সমাচার শয়তানের কবিতার || আহমদ মিনহাজ

সমাচার শয়তানের কবিতার || আহমদ মিনহাজ

সালমান রুশদির ‘শয়তানের পদাবলী’ নিয়ে যখন শোরগোল চলছে সম্ভবত তখন সৈয়দ মোস্তফা সিরাজ বইটি নিয়ে ‘দেশ’ পত্রিকায় (*অন্য কাগজেও হতে পারে) একখান নিবন্ধ লিখেছিলেন। রুশদির রচনা যতদূর মনে পড়ছে সিরাজ সাহেবকে প্রীত করেনি। আখ্যানের প্লটিং নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন। লোকের নজর কাড়তে সালমান রুশদি ইসলামের ইতিহাসে বিরাজিত অস্বস্তিকর ও বিতর্কিত বিষয়কে তাঁর আখ্যানে ফ্যান্টাসাইজ করেছেন এরকম অভিযোগের সুর লেখায় ফুটে উঠেছিল। নিবন্ধটি সিরাজ কোন বছর লিখেছিলেন সে অতশত মনে নেই। তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে বিশ্বে যখন তোলপাড় শুরু হলো সেই বছর সম্ভবত এটি কাগজে বেরিয়েছিল। তসলিমা সেখানে প্রসঙ্গ হয়ে এসেছিলেন কি-না সে আর এতদিন বাদ স্মরণ হচ্ছে না। তসলিমার ‘লজ্জা’ অবশ্য রুশদিকাণ্ডের বেশ পরের ঘটনা। সংক্ষুব্ধ সেই সময়ে ‘অলীক মানুষ’র রচয়িতার নিবন্ধ পাঠ যাওয়ার পর তাঁকে খানিক রক্ষণশীল মনে হয়েছিল।

তরুণ বয়সের দোষে ইসলাম নিয়ে কারও বক্তব্যে পক্ষপাত বা সাফাইয়ের সুর টের পেলে তাকে রক্ষণশীল বলে দাগানোর বাতিক তখন তীব্র ছিল। এও যে একপ্রকার সংকীর্ণতা সেটা বোঝার বয়স বা মানসিক পরিপক্কতা অধমের ছিল না। পুরোনো সেই দিনগুলোর কথা ভাবলে এখন হাসি পায় কিন্তু বয়স ও বুঝ বিবেচনায় এহেন মনোভাব আসলে অযৌক্তিক ছিল না। মানুষ তার অভিজ্ঞতার ভিতর গমনের মাধ্যমে ক্রমশ পরিণত হয়ে ওঠে। সেই যাত্রাপথে যা কিছু সে ঝোলায় ভরে তার কোনওটাই মিথ্যে বা গৌণ হতে পারে না। সিরাজ সাহেবের নিবন্ধপাঠে তাঁকে ছদ্মবেশী রক্ষণশীল ভাবার ঘটনা স্মরণ করে এখন ভীষণ হাসি পাচ্ছে কিন্তু সেই সময়ের পটপ্রবাহ বিবেচনায় বিষয়টি যথেষ্ট গুরুগম্ভীর ছিল। আমাদের চারপাশ ঘিরে ডান ও বামপন্থার আদর্শিক দ্বন্দ্ব বিরাজ করত এবং সেখানে অনেকেই বামের দিকে হেলে ছিলাম তখন। যদিও বাম ঘরানায় থিতু দেবেশ রায় তাঁর লেখায় তসলিমার লজ্জাকাণ্ডের পটভূমি বিশ্লেষণে বিশেষ প্রসন্ন ছিলেন বলে মনে হয়নি। স্মরণশক্তি যদি বিভ্রান্ত না করে থাকে তবে তাঁর বক্তব্যে তসলিমার প্রতি অনুক্ত ক্ষোভ ঝরে পড়েছিল।

