আরেকবার বলি —
দিগন্ত, ধরো, যদি ভালো হয়ে চলি
কী আর হবে
এই দুনিয়ায় কে কোথায় কবে
ভালো হয়ে চলতে পেরেছিল বলো?
অনেক তো ভালো হয়ে চলা হলো
ধরো, সত্যি করে বলছি কিন্তু ধরো
অনেক ভালো হয়ে চলে দেখেছ মনে করো
দুইতিনবার মন্দ হয়ে চলা আবশ্যক নয়?
দিগন্ত রিপ্লায়েড — হয় হয়, দাদা, আবশ্যক হয়!
সেই থেকেই লিখে যাই নিছক মন্দ কথাগুলি।
.
.
*
হাসিনার খপ্পর থেকে বেরিয়ে এইবার
কোনদিকে দেশ যায়
জানেন আল্লায়
আর কেউ জানে বলে এখনও ভরসা পাই নাই
কিন্তু যদি পাই
আঁটঘাট আগে থেকে বেন্ধে রাখা চাই
ইলিশের মর্শুমে একা হালদা নদীর পানে কেরায়া ভাসাই।
.
.
*
বিপ্লবী ও বলদ উভয়েরে জেব্রাক্রসিং পেরোবার সময়
ঈষৎ শ্লথ হতে হয়
জীবনভর
এই ল অ্যান্ড অর্ডার
মেনে চলতে হয় সবার
নতুবা লাইফের এন্টায়ার যায়
দিবারাত্রি গিলফিশকারি করায়
বালের আমলের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সৃজনশীল উপায়ে নেতাদোহনক্রিয়ায়
আর যারা পারে না তারা থাকে সুযোগের প্রতীক্ষায়
পাওয়ারের পিছে পিছে ব্যাপক বাসনাচালিত দৌড়ের উপর।
.
.
*
শেখ হাসিনার
শেষের দিনগুলার
ভয়
দেখসি স্ক্রিনে
শেষ কয়দিনে
বেড়ে যেতে যেতে ভয় কেমন করে এতটা আজদহা হয়।
.
.
*
দেশের মানুষের রোষ থেকে বাঁচবার আশায়
হাসিনা পালায়
পালায়া যায় কোথায়? —
আর কই, ইন্ডিয়ায় —
নারেন্ড্রা মডিজির আতিথেয়তায়
বাংলাদেশের ইতিহাসে নৃশংস গণহত্যাকারী
ইন্ডিয়ায় গিয়া পায় ম্যালা খাতিরদারি
কী নির্মম পরিহাস, ভাবা যায়!
এদেশের সহায়সম্বলহারা মানুষ মরবার আগে
একমুহূর্ত অধিক দুনিয়াদারির অশেষ অনুরাগে
শেষ চিকিৎসাটা ভারতেই নিতে চায়!
.
.
*
রিপ্লাই দিতে যাব, অমন সময় একটা আওয়াজ
অতর্কিতে
ব্রেইক চাপতে বাধ্য করায় আমায়
তাকিয়ে দেখি পিছনের সিটের প্যাসেঞ্জারের কাজ
উহুম, মুরুব্বি মুরুব্বি, উহুম উহুম, আপকামিং শীতে
একটা আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায়
আগস্ট দ্য ক্রুয়েলেস্ট মান্থটা আগে যাইতে দেন, উইন্টারে বইলেন
এদেরে একটু সময় দেন
বক্তৃতা আপাতত অফ করেন
এই ছিল্লকটা জানেন না যে আগে গেলে বাঘে খায়?
অ্যানিওয়ে, সেই প্রশ্নটাই তো বলা হলো না
যারে সেন্টার করে এহেন কবিতার অবতারণা
প্রশ্নটা ছিল, পড়ালেখায় কিংবা যার যার কামেকাজে কি ফিরৎ যাইত না ছাত্রজনতা?
.
.
*
কোন পথে যায় দেশ?
