সান্স অ্যান্ড ডটার্স অন স্যান্ অ্যান্দ্রেস্

সান্স অ্যান্ড ডটার্স অন স্যান্ অ্যান্দ্রেস্

মেয়েটা প্রায় প্রত্যেকটা সংলাপ ছেলেটাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, ছেলেটাও বুঝবুদ্ধিতে কম যায় না, তর্কাতর্কিও হচ্ছে দুজনের ভিতর অতর্কিতে এবং পরক্ষণেই হা হয়ে দেখছে দুজনে সিনেমার দৃশ্যকল্পগুলো। দুজনে ভাইবোন পরস্পর, চাচাতো, উচ্চাবচ বয়সের। মেয়েটা ক্লাস্ ফোর, ছেলেটা ওয়ান, দুইজনের পৃথক দুইজোড়া বাবা-মা; মেয়েটার নাম জানা গেল ঊর্মি, ডাকনামই নিশ্চয়, ছেলেটার নাম রোহান। যে সিনেমাটা তারা দেখছে, সেই সিনেমার নাম ‘স্যান্ অ্যান্দ্রেস্’; সিনেমাটা জুড়ে ভূমিকম্পের ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজমান। সিনেমাটা রিসেন্টলি রিলিজড, ডিরেক্টেড বাই ব্র্যাড প্যিটান, রক নামে সমধিক পরিচিত ডোয়্যেইন জন্সন অভিনয় করেছেন যথেষ্ট মনুষ্যমতন। একে তো রকের সিনেমা বাচ্চারা এমনিতেই দেখতে মজা পায়, মাইটি ফিজিক্যাল অ্যাপিয়্যার‍্যান্সের জন্যই হয়তো, তদুপরি সিনেমায় আছে অবিশ্বাস্য এফেক্টের কারসাজি; অ্যামেরিক্যা আর্থক্যুয়েইক দেখানো হয়েছে কল্পিত কাহিনির বুনটে এবং ক্যালিফোর্নিয়া-স্যানফ্র্যান্সিস্কো সহ অতিকায় অ্যামেরিক্যার হাইরাইজ ইমারত আর ড্যামগুলো ধূলিস্যাৎ হচ্ছে দেখে বাচ্চাদের চক্ষু চড়কগাছ, বেদনাও অনুভূত হচ্ছে তাদের চোখেমুখে হাজার হাজার মানুষের দিগ্বিদিক ছোটোছুটি আর হাহাজারি দেখে।

san andreas posterসিনেমার ল্যাঙ্গুয়েজ বোঝার কথা না এই দুই তিফিল বাচ্চার, ওদের মাদার-টাং তো আংরেজি না, তারপরও; মনোনিবিষ্ট হলেই বোঝা যায় যে এরা মোস্ট অফ দি কেইসেস সংলাপ ঠাহর করে ফেলছে ঠিকঠাক। দেখা যাবে যে ঊর্মি বলছে এই সিনে রক্ তথা এই সিনেমায় র‍্যে চরিত্রে রূপদানকারী ডোয়্যেইন জন্সন তার বউরূপী কার্লা গ্যুগিনো তথা যার কাহিনিনাম এমা তার সঙ্গে তাদের মেয়ে ব্লেইক নামে অভিনয়কারী অ্যালেক্সান্দ্রা দ্যাদারিয়োকে রেস্কিয়্যু করতে যাবার কথা বলেছে, রোহান ডিস্যাগ্রি করে বলছে “না বে আপ্পি, হেলিকপ্টার থেকে প্যারাশ্যুট ড্রাইভের কথা বলেছে; দ্যাখ দ্যাখ, হেলিকপ্টারের তেল ফুরাইয়া গ্যাছে।” দ্যাখা যায় যে দুজনের কথাই ঠিক। এছাড়াও অন্যান্য সংলাপ লক্ষ করলে দেখা যায় দুইজনের ডিস্যাগ্রিমেন্ট সম্ভাব্য অ্যাগ্রিমেন্টের খুবই নিকটবর্তী। ন্যাচার‍্যাল ক্যাটাস্ট্রোফি নিয়া কাহিনি আবর্তিত হওয়ায় খুবই ফোকাসড ম্যুভির সংলাপ ও অন্যান্য টেক্নিক্যাল ন্যারেটিভিটি; যদি না-ও হয়, সেইসব ম্যুভির ক্ষেত্রেও দেখা যায় বাচ্চারা তাদের কল্পনা ব্যবহার করে সংলাপ বানায়, দৃশ্যের নিরিখে সেই প্রম্পট বানানো সংলাপসমূহ খুবই ইন্ট্রেস্টিং হয়ে থাকে। মাতৃভাষার ম্যুভি হলে এই কল্পনা ব্যবহারের সুযোগটা বাচ্চারা পায় না। আর ঊর্মি-রোহানদের নসিব খুব ভালো তো বলা যাবে না; তারা এমন একটা মাতৃভাষায় জন্মেছে যে-ভাষায় তাদের জন্য, তাদের বিশেষ-বয়সের বিনোদনচাহিদা মাথায় রেখে, দশকে-শতকে একআধলাও ম্যুভি/সিনেমা বানানোর কোনো নজির অদ্যাবধি ক্রিয়েট হয় নাই। ইভেন তাদের মা-বাপেদের জন্যও ম্যুভি ডিকেডের এমাথা-ওমাথা খান-চারেক হয়েছি কি না স্বাধীনতার চালশে বয়সে, ক্যাল্কুলেইট করে দেখতে হবে। গেছে সেঞ্চুরিতে হয় নাই, এই সেঞ্চুরিতে হবে? তেমন লক্ষণ কি তিনব্যাটারির টর্চ জ্বালিয়েও দেখা যাচ্ছে?