সে যা-ই হোক, শয়তানের পদাবলীর প্লটিং কী কারণে রুশদির নামের প্রতি সুবিচার করেনি তার ব্যাখ্যা মোস্তফা সিরাজের লেখা পাঠে আমি তখন ধরতে পারিনি। কোরানএ মিসিং আয়াতের ঘটনা ও বনেদ হিসেবে রুশদির আখ্যানে এর প্রয়োগ নিয়ে দেশবিদেশে গুণীজনরা তখন প্রচুর লিখছিলেন। রুশদি নিজে বিষয়টিকে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করেছিলেন মনে পড়ে। তাঁর আখ্যানছকে ব্যবহৃত প্লটের সঙ্গে ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদের মানহানির সম্পর্ক নেই এহেন গৎবাঁধা বিবৃতি চটজলদি দিতে ভোলেননি। খোমেনি কর্তৃক কল্লা ছেদনের ঘোষণায় ভীত কোনও ব্যক্তির পক্ষে এরকম ঘোষণা স্বাভাবিক ছিল সেই সময়। হতেও পারে, আয়াতটি অপভ্রংশের মতো তাঁর মস্তিষ্কে চেপে বসেছিল। স্বভাবসুলভ পোয়েটিক মেটাফোরের আশ্রয়ে একে রূপদান করার উত্তেজনা তাঁকে দিয়ে হয়তো ‘শয়তানের পদাবলী’ রচনায় মাতিয়ে রেখেছিল। পরে বিপদ দেখে তিনি একে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ যাওয়ার প্রসঙ্গ টেনেছিলেন বলে একিন যেতে হয়।

একটি টেক্সটকে অবশ্যই বহু অঙ্গে পড়া যায়। ইসলামের ইতিহাস থেকে ব্যবহৃত উৎস সম্পর্কে অজ্ঞ পাঠকের কাছে রুশদির এই আখ্যান অন্য অর্থ ও অবয়ব নিয়ে হাজির হবে সেটি নিশ্চিত। একুশ শতকে বসে কেউ যদি নতুন করে আখ্যানটি পাঠ করে থাকেন সেখানে তার বিবেচনা ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাম্প্রতিক পাঠক বা পাঠসংঘ রুশদির আখ্যানকে নতুন বিবেচনায় পাঠ করেছেন এমন খবর এখনও কানে আসেনি। এরকমটি হলে অবশ্য মন্দ হয় না। সাহিত্যের কোনও টেক্সট অচল দুআনি নয় যে তাকে নতুন আলোয় পাঠ ও বিবেচনা করা যাবে না। সময়ে সকল উত্তেজনা স্থিরতা লাভ করে। রুশদির আখ্যানকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠ যাওয়ার বিষয়টি এখন যতটা সহজে ভাবা যাচ্ছে সেই সময় সেটি সম্ভব ছিল না। খোমেনির ফতোয়া পরিবেশ গরম করে তুলেছিল। বাংলাদেশের গাঁওগেরামে রুশদির কল্লা চেয়ে পোস্টারে ছেয়ে যেতে দেখেছি সেই সময়। ভোলতেয়ারের অমর বচনামৃত আর ওদিকে মিল্টনের ‘এ্যারিও প্যাজিটিকা’ পুনরায় আলোচনার টেবিল দখলে রেখেছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে সাফাই গাইলেও মিল্টন তাঁর কিতাবে রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য অতি স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে লেখার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত স্বাধীনতার পক্ষেই মত দিয়েছিলেন শেষতক। উপরন্তু প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের সাংঘর্ষিক সংস্কৃতির মাঝে শিকড় খুঁজে ফেরা সালমান রুশদি আয়াত মিসিং ঘটনার পটপ্রবাহ পাঠ কিংবা এর ঐতিহাসিকতা যাচাইয়ে কতটা গভীরে ডুব দিয়েছিলেন সে-প্রশ্ন তখন না উঠলেও এখন সম্ভবত একে এড়ানো সম্ভব নয়, কারণ ইসলাম বিষয়ক সাম্প্রতিক গবেষণা একে যৌক্তিকভাবেই বাতিল করে যায়।

এইসব ঝামেলা সত্ত্বেও রুশদির ‘শয়তানের পদাবলী’ ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মানহানিকর কোনও টেক্সট নয়। ইতিহাসের কাছে প্রতি পদে দাসখত দিয়ে লিখতে হবে এমন দিব্যি লেখককে কেউ দেয়নি। এভাবে আখ্যান ফাঁদা কঠিন। যদি-না লেখক স্বয়ং কবুল করেন,— ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত সত্যের বাইরে তিনি এক-পা আগাবেন না বলে মনস্থির করেছেন এবং সেই ছকে আখ্যান রচনা করা তার উদ্দেশ্য। বঙ্গদেশের ঐতিহাসিক আখ্যান সাহিত্যে এই প্রবণতা বেশ সুলভ। ইতিহাসের বিবরণ ধার করে লেখার সময় তার কপিক্যাট  করাটাকে যদি অমোঘ করে তোলা হয় তবে সে-রচনা আখ্যানের মর্যাদা লভে কি? আখ্যানকারের কাজ হচ্ছে ঐতিহাসিক বিবরণকে নিজস্ব নিক্তির মাপে তিনি প্রথমে ওজন করবেন। মাপামাপি শেষ হলে তার ভাবনা উক্ত বিবরণের সঙ্গে নিজেকে একীভূত করতে পারে, একে প্রত্যাখ্যান করতে পারে, অথবা গ্রহণ ও প্রত্যাখ্যানের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে তৃতীয় দৃষ্টিভঙ্গির শরণ মেগে নয়া ইতিহাস সৃজনে তাড়িতও হতে পারে। প্রশ্ন হলো রুশদির আখ্যান এহেন সব অভিজ্ঞতার মধ্যে গমন করেছিল কি?

