রিয়াজুল আলম, যার দেয়া খবরের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তানি শিবিরে শেষ পেরেক ঠুকে দেয় ভারতীয় মিত্র বাহিনী। পাকিস্তানিদের যুদ্ধ চালানোর বিপুল পরিমাণ রসদ উড়িয়ে দেয়ার মূল অস্ত্রটি ছিল রিয়াজুলের হাতে। বিজয়ের দিন ঘনিয়ে আসে, তরান্বিত হয় হানাদার বাহিনীর আত্মসমার্পণের দিন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুদীর্ঘকালের সহযাত্রী সাবেক ভারতীয় কুটনৈতিক শশাঙ্ক ব্যানার্জির ইন্ডিয়া, মুজিবুর রহমান, ‘বাংলাদেশ লিবারেশন অ্যান্ড পাকিস্তান’ বইয়ে প্রথম স্থান পায় রিয়াজুলের বীরত্বের গাথা। শশাঙ্ক ব্যানার্জি ও রিয়াজুল আলম থাকেন লন্ডনে। দুজনের বাড়িতে বসেই শুনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিস্ময়কর অজানা গল্প।
গল্পের শুরুতে রিয়াজুল আলম বললেন, স্বাধীনতাকামী বাঙালির মুক্তির মিছিলে শরিক হয়েছেন দেশে-বিদেশে থাকা বাঙালিরা। শশাঙ্ক ব্যানার্জি বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী বিশেষ একজন সহযোদ্ধা। কূটনৈতিক হওয়ায় তাঁর ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ কিংবা পাব্লিকলি জানানোতে পেশাগত সীমাবদ্ধতা ছিল। ২০০৮ সালে তাঁর নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বইটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আমার ভূমিকার বিষয়টি উল্লেখ করায় আমি আজ বলতে পারছি। তার আগে আমার বলাটা পাগলের প্রলাপ হিসেবেই বিবেচিত হতো। একটা অস্বাভাবিক মুহূর্তেই রিয়াজুল দেশ ছেড়েছিলেন। পূর্ব-পাকিস্তানের চারদিকে বৈষম্য, রুদ্ধ স্বাধিকার। পারিবারিকভাবেই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তাঁর বেড়ে ওঠা। ঠাকুরগাঁও স্কুল থেকে মেট্রিক, দিনাজপুর সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস। তিনি বলেন, কলেজে পড়ার সময় যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে ছাত্রকর্মী হিসেবে যোগ দিই। দিনাজপুর ছাত্র ইউনিয়নের একসময় সহসভাপতি ছিলাম। কেন্দ্রীয় যুবলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ সুলতানের অনুপ্রেরণায় ঢাকায় ন্যাপ গঠনের সম্মেলনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিয়েছিলাম। সম্মেলনে আসা বাপন্থী নেতা খান আবদুল গাফফার খান, মিয়া ইফতেখার উদ্দিন, আব্দুস সামাদ আচাকদাই, আবদুল মজিদ সিন্ধী, মুহম্মদ কাসুরী আর মাহমুদ খান জানজুয়া সহ অতিথিদের দেখাশোনার দায়িত্ব পড়েছিল আমার উপর। মোট কথা, একটু ইংরেজি বলতে পারায় আমি তাদের কাছে আসার সুযোগটি পেয়েছিলাম।
