চিত্রগৌতম
[স্মাইলিং বুদ্ধা রাজন্য সত্যজিৎ, দ্য পেইন্টার অফ আওয়ার স্যুরিয়্যাল রেইনসিটি]
শুভ জন্মদিন, রাজন!
নতুন চিত্রপটের ন্যায় সম্ভাবনাপ্রসূ হোক জীবন
তুলির তন্তু থেকে ফুটে বেরোক উচ্ছ্বল জলসহজিয়া গান
ঘাসপাখিফুলমেঘ
নদীবৃষ্টিবিদ্যুৎবেগ
ফড়িং এমনকি অবলা ঘাসপোকাটাও
ক্যানভ্যাসভূমিতে পাক যথাযোগ্য অমর প্রাণের সম্মান
রেখায় রেখায় দেখা দিক জয়শ্রী জীবনের উদ্গীরণ
রঙ ফেটে বের হোক মানুষেরই বাসনাকিরণ
শিল্পে হোক শিল্পীর রক্ত ও স্বপ্নক্ষরণ
চিত্রে চিত্রে চলতে থাকুক চক্রবর্তী সত্যজিতের ফুর্তিবিকিরণ
শুভ হোক সত্য হোক জয়ী হোক জীবন
জেসমিনফুলের মতো শুচিস্নিগ্ধ শুভ্র হোক সমূহ বীক্ষণ!
.
.
রাজন যখন ছবি আঁকেন
রাজন যখন ছবি আঁকেন পিঠটা বাঁকানো থাকে
ক্যানভ্যাসে যেন শস্যকণারা মাধুরী ছড়ায়া রাখে
রাজন যখন ছবি আঁকেন চাষির অবয়বে শঙ্কা
বাঁজা বীজ আর বিষে চারিদিকে ঘোর বিপদের ডঙ্কা
রাজন যখন ছবি আঁকেন কর্পোরেটের কাণ্ড
অশনির সাইরেনে তোলপাড় আবিশ্বব্রহ্মাণ্ড
রাজন যখন ছবি আঁকেন চোখজোড়া থাকে ক্ষীপ্র
মহানগরের ঘুপচিতে যেন তথাগত বোধিদীপ্র
রাজন যখন ছবি আঁকেন রুগ্ন অন্ধকার
গ্রাসিছে ক্যাম্নে দেখাইয়া দ্যায় মানুষের সংসার
রাজন যখন ছবি আঁকেন রক্তগ্রন্থি জুড়ে
একটা পাখির রাগী চিৎকার বেজে যায় উড়ে উড়ে
রাজন যখন ছবি আঁকেন দৃঢ় চোয়ালের হাড়
স্পর্ধাহাওয়ায় ধূলিস্যাৎ যত সম্রাট আর ভাঁড়
রাজন যখন ছবি আঁকেন বলীবর্দ সভ্যতা
দানবিক দরদালানেরা খায় নিসর্গনগ্নতা
রাজন যখন ছবি আঁকেন থতমত প্রকৃতির
স্বর্গে যায় না সারমেয় ছাড়া সে-ই তো যুধিষ্ঠির
রাজন যখন ছবি আঁকেন জননীর দুইহাত
রঙে ও রেখায় কথা কয়ে ওঠে তামাম মাখলুকাত
রাজন যখন ছবি আঁকেন জনকের সিনা-গুর্ধা
ভালোবাসা আর বরাভয়ে ঘেরা চাঁদ-সদাগর স্পর্ধা
রাজন যখন ছবি আঁকেন জনমবন্দনা
কাটা জিভে যেন অন্তিমবার আগুন-ঝরানো খনা
রাজন যখন ছবি আঁকেন পাঁজরে দাঁড়ের সাউন্ড
নৈরাজ্যের নহবতে একা আলোকবর্ষ রাউন্ড
রাজন যখন ছবি আঁকেন বাতায়নে প্রেমিকার
হন্তদন্ত চাকুরেরা চায় আঁচ পেতে প্রতিভার
রাজন যখন ছবি আঁকেন অতন্দ্র মহাকাল
নক্ষত্রের গুহাগায়ে সাঁটা ছায়াপথিকের ছাল।
সত্যালাপ অংশবিশেষ : এ কী সত্য সকলি সত্য…