কোরান-র আয়াত মিসিংয়ের ঘটনাকে নিছক রেফ্রেন্স হিসেবে তিনি বেছে নিয়েছিলেন বলে মনে হয়। উমবার্তো একো-র মতো অতলে গিয়ে এর যৌক্তিকতা তদন্ত এবং ফলাফলকে আখ্যানে রূপ দানের প্রবণতা বিশেষ চোখে পড়েনি। কারণ রুশদি প্লটকে থিয়োরি বানিয়ে লেখেননি। একো-র ক্ষেত্রে থিয়োরি হচ্ছে অমোঘ সেই প্লট যাকে ছাড়া খ্রিস্টানডোমে বিদ্যমান বনেদের অবক্ষয় আবিষ্কার তাঁর পক্ষে পাহাড় ঠেলার শামিল হয়ে ওঠে। তিনি থিয়োরি দাঁড় করান এবং তারপর লিখতে বসেন। ‘শয়তানের পদাবলী’র মাঝে চমক হয়ে আসা পোয়েটিক মেটাফোর কিন্তু সেই বস্তু নয় যেটি ইতিহাসকে একাধারে প্রশ্নবিদ্ধ ও বি-নির্মাণ করে যাবে। বিতর্কিত অংশটি বাদ দিলে রুশদির এই আখ্যান তাঁর নিজের হাতে রচিত ‘নবিজির কেশ মোবারক’, ‘লজ্জা’, ‘মধ্যরাত্রির শিশুগণ’ কিংবা ‘ক্লাউন শালিমার’ ইত্যাদির সমপঙক্তিতে বসার যোগ্যই নয়। ‘রৌজ’ আখ্যানে উমবার্তো একো ইতিহাসকে বি-নির্মাণ করেছিলেন। রুশদির আখ্যান এই ছাপ বহন করে নাকি করেনি সে-বিচার পাঠক একদিন করবেন আশা রাখি।

সালমান রুশদির কাছে আয়াত মিসিংয়ের ঘটনাটি ছিল ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ উৎস যা লেখকের কল্পনাপ্রতিভাকে উসকে দিতে জানে, যার ওপর ভর করে সরস কাহানি ফাঁদা যায়। রুশদি তাঁর অনুপম হেঁয়ালিভরা ভাষায় ঘটনার সারবস্তুকে অগত্যা চুবিয়ে মারতে ইতস্তত করেননি। একো-র আখ্যান রচনার কৌশল তদন্তসুলভ কল্পনাপ্রতিভার ওপর ভর করে ইতিহাসকে নতুন আঙ্গিকে পঠিত হতে বাধ্য করে। ওদিকে ইসলামের বিশেষ এক কালপর্বে প্রবেশের পর  রুশদি এক টুকরো তথ্য সেখান থেকে ধার করেন এবং এর অধিক কিছু তাঁর আখ্যান পাঠে আন্দাজ করা কঠিন হয়। স্পর্শকাতর ঘটনাকে আখ্যানের খোরাক করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর পরিশ্রমের মাত্রা সে-কোরণে অনায়াসে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল, যার ইঙ্গিত মোস্তফা সিরাজ নিজের নিবন্ধে দিয়েছিলেন।

মজার ব্যাপার হলো উৎস সন্ধানের ইতিহাসে ঢোকার পর এর সত্যতা যাচাইয়ে সালমান রুশদি ইতিহাসের ধরাবাঁধা ছকে ঘুরপাক খেয়েছেন, যেখানে Critical Examination-র বালাই ছিল না। আয়াত সম্পর্কিত বিবরণের সত্যতায় সন্দেহ পোষণের কোনও কারণ তিনি খুঁজে পাননি! অনুরূপভাবে তাঁকে যাঁরা অভিযোগের কামান দেগেছিলেন তাঁরাও ইতিহাসের বৃত্তে বসেই আয়াত মিসিং বিষয়ক অভিযোগ খণ্ডনের বিপক্ষে একগাদা প্রমাণ জড়ো করতে হয়রান বোধ করেছিলেন। সমগ্র বিষয়টিকে কোরান-র আলোয় যাচাই করার সম্ভাবনা দুপক্ষের কারও মনে উদয় হয়নি। যদিও মৌখিক পরম্পরায় সংকলিত হাদিস-সিরা ইত্যাদিকে ভিত্তি ধরে বিরচিত তফসির ও মাযহাবশাসিত ইসলাম এবং তাকে ঘিরে আবর্তিত Sectarian Islam-র সঙ্গে কোরান নির্ধারিত ‘দীনী কাঠামোর’ ভিন্নতা ব্যাপক ও ক্ষেত্রবিশেষে তীব্র সাংঘর্ষিক।

