“চমস্কি যেহেতু অ্যাক্টিভিস্ট এবং সনাতন মার্ক্সিস্ট থিওরি মানেন; মনে করেন, দার্শনিকরা বহুত চিন্তা করছে, এখন আমাদের কিছু না কিছু করা দরকার! আর জিজেক মার্ক্সের মকারি কইরা কন যে, বহুত কিছু করা হইছে, এবার একটু চিন্তা করেন!”
কোটেশনমার্কের আওতায় এই বাক্যাংশগুলো বলেন ইমরুল হাসান;— কবি, চিন্তক, গল্পলেখক, ক্রিটিক ও অনুবাদক; সর্বভূক ম্যুভি-ইটার, সর্বাগ্রাসী ব্যাখ্যাকার। নিজের প্রাত্যহ দেখাশোনাজানাবোঝা তিনি ইন্টার্প্রেট করতে পারেন অনন্য একটা কায়দায়। ইউনিক সেই কায়দাটায় চিন্তার প্রচুর জাম্পকাট থাকে, উল্লম্ফন থাকে যতটা-না বাক্যের তারচেয়ে বেশি ভাবনার, ফলে স্পেইস পাওয়া যায় পাঠকের তরফের উদ্ভাবনার। এবং এসবের ফলে একপ্রকার অবস্কিউরিটি, কাইন্ড-অফ অ্যাম্বিগ্যুয়িটি, হয়তো তৈয়ার হয় লেখায়, পাঠের সময় ভোগ করা যায় এর সুবিধা ও অসুবিধা দুই-ই, বিশেষত গদ্যশরীরে; অ্যাজ অ্যা রেজাল্ট, ইমরুল হাসানের গদ্যে পাঠকের কোয়ালিটি-পার্টিসিপ্যাশনের সম্ভাবনা অনেকগুণে বেড়ে যায় বলেই ধারণা করি।
রিসেন্ট অনেকেই লিখতে লেগে, দেখতে পাই, এমনধারা কায়দাকানুন এস্তেমাল করেন লেখায় যেন তারা সাবভার্সিভ লেখার নিশানবর্দার। কিন্তু গোলমালটা হলো, মোস্টলি সেইসব লেখা না-হয় সাবভার্সিভ, না ডিস্কার্সিভ। একটা এন্টার্টেইনিং ইম্প্রেশন নিয়ে সেসব লেখা পড়ে বেরিয়ে আসে পাঠক, এরচেয়ে বেশি কিছু না। বারোমাসী-বিনোদিনী পিরিতির লাগিয়া আদৌ টপফেব্রিট হবার কথা না, তা ডন জুয়ান হইলে এন্টার্টেইনমেন্ট মুখ্য হতেও পারে কারো কাছে। অ্যানিওয়ে, ঠিক বলতে পারছি না আমি এরচেয়ে বেশি। কিন্তু একটা জিনিশ আমি ক্লিয়ার, যে, লেখায় এনকাউন্টার/এক্সপেরিয়েন্স করা সাবভার্ট ব্যাপারগুলি কিংবা সাবভার্সিভনেস বাক্যস্থ নয় বরঞ্চ থাকে বা থাকতে হয় ভাবনায়, লেখকের ভাবনায়, তাহলেই লেখা সাবভার্সিভ হয়। ভাবনাজাগতিক খুনাখুনি-রক্তারক্তি ইত্যাদি মায়াবী নৃশংসতা নাশকতা ভাবনায় না-ঘটিয়ে বাক্যে নিয়ে এলে একটা ফার্স ক্রিয়েট হয় কেবল।
সাবভার্সিভ অ্যাক্ট সিন্ট্যাক্সে নয়, থাকতে হয় চিন্তায়। এইটার স্কার্সিটি দেখি ইদানীংকার লেখাজোখায়, এই চিন্তার স্ট্যাটাস-ক্যু ভাঙার স্কার্সিটি। কিন্তু প্রিটেন্ড করেন অনেকেই যে, মেট্রোসিটির অলিতে গলিতে বসে তারা খালি চিন্তাক্রমের বেড়া ভাঙছেন ইয়া-আলি চিৎকারে, মেটিক্যুলাস তাদের চিন্তারাশি, এতই মেটিক্যুলাস যে শ্বাস টানা দায়, দিবারাতি চিন্তাদেয়ালে গাঁইতি-শাবল চালায়া যাইছেন। উপরে-উপরে মনে হবে তা-ই, কিন্তু তলিয়ে দেখলে কেবল ভঙ্গি ও ভান, কেবল এন্টার্টেইনিং এফোর্ট ও ইনিশিয়েটিভ। তো কী! বিনোদন তো খারাপ না নিশ্চয়ই! নো, খারাপ না ভালো — কথা সেইটা না, কথা হচ্ছে একটা পার্টিক্যুলার দাবি ও প্রবণতা নিয়া। যা-হোক, কয়েকজনের লেখায় দেখতে পাই ভঙ্গি ও ভাবের সঙ্গতিবিধান। পরে এই নিয়া আরও সবিস্তার ভাবা যাবে।