এত মব
মহানুভব
দেশপ্রেমিক
প্রো-ক্ষমতা ধান্দাবাজ ডেমোক্র্যাটিক
ইসলামিক
বৈপ্লবিক
বৈজ্ঞানিক
ভণ্ডতন্ত্র
দোহনযন্ত্র
সংবাদ ও সাহিত্য ও লেখক এবং সাংবাদিক
আরও আছে সচিবটচিব
পুংলিঙ্গ স্ত্রীলিঙ্গ উভলিঙ্গ ও ক্লিব
বিজিবি ও আনসার
বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ও অন্যান্য দোকানদার
ইশকুলের কলেজের ইউনির শিক্ষক ও মন্দিরের মসজিদের ধার্মিক
বক ও কোকিল
লুটের ভাগবাটোয়ারায়
খেটে নয় চেটে খাওয়ায়
ছিল যাদের মধ্যে একটা আশ্চর্য যোগসূত্র, মুহব্বত, মিল
সাংঘাতিক, সাংঘাতিক, সাংঘাতিক
বাস্তবিক সবাই কিন্তু তক্কে তক্কে আছে
ছাত্রজনতা শান্ত হলেই উঠবে আবার গাছে
বাঞ্ছা করি দেশের দশের বোধোদয়ের উন্মেষ।
.
.
*
বস্তা বস্তা আশার ছলনা মাথায় নিয়া
হাজারচব্বিশের জুলাই গিয়া
আগস্ট উধাও অঙ্গুলিবুজানো মুঠো গলাইয়া
মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য
গৌতম হালদারের অতুল্য অভিনয়ে দেখতে দেখতে ভাবব
শেখ, মদুদি, না জিয়া?
আশার ছলনে ভুলি
নিশ্চয় একটা আয়নাঘরের আতঙ্কও বয়ে চলি
বিজেপি কী নিজের এত এত বদমাইশি নিয়া পার পাবে এবার?
আর মাতারি মমতার
কতটা অ্যাক্সেস আছে দেশের জুমার জেন্রেশনের উপর?
হাব্লা নায়ক দেবাদি গবাদি ফিমেইল পড়তিদের দিয়া আর কত?
উল্লুর মতো সারাক্ষণ মুখে শুধু তোতো তোতো তোতো!
অতীত ও ঐতিহ্য দুচায়া ধান্দাবাজির দিন ফুরায়া আসে
দেশে দেশে
খেটে-খাওয়া মেহনতি জনতার জন্য দরদের অভিনয়
আপনি যারে বলেন হাশিনা তার চেয়ে ন্যাচারাল কারোর হয়?
সাম্প্রতিক ইতিহাসে
শেখ হাসিনার চেয়ে বেশি ডিক্টেটর তো কেউ নয়
দেখে শেখেন
নয়তো পস্তাবেন
পরে
লেলিহান অভ্যুত্থান যখন ছড়ায়া যাবে ক্যালকাট্টা শহরে।
.
.
*
আমার কথায়
কার কেমন প্রতিক্রিয়া হয় তা জানি না
আমি পার হয়া আইসি বিশেষণ-বসানো-অসাধ্য দৈত্য হাসিনা
আর তৎসম তস্কর খুনিয়াদের কাল
আমারে তুমি পিপলের প্রতিক্রিয়া আন্দাজ করে লিখতে বলো
তোমার আবার কবে থেকে হেন মতিভ্রম হলো?
ভুয়া, বাল!
অত ভাবাভাবি দিয়া আমার কি আসে যায়
আমি ইচ্ছে হলে গাইতে পারি
বিচ্ছেদের পঙক্তিসারি
মিলনে বিরহে সংকটে একটা ডায়াটোনিক হার্মোনিকায়।
.
.
*
এরপরও কথাটা ভাবায় —
যেই দিন যায়
যেই মানুষ যেই মুহূর্তগুলা হারায়
সেই দিন সেই মানুষ সেই মুহূর্তগুলারে কী আর রোজনামচায়
ফিরাইবার উপায়
বাৎলাই দিতে পারবেন?
যদি না-পারলেন
কী হবে এত ভুজুংভাজুং ভজনকীর্তন আর জ্ঞান
মাথায় ঝাঁকাবোঝাই করিয়া রাখায়?
.
.
*
উদান নাই মাদান নাই
উঠল বাই তো উলাল্লা উলাল্লা গাই
বিদিয়া বালানের ডার্টি হিপের হুল্লোড়ে
এদিকে কেবলই ইয়াং ইন্টেলেকচুয়ালদের হৈ হৈ রৈ রৈ
নিরলে বসিয়া ভাবাভাবির ফুরসত কই?
