শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতি ও আকবর আলি খান || আহমদ মিনহাজ

শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতি ও আকবর আলি খান || আহমদ মিনহাজ

আকবর আলি খানের ওপর সরোজ মোস্তফার নাতিদীর্ঘ অবিচ্যুয়ারি পাঠ করে ভালোই লেগেছে। সংক্ষিপ্ত হলেও খাঁটি, সাহসী ও জীবনরসিক এক বুদ্ধিজীবীকে চিনে নিতে পাঠকের অসুবিধে হয় না। ‘বিচারপতি হাবিবুর রহমানের মতোই তিনি তথাকথিত পোশাকি অফিসার ছিলেন না। আমলা হয়েও ছিলেন প্র্যাগমাটিস্ট  চিন্তক, খাঁটি বুদ্ধিজীবী।’ লেখকের বক্তব্যে সেই আকবর আলি খান ধরা দিয়েছেন যিনি প্রথানুগ আমলাতন্ত্রে জীবন কাটালেও এর সুকঠিন ব্যাধিগুলো তাঁকে কাবু করতে পারেনি। স্মরণ রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশের জগদ্দল আমলাতন্ত্রে আঘাত হানার সঙ্গে তার খোলনলচে বদলানোর জিহাদে আকবর আলি খানকে কিন্তু আমরা কখনো সেভাবে পাইনি। না-পাওয়ার কারণটি অনুমান-অসাধ্য কিছু নয় মনে করি। ব্যক্তির একার পক্ষে System-কে আঘাত করা সম্ভব হলেও তাকে বদলানো ঢের কঠিন কম্মো। এর জন্য Political Activism সেই মানে পৌঁছানো প্রয়োজন যার পক্ষে আকবর আলি খানের মতো ব্যক্তির চিন্তাসূত্র অনুধাবন ও তাকে রাজনৈতিক ভাষায় রূপান্তরিত করা সম্ভব। দেশে এর আকাল নিয়ে নতুন করে কথা না বাড়ানো সমীচীন হয়তো।

উঁচু দরের আমলা হিসেবে কর্মজীবনে যে-কাজ করতে পারেননি, অবসরে গমনের দিন থেকে নিজের লেখনি-বক্তৃতা ও সংলাপে না পারার এইসব দায় আকবর আলি খান মিটিয়ে নিতে সচেষ্ট ছিলেন। পরার্থপরতার অর্থনীতি  নামক বইখানা এর নজির রূপে পাঠকের স্মৃতিতে আজো অম্লান বটে! সাধারণ পাঠকের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে আমলাতন্ত্র থেকে অর্থনীতির জটিল প্যাঁচপয়জারে ভরাট রেখাচিত্রগুলো নিয়ে তাঁর সরস, বুদ্ধিদীপ্ত ও তথ্যবহুল আলোচনা বড়ো উপভোগ্য ঠেকেছিল তখন। বইটি যতদূর মনে পড়ছে শূন্য দশকের গোড়ার দিকে প্রকাশিত হয়েছিল। আকবর আলি খান তখন সরকারি দায়িত্বের জোয়াল কাঁধ থেকে নামিয়ে প্রায় ভারমুক্ত হওয়ার বয়সে পা দিচ্ছিলেন।

