লিখতে বইসি নিয়ৎ করে
একটাকিসু নয়ন ভরে
দেখব
ভাবব
লিখব
কবিতাই
কিংবা আঁকিবুকি, কিসু গদ্য ফর্দাফাই
মামুনের দোকানে এসে থামি, নামি, থিতু হই
গোটায়া আনি চারপাশের হইচই
নির্জনের থইথই
কিংবা মামুনের টিল্লাঢালু দোকানচালায় কবুতরের খোপ
ছাড়া বাকিসব চুপ
দূরে
শহরে
দেশের তৃণমূলের লেখকেরা সাহিত্যমেলায়
বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে সাড়া দিয়া আলোঝলমলায়
একদিন জাতীয় হবার উদগ্র মনোবাসনায়
এ সাধারণ প্রশাসন নয়
এ প্রশাসন সরকার বসায়
নামায় উঠায়
এইখানেই নিহিত ভয়
এমন কর্কট করাপশন নিয়া রাইটারদের কলমে একটুও দুশ্চিন্তা হয়?
না, আদৌ না, আনডাউটেডলি না, রাইটারদের বোধোদয়
আগেও হয় নাই, না এখন হয়, ইন ফিউচারও হবার নয়
ব্যাসবাক্য অসত্য নয় নিশ্চয়!
*
দুঃশাসন নিয়া কাব্যপুস্তকই রিলিজ করসিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ
দূর হ দুঃশাসন
প্রশাসনের ক্ষমতাবিস্তারী দিনে লেখকেরা তা তা থই থই নৃত্যবিভোর
কর্তা চাইলেই কীর্তির স্বীকৃতি মিলবে একশ পার্সেন্ট শিওর
মুসোলিনি হিটলার পিনোশে এরশাদের সময়
লেখকেরা যা যা করসিলো তা তা হাজারতেইশে এসেও হয়ে গেল বোধহয়
তৃণমূল মনে সাধ যাবে জাতীয়য়!
বাংলাদেশের লেখকেরা স্বভাবত গোবেচারা
ভানভণিতায় বাজারসেরা
হাবাগোবা, রাজনীতিপ্রতিবন্ধী
নিজের লেখায় লাইনে লাইনে কেবল অভিসন্ধি
কীভাবে হওয়া যায় আরও নাম-করা
ছাপ্পান্ন হাজার মাইল ভরা
নাম-করা লোকে
এর সনে ওর সনে সেল্ফিতে ঢুকে
লেখকেরা নাম কামাইতে চায়
লেখায় নয়, বিনে সৃজন বিনে পয়সায়, লেখালেখির অ্যারেনায়
লেখাছাড়া মাগনায়
স্যার স্যার ডেকে তারা ডায়াস মাতায়।।
*
সবাই সাহিত্য করে যে-দেশে
তেরোশ নদীর পানিতে এসে মেশে
সেই দেশের সাহিত্যিকদের মল, মূত্র, পিত্তরস
অহর্নিশ ক্ষমতার বশ
কবিদের কারদানি ও কাব্য
নদীও নয় ইহাদের বিষ্ঠা ধারণের ন্যায় নাব্য।।
*
ফলে লেখকে-লেখকে ফেনানো সন্ধ্যায়
একদলে বৈঠক বসায়
বিভাগীয় প্রশাসনপ্রভুর সাহিত্যমেলায়
যাবে না তারা, জানায় বয়কট
লেখা হয় বিবৃতি
শৃঙ্খলায় রেখে লেখা শ্যামের পিরিতি
কীভাবে হে প্রেমাঞ্জন
বঞ্চিলায় আমার মন
দিরং কেন হইল দিতে নেমন্তন!
পরেরবার আমরারে যদি না রাখিবায়
সাহিত্যসম্মিলনী প্রিপারেটোরি মিটিঙমালায়
আমরণ অনশনে বইমু, লাইভে যাইমু, অন স্পট!