ইমরুল হাসান গদ্য লেখেন, কবিতাতেও এই গদ্যের সুশীলিত ছায়াপাত ঘটে তার হাতে, ঝড়ো হাওয়া আর পোড়ো বাড়িটার মধ্যকার সঙ্গতি সাধনের একটা চেষ্টা থাকে তার গদ্যে। এইরকম মনে হয়েছে আমার। আর আমার ওপর আস্থা রাখার যৌক্তিক কোনো কারণ আপনি খুঁজে পাবেন কি পাবেন না তা আপনার মামলা, আমার দয়াময়ীও আমারে ট্রাস্টোয়ার্দি মনে করেন না, এই আফসোসধ্বনি আমি কোথা রাখি জায়গা নাহি পাই। কিন্তু এই নিবন্ধ মূলত একটা কমেন্ট, মৎকৃত, সোশ্যাল মিডিয়ায় কৃত মন্তব্যটি প্রিজার্ভ করে রাখার অভিপ্রায়ে ব্যবস্থিত। ঘটনা এ-ই যে, দুইহাজারতেরো সূচক ভয়াল বাংলাদেশি ইয়ারে অক্টোবর মাহিনার পয়লাপাদে ইমরুল হাসান একটা আর্টিকল লেখেন চমস্কি ও জিজেক প্রমুখের একটি নির্দিষ্ট দ্বৈরথ উপজীব্য করে। এই বিবাদের হদিস আমি বিলকুল জানতাম না তৎপূর্বে, যেমন এই বিপুলা ধরণীর দুইতিনটা ছাড়া বেশিরভাগ কারবারই আমার অজ্ঞাত, ইমরুল হাসানের গদ্যসুবাদে এই বিবাদ সম্পর্কে যথেষ্ট শাঁসে-মূলে জানা হলো।
অডিয়োভিশ্যুয়াল ইন্টার্ভিয়্যুভিত্তিক এই গদ্য, সঙ্গে বেশকিছু ওয়েবক্ষেত্র ঘেঁটে-খেটে লেখাটা বানানো, পড়তে ডেলাইটিং লেগেছে। লেখাটার নাম : ‘চমস্কির না-পারা এবং জিজেকের ব্যাখ্যা’। হাসানেরই সঞ্চালনায় ‘বাছবিচার’ (bacbichar.net) পত্রিকায় এইটা অ্যাভেইল করা যাবে। লেখকের নামের ট্যাগে, চমস্কি কিংবা জিজেকের ট্যাগে, এইটা সাইটে যেয়ে সার্চ করলেই সামনে আসবে। লেখাটার নাম (চমস্কির না-পারা এবং জিজেকের ব্যাখ্যা) দিয়া গ্যুগল করলেও পাওয়া যায়। এইটা পাঠোত্তর একটা কমেন্ট করেছিলাম;— জিজেক পড়তে বেগ এসেছিল তখন বেশ কয়দিন, সম্প্রতি স্তিমিত ফের স্বভাবদোষে;— সেই কমেন্টখানা ব্যক্তিগত একটা কাজে একসময় লাগবেই লাগবে এমন একটা আলামত পোক্ত হবার পর খুঁজেপেতে একটা মাইক্রোসফট-ওয়ার্ড ফাইলে এনে পেইস্ট করে রেখেছিলাম। মোস্ট ইম্পোর্ট্যান্ট যেইটা, হাসানের লেখার সেই লিঙ্কটা রাখা গেল সঙ্গে; অ্যানিওয়ে, মন্তব্যটুকু অবিকল টুকছি না আর।
—জাহেদ আহমদ ২০১৩
- বাগেশ্বরী শিল্পপঙক্তিমালা - February 4, 2025
- শীতসকালের স্মারক বক্তৃতা : ব্যান্ডেজ ও বৈদ্য - January 31, 2025
- মাধবী, বিপ্লব ও অন্যান্য মদন প্রসঙ্গ - January 24, 2025
COMMENTS