এমতো কালপর্বে পরার্থপরতার অর্থনীতি­র মতো রচনাসংকলনের প্রকাশ বুঝিয়ে দেয় ক্ষুরধার পাণ্ডিত্যর সঙ্গে অভিজ্ঞতা আর প্রখর জীবনবীক্ষণ মিলেঝুলে খাঁটি একজন বুদ্ধিজীবী নিজেকে খোলসমুক্ত করার প্রস্তুতি সারছিলেন। পরিতাপের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, চমৎকার রেফারেন্সের সুতো ধরে সরস কিন্তু বিশ্লেষাণাত্মক আলোচনায় যে-আকবর আলি খানকে পাঠক বইয়ে ঝিলিক দিতে দেখে তার কোনো অর্থবহ পাঠ-আলোচনায় যাওয়ার প্রয়োজন দেশের বুদ্ধিজীবী মহলে অনুভূত হতে দেখা যায়নি। বইটির পরবর্তী কোনো সংস্করণ হয়েছিল বলে মনে পড়ছে না! ঘটনাটি উৎকৃষ্ট আলোচনার সুতো ধরে নতুন সংলাপে গমনের ক্ষেত্রে বাঙালি জাতির চিরন্তন আলস্য, অনীহা ও চিন্তার দেউলিয়াত্বকে আরেকবার চিনিয়ে যায়।

জীবদ্দশায় আকবর আলি খানের পাণ্ডিত্য ও বিশেষজ্ঞতায় মুগ্ধজনরা তাঁকে নিয়ে গবেষণা দূরে থাক, একখানা তথ্যচিত্রও নির্মাণ করে উঠতে পারেননি! বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিতার ইতিহাসে বিভিন্ন কালপর্বে দেখা দেওয়া ক্ষুরধার ভাবুকগণের মতো তিনিও নিঃসঙ্গ শেরপা  হয়ে পাহাড়চূড়ায় আরোহনের লড়াইটা করে গেছেন খামোখা! কাজী মোতাহের হোসেন, আহমদ শরীফ, ড. আখলাকুর রহমান, আবদুল হক, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর থেকে এখনো জীবিত বদরুদ্দীন উমর বা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী…, উনাদের লেখালেখি, জীবনজিজ্ঞাসা ও Activism নিয়ে ভালোমন্দ ভাবনা ও আলাপ আশা করা এই দেশে কাকস্য পরিবেদনাই বটে!

পূর্বসূরীদের কাজকে যদি পাঠ ও প্রশ্নবিদ্ধ করা না যায়, গ্রহণ-বর্জনের পরিসরকে সেখানে অবমুক্ত করা সম্ভব না হয় তাহলে চিন্তার ধারাবাহিকতা কি গড়ে ওঠে কখনো? ধারাবাহিকতায় নতুন ভাঙচুর অথবা মোড় ফেরার বিষয়টিও বোধ করি বোধের অগম্যই থেকে যায়। কথার কথা, আহমদ ছফা, ফরহাদ মজহার, সলিমুল্লাহ খান বা আজফার হোসনের কাজের ধারা, চিন্তন-পদ্ধতি কতটা নতুন, কী কারণে ধারাবাহিকতায় বিচ্ছেদ অথবা আদৌ দূরপ্রসারী নাকি শূন্যগর্ভ বাকোয়াজি ইত্যাদির দিশা যদি পেতে চাই তবে উনাদের পূর্বসূরী ও সমসাময়িক যাঁরা রয়েছেন তাঁদেরকে প্রাসঙ্গিক করার বিকল্প নেই। এ-রকম আলাপের জমিন দেশে আজো গড়ে না ওঠায় বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিতাকে লোকে জনবিচ্ছিন্ন নিদান বলেই ভাবে আজকাল। ফেসবুক ও টেলিভিশনের টকশোয় তাঁরা উজ্জ্বল পায়রা কিন্তু জনজীবনে গভীর কোনো আবেদন কি সত্যি রাখেন? রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান কি তাদের বাকপটু বাচনিকতায় বিচলিত হয় আদৌ? নাকি কতিপয় স্তাবক তৈরি করার মধ্য দিয়ে নিজের থুতু তাঁরা নিজেই গিলছেন অহর্নিশ?