এই তিফিল বাচ্চাদের সঙ্গে অ্যানিমেশন বলুন বা সাংঘাতিক হরর কোনো স্পেশ্যাল্-এফেক্টের ম্যুভি দেখতে যেয়ে স্ক্রিনে-সেঁটে-রাখা তাদের সবিস্ময় চাহনি, ইতিউতি-কুঁচকানো মুখরেখা, তাদিগের ইনোসেন্সতাড়িত প্রশ্নাতুর এক্সপ্রেশন্স লক্ষণীয়। “রোহান তো তোমার আপন ভাই না, তাই না?” — এহেন সপ্রশ্ন খোঁচায় ঊর্মি রিয়্যাক্ট করে, ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, “উঁ! কে বলেছে! আমরা আপন ভাইবোন। রোহান আমার আপন চাচার ঘরের ভাই।” যা-ই-হোক। ঘটনা এইটাই। শিশুদের জগতেই বিস্ময়ের অপার প্রবালদ্বীপের দেখা পায় বয়স্করা। আর শিশুদের জগতের বিচিত্র লীলা চাক্ষুষ করা যায় নিবিড়ভাবে তখনই, যখন তারা কার্টুন বা অ্যানিম্যাশন ছায়াছবি ইত্যাদি দেখতে বসে। কেবল চুপচাপ দৃশ্যান্তরের সঙ্গে সঙ্গে শিশুদর্শকদের ভাবান্তর, তাদের চোখের ঝিলিক ও গালের আভা, তাদের মুখের টানটান পেশী ইত্যাদি নিরিবিলি লক্ষ করে গেলে ব্যাপারটা পাঠ করা যায় একটা আলাদা স্টেপ থেকে।

ঘণ্টা বাজে মাঝেমাঝে

কিছুদিন আগে ক্যাঁচরম্যাচর বাচ্চাদের সঙ্গে বসে একটা সিনেমা দেখছিলাম। সেই সিনেমার নাম ‘স্যান্ অ্যান্দ্রেস্’; সিনেমাটা জুড়ে ভূমিকম্পের ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূমিকম্প নিয়া আগেও ম্যুভি হয়েছে, ইংরেজি সিনেমাই বেশি, সেগুলো সবটা না-হলেও অধিকাংশই হিট হয় স্যুপারড্যুপার। ডুমস্-ডে/কেয়ামত নিয়া জাতিধর্মনির্বিশেষে বেবাক লোকের মধ্যেই কিয়্যুরিয়োসিটি বিদ্যমান, ভূমিকম্প/জলোচ্ছ্বাস/স্যুনামি নিয়া ছায়াছবিগুলো ধুমধাড়াক্কা স্পেশ্যাল্-এফেক্ট সত্ত্বেও জনপ্রিয়তায় থাকে তাই তুঙ্গে। অ্যানিওয়ে। ‘স্যান্ অ্যান্দ্রেস্’ সিনেমাটা রিসেন্টলি রিলিজড, ২০১৫ সনের ম্যুভি, ডিরেক্টেড বাই ব্র্যাড প্যিটান্, রক্ নামে সমধিক পরিচিত কুস্তিগীর ডোয়্যেইন্ জন্সন্ অভিনয় করেছেন যথেষ্ট মনুষ্যমতন। একে তো রকের সিনেমা বাচ্চারা এমনিতেই দেখতে মজা পায়, মাইটি ফিজিক্যাল্ অ্যাপিয়্যার‍্যান্সের জন্যই হয়তো, তদুপরি সিনেমায় আছে অবিশ্বাস্য এফেক্টের কারসাজি; অ্যামেরিকা আর্থক্যুয়েইক্ দেখানো হয়েছে কল্পিত কাহিনির বুনটে এবং ক্যালিফোর্নিয়া-স্যানফ্র্যান্সিস্কো সহ অতিকায় অ্যামেরিকার হাইরাইজ্ ইমারত আর ড্যামগুলো ধূলিসাৎ হচ্ছে দেখে বাচ্চাদের চক্ষু চড়কগাছ, বেদনাও অনুভূত হচ্ছে খেয়াল করা গেল তাদের চোখেমুখে হাজার হাজার মানুষের দিগ্বিদিক ছোটোছুটি আর হাহাজারি দেখে। রেস্কিয়্যু প্রোগ্র্যাম্ পরিচালনকালীন অসংখ্য ঘটনা-অঘটনা নিয়া সিনেমা আবর্তিত হয়েছে।