কোরান-এ ‘দীন’ শব্দটি যেখানে দাঁড়িয়ে সমগ্র মানবজাতিকে নিজের দেহে একীভূত করে, প্রতিটি আয়াতে নিহিত অর্থ যেভাবে স্রষ্টার সঙ্গে সৃষ্টির সংযোগ নির্ধারণ করে যায়, ইত্যাদি বিবেচনায় নিলে রুশদির আখ্যানের ভরকেন্দ্র অর্থাৎ মিসি আয়াতের যৌক্তিকতা আপনা থেকে খেলো হয়ে পড়ে। কোরান-এ গমনের মধ্য দিয়ে তাঁর আখ্যানের অসরাতা প্রমাণের ভাবনা সেই সময় বিজ্ঞজনকে তাড়িত করেনি। ইতিহাসের ফাঁদবন্দি রুশদি ও তাঁর প্রতিপক্ষ, দুজনের কাউকেই ইসলামের সত্যিকার ইতিহাস যেখানে সংকলিত হয়ে আছে সেই কোরান-এ গমন করে ফ্যাক্ট চেক করতে দেখা যায়নি। কাজটি জটিল ছিল! কোরান-র আয়াত পাঠ ও মর্মার্থ অনুধাবনে আরবি ভাষার শব্দমূল এবং ঘটনা-পরম্পরা বুঝে নেওয়া এক বড়ো বিষয়। এই কিতাবের সবক নিতে পাঠক তার ‘আকল’ এস্তেমাল করবে অথবা হাদিস-তাফসির থেকে আরম্ভ করে হাজারো ব্যাখ্যায় ঘুরপাক খেয়ে সবক নেওয়ার মিশনে বহাল থাকবে, দুইয়ের মধ্যে কোনটি তার জন্য ফলদায়ক সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সোজা নয়। অন্য সকল টেক্সট ছাটাই করে কোরানকে স্রেফ কোরান-এ লিপিবদ্ধ অর্থের সাহায্যে পাঠ যাওয়ার পর ইসলামের যে-স্বরূপ ফুটে বেরোয় তার সঙ্গে মানব বিরচিত ঐতিহাসিক বিবরণে ঠাসা কালামশাস্ত্রের গায়ে ঠেকনা দিয়ে দাঁড়ানো কোরান   ইসলামের মিল নিবিড় নয়। কোরান-এ বর্ণিত আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহকের মাধ্যমে নির্দেশিত হাদিস ও সুন্নাহ যে-ব্যক্তি আমল করতে আগ্রহী এবং সেই আলোকে মুসলমান রূপে নিজের পরিচয় নিয়ে সে যখন হাজির হয় তখন উক্ত ব্যক্তির পক্ষে ঐতিহ্যে পরিণত মুসলমান ও ইসলামের সঙ্গে সহবত বজায় রাখা কঠিন।