*
মনে হয় আছে ঢের
দেখবে এই জীবনের
মনে হয় আছে আরও অঢেল সময়
আসলে সময় বেশি নাই
বৃথা ভাঙা-বাজনাবাদ্যি, বিফাইবড়াই
মৃত্যু নিয়া ভাবনাভাবনি জীবিতের কম্ম নয়
কিন্তু, তবু, মনে হয়
জীবনানন্দের কবিতায়
ঢের, অঢেল, অগাধ প্রভৃতি শব্দগুলায়
কী মিনিং পোরা আছে এই জিজ্ঞাসায়
আনসার্টেইন একটা টাইমের মন্থরতা ঠার পাই
কিন্তু তবু মনে হয় এইটাও মনে রাখার মতো
সময় নিয়া ভাবলাম আমি লিটনের দোকানে বেঞ্চিতে বসে ব্যথায় ব্যাহত
শহরে মেয়োরাল ইলেকশন সমাগত
সমুখে সুন্দর সুবর্ণা ন্যাশন্যাল
প্রশাসনের সাহিত্যমেলায় গাদাগুচ্ছে লেখকের পাল।।
*
যে হয় কিনা রাতারাতি হিসাব পাল্টাবার মতো প্রবল ক্ষমতাধর
তুমি যায়া তার লগে মেলাইরায় সাহিত্যবাসর
হুঁশবুদ্ধি ঠিক রাখিয়ো ওগো মনোহর ওগো সোনাহর!
তোমার পাঠকবর্গ তোমায় মার্সি দেখাইব না, মান্যবর?
যদি দেখায়, ভালো, না-দেখালেও মন্দ নয়
মানুষ তোমায় সাহিত্যমহান মনে করলেও তবু ইতিহাস অপরিবর্তিত রয়।।
*
এইটা তো নয়া হালত নয়
এদেরে এই হালতে ছাড়া আর-হালতে দেখসেন কোনোসময়?
এরা খালপড়া, ঘাটমড়া, ভাগাড়েই নিক্ষিপ্ত হয়।।
*
এইসব মঞ্চ থেকে দূরে থেকো, পুত্র!
মঞ্চ পরিহার কোরো যতটা পারা যায়
আর যদি পারো, মঞ্চ নয়
নিজেরে ছড়ায়া রাখো ময়দানময়
পাখিদের পোকাদের গাছেদের গরুদের মঙ্গল কামনায়
নিজের ভাষ্য, মুখপত্র, তর্জনী ও মধ্যমায়
ফাশিস্তদের জন্য বরাদ্দ রেখো কড়া ভাষায় ঘৃণা
আমি তোমায় চিনি কি চিনি না
তা আদতেই বিবেচ্য নয়, বিবেচ্য গোয়ালের গরু
সদ্য-মুকুল-আসা গাছের ফলগুলো সরু সরু
তোমায় দেখেই চিনতে যেন পারে
এই নৃশংস কবিসাহিত্যিকের নীতিরিক্ত সংসারে
এইটুকুনই দিলাম তোমায় জিয়নবাঁচনসূত্র।।
— জাহেদ আহমদ / জুন ২০২৩
ব্যানারে ব্যবহৃত ড্রয়িঙটি শিল্পী কামরুল হাসান অঙ্কিত ‘দেশ আজ বিশ্ববেহায়ার খপ্পরে’
প্রশাসনের সাহিত্যমেলা আয়োজন ও বয়কটকারীদের অবস্থানপত্র :: গানপার প্রারম্ভিকা
সাহিত্যমেলা নিয়া দু-চার কথা :: আহমদ মিনহাজ
- ভিক্টোরিয়া অ্যামেলিনা ও যুদ্ধদিনের ইউক্রেনীয় কবিতা || জয়দেব কর - February 17, 2025
- মাসুম পারভেজ : কবি, কাব্যগ্রন্থহীন || সরোজ মোস্তফা - February 7, 2025
- ছত্তার পাগলার সন্ধানে আহমেদ স্বপন মাহমুদ ও সরোজ মোস্তফা - January 28, 2025
COMMENTS