পরার্থপরতার অর্থনীতি­  কিতাখানায় ফেরত যাই আরেকবার। একগুচ্ছ সরস ও বুদ্ধিদীপ্ত রচনার সমাহারে অবমুক্ত কিতাবে শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতি  নামক রচনাটি আজো মনে অক্ষয় স্মৃতি হয়ে আছে। ইংরেজ আমলে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে কর্মরত মাইকেল ক্যারিটের স্মৃতিকথার প্রসঙ্গ টেনে আমাদের সাধের ভূবর্ষে দুর্নীতির সাতকাহন নিয়ে চমকপ্রদ আলাপ জুড়েছিলেন আকবর আলি খান। অলোচনার প্রবেশমুখ তৈরিতে ক্যারিটের স্মৃতিকথার কিয়দংশ উদ্ধৃত করেছিলেন মনে পড়ে। বাকি আলোচনা উদ্ধৃতিমাঝে নিহিত সত্যবচনের তল্লাশি ছিল বটে।

স্মৃতি থেকে লিখছি বিধায় ভুলচুক হলে পাঠক মার্জনা করবেন দয়া করে। আকবর আলি খান শুরুতেই ক্যারিটকে টেনেছিলেন। জাতে পাঞ্জাবি এক ঠিকাদারের কথা যে-ক্যারিট নিজের আত্মজীবনীতে টুকে রেখে গেছিলেন। উক্ত ঠিকাদারের সঙ্গে বাতচিত তখনকার ইংরাজশাসিত ভূবর্ষের অর্থনীতি ও প্রশাসনের অলিগলিকে এক লহমায় ক্যারিটের চোখের সামনে জীবন্ত করে তুলেছিল। ঠিকাদারের মতে অভাগা ভারতবর্ষে তিন কিসিমের লোকের দেখা মিলবে। কিছু লোক সৎ ও সজ্জন। শত চাপে ঘুষ বা চুরিচামারিতে নিজেকে তারা জড়ায় না। এর থেকে শত হস্তে দূরে নিরীহ আমলা বা কর্মকর্তার জীবন পার করে তারা। কিছু লোক বদের হাড্ডি। ঘুষ ছাড়া তাদের কলম নড়ে না। আর সবচেয়ে খতরনাক হচ্ছে ওইসব শুয়রের বাচ্চা  যারা ঘুষ নেয় কিন্তু কাজের কাজ কিচ্ছু করে না। আজকের বাংলাদেশ বা উপমহাদেশ অস্তক রাজনীতি, প্রশাসন, অর্থনীতির সদর-অন্দর সর্বত্র ওই তিন কিসিমের লোক প্রাগৈতিহাসিক ভূত রূপে যথারীতি বহাল কিংবা বেঁচেবর্তে রয়েছে বৈকি! আকবর আলি খানের গুরুত্ব যদি বলি তবে সেটা এখানে নিহিত। প্রয়াণের আগে অবধি দেশের চালচিত্র চিনিয়ে দিতে তাঁর কলম বিরত থাকেনি। ওদিকে শুয়রের বাচ্চাদের হাতে সৃষ্ট জগদ্দল সিস্টেম থেকে কী করে বেরিয়ে আসা যায় তার উপায় নিয়ে ভেবেছেন আর সেটা সরোজ মোস্তফার কথা মতো প্র্যাগমাটিক  বলেই মানতে হয়।