সত্যজিতের কাজ দেখলাম। বেশকিছু কাজ, একসঙ্গে, দেখা হলো সত্যজিতের অঙ্কনখাতায় ইন্দ্রিয় ডুবিয়ে। অবশ্য যাকে বলে একেবারে সমস্ত ইন্দ্রিয় একত্র করে একাগ্র ও মগ্নমনে শিল্পসম্ভোগ, সেভাবে নয়। দ্রুত চোখ বুলায়া যাওয়া। একজন সৃষ্টিশীল মানুষের তুচ্ছাতিতুচ্ছ কাজটিও, হেলাফেলার কুটুমকাটামগুলিও, অন্যতর অভিনিবেশ দাবি করে। সেই দাবির প্রতি সদবিচার করতে পেরেছি বলে মনে হচ্ছে না। আরও সময় নিয়ে দেখা দরকার ছিল;—দরকার ছিল সত্যজিতের পুর্বাপর কাজ, কথা ও কর্মকল্পনার সঙ্গে মিলিয়ে এই নতুন ছবিকর্মগুলো অবলোকন করা। আমি কেবল চোখ বুলিয়ে গেছি, এ-যাত্রায়, এটুকু বলতে পারি।
কিন্তু খুব অভিনিবেশ সহকারে দেখলেও তো সত্যজিতাঙ্কন বিষয়ে বেশিকিছু বলা আদৌ সম্ভব হতো না আমার পক্ষে, কেননা আমার চিত্রামোদ বড়জোর ছোটবেলার সচিত্র চয়নিকাবই দেখে গড়ে-ওঠা, বিদ্যেশিক্ষের সনে বিয়েশাদি ইহলোকে হলো না আমার। আফসোস! তো, চোখ বুলিয়ে গেছি চিত্রানুশীলনখাতায়, বাবু সত্যজিতের, এবং বেশ মুগ্ধ হয়েছি — নিজের কাছেই স্বীকার করি নিরিবিলি। আরও স্বীকার্য যে, এবং গুরুত্বপূর্ণ, সত্যজিতের আগের কাজগুলোর সঙ্গে এই সাম্প্রত কাজগুলোর ফারাক স্পষ্ট। চট করেই ধরা যায় এর শিল্পমানগত সমৃদ্ধি, ক্রমোৎকর্ষ, এবং এই শিল্পরচয়িতার সৃজনদক্ষতাগত কুশলতা। যাকে বলে ক্রাফ্টসম্যানশিপ, সত্যজিতের ঝুলিতে এ-মুহূর্তেই তা ঈর্ষণীয়রকমের রয়েছে।
এইটা বিপদেরও বটে। কেননা কারুদক্ষতা প্রাথমিক একটা শর্ত হলেও ছবিআঁকার ক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে এটা মারাত্মক অন্তরায় হয়ে ওঠে। অন্তরায় তখনই, যখন কারুদক্ষতা শাসক হয়ে ওঠে কারুকল্পনা ছাপিয়ে। এই ব্যাপারটা আধুনিক, বলা বেমানান হবে না যদি বলি উত্তরাধুনিক, কবিদের ক্ষেত্রে দেখা যায় খুব। ছন্দে খুব দখল থাকলে একসময় কবি অতিরিক্ত ছন্দমনস্ক এমনকি ছন্দসর্বস্ব হয়ে ওঠেন, যা কিনা তার কবিতার বারো বাজিয়ে দেয় কবির অজ্ঞাতে। এটাও দ্রষ্টব্য, শুধু কল্পনায় ঠেস দিয়ে আয়েশে কবি/চিত্রী ধুমিয়ে সৃজনযজ্ঞকর্ম সংঘটিত করে চলেছেন, দক্ষতার হাঁটুভাঙা দ বর্ণটাও দখলে নাই যার, এমনকি উচ্চতর চারুশিক্ষায়তনের মহাধ্যক্ষরূপে আবির্ভুত হচ্ছেন দলে দলে, এই দেশে, কেবল খায়রুনসুন্দরীমার্কা দিঘল কেশ ও মোটামাথা আক্কেলদাঁতহীন বৈষয়িক বুদ্ধির যোগ্যতায় — এই সিচ্যুয়েশন সুলভ অপরিবর্তিতভাবে দেশের সর্বজেলায়।