চিন্তাচর্চায় একটা আন্দাজি গিমিক আর গমগম
অজানা আশঙ্কায় গা ছমছম
পুরাকালের হন্তারক হাসিনার হননযজ্ঞ মনে পড়ে।
.
.
*
তব্দা-খাওয়া বালবৃদ্ধবুড়াগুলা
যাদের সামনে একটা হাজার বছরের মুলা
আগে ছিল ঝোলানো
বর্তমানে এদের পেশা আন্দোলনের উটকো প্রশংসায় টাইমলাইন ভরানো।
.
.
*
হাসিনা পালাইসে, এরশাদ পালায় নাই
দিগন্ত সহসাই জিগায় — ভাই,
কিসু যদি মনে না করেন তয় জিগাই
ডিক্টেটরদের ক্লাবে শেখ হাসিনা না এরশাদ
দুইজনের মধ্যে কে বেশি উঁচু ও অবিসংবাদ?
উত্তরে বলি, দিগন্ত, পৈশাচিক নিষ্ঠুরতায় হাসিনা আদ্যোপান্ত অতুলনীয়াই।
.
.
*
গানহীন দিন কাটাই
বিকেল থেকে একা একা বারোটা বাজাই
কিন্তু গলায় গান নাই
সিটি কর্পোরেশন অ্যারিয়ায় কার্ফিউ
গোটা দেশ সংযোগবিচ্ছিন্ন
গ্লোব্যাল মিডিয়ায় বিশ্ব উদবিগ্ন
রৌডে সেনাপাহারায় ছাত্রলীগারদের হাতে মারণাস্ত্র ও মাউন্টেন ডিউ
চণ্ড রইদের খাড়া-দুপুরবেলায় তাদেরও তো অবস্থা সঙ্গিন
কট খেতে হয় একদিন
গলা রাখো যতই-না গানহীন
সবেরেই ফিরতে হয় গানেরই নিরাই নিরালা কাছে
ফেরে যেমন বানরগুলা চা-বাগানে, স্নেহচ্ছায়ায়, গাছে
এই নীতিকথা মানুষখেকো কুলাঙ্গার লীগারগুলার কানে বিষবৎ লাগলেও ঘটনা হাছাই
পরিশেষে গানছাড়া ঘ্যানঘ্যানানি বৃথাই।
.
.
*
অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান
আর সোনাওয়ালা আরাভ খান
দুইজনেই হিরো, সমাজের কাছে
কেননা তাদের একটা ব্র্যান্ডভ্যালু আছে
এরা সাকিব আল হাসান আর আরাভ খান হইতে চায়
অ্যাবস্ট্র্যাক্ট আর্টের মতো
অনবরত
যতটা আর্ট তারচেয়ে বেশি করে দেখায়।
.
.
*
পকেট সাবধান
চলতেসে পিরমুর্শিদি গান
অথবা আল কোরান
করতেসেন বয়ান
দলদলি টিগার্ডেনের ওয়াজের জশনে-শান
মন্দির মসজিদ যোগাড় আজান
সর্বত্র সতর্কতা সমান
পকেট সাবধান!
.
.
*
একটু একটু করে লেখা বাড়ে
বহরে ও আড়ে
বেড়ে যায় লাইন এবং ল্যান্থ
বাংলার এইখানেই স্ট্রেন্থ
দুনিয়ার দশপাঁচটা ভাষা আয়ত্ত করে সে একটা গানের কথা পাড়ে।
.
.
*
সুন্দর বললেই তো সুন্দর হয়া যায় না আর
অসহনীয় দমবন্ধ অবস্থা বাংলার
কেউই লিখতেসে না আঁকতেসে না গাইতেসে না
আসলে কী কেউই বুঝতেসে না
ব্যাপারস্যাপার?
.
.
*
দেশের কথা ভাবি না
অলক, দেশের কথাটা বাদ দাও
বরঞ্চ দুইটা আউলাবাউলা গানটান গাও
তদুপরি জিগাও!