কোরান নির্ধারিত বিবরণ অনুসারে ‘মুসলমান-মুমিন-মুত্তাকিন’, ‘ওজু-সালাত-সিয়াম-হজ’ থেকে শুরু করে প্রতিটি বিষয় আমল করা আর ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ র্নিধারণে তৎপর ঐতিহ্য কর্তৃক বিরচিত কোরান ব্যাখ্যা আমল করে মুসলমান নাম কেনা দুটি পৃথক অভিজ্ঞতা। সুতরাং যে হযরত মোহাম্মদকে রুশদি নিজের আখ্যানে সুকৌশলে আন্ডারমাইন করেন তাঁর ছবি কিন্তু কোরান ঘেঁটে বিশেষ পাওয়া যায় না। তবে হ্যাঁ, হাদিস থেকে শুরু করে আদি যুগের জীবনীকার ও ব্যাখ্যাবিশারদ পণ্ডিতগণের বয়ানে গমন করলে রুশদি নির্ধারিত মোহাম্মদের দেখা মিলতেও পারে। অনধিক আড়াইশো বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পর থেকে ইসলাম বদলে যেতে থাকে এবং বদলানোর এই নবীন ইতিহাস ক্রমশ ঐতিহ্যে পরিণত হয়। মুসলমানরা এখন যে-বস্তুকে ইসলাম নামে জানে ও অনুশীলন করে যেখানে অসংগতি আর গোঁজামিল ব্যাপক। ওরিয়েন্টাল মাইন্ড প্লে-র ওপর দাঁড়ানো এই ইসলাম আদৌ সেই কিতাবের ওপর দাঁড়িয়ে নেই যা এর প্রতিটি আয়াতের অর্থ অবধানের কথা অবিরাম জানান দিয়ে যায়। ইসলামের কোরান স্বীকৃত স্বরূপ খুঁজতে অধিক দূরে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সূরা ‘ফাতিহা’য় সেটি অনায়াসে ধরা পড়ে। স্রষ্টা সেখানে সৃষ্টির সঙ্গে তাঁর সংযোগ উপলব্ধির তরিকা নবিকে জানিয়ে রাখেন। নিজের অপাঠ্য ভাষান্তরে ‘ফাতিহা’র সেই ভাববস্তু এই ফাঁকে পাঠ করা যেতে পারে :—

স্মরি তাঁর নাম, করুণা ও ক্ষমার আঁধার
সকল প্রশংসা তাঁর, মালিক জাহানের।
অন্তিম দিবসের অধিপতি, তোমার সহায় মাগি,
সেজদায় বিনত আছি সরল পথের খোঁজে।
তোমার আশিসধন্যরা যে-পথ পায়
সেই পথে গমনের নিশানা দেখাও,
তারা নয়, অন্তর যাদের তুমি করেছো কঠিন।

বাণীর এই সারল্য হলো চাবি যার ওপর দাঁড়িয়ে কোরান-র আয়াত সৃষ্টির ইতিহাস ও তার গতিধারাকে অবিরাম বয়ান করে যায়। ইসলামের স্বরূপ (*যা এখন সকলের অস্বস্তি ও বিরক্তির কারণ বটে!) বদলের ভীতিকর ইতিহাস থেকে একটি টুকরো রুশদি উঠিয়েছিলেন; ভালো হতো যদি উমবার্তো একো-র মতো এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ে তিনি খানিক তদন্তে নামতেন। সেক্ষেত্রে যে-আখ্যান রচিত হতো সেটি বর্তমানে প্রচলিত এই ‘দীন’ যাকে অজ্ঞ ও সচেতন উভয় পন্থায় হাজার বছর ধরে পাল্টে দেওয়া হয়েছে তাকে খারিজ করত। বলাবাহুল্য আখ্যানটি হয়ে উঠত আরও বৃহৎ এক ঝড়, যার সঙ্গে কিছু মানুষ আজও সমানে লড়ে যাচ্ছেন। এঁনারা সেই ব্যক্তি যাঁরা (*হয়ে গেলো অনেক বছর) দল-উপদল আর ফেরকা-ফিতনায় বিধ্বস্ত দীনকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুগম-সহজ করতে কোরান-কে খোদ কোরান­-র ভাষা ও ‘কাণ্ডজ্ঞান’ দিয়ে উপলব্ধির তরিকা বাতলে চলেছেন। রুশদির ভাবনায় এটি তখন আসেনি কারণ তিনি স্বয়ং সেই ইতিহাসের বাইরের ঘটনা না যার করতলবন্দি পৃথিবীর দুশো কোটি মুসলমান ইসলামকে সত্য ‘দীন’ বলে মানে। তো এই ফাঁকে যেসব ব্যক্তি কোরানকে আধার করে লড়াই জারি রেখেছেন তাঁদের পরিচয়টা দিতে চাই…

