মহাভারতে যেমন দেখা যেত, লড়াই চলছে ময়দানে পাণ্ডব আর কৌরবদের মাঝে, কিন্তু লড়াইয়ের ভাগ্য নির্ধারিত হচ্ছে অন্তরীক্ষে, দেবতাদের সভায়। ডাক্তার আর পুলিশের বাদানুবাদ দেখে ওটাই মনে পড়ল। উভয়পক্ষেই অন্তরীক্ষে আছেন তাদের পিতাগণ। এবং তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। উভয়পক্ষেরই নিজ নিজ অবস্থানের পক্ষে যুক্তি ছিল, সেটা হারিয়ে গেল নিজ নিজ পেশার আর পিতার গৌরবে।
অন্তরীক্ষের দেবতাদের শক্তির রকমফের হিসাব করে ময়দানের যুদ্ধের ফয়সালা হতো। অর্থাৎ যে দেবতার ক্ষমতা যত বেশি, তার পছন্দের দলের জয়ী হবার সম্ভাবনা তত বেশি। গতকালকের (১৮ এপ্রিল ২০২১) কুরুক্ষেত্রে সেটি ঘটতে পারল না। কারণ এনাদের অন্তরীক্ষে দেবতাবর্গ একটাই : মুক্তিযোদ্ধা। তবে ডাক্তার যিনি ছিলেন, তিনি সম্ভবত ‘বীরবিক্রম’-এর কন্যা হিসেবে যুদ্ধের ময়দানে সামান্য এগিয়ে থাকলেন।
আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। চাচারা ছিলেন। তিনি পরিবার রক্ষার দায়িত্ব নেয়ায় আমার পক্ষে এই এলিট বর্গে প্রবেশ করা এ-জীবনে আর হইল না। তবে, চাচা-মামা-খালুরা যে ছিলেন, তাতেই যথেষ্ট উত্তাপ শরীরে আসে। বাবা থাকলে যে কী হতো!
আপনারা যারা এই মহান লিগ্যাসি বহন করছেন, তারা দয়া করে আর বাদানুবাদ করবেন না। একসাথে মিলেমিশে এই হেজিমনি বহাল রাখুন। আরো আরো চেপে ধরুন আমাদের। জবান বন্ধ করে দিন একেবারে। এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের বিরূদ্ধে অন্য মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কখনোই জিতে না। থিওরেটিক্যালি।
কাহলিল জিবরানের একটা কবিতা আছে এ-রকম :
তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের নয়
তারা জীবনের সন্তান-সন্ততি
এখানে ‘সন্তান’-এর জায়গায় ‘পিতা’ বসিয়ে দেখুন। ভালো লাগবে। আপনাদের পিতাদের আর আপনাদের পিতা হিসেবে বন্দী করে রাখবেন না। ছেড়ে দিন দেশ, ইতিহাস আর ভবিষ্যতের দরবারে। যাতে আমরা সবাই তাদের ত্যাগের লিগ্যাসি বহন করতে পারি। আর সেই অবসরে আপনারাও ‘সন্তান’-এর পরিচয় থেকে মুক্ত হয়ে ব্যক্তিমানুষের পরিচয়খানি অর্জন করতে পারবেন।
১৯ এপ্রিল ২০২১
- হালুমহুলুমভালুমবাসা, ব্রাত্য রাইসু! || সুমন রহমান - November 23, 2024
- শেখশাহি, সাংবাদিকতা ও স্বাধীন বাংলা || সুমন রহমান - August 23, 2024
- দেশান্তরী গরিবের কম্যুনিটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট || সুমন রহমান - July 11, 2024
COMMENTS