গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১২

গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১২

মাঠ ছাড়ি নাই
কিংবা নাটাই

নিজের কর্তব্যের ক্যাটাগরিগুলা আমি
নির্ধারণ করতে চাইসি দিবাযামী
নিজেরই নিতান্ত অল্পস্বল্প প্রজ্ঞায়

একটু স্পর্ধিত কণ্ঠে এমনও তো বলা যায়
শেখ হাসিনার জমানায়
চাইসি লিখে যেতে লেখকদের সংশ্রব ছাড়া
যারা তাদের মর্ম ও মগজ খাটায় ভাড়া
শাসকের শংসাপত্র রচনায়

ডারউইন, ডিকেন্স, ডস্টয়ভস্কি নয়
ইদানীং মনে হয়
তৃণমূলের বালখিল্যরা ভালোবাসে একজনেরেই
ডিস্ট্রিক্ট লেভেলের গ্রাসরুটস্ সক্কলেই
ঘিরিয়া যারে নেত্ত করে ধেই ধেই

তিনি ডিরেক্টর জেনারেল

উনিও মহা ফেরেব্বাজ, শ্মশ্রুঝোলা আঁতেল
দোহন করেন যখন পারেন এরে, ওরে, তারে
এই ক্রিটিক্যাল সংসারে
এরচেয়ে ভেঙে বলা আমার পক্ষে অসম্ভব প্রায়