প্রথমে এল লেখা-বক্তৃতা ও ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা; তারপর মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া; অতঃপর আদালতে সওয়াল-জওয়াব শেষে এখন মুক্ত এবং নিজ দেশ ও গোত্র ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমানোর আমন্ত্রণ গ্রহণে ঘোর অনিচ্ছুক সৌদি নাগরিক শেখ হাসান ফারহান আল-মালিকি; মিশরের প্রয়াত রিফরমিস্ট শেখ মোহাম্মদ আব্দুহ; হাদিসশাস্ত্রের ভিত্তি ও যৌক্তিকতা নিয়ে তীব্র সন্দিহান ও মালয়ী সমাজে কোরানপন্থী আন্দোলনের জনক মালয়েশিয়ার কাসিম আহমেদ; পাকিস্তানের প্রয়াত স্মরণীয় বিদ্বান গোলাম আহমেদ পারভেজ, জাভেদ আহমদ গামিদি, শেহজাদ সেলিম এবং একবার গুলিবিদ্ধ হয়েও কোরান-র বাইরে দ্বিতীয় কোনও ইসলামি শাস্ত্রে যাঁর আস্থা নেই সেই মোহাম্মদ শেখ; কোরান অনুবাদে যৌক্তিক সংস্কারের প্রণেতা তুরস্কের এদিপ ইউকসেল; ঐতিহ্যে পরিণত আচার-বিচারের বৃহৎ অংশকে কোরান-র আলোয় বাতিলের মিশনে কট্টর মার্কিনদেশি কৃষ্ণাঙ্গ হামজা আব্দুল মালিক; কোরান-র শব্দার্থ ও ব্যাকরণগত উৎস ব্যাখ্যায় পটু (*খুব সম্ভবত) ইরাকের নাগরিক ইউসুফ; অ-মুসলিম গবেষকগণের বিরাট তালিকায় ব্যতিক্রম ও কোরানপন্থী ভাষান্তরের প্রণেতা স্যাম গেরানস; উইকে প্রবাসী ও ঐতিহ্যপন্থী ইসলামিস্টদের নিয়ে মকারিতে ওস্তাদ পাক্কা আধুনিক জীবনধারায় অভ্যস্ত পাকিস্তানী মুফতি আবু লেইথ; এবং মোহাম্মদের সবচেয়ে মধুর ও যৌক্তিক জীবনকাহিনি যিনি শেষাবধি রচনা করতে পেরেছেন সেই ল্যাজলি হ্যাজিলটন; অথবা ‘কিবলা’ কেন্দ্রিক বিতর্কে নবতরঙ্গের প্রণেতা ড্যান গিবসন, যিনি তাঁর তিরিশ বছরের গবেষণার অন্তে এসে মোহাম্মদ ও ইসলামের জন্ম মক্কার পরিবর্তে সভ্যতার অন্যতম নিদর্শন জর্ডানের পেট্রায় বলে দাবি করছেন…এঁনারা সকলে মিলে সেই গুচ্ছ যাঁরা অসংখ্য দল-উপদল ও আচারবিচারে শুষ্ক এবং বিবিধ চত্রান্তের ফেরে বিভ্রান্ত, সংস্কারচ্ছন্ন, মারমুখী অথবা একালের সাপেক্ষে অচল ‘শয়তানী’ এক দীনের গা থেকে সকল আবর্জনা সরিয়ে সরল-সুগম রূপ প্রদানের জন্য কোরান-এ ফেরত যাওয়ার কথা অবিরাম বলেই চলেছেন। মিসিং আয়াতের ঘটনা ব্যাখ্যায় ঐতিহ্যপন্থী বিদ্বানদের ন্যায় ইতিহাসের কিনারা ধরে দৌড়ঝাঁপে তাঁদেরকে হয়রান হতে হয়নি। কোরান-র আয়াত-পরম্পরা দিয়ে এই উৎসের সত্যতাকে তাঁরা অনায়াসে নাকচ করেছেন।

কোরান  নিয়ে তাঁদের বক্তব্য ও যুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো যুগের আলোয় দীনচর্চার স্বরূপকে সকলের কাছে সহজ ও বোধগম্য করা। কোরান   ক্রিটিক্যাল রিডিং ও থিংকিংকে ডিনাই করে এরকম ভুল বা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণার অবসান ঘটানোর জন্য চর্চাটি প্রয়োজনীয়। ইসলামের আদি যুগে এবং মহানবি জীবিত থাকা অবস্থায় এটি জারি ছিল। নবির জীবদ্দশায় বাকস্বাধীনতা কীভাবে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিল সেটি কোরান-র ক্রিটিক্যাল রিডিং ছাড়া ঠাহর হয় না। সে যাহোক, সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রণীত কিতাবের নিবিড় পাঠে গমনের পর পাঠক ক্রমশ বুঝতে পারে হাজার বছর ধরে চর্চিত ইসলাম ও তাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ইতিহাস সম্ভবত সেই ইসলামের প্রতিধ্বনী নয় যার আওয়াজ একমাত্র কোরান-এ গমনে করলে কানে বাজে। কোরান নির্ধারিত এই ইতিহাস মূলধারার ইসলাম রূপে বিকশিত হওয়ার কথা ছিল, কালের ফেরে ঘটনাটি ঘটেনি। এই ট্রাজেডি নিয়ে আখ্যান আজও কেউ লিখেনি বলে জানি এবং হয়তো এখন সেটি লেখা প্রয়োজন।