এদিক দিয়ে অবশ্য সত্যজিৎ রাজন আশাব্যঞ্জক ব্যতিক্রম, চুল তার কবেকার সমুদ্রতরীর কাপ্তানের ন্যায় মডারেট, বত্রিশ নম্বর বাবাজর্দা-খাওয়া আক্কেলদাঁতও পোক্ত পর্যাপ্ত। যাকগে, বলছিলাম বাবু সত্যজিতের বর্তমানকালীন কাজের সনে পুর্বকালীন কাজের তুল্যমুল্য বিষয়ে। হ্যাঁ, শিল্পীর বিকাশ টের পাওয়া যায়। ডেভেলপমেন্ট অফ হিজ পেইন্টিং, অত্যুক্তি নয়, দেখার মতো। বছর-কয়েক ধরেই দেখছি কায়কারবার তার, বছরখানেক আগে বেশ আয়োজন করে একবার তার কাজ দেখে এসেছিলাম অঙ্কনখাতায় এবং কয়েকটি ক্যানভ্যাসে, খুব-যে নিবিড়-অন্তরঙ্গ অবলোকন ছিল তা-ও বলা মিথ্যে হবে। হয় কি যে, এই কর্পোরেট জমানায়, একটা আচ্ছামতো শো-শা কাচঘেরা গ্যালারিস্পেসে এক্সিবিশন অর্গানাইজ করে দেয়ালে আংটা লাগিয়ে পেইন্টিং না-টাঙালে এই আমার মতো গডজিলা আঁকবোদ্ধার নজর ও চামড়া ভেদ করা আঁরি মাতিসের পক্ষেও দুঃসাধ্য। দুঃখজনক, জমানা খরাব হ্যায়, আমি তদুপরি তিফিল ও ছবিনিরক্ষর ও নিরুপায়। এবারকার অভিজ্ঞতা, যা বলছিলাম, অধিকতর সুখকর।
গিয়েছিলাম শিল্পীর বাসায়।
কী! সত্যজিৎ রায়ের বাসায়! আজ্ঞে না, কান বাড়িয়ে কথা কেড়ে নিলে তো হবে না মাদমোয়াজেল! টে বললে টেংরা যেমন হয় তেমনি টেরোড্যাক্টিলও হয়। গেছিলাম সত্যজিৎ চক্রবর্তীর বাসায়। কে এই চক্কোত্তি, কি বিত্তান্ত বলেন দিকি মশাই! চিনি না জানি না, কারে-না-কারে লৈয়া কথা কৈবার লাগছেন সেই তখন থেকে, কে ইনি? ক্যারিয়ারগ্র্যাফ জলদি দেখান, নৈলে কৈলাম খবর আচে, হ! রোসো, ভদ্রে, কহানি আভি বাকি হ্যায়। এই সত্যজিৎকে যারা চেনেন তারা চেনেন, যারা চেনেন না তাদের সঙ্গে বাকি জিন্দেগিতে এর চেনাচেনি হতেও পারে আবার না-ও হতে পারে। সেই সত্যজিতের ডাকনাম ছিল মানিক, এই সত্যজিতের ডাকনাম রাজন। ছবি এঁকে এককোনায় ইনি টুক করে সত্যজিৎ রাজন সিগ্নেচার ঠুকে দেন। কথা সেটা নয়, এটাও কথা হতে পারে না যে কেউ ক্যারিয়ারগ্র্যাফের প্রতি উদাসীন বলে তারে আপনি শিল্পী হিসেবে আমলে নেবেন না। তারপরও বলি, ফিরাযাত্রায় বিস্তারিত বলব বলে এইযাত্রা আঁচড় কেটে যাই কেবল, সত্যজিৎ রাজন বর্তমান বিশ্বের এক তরুণ চিত্রকর। আমার সহকর্মী, সেইটা গুরুতর কিছু নয়, একই আপিশে আমরা দুজনেই মাসোহারা খোরাকির বিনিময়ে শুকনোমুখে শুকরিয়া আদায়পুর্বক ফুটফরমাশ খেটে কেরানিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে জীবনাতিপাত করি। ভীষণ তেষ্টা পেলে, দুজনেই, একটু স্পিড-টাইগার খাই। এর বেশি বরাতে নাই। শিল্পী হবার ক্ষেত্রে এটা আদৌ অন্তরায় কি না, আমার জানা নাই।