যদি নিস্তার না-ই দিতে চাও
কথা দিলাম
কোনো-একটা গানে একদিন
বলব অমলিন
কোন দেশটার কথা আমি লিখতে চাইসিলাম
বর্তমানে দেশের কথা ভাবতেসেন শুধু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা।
.
.
*
অলকের সহসা আচরণ
প্রত্যক্ষ করে আমার মনে হয়, ভালো মন
আর ভালো আচরণ সবসময়
একসঙ্গে অ্যাভ্যাইল করা যায় না বোধয়
তারপরও ঘটনাটা আমি দৃষ্টিঠারে এড়াতে চাই
দিগন্তের সঙ্গে অলকের সঙ্গে আমার তো কোনো শত্রুতা নাই।
.
.
*
আমাকে ফিরতে হয়
রাতের বেলা বাসায় ফিরবার সময়
নিজের কাছে একবার
তখন দেখতে পাই
বিষণ্ণ ভুলভ্রান্তিগুলার
সীমানাশুমার
নাই
আল্লার দোহাই
নিজের কাছে ফিরবার সময় দিগন্তের হার্মোনিকাটা চাই।
.
.
*
কী করব, কোথায় যাব
যাবার জায়গাটা পাবো কই
সিদ্ধান্ত নিসি, সিদ্ধান্ত নিবার আমি অবশ্য কেউ নই
নিশ্চয় সিদ্ধান্তেই থিতু হই
নিজের ছেলেটাকে একটু কুংফুকারাটে শেখাব।
.
.
*
কোনো সিদ্ধান্ত বস্তুত কার্যকর হয় না যার
সেও তো সংকটের মুকাবিলায় তার
নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিয়া থাকে
কে নেবে আর
সিদ্ধান্ত তোমার?
গণহত্যা বাঁধায়া পালাইতে কেউ বলসিলো শেখ হাসিনাকে?
কে বা কারে মারে আর কে বা কারে রাখে।
.
.
*
উঠতে তো হবে
এই ভেবে কবে
কে কোথায় পারসিলো উঠতে সময়মতো?
সময়েরই তো সন্তান আমরা, টাইমটেবিলের অনুগত।
.
.
*
চারিদিকে দেবীর গান
দেবী মহান
মানলাম। আমার অবস্থা জানতে চান?
বলতে পারেন, কৈ মাছের প্রাণ
বঁটিদাওয়ের কোপায় কোপায় কাটাইতেসি জীবন যৌবন ধনমান
সম্রাট শাজাহান!
.
.
*
ও-পথ দেখানোর নয়
ও-পথ খুঁজে নিতে হয়
যে-পথেই যাও সব পথেই বিস্তৃত সময়
স্থির অন্ধকারচেরা শাদা ঝিকমিক
দিগন্ত সিমসাং নিক
জন ডেনভার বাজায় হার্মোনিকায়
আমি বসে বসে করি আরেকবার
উপসংহার —
আগুনের অপচয়।
.
.
*
দাবার চালের ভাষা আমার জানবার কথা নয়
আপনারা জানবেন নিশ্চয়
দাবা খেলা আমি শিখি নাই
তিরিশ কোরান আল্লার দোহাই
দিগন্ত বলতেসিলো, শুনতে শুনতে ভেবে দেখি
এ কী!
রিয়্যালি, দাবাখেলায় আমরা একেকটা বোড়া
ভাব দেখাই কিং কুইন ঘোড়া
আসলে তো পন
ঘর ঘর করে পেরোই বিপুলা ভুবন।
.
.
*
ব্যাপার যদি এমন হয়
এমন কোনো দৈবী ফর্মানের উদয়
রাজ্যে কেউ ঝড়ের মনগড়া কাব্য করতে পারবে না, তাতে রাজার নিন্দ টুট যায়
মানে, সোজা বাংলায়
বাস্তবিক ঝড় না হইলে আমি লিখতে পারব না খাতায়
এ-ই তো বলতে চাইতেসে রাজায়?
এমনিতে লেখালেখি জিনিশটা আমরা কাছে একটা খামাখা দায়
লিখব শুধু অন্তরের ইচ্ছায়
ইভেন খামখেয়ালিপনায়
কিন্তু রাজার কথায় নেভার এভার, নৈবচ, কক্ষনো নয়
কেন আমি লিখতে যাব রাজকাব্য হুদাহুদি নিজেরটা খায়া?
