তুমি বাংলাদেশ
মাথার ওপর ভেঙে পড়ে আকাশ—
বন্ধ হয়ে আসে নিশ্বাস, তবু তোমার কোলে থাকি—
আমরা ছেড়ে দিই না হাল…
বর্ণিল আনন্দ ও দুঃখবোধের ছিন্নস্রোতে
আমরা বয়ে নিই আমাদের প্রণয়ের কঙ্কাল।
শত দুঃখের বৃষ্টিজলে
তোমার মৃত্তিকা-জলে থাকি—
পুড়ি মনোদাহে, তোমারই ভূমি-জলে।
তোমার হাওয়ায় তোমার আকাশে
ঘোরে কত-যে ফসল-বিনাশী পঙ্গপাল—
আমরা ছেড়ে দিই না হাল
আমরা যদি পতঙ্গ থেকেও ছোটো হই
তোমার কোলে নই অস্তিত্বহীন…
শত রক্তক্ষরণেও ছুঁয়ে দেখি তোমাকে
ছুঁয়ে দেখি তোমার ফুল, ফল
ছুঁয়ে দেখি তোমাকে আর বুঝতে চাই
কেমনতর শোভান্তরি হল তোমার ভূমি-জল
আর কুঞ্জকানন…
রামধনুর কত রং— আমরা জানি—
জানি সত্য আমাদের ভালো লাগা ও মনোদাহ—
আমাদের মনে-মনে জ্বলে কত বিরহমধুর কলহ
আমাদের হৃদিগ্রহ নয় প্রণয়বহির্ভূত কিছু
কিংবা নয় শুধু প্রণয়ের অধীন, কিন্তু
আমরা ধরতে পারি তোমারই বিচিত্র হাত
তোমার সঙ্গে হাঁটতে পারি ব্যাকুল তৃষ্ণায়
উজ্জ্বল রৌদ্রে কিংবা আকাশ-কালো মেঘে
হাঁটতে পারি শতঝঞ্ঝায়, গাইতে পারি গান
তোমার কোলে জাগতে পারি উদ্দীপনায়—
ঠান্ডা হাওয়ায় ঝড়বৃষ্টির বাগানে অফুরান।
মানুষ-পরিচয়ে তোমার বুকে ঘুমাতে পারি
মরা নদীর চরের মতো ফুটন্ত অন্ধকারে।
২
আহা, যখন কোনও বিগতবসন্তের খরায়
আমাদের মনোগাছে ধরে তীক্ষ্মদন্ত ভ্রমের মুকুল
আমরা পদদলিত করি তোমার ফুটন্ত ফুল,
হৃদয়ে তোমার জাগতে দেখি না কোনও অভিমান…
আমরা দেখি শতদুঃখের অশ্রুজলেও বন্ধ হয় না
কোনও প্রণয়ের জানালা, বরং মঞ্জুশ্রী রঙে
সতত উন্মুক্ত থাকে তোমার হৃদয়।
শত ঝঞ্ঝায় দুরন্ত অন্ধকারের শিলাপাথরে
আমরা ছুঁয়ে দেখি অন্ধকারের জলস্ফীতি,
দেখি কাছে থেকে দূরে থেকে
ফুটছে ফুল তোমার সকল ঘাসে ও গাছে-গাছে…
দেখি ফুলে-ফুলে তুমি তীব্র প্রণয়ের দেবী
আর তোমারই প্রণয়রেখা ধরে
কেবলই স্থির হয়ে যায় চোখের মণি…
৩
তুমি বাংলাদেশ আচ্ছন্ন সুন্দরতমা,
কত-যে প্রভাতী ও সান্ধ্য গানে
আকাশের মেঘদল কাঁপিয়ে আমাদের জন্য
কেবলই শস্যভারানত, প্রণয়ের আগুনে।
পৃথিবীর বুকে আমরা দেখি তোমাকে,
পাখি ও প্রজাপতি দেখে দিবস-রাত্রি
থাকি তোমার মৃত্তিকা-জলে।
শিরায় শিরায় তুমি প্রণয়ের দেবী—
বর্ণিল আনন্দ ও দুঃখবোধে
বৃষ্টিজলে ভিজে, মিষ্টি ও কড়া রোদে জাগ
শতস্বপ্নে আমাদের জাগাও,
ভলোবাসা দাও আকাশের মতো…
দেখি তোমার হৃদয়ে নদীদের বয়ে চলা—
ভালোবেসে পুনর্জীবন পায় পাখি, ফুল…
আমরা জানি শতধারাতরুলতায় তুমি সুন্দর—
প্রণয়ের দেবী তুমি নদী, ফুল ও পাখিদের!