এদিকে, সম্মেলনে দেখা-হওয়া পরিচিতজনের সহযোগিতায় ট্রাভেলগ নামের একটা ট্রাভেল অ্যাজেন্সিতে কাজ পেয়ে গেলেন রিয়াজুল। যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা বেড়েছে। নাম উঠেছে পুলিশের খাতায়। ১৯৫৮ সাল আইয়ুব খানের মার্শাল ল চলছে। ধরপাকড়ের রাতে অফিস থেকে কয়েকদিন ছুটি নিলেন তিনি। বললেন, পুলিশের খাতায় নাম, দেশ থেকে পালানোর সুযোগ ছিল না। আর ইচ্ছে থাকলেও পাসপোর্ট পাওয়া যাবে না পুলিশি তদন্ত ছাড়া। আমার সংকটময় অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়ালেন স্ক্যান্ডেনেভিয়ান এয়ারলাইনসের পরিচিত ড্যানিশ ম্যানেজার সরেনসান। ট্রাভেলগে চাকরির সুবাদে দেশের বাইরে শর্ট ট্রিপের ব্যবস্থা হয়ে গেল। আর জরুরি দেখিয়ে পুলিশি তদন্ত ছাড়া পাসপোর্টের ব্যবস্থা করে দিলেন এসএম নূর নামের পাসপোর্টঅফিসের কর্মকর্তা। নানান প্রতিবন্ধকতার মাঝে ১৯৬০ সালে দেশ ছেড়ে লন্ডনে পৌঁছান রিয়াজুল। ট্রাভেল অ্যাজেন্সির কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে কাজ খুঁজছেন। দেশ থেকে সাথে নিয়ে আসা টাকাও শেষের পথে। একদিন কাশ্মিরি ভদ্রলোক রিয়াজুল আলমকে জানালেন, জানজুয়া নামের একজন আছেন দেখা করলে ট্রাভেল অ্যাজেন্সির কাজ জুটে যেতে পারে! লন্ডনে পাকিস্তান এয়ারলাইনসে প্রধান হিসেবে কাজ করছেন জানজুয়া। যার সাথে রিয়াজুলের দেখা হয়েছিল ঢাকায় ন্যাপ সম্মেলনে।
বামপন্থী রাজনীতিক মাহমুদ খান জানজুয়ার সাথেই দেখা করলেন রিয়াজুল। জানজুয়া ঠিক তাঁকে মনে রেখেছেন। পরের সপ্তাহে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্স (পিআইএ) সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগে চাকুরি হয়ে গেল তাঁর। চাকুরির পাশাপাশি কস্ট আকাউন্টিং পড়তে ভর্তি হলেন রিয়াজুল। ‘পাকিস্থান হাউস’ তখন পশ্চিম পাকিস্তানিদের দখলেই বলা চলে। বাঙালিদের থাকার সুযোগ দিতে নানা টালবাহানা।পূর্ব-পাকিস্তান থেকে বিলেতে পড়তে আসা ছাত্রদের নিয়ে ওই হাউসের পাশেই তাঁরা গড়ে তুললেন ‘পূর্ববাংলা হাউস’। স্বাধীনতার পর পূর্ববাংলা হাউসকে দলিল হস্তান্তর করেছিল পাকিস্তান হাউস। প্রতিবাদী রিয়াজুলের বামঘেঁষা কর্মকাণ্ড চলতে থাকে। বাঙালি চেতনার বাইরেও তার বিস্তার পায় দিনদিন। রিয়াজুল আলম বলছিলেন, কমিউনিটি ফর নিউক্লিয়ার ডিসআর্মানেন্ট-এর প্রতিবাদমিছিলে লন্ডনে খ্যাতনামা দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের সাথে হাঁটার স্মৃতি তাকে এখনও উজ্জীবিত করে। দক্ষিণ-আফ্রিকায় বর্ণবাদবৈষম্যের প্রতিবাদকর্মসূচিতে সরাসরি যুক্ত ছিলাম। মোদ্দা কথা, নানা দেশ থেকে বাম-রাজনীতির কারণে দেশত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে সম্পৃক্ততা বেড়ে যায়।
২৬ মার্চ ১৯৭১। সব হিসাব বদলে গেল রিয়াজুল আলমের। তিনি বলছিলেন, পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের কাজ ছেড়ে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের জনমত সংগ্রহের কাজে যোগ দেবো বলে মনস্থির করি। এরই মাঝে খবর পাই বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী লন্ডনে বাংলাদেশের পক্ষে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া শুরু করেছেন। দেরি না করে সাঈদ চৌধুরীর সাথে দেখা করে তাঁর কাছে পরামর্শ চাইলাম। আমার কাছ থেকে সবকিছু শুনে সাঈদ চৌধুরী বলেন, পাকিস্তান এয়ারলাইন্সের চাকরিটা ছেড়ো না, কামড় খেয়ে পড়ে থাকো। একসময় আমাদের খুবই