রুশদি যবে শয়তানের পদাবলীর জন্য গৃহবন্দি তখন সালাফিপন্থী কতিপয় অ্যাক্টিভিস্ট গোপন কনফারেন্সে সমবেত হয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রুশদি ও কোরান-এ ১৯ (নাম্বার নাইনটিন) গাণিতিক সংখ্যার বিস্ময়কর বিন্যাসের ব্যাখ্যাতা রসায়নবিদ রাশাদ খালিফাকে ইসলামের মানহানি ঘটানোর অপরাধে কোতল করা হবে। সালাফিপন্থীদের বিবেচনায় রাশাদ খালিফার অপরাধ গুরুতর ছিল; কারণ সে নিজেকে আল্লাহর বার্তাবাহক দাবির পাশাপাশি তত্ত্বকে সলিডিফাই করার প্রয়োজনে কোরান-র অন্তত দুটি আয়াত সংশোধনের প্রস্তাব নিয়ে হাজির হয়েছিল। ‘বার্তাবাহক’ প্রশ্নে অনেক বিদ্বান অবশ্য এই মত দিয়ে থাকেন নবি ও বার্তাবাহক এক বিষয় নয়। নবিরা একাধারে নবি ও বার্তাবাহক রূপে সচরাচর তাঁদের ভূমিকা পালন করেন। বার্তা প্রচারক ব্যক্তিটি এক্ষেত্রে বাহকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও তাকে নবি বলা যাবে না। হযরত মোহাম্মদই শেষ নবি ও বার্তাবাহক সে-ব্যাপারে সন্দেহ নেই কিন্তু কোরান-র বার্তাকে নতুন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা ও প্রচারের বাহক-পরম্পরা চলমান থাকাটাই যুক্তিসংগত। তো যা হোক, রুশদিকে খুন করা যায়নি তবে রাশাদ খালিফা আমেরিকার তুসকান শহরে নিষ্ঠুরভাবে ছুরিকাহত হয়ে পরে মারা যান।

কোরান-এ ১৯ সংখ্যার খেলা ছাড়াও রাশাদ খালিফার জীবন ও তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ ঘিরে ১৯-র ঝকমারি সংক্রান্ত বিবরণ পাই তুর্কদেশি মুক্তমনা এদিপ ইউকসেলের বয়ানে। তরুণ এদিপ সেই সময় রাশাদ খালিফার সঙ্গে জুড়ে কোরান-র গাণিতিক ও ভাষাতাত্ত্বিক বিন্যাস ব্যবচ্ছেদের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর বয়ান থেকে জানতে পারি ভারতীয়দের নিকট থেকে গাণিতিক সংখ্যা রপ্ত করার আগে অবধি আরবি বর্ণমালাকে আরবরা সংখ্যা গণনার কাজে ব্যবহার করত। ‘কোরান’-র এই ১৯-র বর্ণমালা ভিত্তিক অর্থটি ‘এক’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। আল্লাহর একত্ব চিহ্নিকরণে সমগ্র কিতাবকে ১৯-র ছকে বাঁধাই করা হয়েছিল। এদিপের ভাষ্য থেকে জানা যায় রাশাদ খালিফার হত্যাকারীকে ধরতে আমেরিকা সরকারের উনিশ বছর লেগে যায়। এই হত্যায় জড়িত সংঘের সদস্যরা ছিল সংখ্যায় ১৯ জন। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের মিশনে তারা পরে যোগদান করেছিল এবং সেখানেও সংখ্যাটি ১৯-এ সীমাবদ্ধ ছিল। তুসকানে যে-মসজিদে রাশাদ খালিফা জুম্মাবারের বয়ান ও ইমামতি করতেন অথবা তাঁর বাড়ি, পোস্টআপিস নাম্বার সবই ১৯-র ধাঁধায় বাঁধা। কম্পিউটারে কোরান-র ১৯ সংখ্যার খেলা আবিষ্কারের ঘটনাটি তিনি ঘটান ১৯৭৪ সালে। ঠিক যেমন ওয়াই-টু-কে (Y2K) ভাইরাসেরে সমস্যায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির মূলে ছিল ১৯-র কেরামতি। অথবা সাম্প্রতিক কোভিড-19 সেই ১৯-কেই স্মরণ করায়। এদিপের কাছে এগুলো হচ্ছে ‘সাইন’, যার মাধ্যমে আল্লাহ মানবজাতিকে সতর্কবার্তা পাঠান হয়তো।