তোমাকে দুঃখ দিলে
আমাদের মাথায় ভেঙে পড়ুক আকাশ—
বন্ধ হয়ে আসুক নিশ্বাস,
সুন্দরতমা, শত আনন্দ ও দুঃখের অশ্রুজলে
আমরা তোমার কোলে থাকি।
মানুষ, আকাশ
আমরা যদিও মানুষ…
আকাশ বলছে—
যেন তাকে বুকে রাখি…
মানুষ কি এতটা উদার হতে পারে?
মানুষের বুকে কত পাহাড়
মরা নদী, খানাখন্দ…
আর
আকাশ আছে
সাইবেরিয়া কিংবা কারাকোরামে
আছে আটলান্টিকের উপরে
আছে বাংলায়, বঙ্গোপসাগরে…
মানুষ কি আকাশ থেকে বড়ো?
ভাষার উপসংহার
জীবদ্দশায়, ইতিহাসের পাতায়
ভাষার রাজ্য—ভাষার শহর—
অলিগলি অনেক বড়ো…
ভাষা—ভ্যাপসা গরমে
কিংবা শীতের হাওয়ায়
ঠায়/দাঁড়িয়ে কোথাও
কিংবা হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায়
বোঝা যায় না সবই
কিছুকিছু বোঝা যায়…
সকলেই বোঝে না সকল ভাষা
কিংবা সকল ভাষার উনুনে
সকলেই রাঁধে না রূপকথা…
আসুন, আসুন—
ভাষার জন্য রাখি কিছু স্বাধীনতা…
ভাষা আছে সবুজ পাতার—
হলুদ পাতার…
যদি বেঁচে থাকি
এমনও তো হয়—
আমরা বেঁচে থাকব বলে
সংবিদা ফেলে ভুলগুলো তুলে নিই জালে
ফুলগুলো ফেলে দিই জলে
আর নেমে পড়ি টুকরো-টুকরো রোদে
নেমে পড়ি বন্যা ও খরায়।
এমনও তো হয়—
আমরা ভুল সুরে গাই জীবনের গান
ভুল-স্বপ্ন দেখাই এখানে-সেখানে।
যদি বেঁচে থাকি তো শ্বাস নিই
নেমে পড়ি নদী-সমুদ্রে…
সুরে-সুরে হৃদয় বাজাই।
এসো, স্মৃতি লিখি
এসো, স্মৃতি লিখি।
স্মৃতি কি লেখা যায় না?
স্মৃতি চাইছে আমরা যেন তাকে লিখে রাখি।
স্মৃতি গাইছে আমরা যেন তাকে দেখি।
নির্বাক-তিরবিরে-স্মৃতিগুলো
মাঝে মাঝে শিল্পী হয়ে ওঠে
মাঝে মাঝে ন্যাংটা হয়ে যায়।
তপ্ত-স্মৃতি, শীতল-স্মৃতি
তোমার মনে, আমার মনে…
ঝিলিক দিয়ে যায়।
ফজলুররহমান বাবুল ও তৎসংক্রান্ত রচনারাশি
- ডাক ও অন্যান্য কবিতা || নাজমুল হক নাজু - June 1, 2025
- তুমি বাংলাদেশ ও অন্যান্য কবিতা || ফজলুররহমান বাবুল - May 27, 2025
- মেঠোসুর কলরব : আবহমানের উৎসব || রূপকার - May 17, 2025
COMMENTS