এইবার সিনেমার বাইরে একেবারেই রিয়্যাল্ লাইফে একটা আর্থক্যুয়েইকের সময় শিশুদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল খোঁজ নিতে যেয়ে দেখলাম যে এই একটা বিষয়ে অ্যাডাল্ট-চাইল্ড পার্থক্য নাই। শিশুরাই বরং সবার আগে টের পায়। যেমন মনুষ্যবৈশিষ্ট্যহীন অন্য প্রাণিরা প্রাকৃতিক পূর্বাভাস টের পায় সবার আগে। এইবারকার ভূমিকম্প সংঘটনাকালীন, ২০১৬ বর্ষশুরুর চতুর্থ দিনে, ভোররাতের দিকে একসঙ্গে জেগেছিল ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে গোটা বাংলাদেশ। ভয়ে, অসহায়, আতঙ্কে। সেই মুহূর্তে যারা রাত্রিজাগৃতির শেষে ঘুমাতে যেতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তারা পূর্ণ সম্বিৎ নিয়ে শুনেছেন প্রকৃতির মন্দ্রসপ্তক, শুনেছেন সারাদেশের সিরামিক্ আর কাটল্যারিজ্ ও কিচেন্-ম্যাটেরিয়্যাল্স একসঙ্গে বেজে উঠলে কেমন অপার্থিব সুর তৈয়ার হয়! এবং দেখেছেন অভিভাবকের আগে কেমন করে টের পায় শিশুরা তাদের শরীরে ভূমির নড়ন। সহকর্মীদের সঙ্গে এ-নিয়ে কথা বলতে যেয়ে জেনেছি যে, প্যারেন্টসের আগে বাচ্চা খাট থেকে হুড়মুড়িয়ে নামতে যেয়ে কারো আঙুল মচকেছে কারো-বা মাথায় লেগেছে। এর ব্যত্যয় পাইনি কারো কথাতেই, নিদ্রোত্থিত হয় নাই এমন একজনও বাচ্চা পাই নাই সেই আলাপজরিপে।

san andreas
এমনিতে আমরা যখন বাসে চেপে দূরে কোথাও ভ্রমণ করি, বিশেষত নৈশকালীন বাসভ্রমণ করি যখন, পুকুরঘাটলায় আছড়িয়ে কাপড়কাচার মতো পর্যুদস্ত অবস্থা বানিয়ে বাস্ আমাদেরে গন্তব্যে নিয়া ফালায়। এরপরও ঘুম হয় দিব্যি বাসের পেটের ভিতরে এত দুর্বিষহ ঝাঁকুনিতেও। অথচ কয়েক সেকেন্ডের মাইল্ড ভূমিকাঁপুনিতে একটা বাচ্চাও বুঝিয়া যায় সামথিং ইজ্ হ্যাপেনিং! এর নাম ন্যাচারাল্ ক্লক্। মানুষের শরীর একটা প্রাকৃতিক ঘড়ি বৈ কিছু তো নয়। এবং শিশুদের ঘড়ির শার্পনেস্ বয়স্কদের চেয়ে বেশিই হয়ে থাকে সংগত কারণে। পিঁপড়া বা বিড়াল-কুকুর, মুর্গি-পাখি ইত্যাদি প্রাণির ক্লক্ আরও শার্প। অবাক হয়ে ভাবি প্রত্যেকবার আর্থক্যুয়েইকের পরে, এবং ফের ভুলেও যাই যে, মানুষ কীভাবে-যে এবং কত-প্রকারেণ প্রকৃতির সঙ্গে জড়ানোমোড়ানো! বছরে এই যে এক-দুইবার ঘড়িঘণ্টা বাজে, বেজে ওঠে ন্যাচারাল্ সাইরেন্, কী বার্তা জানায়ে যায়? আদৌ কী জানাতে চায় কিছু? নাকি নিছক আড়মোড়া ভাঙে মাঝেমাঝে প্রকৃতিও?