আকবর আলি খানের চিন্তনপদ্ধতির সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক প্রয়াত ও জীবিত বিশিষ্টজনের মৌলিক তফাত এ-ই যে, নির্দিষ্ট কোনো ভাবাদর্শকে Glorify করার বিমার তাঁকে পেয়ে বসেনি। বাংলাদেশের মার্কসবাদী চিন্তনপদ্ধতি ও রাজনীতির মধ্যে ইসলাম ধর্মকে কেটেছেঁটে সাইজ করার পরিণাম অনুভব করে দুয়ের মধ্যে সহাবস্থানের যোগসূত্র খোঁজার ভাবনা, যেমন ধরা যাক, সুপণ্ডিত ড. আখলাকুর রহমানের মতো তাঁকে গুরুতর দুর্ভাবনায় নিক্ষিপ্ত করেনি। ফরহাদ মজহারের মতো ভাবান্দোলন-র রাজনৈতিক বয়ান রচনার চেষ্টাও কেউ তাঁকে করতে দেখেনি কখনো। বৈশ্বিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র অদ্য যেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে তার শত-হাজার চোরাগুপ্তা ফাঁদকে তিনি বরং বাস্তবতা  বলে মেনে নিয়েছিলেন। মেনে নেওয়ার মানে অবশ্য এই ছিল না যে একে তিনি সমর্থন করছেন, বরং এর থেকে বের হওয়ার রাস্তা বাতলানোর চেষ্টা করে গেছেন জীবনভর। সুশাসন, দুর্নীতি, নির্বাচনী ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, সামাজিক ন্যায়বিচার ইত্যাদি সম্পর্কে খানের ভাবনা ও বক্তব্যে যে-কারণে ভাবাদর্শ নয় বরং বাস্তবচিন্তাটা (Pragmatic Thinking) সবার আগে জায়গা করে নিতে পেরেছিল।

পরাশক্তি ও শক্তিমান প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের কূটনীতি কেমন হবে কিংবা ঋণদাতাদের থেকে ঋণ গ্রহণ যদি বাস্তবতা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে এর ফাঁদ কেটে বেরিয়ে আসার রাস্তা কী ইত্যাদি ব্যাপারে নিজের ভাবনা তিনি খোলাসা করেই বলেছেন সবসময়। দুই কুল বজায় রেখে জনকল্যাণ নিশ্চিত করা যেতে পারে এ-রকম এক মিশ্র অর্থনীতির কথা যারপরনাই তাঁর আলাপ থেকে নিষ্কাশন করা অসম্ভব নয় বোধ করি। অমর্ত্য সেনের সঙ্গে এই জায়গায় তাঁকে হয়তো খানিক একীভূত ভাবা যায়। গরিব দেশের করণীয় সন্ধান করতে যেয়ে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর Poor Econommics নামের কিতাবখানা যে-জায়গায় দাঁড়িয়ে লেখেন, তার সঙ্গে আকবর আলি খানের বক্তব্যের সারনির্যাসে যৎকিঞ্চিৎ মিলন বোধহয় দুর্লভ নয়। ভুল কিছু বলে থাকলে সুধী পাঠক শুধরে দেবেন আশা করি।


অকপটে কবুল যাওয়া প্রয়োজন, পরার্থপরতার অর্থনীতির বাইরে আকবর আলি খানের সুবিপুল লেখালেখির যৎসামান্য পাঠ সম্ভব হয়েছে। বিচিত্র বিষয় নিয়ে লিখেছেন সারা জীবন। জীবনানন্দ দাশের কবিতার ব্যবচ্ছেদ থেকে শুরু করে রাষ্ট্র-সমাজ-অর্থনীতির সবটাই তাঁর বীক্ষণে অনায়াস ছিল মানতে হয়। খান যেহেতু কলমের সঙ্গে আলাপচারিতায় সক্রিয় ছিলেন, গণমাধ্যমে তাঁর কলাম, সাক্ষাৎকার কিংবা মতামত অহরহ চোখের সামনে এসেছে। এগুলো এক অর্থে স্বরচিত কিতাবের পাদপূরণ করেছে অনেকখানি। তো এইসব কথাবার্তায় যে-মানুষটি সর্বদা ঝিলিক দিয়েছেন তাঁকে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী পরিমণ্ডলে নিঃসঙ্গ ও দলছুট বলাটাই সংগত মনে করি।