কাজে লাগবে। সতর্কতার সাথে খবর সংগ্রহের চেষ্টা যেন অব্যাহত রাখি। এরই মাঝে বিচারপতি চৌধুরী ভারতীয় দূতাবাসের রাজনৈতিক কর্মকর্তা শশাঙ্ক ব্যানার্জির সাথে রিয়াজুল আলমকে পরিচয় করিয়ে দিলেন যে-কোনো বিশেষ তথ্য তাঁকে দেয়ার জন্য। অন্যদিকে ভারতীয় সাংবাদিক তারাপদ বসুর সাথে তাঁর পরিচয় ছিল আগে থেকেই। খবর সংগ্রহে রিয়াজুল আলম তাঁর কাছেও সহযোগিতা পেলেন। প্রতি ফ্লাইটে দুইশ’ সৈন্য পাকিস্তানে যাচ্ছে অফিসে-আসা ট্যালেক্স থেকে জানালেন রিয়াজুল। ইতালিয়ান এয়ারলাইন্সের মিলানে কর্মরত এক ভারতীয় বন্ধু জানালেনপাকিস্তান ইতালির তুরিন শহর থেকে যুদ্ধবিমান, অ্যান্টিট্যাঙ্ক মর্টার কিনছে আর এসব রসদ পাঠানো হচ্ছে করাচির কাছে নওয়াব শাহ বিমানবন্দরে। খবরের আদানপ্রদান সতর্কতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছিলেন রিয়াজুল।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ, একটা জরুরি ট্যালেক্স প্রত্যাশা করছিলেন রিয়াজুল। বললেন, বিপত্তি হলো পাকিস্তান-সময় ভোর ছয়টা আর লন্ডন-সময় রাত দুইটায় তার কাঙ্ক্ষিত ট্যালেক্স আসার কথা। ওইদিন আমার ডিউটি ছিল না। উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়, বার্তাটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। ইচ্ছে করে দিনের ফ্লাইট ম্যুভমেন্ট শিট পাঠাইনি, একটা অজুহাত তৈরি রাখলাম। সাহস করে রাত দুইটায় অফিসের তালা খুলে ভেতরে ঢোকার পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হন তিনি। জরুরি বার্তা পাঠানো হয়নি বলে পুলিশের কাছ থেকে রেহাই ঠিকই পান রিয়াজুল। ক্ষতি যা হলো পুলিশ পাকিস্তান এয়ারলাইন্সকে জানিয়ে দেয় তার রাতে অফিসে ঢোকার কথা। ফলাফল, কর্তৃপক্ষ পরদিন রিয়াজুলের কাছে থাকা অফিসের চাবিটি নিয়ে নেয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়া রিয়াজুল কিছুই ভেবে পাচ্ছিলেন না। তাহলে কী আর খবর দেয়া যাবে না! এয়ারলাইন্সের পোলিশ ম্যানেজারের দ্বারস্থ হয়ে রিয়াজুল বললেন, তার অফিসে ট্যালেক্সমেশিনের প্যারালাল একটা লাইন বসাতে চান। নাৎসি বাহিনীর হাতে পরিবার হারানো ম্যানেজার রিয়াজুলের আকুতি বুঝতে পেরে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সমস্যা হলো যিনি কাজটি করতে পারবেন এয়ারলাইন্সের লাইন কমিউনিকেশন ম্যানেজার মি. কয়েন বসেন ব্রাসেলসে। শেষ পর্যন্ত প্যারিসে গিয়ে ইহুদি বংশোদ্ভূত ম্যানেজার কয়েনের সাথে মিলিত হন রিয়াজুল। তাঁকে বলেছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আপনি যদি ত্রিশবছরের তরুণ থাকতেন আর আপনার একটা চেষ্টায় যদি হাজার হাজার ইহুদী প্রাণে বেঁচে যেত আপনি কি করতেন? বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বোঝাতে সমর্থ হয়েছিলেন রিয়াজুল। কয়েকদিনের মাঝে সম্পূর্ণ বেআইনী হলেও নিজের অফিসডেস্কে একটি প্যারালাল ট্যালেক্সবার্তা রিসিভ করার মেশিন পেয়ে গেলেন। সবার অগোচরে চলতে থাকে রিয়াজুলের গোপন তথ্য পাচার অভিযান। অফিসে তার চলাফেরায় কঠোর সতর্কতা অবলস্বন করতে হতো।