ভূমিবিচলন ও অন্যান্য কম্পন

আপনাদের ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়। গরু-মোষ সব জবাই করলে কি হবে অবস্থাটা? বুনো ঘোড়া পোষ মানিয়ে চালাবেন? অরণ্যের গোপন অঞ্চলগুলি যখন মানুষের ঘামের গন্ধে উঠবে ভরে, এবং উঁচু পাহাড়ের চূড়া আলাপী তারের আলাপে পড়বে ঢাকা, তখন কি হবে? ঝোপঝাড়, বনবাদাড় যাবে কোথায়? সব উধাও। ঈগলপাখি যাবে কোথায়? উধাও, উধাও। আর ক্ষিপ্রগতি টাট্টু ঘোড়া আর শিকারকে অকালে বিদায় জানাতে হলে কেমন হয় ব্যাপারটা? তখন ফুটে উঠবে জীবনের অন্তিম দশা এবং শুরু হবে ধুঁকে ধুঁকে জীবনের পথে চলা।

আমাদের কি ইয়াদ হবে, এই কিছুদিন আগেও আমরা আমাদের বন্ধুদের বাড়ি খুঁজে বের করতাম কোনো-একটা গাছের অবস্থান নির্ণয়ের মধ্য দিয়া? হাইস্কুলে পড়ার সময় ক্লাসমেটদের বাড়িতে পারস্পরিক গতায়াত শুরু হয় আমাদের। পাশের পাড়ায়, কিংবা তার দুই পাড়া পরে, এমনকি সাতপাড়া দূরেও কোনো কোনো বন্ধুর বাড়ি। প্রথমবার বাড়ি চিনে নেবার ক্ষেত্রে একটা সনাক্তিকারক চিহ্ন তো চাই। ছিল সেইটা, গাছ, নির্বিকল্প কোনো-না-কোনো ফলদ/বনজ বৃক্ষই ছিল তখন পাড়া/বাড়িচিহ্নায়ক কম্পাস্। রূপকথার গল্পে যেমন থাকত, যেতে যেতে যেতে যেতে দেখতে পাবে একটা তালবৃক্ষ, অবিকল তা-ই ছিল। দশক-দুই আগের ব্যাপার। আজ মনে হয় যেন সহস্র বছরেরও দূর কোনো জগতের কল্পকাহিনি। কিন্তু ঘটনাটা আজকে বলার সময় ‘বাস্তব’ বিশেষণ বসিয়েও মরমে পশানো মুশকিল যে ব্যাপারটা আমাদের জীবনেই ছিল। প্রত্যেকটা পাড়া চিহ্নিত হতো বট বা পাকুড় বা তাল ইত্যাদি বিচিত্র গাছচিহ্ন অনুসারে। এবং প্রত্যেকটা বাড়ি/হাউজহোল্ড সুপুরি কি কলা বা কদম ইত্যাদি গাছবেষ্টনী দিয়াই ছিল অভ্যাগতদের জন্য অপেক্ষমান। আর এখন? পাড়া বা মহল্লা আলাদা করা খালি সিটি কর্পোরেশনের ম্যাপেই আছে, চেনা প্রায় ইম্পোসিবল্ কোনটা কার পাড়া। বাড়িগুলোর চিহ্ন এখন কয়েকটা নাম্বার আর হাউজিংনাম, প্রত্যেকটা বাড়ি বিলবোর্ডের বেষ্টনী দিয়া লাঞ্ছিত। দুদিন বাদে বাদে সেইসব বিলবোর্ড/হোর্ডিং পাল্টায়, কার বাপের সাধ্যি তখন বন্ধুর বাড়িটা ঠায়ঠিক সনাক্ত করে?

আমরা এটুকু জানি : মাটি মানুষের নয়, বরং মানুষই মাটির। রক্ত যেমন আমাদের একত্রে বেঁধেছে, তেমনি সমস্ত জিনিশও পরস্পরে বাঁধা। জীবনের জাল মানুষ বয়ন করেনি। সে তো এই জালে কেবল বাঁধা। এই জালের ক্ষতি করা মানে নিজেরই ক্ষতি করা।