মাঠ ছাড়ি নাই কিংবা নাটাই কিংবা আকাশতল
পদ্মপাতায় বাঘফড়িঙের উড়ান স্বতশ্চল।

*
এই দেশ চলে কর্তার ইচ্ছায়। কর্তা চাইলে যেমন আপনার মাসোহারা বাড়িয়ে দিতে পারেন সমস্ত পলিসির খ্যাতা পুড়িয়ে, তেমনি কর্তা চাইলে আপনাকে চিররুটিরিক্ত করে রেখে দিতে পারেন। আপনি দিনভর কর্তার কলাকাঁঠালের বাগানে বা তাঁর (চন্দ্রবিন্দুযুক্ত) ওভাল অফিসে কি করেন না-করেন সেসব ধর্তব্য নয়, বিশেষত বেতনভাতাদি তো এই দেশে পুরাটাই মায়া, মানে কর্তা আপনাকে মায়ার দৃষ্টিতে দেখেন বলে দুইচাইর পয়সা পান আপনি দিনশেষে। কর্তা চোখ পাল্টালেই না-খেয়ে প্যাঁকাটির মতো শুকাতে হবে আপনাকে। এই কথা কর্তা নিজেও বলেন অনানুষ্ঠানিক সাক্ষাৎকারে, যে, কাজ তো যে-কেউ করতে পারে। ইত্যাদি। কর্তা নাকি সাইম্যবাদী! কর্তা নাকি ন্যায়বিচার! কর্তা নাকি শিখনদরদি! বিচ্ছু ছোঁড়ারা বলে যদিও কর্তা আস্ত ভুলভাল ইংরাজি, ছি ছি, কিংবা ভানসিংহ সমুজদার ও অতিমিথ্যুক গ্রন্থপতঙ্গ। ব্লগজমানার ছোঁড়াদের ভাই বিশ্বাস নাই, হেগো নিজেগোই তো কোনো পড়াশোনা নাই — কী কন কাকা! তা ঠিক। হুদাহুদা তারা গপ্পো মারার লেইগা, নাতনিগো ও নয়া নয়া নাতবৌগো ইম্প্রেস করনের লেইগা, গাট্টাগাট্টা বই ব্যাগে লই ঘুরন দেয় না খামাখা। তারা কয়, কর্তা নাকি আজীবনের ব্লার্বরিডার, ফ্ল্যাপপাঠক, ফাঁপা ঝুনঝুনি! মিছা কয় হেরা, হ, মিছা কয় ডাহা। তারা সমইস্যা। জ্যান্ত যন্ত্রণা। আপনি শোনার আগেই তারা শুনে ফেলে, আপনি দেখার আগেই তারা দেখে ফেলে, আপনি পড়ার আগেই তারা পড়ে ফেলে। এ তো ভারি মুশকিলে পড়া গেল কত্তা! কী দিন আইল কন তো! গ্যুগল্, ইউটিউব, ইন্সটা … আরও কত কী! আগে তো পয়সা লাগত বই পড়তে, বই দেখতে, এলপি কালেক্ট করতে। একটা কদর ছিল সমুজদারির ও সমুজদারের। এখন তো ফইন্নির পুতেরাই কত্তারে একদিনে তেরোবার পাছায় ফালায় দেখতাসি! কত্তা তবু কত্তাই। তিনসহস্র তেষট্টিখান এলপি রেকর্ড, ছয়লক্ষ সাতাত্তর বইপত্তর, নয়শত নব্বইখানা দামি অ্যান্টিক রহিয়াসে কত্তার। কত্তা কালেক্টার। কিন্তু বড়ি-আফসোস-কা-বাত, কত্তার সমুজদারি গপ্পো শোনার লোক ও শোনানোর দিন আর নাই। তিনসেকেন্ডে এখন লোকে বে-অফ-বেঙ্গল ডাউনলোড কইরা ফালায় দেহি! এলপি দেহায়া আর আগের মতো মৌজ্ নাই। তাই মৌজ্ অহন একটাই, ফইন্নির পুতেগো মাসোহারায় দেও আঁইক্কাআলা বাঁশ। পয়সাছাড়া গান হুইনা লয় আমার চায়া বেশি, বই পইড়া লয় আগা তন পাছা আমি যা জিন্দেগিতে করি নাই, কিছুতেই হেগো যদি পয়সা না লাগে, তে দেও খোরপোষ কমায়া। তারপর দেহি কে আমার কাছায় না আহে। কর্তা আনচ্যালেঞ্জড, আনস্টপেবল। কর্তা আরও কত্তকিসু! কর্তা স্পাইডারম্যান, কর্তা ব্যাটম্যান, কর্তা সুপারম্যান। কর্তা আমার ডন — ডন কো পাকাড়-না মুশকিল নেহি, না-মুনকিন হ্যায়। কর্তা আমাদের স্টুডেন্ট অফ দ্য সেঞ্চুরি, মোস্ট এলিজিবল প্রিন্স, কর্তা হার্টথ্রব যত বম্বশেল বালাদের। কর্তা আমানুল্লা আমান, কর্তা কাউয়া কাদের, কর্তা গোলাম ফারুক অভি, কর্তা টাক্লা মুরাদ। কর্তা আমার রসের বাইদা। এই দেশ কর্তাভজা দেশ। মোরা সব কর্তা ভৈজা খাই, মোদের সুখের সীমা নাই। তাই তো, কর্তার ইচ্ছায় মৃত্যুদণ্ড মুকুব হয়া যায়, কর্তা চাইলে সানডে-মানডে ওপেন হয়া যায়। কর্তা চাইলে গণশত্রুও নব্বই বছরের জামাই-আদর পায়। মোরা সব পোষা গরু, কর্তা মোগো কল্পতরু। কর্তা সাদবাদ।

*
পরম পূজনীয়
তুমি ঈশ্বর তুমি স্বীয়
কর্তব্য ও কৃত সমস্তকিসুর পিসনে একটা তাৎপর্য

তুমি নিজে একটা রাজযজ্ঞ তুমি জন্মেজয়

আজকাল আমার মনে হয়
এই-যে তুমি ডিরেক্টর জেনারেলদের এত গুণমুগ্ধ
উহাদের পদবেদিমূলে এত-যে রাখো ফলফ্রুট ও দুগ্ধ

তোমার লেখায় তাই বোধয়
নাড়িভুঁড়ি-উল্টানো উৎকট গন্ধ বেরোয়।

— জাহেদ আহমদ / ২০২৩


রিলেটেড রচনারা
গ্রাসরুটসের গান  ১ থেকে ১১
সাহিত্যমেলা নিয়া দু-চার কথা
জেলায় জেলায় বিভাগে বিভাগে সরকারি সাহিত্যমেলা
প্রশাসনের সাহিত্যমেলা আয়োজন ও বয়কটকারীদের অবস্থানপত্র

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you