কবি ফজলুল হক প্রয়াণ স্মরণে / শেষ হয় নির্বাসনের দিন || হাসান আহমদ

কবি ফজলুল হক প্রয়াণ স্মরণে / শেষ হয় নির্বাসনের দিন || হাসান আহমদ

কর্মসূত্রে আমাকে বছর পাঁচেক সিলেটের বিয়ানিবাজার থাকতে হয়েছিল। ওই সময় কোনো-একদিন কবি ফজলুল হকের সাথে আামার পরিচয়। ওনার পঠনপাঠন এবং সাহিত্যিক প্রজ্ঞা দেখে বেশ অভিভূত হয়েছিলাম সেসময়।

তারপর আমরা একসাথে বহুবার বসেছি, গল্প করেছি, আড্ডা দিয়েছি। আজির মার্কেটে, রাস্তার চায়ের দোকানে, কখনো ওনার বাসায়। প্রচুর ধুমপান করতেন তিনি। আর ইতিহাস থেকে, মহাভারত, ঈনিড বা ইউলিসিস থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারতেন অনায়াসে।

কত স্মৃতি আামাদের পড়ে আছে বিয়ানিবাজারের রাস্তাঘাটে, এখন মনে পড়ছে সেসব।

তখনো তিনি সিলেটে চলে যাননি। ওনার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে নির্বাসনের দিনে’ বের করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বইয়ের নামকরণ নিয়ে আমি কিছুটা আপত্তি করেছিলাম। আমার যুক্তি ছিল, নামের কারণে বইটির দারুণ সব কবিতার প্রতি পাঠকের দুর্বল মনোযোগ তৈরি হতে পারে হয়তো।

তিনি হেসে, সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে, আমাকে আর কথা বলার সুযোগ দেননি।

বাস্তবে শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে একজন কবির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও, আরেকজন কবির কবিতাযাপনের, বাহ্যত আক্ষরিক নয় — এমন নির্বাসনের মুহুর্মুহু দিনগুলোতে, তার চেতনাপ্রবাহে শঙ্খের কবিতা কীভাবে বিচরণ করেছিল — হয়তো সেটাই তিনি বলতে চেয়েছিলেন।

সিলেটে থাকতে বেশ কয়বার ফোন করেছিলেন। আমার খোঁজখবর নিতেন। আমাদের দেখা হওয়ারও কথা ছিল। দেরি হয়ে গেল। আর দেখা হলো না। আসলে ধীরে ধীরে মৃত্যুর জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি।

বিদায় ফজলুভাই!

মৃত্যুর আগে আপনিই এভাবে বলতে পারেন —

জীবন খরচ করে জেনে গেলাম
দুঃখের তপস্যা এ জীবন।

বিদায়!


হাসান আহমদ রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you