আমি যে-জায়গাটায় বেড়ে উঠে এখন থেমে গেছি, সেই জায়গাটা আদিকাল থেকেই নিসর্গ ও ভূপ্রাকৃতিক বিচারে একটু ভিন্ন। অবশ্য সব জায়গাই, বাংলাদেশের সব অঞ্চলই, ভিন্ন ভিন্ন ভূনৈসর্গিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। টিলা এবং ছড়া হচ্ছে এতদঞ্চলের বিশেষ ফিচার। ছিল, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এখন নেই। টিলা-পাহাড় কাটা আইনত দণ্ডনীয়। অসুবিধা নাই। টিলা কেটে মাটি বেচার ঠিকাদারির সঙ্গে শৃঙ্খলাবাহিনীর কাউকে ট্যাগ করে নিন। গত দশবছরে এই শ্রীনিসর্গভূমির সমস্ত টিলা কাটতে কাটতে এখন স্তনচুপসানো মনুষ্য অবয়বের মতো। মন্দ নয়। এবং ছড়াগুলো তো জড়িয়ে রেখেছিল শহরের প্রত্যেকটা পাড়া-মহল্লা, ডাচ শহরগুলোর মতো এতদঞ্চলের শহরকেন্দ্র দিয়াও ছড়াপানির স্বচ্ছ স্রোত সশব্দ বয়ে যেত, আজকাল চা-বাগানের ভেতরকার ছড়াগুলোও পয়নিষ্কাশন প্রণালির ন্যায় ক্ষীয়মাণ এবং ময়লাচ্ছন্ন। সফলতা ব্যাপক, গত দশবছরে, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্টাল্ ল’য়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের নারীটিকে টাইট দিয়া কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগোনো সুগম হয়েছে।

গাছ রস টেনে নেয় গোপন পথে — আমরা তা জানি, যেমন জানি রক্ত আমাদের ধমনী বেয়ে চলে। আমরা এই ভূলোকের অংশ, যেমন এই ভূলোক আমাদের অংশ। সুরভিত ফুলেরা আমাদের বোন। ভালুক, হরিণ, রাজকীয় ঈগল — এরা সবাই আমাদের ভাই। পাহাড়ের চূড়া, সবুজ প্রান্তরের রস, ঘোড়ার শরীরের ওম, আর মানুষ, সবাই আমরা একই পরিবারের সদস্য।

মনে পড়ছিল এইসব, ঠ্যালায় পড়ে। ঠ্যালার নাম আর্থক্যুয়েইক্, ইংরেজিতে ভূমিকম্প। কয়েকদিন আগে একবার হয়ে গেল দেশজোড়া। আগেও হয়েছে, এখন হচ্ছে, ইন্ ফিউচার হবে না ইনশাল্লা। কারণ ভবিষ্যতে তো কম্পন ঠাহর করে এরপরে সেই বিষয় নিয়া আলোচনাসভা চালানোর কেউ থাকবে না এতদঞ্চলে। কেন? সোজা ক্যাল্কুলেশন্, উৎপীড়িত-উৎপীড়ক কেউই নিশ্চয় থাকবে না কাঁপাকাঁপি নিয়া কাহিনিচিত্র তৈরির জন্য। ওই যে, অ্যালবার্ট আইনস্ট্যাইন্ বলেছিলেন — তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবার সময় মানুষ অত্যাধুনিক কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করবে এহেন প্রশ্নের উত্তরে — যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলিয়া আদৌ কোনো অপকাণ্ড পর্যন্ত মনুষ্যশাবকেরা যেতেও পারে, সেক্ষেত্রে তার অত্যাধুনিক হাতিয়ার হবে কেবল পাথর। মানে? পারমাণবিক বোমার উন্নয়নের পরে স্রেফ নিরামিষ-নিষ্প্রযুক্তি পাথর! হতাশ প্রশ্নকর্তা/উত্তরগ্রাহককে আইনস্ট্যাইন্ বলেছিলেন, মানুষের সভ্যতা বলতে কিছুই তখন থাকবে না, কাজেই স্টোনযুগের কথাটা আন্দাজেই বলা হলো; বাস্তব সবসময় ইম্যাজিনেশনের চেয়েও অকল্পনীয় হয়ে থাকে। আমাদের ভূমিকম্পদিনগুলো ভবিষ্যতে আসিতেছে, নাকি ঘণ্টাবাদ্য অলরেডি বাজিয়েই দিয়েছি আমরা? দিই নাই কি?

ঝর্ণায় নদীতে স্ফটিক-স্বচ্ছ যে জল গড়িয়ে যায় সে তো নেহায়েত জল নয়, আমাদের প্রপিতামহের শরীরের স্বেদ, রক্ত। … ঝিলের স্বচ্ছ জলে অলৌকিক ছায়া পড়ে। তার প্রতিটিতে আমার লোকেদের জীবনের স্মৃতি আর ঘটনা বিম্বিত হয়। বনের মর্মরধ্বনিতে আমি আমার পিতামহের ডাক শুনতে পাই।

