রুদ্র হকের অভিষেক কবিতাবই ‘নাক নেই’ পাঠকের সামনে এসেছে গেল ২০১৭ বইমেলায়। এরপরে এখন পর্যন্ত কবির একমাত্র মুখপত্র এইটাই। কবির প্রথম মুখপত্র। কবির ভোরবেলার মায়া-অবয়ব। কবির স্পষ্ট পরিচয়।
বাংলাদেশের কবিতায় দ্বিতীয় দশকে এখন পর্যন্ত নবীন কবি যারা কাব্যিক দ্যোতনায় নিজেদের দীপ্তিঝিলিক দেখায়েছেন, সম্ভাবনা জারি রেখেছেন নতুনতর কবিতাপথ নির্মাণের, রুদ্র হক তাদের মধ্যে একজন। বিভিন্ন ওয়েবক্ষেত্রিক প্রকাশনায় ইতোমধ্যে এই কবি পাঠকের নজর কেড়েছেন তার রচনার ঔজ্জ্বল্য দিয়েই।
স্থিতধী এবং স্মিত কণ্ঠের উৎসার নিয়ে রুদ্র হকের কবিতায় একটা আলাদা স্বাদব্যঞ্জনা পাঠকের অগোচর থাকে না। অহৈতুকী ক্রীড়াশীলতা আর শব্দজব্দনির্ভর ‘স্মার্টনেস্’ নয়, কিংবা নয় প্রিটেনশাস্ ফার্স ক্রিয়েটের কলাকৈবল্যচর্চা, ফ্যাশনেবল্ ফিউটিলিটি কিংবা চলতি হাওয়ার পন্থী কবিতামকশো করার চেয়ে রুদ্র বরঞ্চ কবিতায় নিমগ্ন ও মুক্তবাক অনুধ্যানীর ভূমিকায় নিজেকে ন্যাস্ত রাখতে চেয়েছেন। অভিষেক গ্রন্থে এই কথাগুলোর সমর্থনে প্রামাণ্য কবিতা পাঠক খুঁজে পাবেন সন্দেহ নাই।
বিভিন্ন প্রকাশনামাধ্যমে এই কবির কতিপয় কাজ পাঠকগোচরে এসেছে এতদিন বিচ্ছিন্নভাবে। এইবার সুযোগ একলপ্তে বেশকিছু কবিতা পাতে নেবার। ফলে একটা আন্দাজ করে নেয়া যাবে এখান থেকে বেশ সহজে এই কবির এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাংলা কবিতার দাঁড়াদিশা সম্পর্কে।
এইটাই কবির প্রথম কবিতাবই। চিরদিনই পয়লা কাব্যগ্রন্থের সমস্ত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কবির মুখরেখা আঁচ করা যায়, প্রাথমিক পদক্ষেপ ও ভবিষ্যতের পথমানচিত্র সম্পর্কে হদিস পাওয়া যায়, তার প্রথম কবিতাবইতেই। রুদ্র হকের বইটিও এই কারণে সমুজদার কবিতাপাঠকের আদর পাবে।
পয়লা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশকালে কবির একটা আন্তরভাষ্য শুনে নেবার সুযোগ আমরা এখানে নিতে পারি। কী চাইছেন কবি, কী চেয়েছেন, কীভাবে এগোতে লেগেছেন অনিশ্চয়াত্মক কবিতাপ্রান্তরে, এই দিগদিগন্তরের কিছু কথা আমরা ঠাহর করতে পারব নবীন এই কবির দার্ঢ্য উচ্চারণে মিতবাক নিম্নস্থ জবানি থেকে :
আত্মপ্রচার থেকে সবসময় দূরে ছিলাম। যদি ছেপেছি তো নিজের সম্পাদনায় লিটলম্যাগেই ছেপেছি। কোনো সম্পাদক যদি আগ্রহভরে যোগ্য মনে করে লেখা চেয়েছে তবে তাকেই ছাপতে দিয়েছি। সে লিটলম্যাগ হোক কিংবা দৈনিক। প্রচার-প্রকাশের রাজনীতি আর স্বীকৃতির কাঙালদের থেকেও নিজেকে দূরে রেখেছি। ভেবেছি অন্তত শিল্পের সততাটুকু ধারণ করব নিজের ভেতর। কখনো লিখতে হবে বলে লিখিনি। স্বতঃস্ফূর্তভাবে যখন ভেতর থেকে উচ্চারিত হয়েছে তখনই লিখেছি। যতটা-না লিখেছি তারচেয়ে যাপনের ঘোরে থেকেছি। যতটুকু দেখেছি, পড়েছি, শুনেছি — অবচেতনায় জমিয়ে রেখেছি তার নির্যাস। নিজের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে এক চিরবিষণ্ন মানুষের কথা শুনেছি কান পেতে। বহুদল ফেলে বন্য পাহাড়ে একা একখুরে মাটি ঘষছে যে অশ্ব তার কবিতাগ্রন্থ এই ‘নাক নেই’। পড়বে তো পাঠক?
নিশ্চয় পড়বেন আবহমান বাংলা কবিতার পাঠক। দ্বৈধদোল থেকে কবিকে নিশ্চয় রেস্কিয়্যু করতে এগিয়ে আসবেন নমস্য কবিতাপাঠক। ‘নাক নেই’ নিজগুণেই পাঠক টানবে ধবধবা শাদা কাগজে ছাপা তার কালো বর্ণপুঞ্জের দিকে।
‘নাক নেই’ বইটির লেটারিঙভিত্তিক চমৎকার প্রচ্ছদটি করেছেন শিল্পী ধ্রুব এষ। বহুপ্রসূ প্রচ্ছদশিল্পীর বাজারছাওয়া প্রচ্ছদভিড়ে এটি একটি ভিন্নতাব্যঞ্জক উল্লেখযোগ্য প্রচ্ছদ অবশ্যই।
বাংলাদেশের বইবিপণীভুবনে এক-সময় তরুণ কবি, গল্পকার ও বিশেষভাবেই নতুন অনুবাদকদের বই ছাপিয়ে পরিচিতি-পাওয়া ‘ঐতিহ্য’ প্রকাশনালয় থেকে বইটি প্রকাশ করেছেন আরিফুর রহমান নাইম। বইটি পাওয়া যাবে দেশের বইশপগুলোতে, ঐতিহ্য প্রকাশনীর যে-কোনো আউটলেটে তো বটেই, এবং পড়ে নেয়া যাবে নিশ্চয় নানাভাবে আরও।
প্রতিবেদন / সুবর্ণ বাগচী
… …
- শরৎরাত্রিতে || আনম্য ফারহান - September 23, 2023
- হাওর সিরিজ || শামস শামীম - September 23, 2023
- জনমানসে বিরাজিত সাংস্কৃতিক সংঘাত ও মাতিয়ার রাফায়েলের কবিতা || আহমদ মিনহাজ - September 23, 2023
COMMENTS