কিন্তু সত্যজিৎ, আমার দেখা মানুষ ও রাক্ষসদের মধ্যে, অসম্ভব প্রাণোদ্যমী ও সংবেদনশীল এবং প্রায় নিরামিষাসী। তেলেজলে তুখোড়, খুব দ্রুত ল্যান্ডস্কেইপ করা আন্দাজি কোনো শিল্পীর দ্বারা হবার নয় বলেই ধারণা করি, যদিও সত্যজিতের আলস্যপ্রবণ দরাজদিল ও তার নায়িকানুগত প্রণয়যন্ত্রণা তাকে বেশিক্ষণ ক্যানভ্যাসে তিরন্দাজের ন্যায় টানটান দাঁড়িয়ে থাকতে কিংবা অঙ্কনানুশীলনখাতায় উবু হতে দেয় না, মুঠোফোনকোম্প্যানিগুলো শিল্পদুনিয়াকে যে কীভাবে থ্রেটের মুখে ফেলে দিচ্ছে তা রাজনবাবুকে দেখলে মেহসুস না-হয়ে পারে না। তা, বয়সের বাই, ভয়ের কিছু নাই, কেটে যাবে। একজন কবিকে যেমন সমস্ত দিনের শেষে অ্যামাজন জঙ্গলের মতো সুনসান রাত্তিরে ঘাড় গুঁজতে হয় তার মায়াবী টেবিলে, একজন চিত্রীকেও তেমনি ইউক্যালিপ্টাস গাছের মতো সটান খাড়াইতে হয় তার নিঃসীম শাদা ক্যানভাসে। এই কথাটা আলবৎ সত্যজিতের পেটে-পেটে জানা। না-হলে একটা আস্ত সিরিজ, এই আকালের প্রেম-ও-প্লেগপর্যুদস্ত হতাশাচ্ছাদিত সময়ে, সত্যজিতের মতো বান্ধবীবৎসল আমোদে শিল্পীর পক্ষে এঁকে উঠবার কথা না।
তাছাড়া সত্যজিতের রেখার বলিষ্ঠতা, তাছাড়া তার রঙবোধ ও চকিত ছোট ছোট কিছু স্ট্রোকের দীপ্তি, তাছাড়া তার ফিগার ও পার্সপেক্টিভ প্রণয়নের প্রকৌশল, সর্বোপরি সত্যজিতের পোর্ট্রেটমেইকিং-পাওয়ার! পোর্ট্রেটে এত দক্ষ ও শিল্পশর্তে–সফল ভিজ্যুয়ালাইজেশনে সক্ষম শিল্পী, এই মূহূর্তে আমার আশেপাশে, গাঁ উজাড় করে বেছে বের করা যাবে নিশ্চয়, কিন্তু সহজলভ্য হবে না। আর তার সাম্প্রতিক আঁকা বেশকিছু কাগজ-কলমের কাজ, শৈলী ও বিষয়বস্তুভাবগত দিক থেকে যেগুলো ঐক্য-তাৎপর্যবহভাবে ধারাবাহিক, আনকোরা দর্শক ও অভ্যস্ত চিত্রপাঠক হিসেবে সেই সিরিজের কাজগুলো আপনাকে ভাবাবেই।
এবং বলছিলাম তাকে, শিল্পী সত্যজিৎ রাজনকে, নিজের নাম নিয়ে অহেতু অস্বস্তি বোধ না-করিবারে। বলছিলাম রায়চৌধুরী খান্দানের সত্যজিৎ রায়ের নাম ইতিহাসে থেকে যাবে এতে সন্দেহ নাই, কিন্তু শিল্পানুরাগীর হৃদয় থেকে তাঁকে একেবারে মুছে ফেলা না-গেলেও গৌণ করে ফেলা সম্ভব। আর সমনামী হয়ে, নেমসেকের কারণে, নতুন সত্য পুরনো সত্যের নিকট নিষ্প্রভ-অনুজ্জ্বল হয়ে থাকবে — এমন ডিক্রি কে দিয়াছে? সেই স্পর্ধা ও পরিশ্রম আর সেই স্পৃহা ও অভিনিবেশ দরকার।
সত্যজিতের মিচকি হাসি, অঘটনপটু শয়তানের মতো, মারাত্মক!