আমি চাই জীবনের রইদ, রহস্য, ছায়া
আমায় ঘিরিয়া থাক বন্ধু, বাৎসল্য, প্রণয়লিপ্সা, মায়া
আমার সংসারের সমস্ত জঞ্জাল উড়ে যাক তাগড়া ঝড়ের হাওয়ায়।
.
.
*
বড় কোনো ঝড়ে একবার আটকে গেলে
মেজাজ-ফুরফুরা চায়ের বাগানের বিকেলে —
এর পর থেকে এই জীবনের যত ঝড়ঝঞ্ঝা, মারী ও মড়ক
বজ্রপাত, বনবিনাশী সিস্টেমের ছক
মনে হয়, আটকাব গোটা ব্যবস্থাটা বাগে পেলে।
.
.
*
কিন্তু দিগন্ত, কথা বলে লাভ নাই
বুঝলা, কাজ করতে হবে, হ্যাঁ, সেইটাই
কথা বলে লাভ নাই কিন্তু কথাই তো বলতে চাই
বিস্তর বেকার থেকে এবং অগণিত কাজকর্ম করে
এই বিপ্লবী থিয়েটারকর্মীদের শহরে
একটু সুস্থিরে কথা বলবার সুযোগের সদব্যবহারটুকু করে যাই।
.
.
*
শেষ বলে কিছু নেই
লিরিক্যাল ব্যালাডের বাঙালি কিং অঞ্জন দত্ত
হুইস্কির সুতীক্ষ্ণ মধুমত্ত
গলায় গাইসেন বলেই
নিহিত কথাটা ভালো বলবার মতো নয়
আমার মনে হয়
শেষ হতেই হবে এই বিপন্ন সময়।
.
.
*
মাছের খলবল ভাল্লাগে না আমার
মাছ যখন জলাশয়তলায়
আলস্যমদির ঘুরে বেড়ায়
গান গায় পানির নিন থেকে বুড়বুড়ি কাটার
মাছের খলবল নয় ভাল্লাগে মাছের সাঁতার।
.
.
*
থামাথামি নাই
জীবন চলতেসে, যেভাবেই চলুক, চলতে চাই
মৃত্যুর আগের স্টেশনে নেমে যাওয়া অব্দি দৃশ্য ধারণ করে যাই।
.
.
*
পাগলের অবস্থা বাংলাদেশি শিক্ষিত মধ্যবিত্তের মতো
থতমত
অবয়বে বেজায় পাগলামো ও প্রণয়াসক্তির অমোচনীয় ক্ষত।
.
.
*
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতেরও বুদ্ধিশুদ্ধি লোপ পাবার দশা
সহসা
হাওয়া টার্ন নিতেসে বেসামাল দিকে
একবার আসে একবার যায়
আন্নোন অচিনা খাঁচায়
পাখি
টিগার্ডেনে নেভে আর জ্বলে যেমন শিয়ালের চউখ ও জোনাকি
ইলেক্ট্রিক পাখার বাতানুকূল বন্দিশগুলা রাখি নিরিবিলি লিখে।
.
.
*
ব্যক্তি যখন অসুস্থ হয়
যাবতীয় বিষয়আশয়
বিবমিষাকর মনে হয় তার কাছে
এমনকি বৃষ্টি এমনকি রইদ
দোল, কোজাগরী, বিজয়া, ঈদ
ঝুলে-থাকা চাঁদের ফলটি শিলকড়ইয়ের গাছে।
.
.
*
বাজাও দিগন্ত, বাজাও
অনেক দিনের গ্যাপে একটা হাওয়াও
বইতেসে বেশ ত্যাড়াব্যাকা কায়দায়
বাগাও, বশ করো তারে
এই সংসারে
ছেড়ে দাও যথা তার নিয়তির নিথৈ নীলিমায়
সাঁতরাইতে জানলে বে-অফ-বেঙ্গলের পার স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া যায়।
.
.