পাণ্ডিত্য ও জীবন-অভিজ্ঞতায় সৃমদ্ধ মানুষটি যেন-বা লোকচক্ষুর আড়ালে এক বাতিঘর! জগদ্দল রাষ্ট্রযন্ত্রকে তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না, অন্যদিকে তার কাঠামো ভেঙে নতুনের পত্তন ঘটাবে সে-রকম সামাজিক উপপ্লবের অভাব আর এক সময়কার দুঁদে আমলা রূপে স্বয়ং কিছু করতে না পারার নিরাশা ঠেলে সামনে আগানোর আশাবাদ…, আকবর আলি খান এই উভয় সংকটে বাস করেই নিজের দায় পুরা করছিলেন। বাংলাদেশের সরকার কর্তৃক তোপধ্বনির মাধ্যমে তাঁকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার ঘটনাটি এই জায়গা থেকে বিবেচনা করলে তাই পরিহাস মনে হয়। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র বুঝিয়ে দিলেন শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতিকে এ-দেশে যারা আজো জীবিত রেখেছে তাদের কাছে আকবর আলি খান আদৌ বিপজ্জনক কোনো বারুদ রূপে কভু বিবেচিত ছিলেন না। তাঁর সুচিন্তিত, সারগর্ভ ও সরস বিশ্লেষণশক্তিকে রাষ্ট্র মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উদাহরণ হিসেবে Encash করেছিল মাত্র।

দেশে এই মুহূর্তে সে-রকম বুদ্ধিজীবিতার আকাল চলছে যেটি কিনা দেশের আমলাতন্ত্র, রাষ্ট্র পরিচালনার ধাত, অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও বৈষম্য সহ বিচিত্র প্রসঙ্গ ছুঁয়ে যাওয়া আকবর আলি খানের আলোচনাপদ্ধতিকে গড় করে প্রভাববিস্তারী Discourse জন্ম দেবার হ্যাডম রাখে। যারপরনাই তিনি যেমন সবসময় চেয়েছেন, সরকার ততটুকু সক্রিয় থাকবে যতটুকু হলে পরে জনগণের জীবনে তাকে বোঝা ও দুঃস্বপ্ন মনে হবে না। সরকারের এই পরিমিত ভূমিকা পালনের পথ-পথ্য-পাথেয় সম্পর্কে সারাজীবন বলে গেছেন, যদিও সেগুলোকে গুরুত্ব সহকারে বিবেচনার কথা কেউ ভুলেও ভাবেনি। যারপরনাই দেশের মাথাভারী যে-আমলাতন্ত্রে তিনি স্বয়ং দিনরজনি পার করেছেন একসময় এবং ওটা ছেড়ে আসার পর সাহসী ও স্পষ্টবাদী বলে লোকের সুনাম কুড়িয়েছিলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য এর কাঠামোয় বড়ো কোনো রদবদল তাঁর জীবদ্দশায় দেখে যাওয়ার আশা তাঁকে ত্যাগ করতে হয়েছিল। ঘটনাটি এক দিক থেকে বাংলাদেশের জনজীবনে সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবিতার নিস্তেজ প্রদীপে পরিণত হওয়ার ইশারা দিয়ে যায়।

শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতির উপসংহারে রাষ্ট্রবিদ উইল রজার্সকে উদ্ধৃত করে খান লিখেছিলেন, উন্নয়নশীল দেশের জনগণকে তাদের সরকারকে বলতে হবে, ‘হুজুর আমরা আপনার কাছে উপকার চাই না, শুধু মেহেরবানি করে আপনার শুয়রের বাচ্চাদের সামলান।’ কথাটির নেপথ্যে নিহিত মর্মান্তিক পরিহাস অদ্য আকবর আলি খানের তিরোধান ও হর কিসিমের শুয়রের বাচ্চা পরিবেষ্টিত রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রতিটি দেয়ালে বোধ করি প্রতিধ্বনি তুলে যাচ্ছে! ক্ষমা করবেন হে গুণী, আপনার চিরবিদায়ের ক্ষণে পরিহাসটি বড়ো নির্মম হয়ে কানে বাজছে আজ!


তাৎক্ষণিকামালা
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you