কিছুদিন আগে নেপাল আর্থক্যুয়েইকের সময় দিন-পাঁচেক ধরে যে-কয়বার ভূমি বিচলিত হয়েছে, এর প্রায় প্রত্যেকটাই সিলেটে টের পাওয়া গিয়েছে। দেশের অন্যান্য কয়েক অঞ্চলেও। খবরের কাগজে ছেপেছেও। যদিও ভূগোলবৈশিষ্ট্যগত কারণে সিলেট অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ ভূকম্পপ্রবণ অঞ্চলের অধিভুক্ত, তৎসত্ত্বেও san andreasঅঞ্চলবাসী বর্ষীয়ান সবার মতে এখন, অন্তত গত দুই দশক ধরে, নির্বিচারে টিলানিধন ও পাহাড়কর্তন ইত্যাদি কারণে এবং জলাশয় ভরাটকরণ ও খনিজ জ্বালানী ও ভূগর্ভস্থ পাথর উত্তোলন এবং অপরিকল্পিত নগরায়ণের জের হিশেবে এতদঞ্চলে পরিবেশঝুঁকি বিভীষিকাবহ হয়ে উঠছে। এমনিতে এখানকার সয়েল-কোয়ালিটি অত্যন্ত নরম। বিল্ডিং কন্সট্র্যাকশন বিশেষজ্ঞ সবাই বলেছেনও যে এইখানে উঁচুতলা ভবন পরিহার করলেই উত্তম। ছোটবেলা থেকেই আমরা শুনে এসেছি যে শাহজালালের দেশে সাততলার বেশি বিল্ডিং বানাইলেই সেইটা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে। কেন? কারণ, বাবার মাজারের মিনারের মাথা ছাড়িয়ে কেউ ঘরবাড়ি বানাইলে সেইটা তো উনার রোষের শিকার হবেই। কিন্তু না, আজ মনে হয়, মানুষের অক্ষরপ্রযুক্তিঋদ্ধ সভ্যতা আরম্ভের আগে এইভাবেই তারা তাদের নলেজ্ সঞ্চার করে যেত। পৌরাণিক কোনো-না-কোনো কাহিনির ভিতরেই পুরে রেখে দিত তাদের অবজার্ভেশন্। বড় হয়ে জেনেছি যে সত্যিই মৃত্তিকাবৈশিষ্ট্যের কারণে এই অঞ্চলের হাওর-নরম ভূমি বহুতলের ভার বহনে নিমরাজি সবসময়। এবং গত একদশক আগেও প্রকৌশলীরা ব্যাপারটা মাথায় রেখেই ডিজাইন্ ইত্যাদি করেছেন। এখন শুরু হয়েছে পাল্লা দিয়া হাইরাইজ্ স্কাইস্ক্র্যাপার বানানোর ধুম।

নদীরা আমাদের ভাই। তাদের জলে আমাদের তৃষ্ণা মেটে। ওরা আমাদের নৌকা বেয়ে নেয়, আমাদের সন্তানদের মুখের গ্রাস জোগায়। অতএব আপনি অবশ্যই নদীকে সেই-রকম দয়াদাক্ষিণ্য করবেন যেমনটি করবেন আপনার ভাইকে।

নদীর কথা তো জানে দেশের দশজনা, আমাদের সেই তাহার নামটি সুরমা। কুশিয়ারা আছেন, কুড়াগাঙ আছেন, মনু-খোয়াই-বরাক ইত্যাদি নানাজনা আছেন নানাদিকে। এদের বুক খুঁড়ে এত ভয়াবহ তাণ্ডব চলে বছর জুড়ে, সেই দুঃখে কাঁদবার লোকও আজ আর নাই। সবাই লোলজিহ্বা লোলুপচক্ষু নদীদিগেরে ভোগ করে। এত বালুখোর, ভূমিখেকো, বনদস্যু, জঙ্গলষণ্ডা চারিদিকে! নো রিভার নো ক্রাই। ট্রেঞ্চটাউনের স্মৃতি আর মায়া ভুলিয়া যাও বব্ মার্লি! পৃথিবী এখন উন্নয়নব্যস্ত। তোমার রক্তেই সিনান সারিছেন তিনি। হে সুরের জননী! হে মায়ের সুর! হে প্রেমিকা আমার! না কান্দে বুবু!

