আশির দশকে আমাদের শৈশব-কৈশোরে বাড়ি থেকে শহরে যাওয়ার একমাত্র যানবাহন ছিল লঞ্চ। মার্কুলি-শেরপুর নৌরুটে লঞ্চযোগে যাতায়াতের জন্য শেরপুর লঞ্চঘাট বা আশপাশের দোকানগুলোতে অপেক্ষা করতে হতো দীর্ঘ সময়। লঞ্চঘাটের পাশে ছিল বেশকিছু অডিয়োক্যাসেটের দোকান। প্রায় প্রতিটি দোকান থেকে উচ্চ স্বরে ভেসে আসত একটি মরমি কণ্ঠ। অসম্ভব জনপ্রিয় এই শিল্পীর গান গ্রামে-গঞ্জে যেখানে গান বাজে, সেখানেই শুনি। এত দরদ, এত আবেগ দিয়ে কোনো শিল্পী গান গাইতে পারেন সেই ভাবনার বয়স তখনও হয়নি।
আবিষ্কার করলাম এই শিল্পীর নাম মো. ইব্রাহীম।
সম্ভবত নিজের পকেটের টাকায় প্রথম কেনা ক্যাসেট এই জনপ্রিয় শিল্পীর। তারপর থেকে ‘কী আছে জীবনে আমার’ গানটি যেন হয়ে উঠল নিত্যদিনের সংগীত। অসম্ভব প্রিয় হয়ে উঠল তাঁর গানগুলি। ‘কী আছে জীবনে আমার’, ‘কোনো একদিন আমায় তুমি খুঁজবে’, ‘জীবন চলার পথে ওগো বন্ধু’, ‘তুমি কি কখনো জানতে চেয়েছো’ গানগুলো যেন হৃদয়ের গহীনে জায়গা করে নেয়।
পরবর্তীকালে এই বোধ হয়তো আর কাজ করেনি। আর শোনা হতো না মো. ইব্রাহীমের দরাজ গলার জনপ্রিয় গানগুলো। এই গুণী শিল্পীর মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে মনে পড়ছে ক্যাসেটপ্লেয়ারে গান শোনার সেই শুরুর দিনগুলোর কথা।
মরমি কণ্ঠশিল্পী মো. ইব্রাহীম ১৭ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে-নয়টায় ঢাকায় ইন্তেকাল করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
আশির দশকে বিচ্ছেদ ও মরমি গানের জন্য সমাদৃত ছিলেন তিনি। ৪১টি অ্যালবাম সহ প্রায় সাড়ে চার শ গান করেছেন জনপ্রিয় এই শিল্পী। চলচ্চিত্রেও গান গেয়েছেন তিনি। তার গাওয়া বেশিরভাগ গানই নিজের রচনা এবং সুর করা। অদ্ভুত বিষণ্ণ গলায় প্রার্থনার আবহে গান করতেন মো. ইব্রাহীম। পরম করুণাময় আল্লাহ যেন চিরপ্রশান্তিতে রাখেন বাংলা লোকায়ত সংগীতের এই গুণী শিল্পীকে। মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।
- রিপন মিয়ার জীবন ও সাহিত্য || কাজল দাস - October 14, 2025
- চেজিং হোমার / লাসলো ক্রাসনাহোরকাই || অনুবাদ / কয়েস সামী - October 13, 2025
- আহমদ রফিক : শতবর্ষী বিরিখের প্রস্থান - October 13, 2025
COMMENTS