তুহিন কান্তি দাস ও নয়া গানের উদ্ভাস || জাহিদ জগৎ

তুহিন কান্তি দাস ও নয়া গানের উদ্ভাস || জাহিদ জগৎ

তুহিন কান্তি দাসের গান আসতেছে।

‘গান আসতেছে’ শব্দযুগলের সাথে ’৮০-পরবর্তী একটা জেনারেশনের বিরাট মনস্তত্ত্বের ইতিহাস সামনে চলে আসে। দ্বিতীয় দশকের এই অনলাইন সময়ে এসে সেই উন্মাদনা, গানের সাথে আত্মিক সম্পর্ক, সমাজতত্ত্বের সাথে বোঝাপড়া, মানুষে মানুষে ভাবের সেলাই খুঁজে পাওয়া মুশকিলের হয়ে উঠেছে। বদল ঘটেছে চিন্তাচেতনারও। বাঁকবদলের এই দুর্দিনেও বাংলা গানের স্রোতোধারায় নতুন ঢেউ নিয়ে আসতেছে তুহিন কান্তি দাস।

আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে একটা অ্যালবাম আকারে৷ সত্যি বলতে আমরা যারা দীর্ঘ সময় ধরে মুখে মুখে তার গান শুনছি তাদের জন্যে একটা দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলছে৷ ‘সন্ধ্যা নামিল শ্যাম’, ‘আসমানেরও চাঁদ’, ‘হারিয়ে টের পাই’ এবং ‘দরদিয়া’ — মোট ৪টি গানের এই অ্যালবামের নাম দিয়েছেন ‘সন্ধ্যা নামিল শ্যাম’। ১৯ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রকাশনা উৎসব।

তুহিনদার প্রতিটি গান হয়ে উঠেছে পরমাত্মিক যোগাযোগের ভাষা। দিকবদলের জনপ্রিয় সোজা স্রোত উপেক্ষা করে তুহিনদা ফিরে গেছেন তার ঐতিহাসিক চেতনার সূক্ষ্ম ধারায়। গানের দুনিয়ায় উত্তরাধুনিক তুহিন কান্তি দাস হয়ে উঠেছেন ভাটির তুহিন। গ্রামবাংলার চিরায়ত আর্তনাদ, হালের নাগরিক যন্ত্রণা, সময়ের অব্যক্ত যাপন, প্রেম-প্রতিবাদ-দ্রোহ, সবই উঠে এসেছে তার কথা ও সুরের বাঁকে বাঁকে। কখনও বাউলের সুরে কথার মালা গেঁথেছেন। কখনও নাগরিক যাপনকে সঙ্গী করে হয়ে উঠছেন আধুনিকতার শিল্পী। শুরুটা করা যাক ফোক বা মাটির সুর দিয়ে৷

‘কোন হাওরে যাও রে বন্ধু ফিরিয়া না চাও’ গানটির কথা সবার প্রথমে মাথায় আসলো। চিরায়ত দুঃখদুর্দশার মাঝেও একজন গ্রামীন নববধুর কামনার অমোঘ আকাঙ্খা ফুটে উঠেছে এই গানে৷ যদিও এই গানে সুরের খেলাটাই সবচেয়ে অদ্ভুত। কয়েকটা লাইন উল্লেখ করে আগানো যায় পরের গানে৷

ঘুমেরও ভেতরে শুনে
ফজরের আজান,
পান্তা ভাতে পেট পুরিয়া
আবাদ করতে যান
অনাবাদি মাটি খাঁটি
সোনাতে সাজাও,
মনের জমানো ব্যথা
বুঝিতে কি পাও।

‘কান পেতে শোন শোন রে হাওয়া’ গানটিও তার কাছাকাছি। তবে এখানে প্রধান অনুষঙ্গ গ্রামীণ সমাজে নারীপ্রকৃতির মতো প্রেমপ্রতিমা। তুহিন কান্তি দাস এক বধুর স্বামীর জন্য প্রতীক্ষার আকুলতা দিয়ে তা প্রকাশ করেছেন।