… মনে রাখবেন যে সেই জমির ওপর প্রবাহিত বাতাস আমাদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। হাওয়া তার উদ্যমের অংশ দান করে তার সমস্ত পোষ্যকে। হাওয়া যেমন প্রথম ফুঁৎকারে আমাদের প্রপিতামহের ফুসফুসে দিয়েছে দম, তেমনি গ্রহণ করেছে তার অন্তিম শ্বাসবায়ুও। আমাদের শিশুদের বাতাস দেয় জীবনের উদ্যম। অতএব … অবশ্যই সেই জমি বিশেষ যত্ন করে রাখবেন যেন সেখানে লোকে মাঠের ফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ পাওয়ার লোভে সমবেত হয়।

রিসেন্টলি সংঘটিত ভূমিকম্পের তুলনামূলক একটি চিত্র উঠে এসেছে এতদঞ্চলের বর্ষীয়ান মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত কয়েকদিনের আলাপ-আড্ডায়। জীবনাভিজ্ঞতা দিয়া তারা আগের ভূমিকম্পগুলোর সঙ্গে এই রিসেন্ট ক্যুয়েইকের পার্থক্য ও তীব্রতা বিষয়ে প্রত্যেকেই একটা ব্যাপারে অভিন্ন অভিমত প্রকাশ করেছেন যে এহেন বড় ধাক্কার ভূকম্পন তারা আগে কোনোদিন টের পান নাই। যদিও এইটিএইটের একটা ধাক্কা তারা ইয়াদ করেছেন, কিন্তু এইটাও বলেছেন যে সেই-সময় এখানকার ঘরবাড়ি ইত্যাদির ফর্মেশন্ ছিল অন্যতর। ফলে প্রাকৃতিক গজবের সময় দিগ্বিদিক জ্ঞান না-হারিয়ে বেরোনোর মতো মুক্ত ময়দান ছিল অবারিত এবং ছিল দরোজার বাইরেই হিলিং মেডিসিন্ নিয়া ব্যাপক বিপুলা ন্যাচার স্বয়ং। এখন তো চোখে অন্ধকার দেখার আগেই বিল্ডিং নাকের ডগায়।

… ধরণী আমাদের মা। এই ধরণীর কিছু হলে এর সন্তানদের সবারই তা হবে। … নবজাতক যেমন তার মায়ের হৃদস্পন্দন ভালোবাসে, তেমনি আমরা ভালোবাসি এই পৃথিবীকে।

দেশের সর্বত্র অনুভূত গত ফোর্থ জানুয়ারি ভোররাতের দিককার ভূমিকম্পে সিলেটের জনমনে আতঙ্ক অধিক হবার আরেকটা কারণ, সংঘটিত কম্পনটির উৎপত্তিস্থল মণিপুর এবং মণিপুর রাজ্যটা বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী সিলেট জেলার সংলগ্ন। উৎপত্তিস্থল ভারতের মণিপুর রাজ্যের রাজধানী ইম্ফল থেকে সিলেটের অবস্থান অতি san andreasনিকটে। এটি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সীমান্ত-সংলগ্ন এলাকা। সিলেটের ব্যাপকাংশ জুড়ে ছড়িয়ে আছেন বাংলাদেশের মণিপুরী জনগোষ্ঠী, যাদের আত্মীয়বর্গ রয়েছেন ভারতের মণিপুরে, এবং ওদিককার ভূমিচিত্রের সঙ্গে এদিককার ভূমিচিত্র তো অনেকটা সাদৃশ্যবহ। ফর হুম্ দ্য বেল্ টল্স? সহৃদয় ব্যক্তিবর্গ যারা এতদঞ্চলের ভূকম্পতটস্থ লোকগুলোকে একটু অন্তিমকালের খাতিরতোয়াজ করতে চান, বৃথা টাইম্ কিল্ করবেন না, করে ফেলুন, নয়তো পরে পস্তাবেন। আহা! বেল্ বুঝি আমার একলারই বাজবে? একটু আগে আর পরে … বালাই ষাট! আমরা সারাদেশে উন্নতমানের বালি ও পাথর সাপ্লাই দিয়া যাচ্ছি, বিল্ডিং বানায়া রাখেন আপনারা। বাচ্চাদের খেলার মাঠগুলো ভরে ঠেসে রাখুন কন্সট্র্যাকশন্ ম্যাটেরিয়্যাল্। টাইম আউট!

এই ধরিত্রীর প্রতিটি ধূলিকণা আমার লোকেদের কাছে পবিত্র; প্রতিটি পাইনপাতার কাঁটা, প্রতিটি বালুবেলা, ঘনান্ধকার অরণ্যের প্রতিটি শিশিরকণা, প্রতিটি মাঠ, প্রতিটি গুঞ্জরিত পতঙ্গ। আমার লোকেদের স্মৃতি ও অভিজ্ঞতায় এরা সবাই খুব পবিত্র।

