নিঃশব্দ কামানে তুমি একা বসে ভরছো বারুদ
শীতকাল গেল;
নিঃশব্দ কামানে তুমি একা কেন ভরছো বারুদ?
আমি ভাবছি : মেগাস্থিনিসের হাসিও কি মেগাস্থিনিস?
শক্তিচালিত এই তামাশার মধ্যে বহু
ঘোটক উড়ে যায়;
— এঞ্জিনের শব্দ আর রোবটের কাশি শোনা যায়।
নিঃশব্দ কামানে তুমি এখনো কি ভরছো বারুদ?
(মেগাস্থিনিসের হাসি)

প্রতি লাইনে দ্বিরাভাস জাগানো কবিতায় জুয়েল মাজহারের শব্দবিন্যাসের ধরন মনে চমক জাগায়! তামাদি হওয়া বিগত কালের কিনারা থেকে হুট করে সমসাময়িক ও অত্যাসন্ন সময়গর্ভে সেঁধিয়ে পড়া কবি ব্যক্তি-স্বকীয়তাকে কোন ভাষায় আগামীতে জ্ঞাপন করবে সে-জিজ্ঞাসা পাঠকমনে তীব্র হয়। দ্বিতীয় মহাসমরের ওলোট-পালট অভিঘাতে বিদীর্ণ জীবনানন্দ দাশ ইস্পাতের কলে ‘বিষণ্ণ খড়ের শব্দ ঝরে’ পড়ার পরাবাস্তবিক আবেশে বিহ্বল বোধ করেছিলেন। কবির বিহ্বলতা প্রাগৈতিহাসিক স্মৃতিসূত্রের সঙ্গে বিষাদঘন সংযোগটি তখনো ধরে রাখতে পেরেছিল। আশির জুয়েল মাজহারে পৌঁছে সংযোগটি বিগতের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ‘নিঃশব্দ কামানে’-র রূপকে নিজেকে জ্ঞাপন করছে। সময়ের অভিজ্ঞান যেসব গোলাবারুদ যোগান দিচ্ছে সেগুলোকে অচল কামানে ভরে কি লাভ (?) — ব্র্যাকেটবন্দি প্রশ্নটি কেন যেন মনে ওঠে। গ্রিক পর্যটক ও রাজদূত মেগাস্থিনিসের ভ্রমণবিবরণীর পাতায় লিপিবদ্ধ ইতিহাস হয়তো সত্যি ছিল একদিন, এখনো কি তাই? ‘মেগাস্থিনিসের হাসিও কি মেগাস্থিনিস’ — আপাত অবোধ্য রূপকে কবি যে-প্রশ্নটি উঠালেন সেটির কী করা! ‘মেগাস্থিনিসের হাসি’ কি তবে দিগ্বিজয়ী এক শক্তিমেশিন, যে কেবল নীরবতায় শক্তিমান হয়ে ওঠে? যে-শক্তির দাপটে উপমা-উৎপ্রেক্ষার ঘোটকরা শূন্যে উড়ে আর কবিতার বাকপ্রতিমারা অধিবাস্তব আবেশে কথা কইতে বাধ্য হয়? যদি তা-ই হয় তবে এঞ্জিনের শব্দ ঠেলে রোবটের কাশির আওয়াজ কেন অপ্রতিরোধ্য অস্বস্তি আনে মনে, যাকে আর কোনোভাবে ‘বিষণ্ণ খড়ের শব্দ’-এ ঘনবদ্ধ পরাবাস্তব চিত্রকল্প দিয়ে মেরামতের সাধ্য কবির নেই? কবিতাটি পড়তে যেয়ে বিচিত্র দ্বিরাভাসের ভজকটে পাঠকের গমন না করে উপায়ান্তর থাকে না। ভাষা-অনুভবের এই বিপর্যাসের গহ্বরে লুকিয়ে ছিল আগাম সংকেত যার ছায়ায় নব্বইয়ের কবিরা তখন একে-একে সমবেত হচ্ছিলেন।
আশির দশকের কবি, আশির দশকের কবিতা ধারাবাহিকের অন্যান্য রচনা
নব্বইয়ের কবি, নব্বইয়ের কবিতা ধারাবাহিকের অন্যান্য রচনা
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি
- আমাদের গ্রামের নাম আমাদের নদীর || কাজল দাস - November 19, 2025
- লোককবি মনির নূরী ও তাঁর গান || জফির সেতু - November 19, 2025
- উপন্যাসে শহুরে জীবনের ক্লান্তি ও বিপন্নতার বোধ || হারুন আহমেদ - November 16, 2025

COMMENTS