তার ভাঙা চালা গেছে উড়ে
বৈশাখী এক দমকা ঝড়ে
কতদিন আপন ঘরে
জ্বলে না উনুন।
আর পারি না থাকতে ঘরে
একলা সারাক্ষণ।।

শহর হইতে নৌকা আসে,
আঠারো দিন প্রতি মাসে
অভাগিনী আশায় বসে
ষোলোটি দিন গেল শেষে,
ঘুচাতে অভাব অনটন
সঙ্গে নিয়া নতুন বসন
সামনের মাসে আসবো গো বউ
করেছিল পণ
আর পারি না থাকতে ঘরে
একলা সারাক্ষণ।।

ফোক অঙ্গের গান বিবেচনায় ‘ঢেউ ভাঙে থৈ থৈ’ ‘রজনী ফুরায়ে যায়’ ‘দুই দিনেরই আসা-যাওয়া’ ‘মোহের মায়া’ আর ‘রঙ্গিলা’-র কথা বলতেই হয়। হালের আধুনিক বিবেচনায় নাগরিক ফোক, রক, সাইকাডেলিক ফর্মের আলোচনাটা শুরু করা যায় ‘মহামারি থেমে গেলে’ গান দিয়ে৷

বিশ্বে মহামারি চলছে। লকডাউনে অবরুদ্ধ জীবন। তুহিন কান্তি দাস লিখলেন গান। লেখাতে তো আর সুরের বিষয়টা তুলে আনা সম্ভব নয়। তবে ফেসবুকে প্রকাশ করা গানটি একবার শুনলেই বোঝা যাবে কতটা শক্তিশালী সুরের গাঁথুনি।

ভুলে যেয়ো না এই অভিশাপ
তোমাদের এই মন্দ স্বভাব
ডেকে এনেছে মৃত্যুর বারতা
বুকে পিঠে জমা রজতের দাগ।
মারণাস্ত্রের পুতুল খেলা
বিপদসীমা করেছে হেলা
এই অসহায় পৃথিবীর বুকে
মৃত্যুর অপেক্ষা, শুধু মৃত্যুর অপেক্ষা।।

তার আগে ২০১২ সালে সুন্দরবন আন্দোলনের সময় ‘আহা রে! সুন্দরবন কান্দে / বনের পাখিরা সব যায় উড়ে’ যারা শুনেছেন তারা বোঝার কথা। সুন্দরবনকে একটা মানুষের অবয়ব ভেবে নিয়ে, বনের ধারণক্ষমতা-ধৈর্য আবার বাঘ-হরিণ মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর ঐকতান। যেন সুন্দরবন নিজেই প্রতিবাদে গাইছে। শিল্পী তো এমনই — যেমন বিরহ-বিচ্ছেদে বিচলিত হয় তেমনি মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ভাষায় সুর মেলায়।

করোনা-পূর্ববর্তী হাতিরপুল সেশনের আয়োজনে আত্মপরিচয় গানে পাওয়া যাবে শিল্পী হিসাবে তুহিন কান্তি দাসের প্রকৃত পরিচয়। কয়েকটা বাক্য তুলে ধরলেই বোঝা যায় শিল্পীর গভীরতা।

মানুষের গান গাই বন্ধু
মানুষে মানুষে কত ব্যবধান
সযতনে ফেরি করে এই গান
সুন্দর আগামীর সংস্থান।

সবুজের গান গাই বন্ধু
সমুদ্রজলরাশি বাড়ছে
বিষাক্ত বাতাসের উৎপাত
এই পৃথিবীর ফুসফুস পুড়ছে।।

এই আলাপের অর্থাৎ আধুনিক তুহিনের গান সম্পর্কিত বিবেচনা সম্পূর্ণ হবে না যদি ‘রাত জেগে টেলিফোনে’, ‘একটা পাখির ছানা’, ‘কী আশায়’, ‘যুদ্ধ যুদ্ধ অবরুদ্ধ হয়ে সবসময়’, ‘আমি আকাশ সমান স্বপ্ন নিয়ে বহুদূর হেঁটে যাই / আজো জীবন বাজি রাখতে রাজি তোমায় যদি পাই’, ‘তোমার জন্যে মনের গোপনে ঘর বাঁধে ভালোবাসা’’, ‘ফুটপাত’ আর ‘চৌরাস্তা’-র মতো গানের কথা তুলে না ধরি। বিশেষ করে ‘টেলিফোন’ গানের একটা ভার্স উল্লেখ না করলে সেটা বোঝানো কঠিন।