রিয়াজুল আলম আরও জানান, “শশাঙ্ক ব্যানার্জি ও বিচারপতি সাঈদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ থাকলেও সবাইকে বুঝতে দিই মনেপ্রাণে পিআইএর চাকুরি করছি আমি। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও লন্ডনে মিছিল-জনসংযোগে যেতে পারি না। বিচারপতি সাঈদ চৌধুরীর কড়া বাধা আমি যেন নিজেকে বুঝতে দিয়ে ক্ষতির কারণ না হই। রিয়াজুল আলম বললেন, ইউরোপের নানা দেশে থাকা বামপন্থী দীর্ঘদিনের পরিচিত বন্ধুরা আমাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। তেমনি মার্কিন পিসকোরের এক সদস্যের সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল কোপেনহাগে। তাঁর ব্যক্তিগত কার্ড দিয়েছিলেন। খুঁজে বের করে ফোন দিয়ে দেখি তিনি কাজ ছেড়ে অবসরে চলে গেছেন অনেকদিন। অনেক চেষ্টায় তাঁকে খুঁজে বের করেন রিয়াজুল। ফোনে তাঁকে বলেছিলেন, পাকিস্তানের জন্য আপনার দেশ আমেরিকা ভারতের বিপক্ষে কিন্তু আমরা বাঙালিরা কেন জীবন দেবো! সহযোগিতা চাই।” বাহাত্তর ঘণ্টা সময় চেয়ে তাঁকে বলেছিলেন, “তোমার সাথে কেউ-একজন যোগাযোগ করবে।” ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সাথে প্রচণ্ড যুদ্ধে জড়িয়েছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধরসদের পরিস্কার খবর ভারতীয় মিত্র বাহিনীর হাতে নেই। এক দুপুরে তেহরান থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত অতিগুরুত্বপূর্ণ ট্যালেক্সটি আসে রিয়াজুলের হাতে। পাকিস্তানের অস্ত্রশস্ত্রের ঘাটতি পূরণ করতে আমেরিকার সহায়তায় ইরানের জাহিদান থেকে দুই ডিভিশন সৈন্যবাহিনীর বিপুল পরিমাণের আধুনিক মারণাস্ত্রের চালান পৌঁছেছে পাকিস্তানের কোয়েটায়। রাত পার হলে করাচি ও মোলতান হয়ে যুদ্ধাঞ্চলে অস্ত্র যাবে রেলপথে। খবরটি শোনার পর আর একটুও দেরি করেননি রিয়াজুল। লেস্টার স্কোয়ারে দাঁড়ানো শশাঙ্ক ব্যানার্জির কাছে একটা চিরকুট দিয়েই চলে আসেন। খবর পৌঁছে যায় দিল্লিতে। ভারতীয় বাহিনী দুঃসাহসিক বিমান হামলা চালিয়ে কোয়েটা রেলস্টেশনে অপেক্ষারত ৩০টিরও বেশি মারণাস্ত্রভরা মালগাড়ির বগিগুলো উড়িয়ে দেয়।
বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস থেকে সেই খবরটি প্রচারিত হয়। পাকিস্তানি বাহিনী বিপুল পরিমাণ রসদ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। যুদ্ধ চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেইসময় রিয়াজুল আলমের কাছ খেকে পাওয়া বার্তাটির গুরুত্ব সম্পর্কে শশাঙ্ক ব্যানার্জির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দুরন্ত সাহসী ও বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন মানুষ রিয়াজুল। সেই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোপনবার্তাটিই তিনি দিয়েছিলেন।” তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান যদি সেই মারণাস্ত্রগুলো ব্যবহার করার সুযোগ পেত, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পরিণতি হতো ভয়াবহ। