মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়…তারপর… || ইমরান ফিরদাউস

মৃত্যু আমাদের অপরাধী করে দেয়…তারপর… || ইমরান ফিরদাউস

ব্যক্তিমানুষ বা সমাজ যদি আরেক ব্যক্তিমানুষ বা সমাজের মতের প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করতে না-ই শেখে, যুক্তি, কাণ্ডজ্ঞানের ব্যবহারের প্রতি আস্থাশীল না-ই হয় তবে সংলাপ বা ডায়ালগের ভূমিকা ক্ষয়িষ্ণু রূপধারণ করে। জনসমাজপরিসরে তখন অবধারিতভাবে শুরু হয় মধ্যযুগীয় কায়দা-কানুন;  মত-অমত পছন্দ হলে ভালো, না হলে আর কি গায়ের জোরে ‘তেড়ে মেরে ডাণ্ডা, করে দিই ঠাণ্ডা’!! একদম জনমের তরে!!!

পোশাকে-বেশভূষায় এবং রাজনৈতিক চলন-বলনে বাংলা অঞ্চলের মানুষ বেশ আধুনিক-আধুনিক ভড়ং ধরতে পারলেও তাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক-মানসিক জমিনে সামন্তবাদ এখনও নিড়ানি দিয়ে চলছে নির্দ্বিধায়। তাহলে, বাংলার মুগ্ধ  জনক-জননীরা আপনারাই বলুন, সন্তান মানুষ হবে কবে? নাকি মানুষের বেশে ঘুরিয়া ঘুরিয়া সন্ধান করিয়া নিজের মতের বিপক্ষকারীদের হালাল করবে? অসময়ে ঝরে যাবে একা অথবা কয়েকজন ওয়াশিকুর রহমান বাবু, অভিজিৎ রায়, আহমেদ রাজীব হায়দার, অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলাম, রক্তাক্ত হবেন রাফিদা বন্যা আহমেদ, অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ…এইসব তরুণ প্রাণ সংহারের মধ্যে দিয়ে আসলে তরুণবলয়ে ‘প্রাণভয়’ নামক সাইকোসোমাটিক ট্রমার বাষ্প ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বলে কি মনে হয় না আপনার? পুঁজিবাদী রাষ্ট্র বোঝে মুনাফা — আর সাম্প্রতিক বিশ্বে সব পুঁজির মেইন পুঁজি ‘ভয়’ তা কি এখনো আপনার অবোধগম্য?

এক্ষণ, তবে প্রশ্ন তোলা যাক — রাষ্ট্র কী বস্তু? জাতীয়তাবাদ কোন ব্যবসা? জাতীয়তাবাদী ব্যবসায় ইতিহাস আর ভূগোলের পূর্বে একজন শিশুর বোধিতে ধর্মের বর্ম কেন সেট করা হয়? এই মুনাফা কে খায়? বিনিশ্চিতভাবে —  রাষ্ট্রে যখন জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গরহাজির থাকে, বিচারহীনতার প্রহসন জারি থাকে তখন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মূল্য দিতে হয় রক্তের প্লাবন দিয়ে।

রাষ্ট্রের সার্বিক আচরণ থেকেই উদ্দেশ্যবাদীরা নিজেদের ভার্ডিক্ট তৈরি করে নেয়, সে যখন দেখে অনেক অকাম-কুকামে রাষ্ট্র আপসে ইনিডেমিনিটি বা খেসারৎ না দিয়া শাস্তি এড়াইবার ব্যবস্থা করে রাখে/রেখেছে তখন ‘আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না’ একটি ব্ল্যাক হিউমার হয়েই লটকে থাকে সিনেমার পর্দায়। স্বাধীন মতপ্রকাশের বলী হলো, হচ্ছে, হয়েছে যে বা যারা তারা কী শুধুই মৌলবাদ বা জঙ্গি ফ্রেমওয়ার্কের শিকার? নাকি মেট্রোপলিটন বাস্তবতায় কিছু টেক্সট মিসিং রহিয়া গেল…ভেবে দেখছি কী আমরা?

শেষে-সাঁটা আলোকচিত্রটি ইমরান ফিরদাউস কর্তৃক ধারণ-করা ।। ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ।। মিরপুর, ঢাকা

… …

COMMENTS