জানি রাস্তা নেই ফেরার
তুমি অন্য কবিতার
ঢেউয়ে ভাঙছো এ কিনার
আমি একলা হব পার
এই যন্ত্রণার জোয়ার
দেখি চারপাশ অন্ধকার আমার।।

এ তো গেল ফোক আর আধুনিক ফর্মে লেখা সুর-করা তুহিন কান্তি দাসের গানের আলাপ। এবার আসি কবিতা থেকে সুর করা কিছু গানের প্রসঙ্গে। জীবনানন্দ দাসের ‘ছায়াপ্রিয়া’ কবিতা থেকে গান, উৎপল কুমার বসুর কবিতা ‘নবধারাজলে’ থেকে ‘জলের অধিকারে’, শামসুর রাহমানের ‘কেউ কি এখন’ কবিতা থেকে ‘বিষের মতো রাত’, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতা ‘স্বপ্নজাগানিয়া’ থেকে ‘আমারে বানাও ফের তোমার নাহান’, নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘স্মরণ’ থেকে ‘ডাকিব না প্রিয়’ গানগুলো প্রায় আড্ডাতেই একসাথে শুনতে শুনতে গাওয়াও হয়ে যায়। এর বাইরে সমসাময়িক লেখকদের কবিতা থেকে সুর করে গান তো আছেই৷

আপনারা যারা কৃষ্ণপক্ষ  ব্যান্ডের ‘চান্দের গাড়ি’ গানটা শুনেছেন তারা আন্দাজ পাবেন তুহিনদার লিরিকের আত্মশক্তির জায়গাটা কী দারুণ! তিনি তার গানে বলতেছেন, —

ভবের হাটে দোকানদারি
সওদা করে মনশিকারী
বেচাকেনা চলছে ভারি
ভালো মন্দ বুঝি না
এমনও বসন্তে বন্ধু আইলো না…

দুনিয়াবি লেনাদেনার মধ্যে থেকেও মানুষ হয়ে ওঠার যে শর্ত, সেই শর্ত অনুয়াযী মানুষের যে আত্মিক জার্নি — দেখা না-দেখার মধ্যকার যে শূন্যতা — সেইখানে তুহিন কান্তি দাসের গানের আবেদন আরো স্পষ্টভাবে মানুষ করে তোলে আমাদের।

ভাটির মানুষ তুহিনদা শহরের নাড়িনক্ষত্র চেনেন। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। মানুষের সাথে থেকেছেন রাজনৈতিকভাবেই। সাধারণ জীবনের ভাব-অভাব পরখ করেছেন নিজের জীবন দিয়েই। টিএসসির চা-দোকানদার থেকে শুরু করে সবহারানো পিতার দুঃখ ছুঁয়ে দেখেছেন ভাব ও ভাষায়। তিনি লিখেছেন, —

না-থাকার মাঝেই থেকে যাও
দূর থেকে দূরত্ব মুছে দাও
না-বলা শব্দের বোবা সুর
অচেতন মনে সাড়া চাই।।
হারিয়ে টের পাই

যা পেয়েছি তার তুলনা নাই…

তুলনাহীন এই জীবনকে তিনি সমস্ত চাওয়াপাওয়ার উর্ধ্বে তুলে ধরেন। তিনি থেকে যেতে চান না-থাকার মাঝেও। ‘মানুষ’ তো এমনই এক মহাস্রোত — যেখানে বিশেষ কেউ নেই, বিশাল কেউ নেই। সমগ্র, সমস্ত, সকল মিলেই মানুষ মহাসৃষ্টি। এমন ধারণা যে-গানে স্পষ্ট, তাকে অনুভব করতে পারাটাই আমাদের (শ্রোতাদের) জন্য গর্বের। যে-গর্ব থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে ঐতিহাসিক ভাবের দিকে ফিরে গেছেন তুহিনদা। যে-ভাবের রাধাবিরহে রাধারমণ আজীবন হাহাকার করেছেন গানে গানে, সেইখানে পৌঁছে তুহিনদা গাইতেছেন, —