.
.
বিশেষ পুনঃপ্রচার ও বিশেষ প্রথম
চিত্রগৌতম — সত্যজিৎ রাজনের জন্মদিনে এই বিশেষ আইটেমগান পুনঃপ্রচারিত হইল।
অবশ্য পুনঃপ্রচার ব্যাপারটাও একদা আনন্দের ছিল, যখন বিটিভিই ছিল মননসৃজনবিনোদনের সবেধন নীলমণি। শুক্রবারের স্লটে বেশকিছু পুনঃপ্রচারমালা আরাধ্যই ছিল দর্শকের কাছে। যেমন ‘মনের মুকুরে’ আয়োজনে দেখানো হতো অনেক আগেকার বানানো নাটক, আর্কাইভ থেকে বেছে নিয়ে। এমন আরও ছিল কিছু, ঈদের ‘আনন্দমেলা’, ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়্যার সার্কাস’ ইত্যাদি, এবং মাঝে মাঝে ‘ম্যাকগাইভার’ পুনঃপ্রচার। ‘ম্যুভি অফ দ্য উইক’ তো মোদ্দা কোথায় পুনঃপুনঃপ্রচারের ব্যাপারেই ছিল পর্যবসিত। একেকটা ইংরেজি সিনেমা আমাদের মুখস্থ হয়ে যেত দেখতে দেখতে, আজও ছুটিয়া যায় নাই সেই মুখস্থ ম্যুভিনিচয়। মনে আছে, প্রিয়তমা, আজও ভুলি নাই তোমার চাঁদবদন।
যা-হোক। ঘটনা সংক্ষেপে শেষ করতে হলে এইটুকু বলতে হয়, এতই কিপ্টে ছিল তৎকালীন সম্রাট (পরবর্তীকালে সম্রাজ্ঞী) বিটিভি যে এমনকি রিপ্লে/রিব্রডকাস্ট করার ক্ষেত্রেও ছিল হাড়কিপ্টা। তারপরও কম করেন নাই তিনি আমাদের জন্য। তবে এখন মনে হয়, এই রি-রি-রি-রিপ্রচারের গা-রি-রি সিজনের মনোটোনাস্ জমানায় এসে, বিটিভির সেই পুনঃপ্রচারকার্পণ্য মৌলিক সৃজনবান্ধব সিদ্ধান্তই ছিল। তবে এখন সেইসব দিনের স্মৃতি তো শুধুই স্মৃতিই। বিটিভি তো নাই আর। কি? বিটিভি নাই! সেইটাই। প্রজাতন্ত্রে বেতনভাতাভোগী নিকাম্মা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব ও অবস্থিতি অঙ্গুলিমেয় তো নয়, বেশুমার কাতারে-কাতার।
অত্র পুনঃপ্রচারিত ‘চিত্রগৌতম’ শীর্ষক সচিত্র অনুষ্ঠানটি ‘ফেসবুকের মুকুর’/মেমোরিস থেকে গৃহীত হয়েছে। এইটা আজ থেকে বহু বহুকাল পূর্বে, ২০১৪ সনে, প্লে করা হয়েছিল। সত্যজিৎ রাজনের জন্মদিন উপলক্ষ্যেই ছিল উদযাপনঘটনাটি। কিন্তু বর্তমানকালে নতুন অনুষ্ঠান নির্মাণের হ্যাপা অনেক। কাজেই শিল্পীর জন্মদিনে পুরানা বোতলের ছিপিই খোলা হলো অগত্যা। আর পুরানা বোতলের ক্ষেত্রবিশেষে কদর তো সমুজদারদের কাছে চিরকালই বিরাজিবে। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানের ডিওপি ডিরেক্টর অফ ফটোগ্র্যাফি স্থিরচিত্রশিল্পী ও প্রথম দশকের বাংলাদেশজ কবি আহমদ সায়েম; ফটোআর্টিস্টের মৌখিক অনুমোদনসাপেক্ষে এই ছবিটা ব্যবহৃত হয়েছিল তখন যেমন, হচ্ছে এখনও।
২
এইবার পার্ট টু। গ্রন্থনার দ্বিতীয় রচনাটা — রাজন যখন ছবি আঁকেন — প্যান্ডেমিকের বছরটায়, বিষাক্ত বিশে, লেখা। আগে এইটা পাব্লিক হয় নাই। বিশেষ প্রথম বলতে এই খবরটাই। ঠিক আছে, যাই।
