনুবাদক আল ইমরান সিদ্দিকীর বাংলায় মিলান কুন্ডেরার শিল্প ও সংগীত বিষয়ক ভাবনার একঝলক ছবি এইখানে দেখতে পাওয়া যায়। — গানপার

… …

পরের পোষ্ট
আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you