গত ফোর্থ জানুয়ারির ভূমিকম্প গোটা দেশের প্রত্যেকটা মানুষকে নিঝুম নিদ্রা থেকে একঝটকায় জাগিয়ে তুলেছে, ভুলে গেলেন বাহে? অ্যামেরিক্যান্ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এর উৎপত্তিস্থলের কাছাকাছি রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পতীব্রতা ছিল ৬ দশমিক ৭। ভারতের স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে চারটার দিকে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে এবং বাংলাদেশের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ঘড়িতে এই রিডিং ছিল ভোর পাঁচটা। বাংলাদেশের জাতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে যে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ৩৫৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। ভূমিকম্প চলাকালীন বাংলাদেশের রিখটার স্কেলে রাজধানী ও নিকটবর্তী এলাকার কম্পনতীব্রতা ধরা পড়েছে চারের অধিক।

[উদ্ধৃতি-অংশগুলো জোসেফ ক্যাম্পবেলের সঙ্গে কথোপকথনের ভিত্তিতে রচিতমিথের শক্তিশীর্ষক বই থেকে নেয়া হয়েছে। এটি বিল ময়ার্স কর্তৃক ইংরেজিতে এবং খালিকুজ্জামান ইলিয়াস কর্তৃক বাংলায় ছেপে বেরিয়েছিল বাজারে। একসময় বাংলা অ্যাকাডেমির ছাপা থাকলেও বর্তমানে সেই ছাপাটা বাজারে নাই, ‘ঐতিহ্যপ্রকাশনী থেকে এর একটা মুদ্রণ/সংস্করণ সর্বশেষ বাজারে দেখা গিয়েছে। এবং উদ্ধৃত অংশগুলো মূলত একটি চিঠির চুম্বকবিশেষ; চিঠিটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কাছে এক্সটিঙ্কটেড রেডইন্ডিয়ান গোত্রপ্রধানের লেখা]

আর্থক্যুয়েইক, হার্টক্যুয়েইক

ওয়াক্ত হ্যায় তো জিনে দে
দর্দ হ্যায় তো সিনে দে
খোয়ায়েশি আনজান হ্যায়
আব্ ক্যায়া কারে
________________________
[অনুপম রায় । ‘পিকু’ ম্যুভির একটা গান থেকে একটুকু]

ভূমিকম্প হলো। হবে আবারও। হুঁশ ম্যে আও ম্যেরে মেহবুবা! আর্থক্যুয়েইকে প্যানিকের কিছু নাই। কিন্তু ঘনঘন ভূমিকাঁপাকাঁপির এই দুর্যোগশতাব্দে একবার বসে একটুখানি জিরায়া নাও, দৈনিকের হন্তদন্ত ছুটোছুটি কিছু কমিয়ে ভেবে দ্যাখো কতটা ক্ষতার্ত তোমার প্রিয় পৃথিবীটা। আমি-তুমি বিবাদ করে মেরেধরে ক্যায়া ফায়দা, কহ? মরব তো অচিরে, একটু রোসো, লেট’স্ গ্য, মরার আগে একবার বেঁচে যাই চলো! খুঁজি কলাগাছে কেঁচোদের কলকাকলি, নিমপাতাছায়াঢাকা পাড়ের পুকুর, বাসনমাজা ছাইয়ের কাছে একলা বালকটির বিরান দুপুর, ঢুপিপাখি ডেকে যায় ডিমের পাহারায় একাকী নিঝুম লটকনফলের বনে। এসো গান গাই। অথবা গল্প করি, গানের। যথেচ্ছ ভূমির কম্পন হোক, তুমি মন দাও তোমার পার্শ্ববর্তীর ভীতত্রস্ত সকরুণ হৃদয়ে প্রেম ও পরিত্রাণের কম্পন জাগাইয়া তুলিতে। “মানুষ বড় ভয় পেয়েছে / মানুষ বড় নিঃসহায়” — মৌসুমী ভৌমিকের এই গানে ব্যক্ত ভয়ের আবহ দূরীকরণে তুমি যতটা পারো অন্বেষণ করো উপায়। বাঁচো, বাঁচতে দাও, বাঁচাও। সহস্র তর্ক-হল্লার পরে কে আছে তুমি ছাড়া বাঁচাইতে পারে আমারে? এইবার ভাবো, “আব্ ক্যায়া কারে”, দুনিয়াজোড়া মারণাস্ত্রপ্রোমোটর ও ভয়স্প্রেডিং মেশিন হবে, নাকি হবে ভয়তাড়ানো অভয়ারণ্যের কিয়্যুরেটর?

Film Title: San Andreas ।। Released Year: 2015 ।। Genre: Action, Adventure, Drama ।। Duration: 1h 54min ।। IMDb Score: 6.1/10 ।। Director: Brad Peyton ।। Stars: Dwayne Johnson, Carla Gugino, Alexandra Daddario, Archie Panjabi ।। Music Score: Andrew Lockington ।। Net profit approximately $88.07 million

ম্যুভিরিভিয়্যুপ্রণেতা : জাহেদ আহমদ

… … 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you