যেতে যেতে বলি, জনান্তিকে, ব্যানারের ফটোচিত্র নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের পাশের চায়ের দোকানে সেলফোনক্যামেরায় আমারই হাতে ক্যাপচার করা। সাল মনে নাই, কিন্তু মনে আছে সেই নবীগঞ্জ সফরটি ছিল শহিদ বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের স্টোনপোর্ট্রেইট স্থাপন ও উদবোধনের অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে। সেই স্টোনপোর্ট্রেইটটার মেইকার সত্যজিৎ রাজন। নবীগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সামনে, দেয়ালের বাইরে, গাড়িরাস্তার ধারে, সেই শিল্পকর্মটা স্থাপন করা। আর, ওইদিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, বরাবরের মতো, প্রবাসে একাত্তর বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক উজ্জ্বল দাশ। অরিজিন্যাল ইমেইজ অবলম্বনে ব্যানারওয়ার্কটি বিবর্ধিত, বলা বাহুল্য।
৩
বর্তমানের এই চির্কুট-অক্ষরমালা রাজন সত্যজিতের জন্মদিনস্মারক স্মৃতিচারণবক্তৃতা আকারেই শিল্পী-অশিল্পী নির্বিশেষে সকলেরই নিকট গ্রাহ্য হোক, এইটুকুই নিবেদন।
গদ্যাংশ দুইটার ব্যাপারে জ্ঞাতব্য হয়তো এ-ই যে এ-দুটোর একটি তেরোয় এবং আরটি পনেরোয় লেখা, ফেইসবুকে শেয়ার যে করা তা বলা বাহুল্য। পোস্টের ভিতরে লেখার লগে ব্যবহৃত ফটোগ্রাফের একটা মানে পয়লাটা আলফ্রেড আমিন, কবি ও ওয়েবম্যাগসঞ্চালক, নিজের ফোনক্যামেরায় তুলেছিলেন কখনো, শিল্পীর স্টুডিয়োতেই দেখা যাচ্ছে, অথবা আর-কোথাও; আর, পরের ছবিটা আহমদ সায়েম, কবি ও চিত্রগ্রাহক, তুলেছিলেন ডিজিটাল সিঙ্গল লেন্স রিফ্লেক্স তথা ডিএসএলআর দিয়া। আর কি বিশদ বলবার মতো কিছু আছে? এই মুহূর্তে তা নাই সম্ভবত।
প্রসঙ্গত, অনুসন্ধানে উদ্ঘাটিত, সত্যজিৎ রাজন এই বিশ্বের একজন চিত্রশিল্পী, পেইন্টার, আর্টিস্ট, এবং আমাদের সহমর্মী বন্ধু (সহশিল্পীও নয় কি? নিশ্চয়, নিশ্চয়।); উল্লেখযোগ্য প্রদর্শনী ইয়াদ করতে গেলে একক হিশেবে আর্টিস্টের ফার্স্ট পদার্পণ ‘স্টারকেইভ অ্যান্ড দ্য গ্যালাক্টিক স্কিন্স’ শীর্ষক সমাবেশ ইয়াদ হয়। বার্থডেতে এই বিশ্ববাসীর পক্ষ থেকে তাকে স্পেশ্যাল্ গ্রিট করি; ট্রিট সম্ভব হচ্ছে না, স্যরি, মাসের শেষপাদ। ধন্যবাদ।
—জাহেদ আহমদ ২৩ এপ্রিল ২০২৫
সত্যজিৎ রাজন ও তৎসংক্রান্ত রচনারাশি
- টিপু দ্য কিপার - May 12, 2025
- সাহিত্যিক সাংবাদিকতা, সাংবাদিকী সাহিত্য - May 3, 2025
- রাজন যখন ছবি আঁকেন - April 23, 2025
COMMENTS