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভাগ্য কি হতো ভাবাও যায় না। লাখো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন রিয়াজুল আলম, বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত করেছে তাঁর দেয়া খবরের উপর ভিত্তি করে। কোথায় কখন কতগুলো মারণাস্ত্র কোন ট্রেন ধরে যাবে সব তথ্যই ছিল তাঁর সেই নোটে।” রিয়াজুল আলমের বীরত্বগাথার ইতিহাসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া জরুরি। স্বাধীনতার স্বাদ আমরা সহজেই পেয়েছি। আর সেখানে বাংলাদেশের যুদ্ধজয়ের বিশেষ নায়ক রিয়াজুল আলম।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নিজের অকোতভয় সংযুক্তির বিষয়টি কেন অপ্রকাশিত রাখলেন? বীরত্বের স্বীকৃতি কি দিয়েছে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নে রিয়াজুল আলম বললেন, “দেশের স্বাধীনতা চেয়েছিলাম, স্বীকৃতির ধার ধারিনি। সর্বোপরি শশাঙ্ক ব্যানার্জি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরাট অংশ জুড়ে অবদান রেখেছেন। তিনি আমার সম্পর্কে না বললে বিষয়টি অপ্রকাশিতই থেকে যেত।” বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলি বইটিতে উল্লেখ আছে রিযাজুলের কথা। শশাঙ্ক ব্যানার্জির মাধ্যমেই লন্ডনে প্রয়াত ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন তাঁর বিজয় দিবসের পর বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ বইটিতে রিয়াজুল আলমের কথা লিখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের জন্য স্বাধীনতা পুরস্কারে সম্মানিত করার জন্য সরকারকে বার-কয়েক প্রস্তাব করেছেন তিনি। না, বাংলাদেশ সরকার রিয়াজুলের আর খোঁজ করেনি। রিয়াজুল আলম বললেন, “দেশের জন্য জীবন বাজি রাখাটা একজন মানুষ হিসেবে আমি নৈতিক দায়িত্ব হিসেবেই মনে করেছিলাম। স্বীকৃতি পেলাম কি পেলাম না সেটার ধার ধারিনি কোনোদিন। স্বাধীনতার চারদশকের উপর হলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত মুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারিনি; তবুও, বুকভরে বলতে পারি স্বাধীন বাংলাদেশ। বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে আসতে আমার নগণ্য ভূমিকা ছিল সেটাই অনেক।”
আমাদের কথা শেষ হয়। ঘর থেকে বের হওয়ার পথে দেখা হয় একাত্তরে জন্ম নেয়া রিয়াজুল আলমের ছেলে রাজিউল আলমের সাথে। তার কাছে জানতে চাই বাবার যুদ্ধদিনের কথা। রাজিউল বললেন, “আমার বাবা দেশের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন। তাঁর সন্তান হিসেবে আমরা খুবই গর্বিত। প্রবাসে থেকেও নিজ দেশের প্রতি আমার বাবার অবদান নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে। ইতিহাস বাবাকে ভুলবে কী করে!”
… …
- মৌলভিস্যার, মেসো, মাতৃধর্ম ও কতিপয় বেকুব || উজ্জ্বল দাশ - May 11, 2021
- বিলেতে সেই জনসভার ৫০ বছর || উজ্জ্বল দাশ - April 7, 2021
- দি ইনফর্মার ১৯৭১ || উজ্জ্বল দাশ - March 26, 2021
COMMENTS