সে যা হোক, কোরান-র এই সংখ্যাগত বিন্যাস অনভ্যাবে তাওরাত  এবং বাইবেল-এ পাওয়া যায়। ‘বেদ’ ঘাটলেও সংখ্যার বিস্ময়কর খেলা আবিষ্কার করা সম্ভব। যদিও ইউকসেল মনে করেন কোরান-এ সংখ্যাতত্ত্বের প্রয়োগ এতটাই সুনিপুনভাবে ঘটানো হয়েছে যে কিতাবের মূল কাঠামোয় হস্তক্ষেপ ও তাকে বিকৃত করা দুঃসাধ্য। তাওরাত  বা বাইবেল-র তুলনায় এই কিতাবের বিন্যাসগত কৌশল অনেক বেশি সুসংহত এবং গাণিতিক ও ভাষাগত বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় ডিভাইন  অভিধার যোগ্য। যদিও কোরান-র ডিভাইনিটি এখন তার জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একে তাক-এ তুলে রেখে মৌখিক পরস্পরায় সংকলিত হাদিস ও বিচিত্র ব্যাখ্যাবিজ্ঞানের জালে এমনভাবে ঘেরাও করা হয়েছে আম আদমির পক্ষে সে-জাল ঠেলে সেখানে পৌঁছানো ও মর্মার্থ উপলব্ধি আর সহজ নেই। ইসলামের অভিভাবক আল্লাহ ও তাঁর বার্তাবাহক নবিগণ এখন এই দীনের ভরকেন্দ্র রূপে নিজের কৌলিন্য হারিয়েছেন। কোরান নির্দেশিত হাদিস ও সুন্নাহকে উপক্ষো করে মানব বিরচিত হাদিস ও মনগড়া ব্যাখ্যাবিজ্ঞান দিয়ে কোরান-ব্যাখ্যার কালচার প্রকারান্তরে এর সারল্য ও সহজতাকে আন্ডারমাইন করে যায়। কোরান এখন আর কোনওভাবেই কেন্দ্রীয় পাঠ্যবস্তুর জায়গায় নেই। টেক্সট হিসেবে সে তার কৌলিন্য হারিয়েছে। তাকে এখন মেমোরাইজ করা একজন মুসলমানের একমাত্র কাজ। ব্যক্তির ধীশক্তি (*কোরান যার গুণগানে কার্পণ্য রাখেনি) বা ইজহিতাদ  ব্যবহার করে মিনিঙ বোঝার চল তামাদি হওয়ার পথে। হাদিস ও বিবিধ ব্যাখ্যাশাস্ত্রের ওপর ভর করে পবিত্র কিতাবের মিনিঙ খোঁজার চল একজন মুসলমানকে ইজতিহাদ  থেকে ইজমা অর্থাৎ দীনের কোরান স্বীকৃত চর্চায় চুক্তিবদ্ধ ও জারি থাকার পরিবর্তে তাকলিদ বা অন্ধ-বিশ্বাসের প্রান্তে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। কোরান এখন আর সেই কিতাব নয় যাকে অবধান ও সে-অনুসারে জীবন যাপনের গুরুত্ব মহানবি সবিরাম প্রচার করে গিয়েছিলেন। ‘ইহাই সরল দীন’— এই আয়াতে নিহিত ফুরকান বা আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধানকে Sacterian ছকে ফেলে বিনষ্ট করা হয়েছে। আয়াত ধার করার ক্ষণে সালমান রুশদি এসব ভাবনায় তাড়িত হয়েছিলেন সেরকম প্রমাণ তাঁর আখ্যানপাঠে মিলে না।

সে যা-ই হোক, সহিংস-অসহিষ্ণু ও জঙ্গি ইসলামের উৎপত্তির বড়ো কারণ এই ঐতিহ্য যাকে মহানবি ও তাঁর সঙ্গীরা ধরা থেকে বিদায় নেওয়ার পর পরিকল্পিভাবে জন্মদান করা হয়। এর ফলে ইসলামের ইতিহাস এক সাংঘর্ষিক ও প্রশ্নবিদ্ধ ধারণা। ‘শয়তানের পদাবলী’ লেখার সময় রুশদিকে বিষয়টি ভাবিত করলে ফলাফল অন্যরকম হতেও পারত। তাঁর আখ্যান তখন অন্য দিকে মোড় নিতো এবং হয়তো-বা আরও বিপদজনক সত্য উন্মোচিত হতো, যার বয়ান আজ না হলেও আগামীতে কেউ লিখবেন আশা রাখি।


তাৎক্ষণিকামালা
আহমদ মিনহাজ রচনারাশি 

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you