মনের ময়ূর নাচে
ঘোর বরষায়
ঘন মেঘ দূর আকাশে
উড়ে উড়ে যায়
মনের ভ্রমরা বনে
গুনগুন গায়
সন্ধ্যা নামিল শ্যাম
তোমার আশায়।।

ফুল বনে বন
পাখির গানে
প্রজাপতি উড়ে যায়
কুঞ্জবনে
বসন্তবাতাস এই
ফাগুনবেলায়।।
সন্ধ্যা নামিল শ্যাম
তোমার আশায়

সন্ধ্যাতারার ফুলে
সাজায়েছি ঘর
গায়ে জড়ায়ে কাম
রাঙানো বাসর
কাজলে মাখানো আঁখি
জলে ভেসে যায়।।

সন্ধ্যা নামিল শ্যাম
তোমার আশায়…

এইটাই তার গাওয়া প্রথম প্রকাশিত গান।

ভক্তিবাদের বাংলায় চিরকাল মানুষ যখন পরমের কাছে কাঙালপনা করেছে, সেজেছে রাধা, সেইখানে পরম প্রেমের আশায় জীবনে ঘোর সন্ধ্যা নেমে আসছে তুহিনদার গানে। এই ভাব, এই প্রেম, এই ভক্তি বাংলার ঐতিহাসিক চৈতন্য। ভোগবাদের এই জমানায় চাইলেই দুই লাইন রগরগে লালচ বিক্রি করে রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা যায়, সেই সময় এসে পরমের আশায় সন্ধ্যা অতীত করছেন একজন গীতিকবি, সুরকার, শিল্পী — এই ব্যাপারটাই তো বড় আনন্দের বিষয়। এই সকল আনন্দের মাঝেও তুহিনদা আমাদের নিয়ে যান একান্ত আপনজনের কাছে। যাকে আমরা অনুভবে পাই, কেবল ধরতে পারি না। একজন পুত্রের কাছে পিতা… পুত্রও পুরুষ, পিতাও পুরুষ। দুজনেরই আছে একেবারেই আলাদা নিজস্ব জীবন, চিন্তার আলাদা দুনিয়া, বাস্তবতার ভিন্ন পথ। তবু সমস্ত ভিন্নতার মর্মে মুহূর্তকালের মতো সূক্ষ্ম এক অনুভব একাকার করে দেয় দুজনকেই, পিতা-পুত্র। কোথায় যেন জোড়া বাঁধা, এই তো আছে, অথচ ধরা যায় না — সেই কোথাও। যেমন ধরা যায় না চোখের জল — কোন হিমালয় থেকে যে নেমে আসে — এমন দরদ, আবার পলকেই উড়ে যায়, কোথায় যায়, কেউ জানে না। তুহিনদা গাইতে থাকেন

বিনি সুতার মালা গাঁথি
আগুনে পোড়াই
মরমের আগুনে আমার
অন্তর পুড়ে ছাই
ছাইচাপা পিরিতির ফুলে
বান্ধিয়াছি ঘর
সেই ঘরে তোর বসতভিটা
কলিজার ভিতর
দরদিয়া, এই মন নিয়া
পলকেতে যাও হারাইয়া
দরদিয়া, এই মন নিয়া…

ছাইচাপা আগুন হলো বাংলার ভাব। বসতভিটায় তিনি চাষ করেন পিরিতের ফুল। ভাষায় তিনি সোজা চলে যান নিজের বাতাসের কাছে। হাওরের ধ্বনি থেকে সুর তুলে আনেন। যেই বাতাসে রাধারমণ শব্দ বুনে রেখেছেন, শাহ আবদুল করিম ফুল ফুটিয়েছেন। রমিজ উদ্দিন, ক্বারি আমির উদ্দীনের মতো মহাজনেরা করেছেন প্রার্থনা। যেই হাওরের স্রোত আজও হাসন রাজাকে বয়ে চলে আদি-অন্ত। নগরের সমস্ত প্রলোভন ছেড়ে তুহিনদা সোজা সরল পথ ধরে ফিরে গেছেন সেই হাওর নদী বাতাসের কাছে। তিনি তার হাওর নদী বাতাসের উত্তরে ধরলেন এক মহাজনী গান…