*
শেষের কথাই লিখতে হয়
স্টার্টিঙের সময়
মানুষের জীবন নিত্য উত্থানপতনময়
কাজেই, কী হবে ইন-ফিউচার
নিয়তির পুরস্কার না তিরস্কার
ডিটেইলে এইসব বলা হাতদেখা গণকের কাজ
উদগ্র ভবিষ্যতের দিকে ধাবিত সমাজ
তোমার ভাগ্য গণনা করা বাংলা কবিতার কাজ নয়।
.
.
*
লেখার পুরানা খাতায়
দেখা যায়
একলগে একা একা আড়াই শ কবিতার সংগ্রহ
রচিত প্রত্যহ
অতীতের অজস্র মুহূর্ত, মুখ, মাধুর্য, বিষ
ধুলায় লুটানো সম্রাট, দর্প, উষ্ণীষ
ছুঁইতেমরা ঘাসের পাতা, গগনশিরিষ, ঘোড়া ও সহিস
ঐরাবতের মতো অদূরবর্তী টিগার্ডেন, বসে-থাকা বাগানির চেহারা প্রায় টলস্টয়
সেইসব বিকেল-নিভানো সন্ধ্যার সোনালি সময়
এখানে কোনো ভবিষ্যৎ আছে কি না তা ভাবতে হবে বোধয়।
.
.
*
কথা বলি স্ত্রী-সন্তান ও সংসার নিয়া, আলতো
মনোলগের মতো
উইঙসের আড়ালে উপবিষ্ট প্রম্পটর
উঁচু, ঈষৎ উদবিগ্ন, কণ্ঠস্বর
কথা বলে যাব তবু সংসারের কানের কাছে, এইটুকু ব্রত।
.
.
*
তবে এইটাও অসত্য নয়
আমার মাঝেমাঝে মনে হয়
এসব, সমস্ত, অসার
তবু সত্য বলতে একটা সারবস্তু বুঝিয়া থাকি যদি
নিরবধি
শীতে-শুকায়া-যাওয়া গাঙের পানিতে
এই সামনেরবার শীতে
ক্রেইনের ঠোঁটে যদি উঠে আসে সেই সত্যখানি
শ্রীমান গৌতম বুদ্ধের সংগুপ্ত জবানি
জীবনের সারসত্য ছড়ানো ভূমণ্ডলময়
জানালায় এখনও সকালবেলায় ডাকে পাখি, কয়েক প্রকার।
.
.
*
কিসুই থাকে না আসলে
অনুকূলে
এমনও হতে পারে
এই অঘটনঘটনপটু সংসারে
যে-দুয়ারে যাবা যার ভরসায়
সে হয়তো স্বয়ং অসহায়
আরও অনেক দিন ভুগতে হবে তাহলে।
.
.
*
খাতা ফুরায়া আসতেসে, তাই
সময়টাও বল্গাছাড়াই
তিরিশ মিনিট হয়ে গেসে দশটা বাজার
কতক্ষণ থাকা যায় আর
বাঁশি থেমে গেলে এইবার
দিগন্ত সিমসাং নিক
পুনরায় বাজানো শুরু করে বটম টু পিক।
.
.
*
থাক না, থাক —
বাজাইতেসে, বাজাক
চড়াই, উৎরাই, বাঁক
তেহাই
আমার অত তাড়া নাই
বিষয় না-বাড়াই
কিসুক্ষণ চুপচাপ থাকি
যতক্ষণ থাকা যায়, একাকি
দিগন্তের সঙ্গে একটা হার্মোনিকায়
বিকাল ফুরায়
গাঢ় সন্ধ্যায়
চা-বাগানে এঁড়ে ও বকনা গাইগোরুগুলা ঘাস খায়
মেঘে-ঢাকা রাইতের আকাশতলায়
টিপাইমুখ খুলে দিলে একলগে ভেসে যাব সবাই।
লাল, চিরকাল ৩ ।। জাহেদ আহমদ ।। রচনা : নানান সময়, নানান মুহূর্ত, জুলাই-অগস্ট ২০২৪ ।। ছাপা : ৩০ অগস্ট ২০২৪
লাল, চিরকাল ১ ও ২
জুলাই জেনোসাইড : গানপার সংকলন
- যেহীন আহমদ, অনেক অনেক দিনের পরে… - December 12, 2024
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
COMMENTS