আল মাহমুদের কবর || আনম্য ফারহান

আল মাহমুদের কবর || আনম্য ফারহান

কবি আল মাহমুদের কবর যে রক্ষা করা যাবে না, তা হইল আমাদের এইখানকার মায় সারা পৃথিবীরই ক্ষমতার নিয়ম। বাদবাকি তাঁর মৃত্যু এবং অব্যবহিত পরের কনসিকোয়েন্স তো সবাই জানেনই।

মহান রাশা তার বহু কবিকেই নিশ্চিহ্ন করছিল। সেইটা ব্রুটাল কায়দায়। এখনকার কবিদেরকে গুলি কইরা মারা হয় না, বা জেল দিয়া নির্বাসন দিয়া পচায়ে মারা হয় না, কীভাবে মারা হয় তা আপনারা দেশবাসী জানেন বইলাই আমি বিশ্বাস করি।

রাশার নিশ্চিহ্ন কইরা দেয়ার কথাটা থেকে পরসমাচার — এইজন্য ইসলাম কবরভিত্তিক যেকোনো চর্চাকে ফিলসফিক্যলি ডিল করছে। যদিও ক্রিশ্চিয়ানিটি থেকে আগত কবরের সৌরভ এবং অন্য দুনিয়ার নিকটতম হাতছানির বাস্তব উদাহরণ হিসাবে কবরের গুরুত্ব আরেকরকম। এবং মানুষ নিতান্তই মানুষ বইলাই তার চিন্তার সীমানা বোঝার বাস্তবতা হিসাবেও কবর জিনিসটা অন্যরকম। আর বিশদ এইখানে বলব না।

তো, ইসলাম কবরপূজা যেই জায়গা থেকে নিষেধ করছে, সেইটা লজিক্যল। নাইলে হযরত মুহম্মদ (স.)-কেন্দ্রিক ইসলামের প্রসার ও ভরকেন্দ্র বজায় রাখার পলিটিক্যল অবস্থা জারি রাখা এবং সুদূরপ্রসারী ফলাফল লাভ করার পথ সংহত করা আ-পলিটিক্যল হইত। আ-পলিটিক্যল মানেই ‘কিছু না’। ইসলাম তো আর ‘কিছু না’-এর রাজনীতির লাইনের ধর্ম না। ইসলাম সবসময়ই রাজনৈতিক।

আমার পয়েন্ট হইল, কালচারাল পলিটিক্সে কবর রক্ষা করার প্রয়োজন আছে। ধুলায় তো মিশে সবই। কাব্য, শিল্পও তো সেই মহাকালের পালেই থাকে। তো ওই টোটাল জিনিসটার মধ্যে কোনগুলাকে আপহোল্ড করা হবে তা সমাজের ঠিক কইরা নিয়া করতে হবে। তা ওই সমাজটার জন্যই দরকারি।

অনেকে হয়ত বলবেন, কবিতার শক্তি দিয়াই উনি অমর। কবরে আর কি যায় আসে। একই কবরে কয়জনকে দাফন করা হইল, তাতে আর কি যায় আসে। আসে যে যায়, সেইটা বোঝানোর জন্যই এইগুলা বললাম।

পারিবারিক কবরগুলাই তো আমাদের দেশে খুব সযত্নে লালিত হয়। স্মরিত হয়। আদৃত হয়। মিনিমাম তিন জেনারেশনের পরে পরে কবরস্থানের সংকুলানের জন্য কবর রিপিট হয়। আর যারা রক্ষা করতে চান, কবরস্থানের পরিধি বাড়ায়া সেইটা তো করেনই। আল মাহমুদ তো জাস্ট মারা গেলেন। আল মাহমুদের পরিবার এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই সমাজ কি পারলই না এটুকু কাজ করতে? আমি কনফিউজডই আসলে। কারণ, আমাদের এইখানকার সামাজিক শক্তি সম্পর্কে যেহেতু আমরা ওয়াকিবহাল এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের দৌড় সম্পর্কেও সম্যক, তাই এইটা মাইনা নেয়া কঠিন।

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪

আল মাহমুদের কবর ও কবির স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ির চিহ্নটুকুও সংরক্ষণাভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। এই অনাকাঙ্ক্ষিত খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের অনেকেরই  গোচরে এসেছে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কবির মৃত্যুবার্ষিকীর সুবাদে। কবি ও ক্রিটিক আনম্য ফারহান উপরে-পঠিত রচনাটি লিখেছেন কবি আবদুল হাই শিকদারের সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি নিবন্ধ পড়ে মর্মস্পৃষ্ট হয়ে। সেই নিবন্ধটাও সোর্সটেক্সট হিশেবে এই রচনার সঙ্গে সংরক্ষণ করে রাখতে হচ্ছে প্রাসঙ্গিক কারণে। ‘হারিয়ে গেছে আল মাহমুদের কবর’ শীর্ষক লেখাটা আবদুল হাই শিকদার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আল মাহমুদের কবর জিয়ারত করে ফেরার পরে ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ নিজের টাইমলাইনে শেয়ার করেন। নিচে সেঁটে রেখে দেয়া গেল রচনাটা। — গানপার

হারিয়ে গেছে আল মাহমুদের কবর || আবদুল হাই শিকদার
আমাদের সম্মিলিত অবহেলা, উদাসীনতা, অনাদর এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে মৃত্যুর মাত্র ৫ বছরের মধ্যে হারিয়ে গেছে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের কবর। এখন কবর বলতে আছে শুধু একটি নাম ফলক।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে মৌরাইল গোরস্তানে সমাহিত কবির কবর জিয়ারত করতে গিয়ে বিস্ময়ে হতবাক হই আমরা। আল মাহমুদের কবরের উপর দাফন করা হয়েছে আরও কয়েকজনকে। কবরের উপর একাধিক কবর। ডাইনে বাঁয়ে কবর।

কবি আল মাহমুদ একাডেমির প্রধান, অধ্যাপক, সংগঠক, কবি মহিবুর রহিম আমাকে ও কবি গবেষক ড. ফজলুল হক তুহিনকে নিয়ে গিয়েছিলেন গোরস্তানে। আল মাহমুদের ৫ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে, তার আমন্ত্রণেই আমাদের দুজনের ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়া।

একটি নামফলক এবং গায়ে গায়ে লাগানো দুটি কবরের মাঝখানে অতি সংকীর্ণ অংশটুকু দেখিয়ে, প্রায় ব্যথিত কণ্ঠে মহিবুর রহিম বললেন, এখানেই আল মাহমুদের কবর। অবশ্য কবর বলতে এখন এই নামফলকটিই সম্বল।

তুহিন আর আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি।

আহা … এ রকম নিষ্ঠুরতা কী আল মাহমুদের প্রাপ্য ছিল! ইচ্ছে করছিল বাতাস আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকার করি, ইতর, অসভ্য, আত্মঘাতী, অবিমৃশ্যকারী, শুয়োরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা, হারামির বাচ্চা, চোদানির পুত, মাদারচোদ … বলে বলে।

কিন্তু বলা হলো না । কাকে বলবো? কোথাও তো কেউ নেই!

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৪


আনম্য ফারহান রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you