দূর আকাশে
তারার দেশে
মনমহাজন
হাওয়ায় ভাসে রে
ধরাছোঁয়ার বাহিরে ঘর
বিভেদের গরাদ রে।।
আসমানেরও চাঁদ

কেন আমার ভাঙা ঘরে
জোছনা লুটায়ে পড়ে
ছোট্ট করে দেখতে তোমায়
মনে কত সাধ রে।।
আসমানেরও চাঁদ…

টলমল এই দেহঘর এই ভাঙে কি সেই ভাঙে। এমন এক ভাঙাদেহে যৌবনের মতো এমন উজ্জ্বল চন্দ্র যখন জোসনার আলোয় নেমে আসে, জীবনের সেই আহ্বান, জোসনার সেই দ্যুতি অস্বীকার করা যায় না বলেই, তুহিনদা বলতেছে, ‘ছোট্ট করে দেখতে তোমায় মনে কত সাধ রে…’

যেই সাধের গাঙে বাধ দিয়ে লালন বলছে, ‘আমার সাধ মেটে না লাঙল চষে…। এমন সাধ তো মানুষেরই অনিত্য দুঃখের কারণ, এই সাধই হলো অতীত থেকে বর্তমান, বর্তমান থেকে ভবিষ্যৎ। মানুষ থেকে মানুষ সৃষ্টির এক মহালীলা। তুহিনদা সেই ভবলীলা অস্বীকার করেননি, কিন্তু ‘ছোট্ট’ করে নিজের আত্মনিয়ন্ত্রণের চরম বিচক্ষণতাও দেখিয়েছেন।

সাধারণ আর বাস্তবের কর্মজীবনেও তিনি যেই ‘ছোট্ট’-র সাধনা করেন। মিশে থাকেন মানুষের ভিড়ে। ভালোবাসেন মানুষের হাসি, গাছের নতুন পাতার ভিড়ে নিজেকে জড়িয়ে রাখতে চান। শিশুর নরম হাতের মতো খুঁজে ফেরেন সহজ শব্দ, কথা। ক্ষুধা, তৃষ্ণা, শোষন, নিপীড়নের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেন বাস্তব জীবন দিয়েও। যে-কারণে এর সবকিছুই তার গানে উপস্থিত আছে প্রকটভাবে। মানুষের যা গোপন ব্যথা, যে-কথা লুকিয়ে মানুষ কাঁদতে থাকে, যে-সুখ মানুষ চোখে মেখে ঘোরে, মোটামুটি সবই তার গানে পাওয়া যায়। শহুরে উচ্চাকাঙ্ক্ষার ভিড় তার কাছ থেকে তার নিজস্ব পরিচয় কেড়ে নিতে পারে নাই। হাওরের তরল প্রবাহের মতো বয়ে যায় তার সুর, তার কথা… একজন গীতিকার, সুরকার হিসেবে নিজেই নিজের কণ্ঠে গান করতেছেন, এইটাও একটা বিরাট বড় চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। তুহিনদার এই ট্রেন্ডভাঙা চ্যালেঞ্জ নেবার সাহসকেও অভিনন্দন জানাইতে হয়।

অভিনন্দন, তুহিন কান্তি দাস! আপনার গান হোক বাংলার মানুষের পরম আশ্রয়, আপনার গান হোক শোষিতের শক্তি, পরাজিতের হাতিয়ার। অনেক অনেক ভালোবাসা জানবেন।

জাহিদ জগৎকথাসাহিত্যিক


তুহিনের গান : অ্যালবামপ্রকাশ অনুষ্ঠান
গানপার অ্যালবামরিভিয়্যু
গানপার কন্সার্টরিভিয়্যু

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you