এক ছাদ থেকে বার-বি-কিউ চিকেনের গন্ধ আসছিল। দেখলাম ওনারা করতেছেন বাসার সবাই মিইলা।
বারান্দায় আমি কমই যাই। যাই না যে তা না। তবে মনে হবে যাই-ই না। উপরের দৃশ্য দেখছিলাম ওই যাওয়া যখন হইছিল, তখন। একত্রে আরও দৃশ্য দেখার জন্য একটু আকাশটাকাশ চোখ বুলায়ে বিল্ডিং দেখে চোখ নামায়ে আবার নিজের চাইরকোনা দেখতে হয়। দেখার নিয়ম যেইটা আর কি। পারস্পেকটিভ। রিলেটিভিটি। কয়েকটা ফানুস দেখলাম। অতি উজ্জ্বল একটা দেখলাম অনেক দূরে। দূরে কিন্তু মনে হলো হাত বাড়ালেই পাবো। লাল রঙের।
পরে অনেক সময় সব বাজনা ও ফাটাফুটি হইয়া যাওয়ার পর কোরাসে গান গাইতে শুনলাম। অনেক ছেলে একসঙ্গে গাইতেছে। খুব স্পষ্ট। কিন্তু অনেক দূরে যে, সেইটা ওই ফানুসের দৃশ্যটার মতো একই ডিটেইলসে। ‘ওরে নীল দরিয়া’ গাইতেছেন দলটা। কোনো-একটা উত্তর দিকের ছাদে। লিডার গলাটা খুব রেসিপ্রোকাল। অন্যদের প্রায় বিলীন করে দেয় কিন্তু অন্যরা তাও অমোঘ কোনো নিয়তির মতো তাল ধইরাই রাখে। কি জানি, এইটাই হয়তো গান। বা এইটাই হয়তো সুর। বা কি, জানি না। অনেকদিন এত ভালো গলায় ‘নীল দরিয়া’ শুনি নাই।
পরে আবার দলটা গাইতেছিল ‘যুদা হো কে ভি, তু মুঝ মে কাঁহি বাকি হ্যায়’। ঠিকঠাক অনুভূতি দিয়েই গাওয়া।
মানুষের গানের মতো অর্থপূর্ণ জিনিস যেই নিরাকারের সাথে সামিল হইতে চায়, তার ধাওয়া এবং পারফরমেন্স খুবই সাবলীল ঘটনা হিসেবে মাইনা নিতে পারছি তখনই যখন আসলে অনেককিছু ঠিকঠাক দেখলেও বুঝতাম যে কিছুই ঠিক নাই। আরও পরে পরিষ্কার হইছি যে, ‘ঠিক’ হইল একটা ব্যক্তিনির্দেশিত পরিক্রমা। অর্থাৎ, নিজে কূল পাওয়ার ঘটনা। ওইটা একটা বাইকে হেলান দেওয়ার মতো কখনও অল্প একটু স্বস্তির হইলেও স্বস্তি। যেহেতু স্বস্তি কোনো স্টিডি ব্যাপার নয়। অল্প আর বেশির কথা তাই স্বস্তির ক্ষেত্রে বলা অগাণিতিক। তা-ও পরিমাণসূচক বিশেষণে বলার দরকার রইয়াই যায়।
যেইখানে বইসা এইসব কথা চলতেছে, মানে আমি যে লিখতেছি, তা আমিই লিখতেছি; দূরে ফানুস আছে শুকতারার মতো, আসলে যারা গান গাইতেছে ওরা আমি না হইলেও আমার থেকে তত ভিন্ন কেউ নয়। যারা জোরে বাইক চালায়ে যাইতেছে, এইখানে বইসাও যেইটা আমি সরাসরি স্পিড ও থ্রিল — একইসঙ্গে দুইটা অনুভূতি দ্বারা বুঝতে পারঙ্গম; তারা অচেনা নয়। পুলিশের গাড়ির সাইরেন যতগুলা শুনছি, সবগুলাই ভীতিজাগানিয়া নয় যে, তা জানি।
তারপরও এইটা বলা ঠিক হবে না যে, সবাই হইতেছে আমি। আসলে আমি বা সময়, কোনোটাই খুব স্পেসিফিক না।
তবে এই লেখার উদ্দেশ্য এইটা ছিল না যে এইখানে আইসা এই কথা দিয়া শেষ হবে। বরং ভালো হইল যে, একটা অভিমুখ থাকতেছে। অভিমুখের যে কি দরকার সেইটা মূল্যবান না-হইলেও কখনও কখনও মাল্যবানের* জন্য দরকারি বটে।
*মাল্যবান — (বিশেষণ), মালা ধারণকারী / মাল্যধারী
০১/০১/২০২৩
আনম্য ফারহান রচনারাশি
বিচিত্র রচনার গানপার
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS