ভ্যাগাবন্ড || আহমদ মিনহাজ

ভ্যাগাবন্ড || আহমদ মিনহাজ

আমার নাম অ্যান্টনি  এই গানখানা কিশোর কুমার ছবির জন্য গেয়েছিলেন। ছবির নাম ছিল মাদার। জাঁক করে বলার মতো কিছু না হলেও এর গানগুলো শ্রোতাধন্য। শুনতে বেশ। ব্যাপ্তির ত্রিশ মিনিট দখলে রাখা আটখানা গান নাকি ওই সময় ছবিটির বাজারসাফল্যের নিয়ামক ছিল। গীত রচনায় পুলক বন্দ্যোপাধ্যায় ও বীরেশ্বর সরকারের নাম পাচ্ছি। দুজনে মিলে লিখেছেন। গান তৈরির কাজ বীরেশ্বর একা হাতে সেরেছেন। মান্না দে, কিশোর কুমার, লতা মঙ্গেশকরের মতো হেভিওয়েট প্লেব্যাক সিঙ্গারদের সঙ্গে মিনা মুখোপাধ্যায়ও কণ্ঠ দিয়েছিলেন। কম্বিনেশন পারফেক্ট ছিল সেটি মানতে হবে। ছবিতে কিশোর কুমারের কণ্ঠে চারটির মতো গান পাচ্ছি। কিশোরকণ্ঠে গীত শ্রোতাপসন্দ বাংলা ও হিন্দি গানের লম্বা লিস্টে মাদার  ছবির গানগুলো জায়গা করে নিয়েছিল। এর মধ্যে পুলক বন্দোপাধ্যায়ের লেখা আমার নাম অ্যান্টনি  ও বীরেশ্বরের কী দারুণ দেখতে  গান দুটি একসময় হরহামেশা বাজতে শুনেছি।

বিংশ শতাব্দীর নয়ের দশক ও পরবর্তী কিছুদিন কিশোরের জনপ্রিয় গানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত বাজতে থাকা অ্যান্টনিতে নিজেকে ভবঘুরে নামে পরিচয় করিয়ে দিতে ইচ্ছুক প্রোটাগনিস্টের দেখা পাচ্ছি। মাদার  ছবির ক্যারেক্টারকে ধরতে পুলক গানটি লিখেছিলেন। দশকি হিসাবে সাতের অন্ত ও আটের সূচনা হচ্ছে তখন। বিশ্ব জুড়ে শিবিরবিভক্তি অটুট রয়েছে। উপনিবেশের শিকল ছিন্ন করে আজাদ হওয়ার পালা শেষ হয়নি। ওটা চলছে। চিরাচরিত ছকে ভিয়েতনাম থেকে বাংলাদেশ অবধি একটা করে যুদ্ধ শুরু ও শেষ হচ্ছিল। বেশিদিন হয়নি আজাদি পেয়েছে এমন দেশগুলোয় সামরিক জান্তারা গদি দখলে নিচ্ছিলেন। ছয় ও সাতের দশকে উত্তাল হয়ে ওঠা ছাত্রআন্দোলনকে ম্রিয়মান মনে হলেও ভিতরকার বারুদ তখনো নিভে যায়নি। ছাইছাপা অগ্নিশিখা এদিক-ওদিক জ্বলছে। তার মধ্যে ঘরে অথবা পাড়ার ফাংশনে কিশোর কুমার নিয়মিত বেজে চলেছেন। অ্যান্টনিটা বলাবাহুল্য হাজির সেখানে!

একদিকে কিশোরকণ্ঠে ‘আমার নাম অ্যান্টনি / কাজের কিছুই শিখিনি ’ গানটি বেজে চলেছে আর অন্যদিকে নকশালঝড়, সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ‘চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’, ‘বন্দুকের নল সকল শক্তির উৎস’ ইত্যাদি বুলিতে সক্রিয় জোশ-জজবা খতম হয়েও হচ্ছে না। আচমকা টঙ্কার তুলছে দিগ্বিদিক। চারু মজুমদারের অকাল পতন কিংবা কমরেড আজিজুল হকদের কারাগারে আটকে রাখার ধাক্কায় দিশেহারা নকশালটা বিহার-ঝাড়খণ্ডের গহিন শালবনে পুনরায় কেন্দ্রীভূত হওয়ার প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছিল। আতঙ্কবাদি  লেবেল সেঁটে ভারত রাষ্ট্র ও গণমাধ্যম পরে যাকে মোড়কবন্দি চাটনি রূপে দেদার বেচবেন! এখানে যেমন সিরাজ সিকদারের ব্যর্থ বিপ্লব নয়ের দশকে পা দিয়ে চরমপন্থী  লেবেল গায়ে সেঁটে নিজের ইতি টেনেছিল। সব মিলিয়ে ভজকট পরিস্থিতিমধ্যে কিশোরকণ্ঠে গীত ‘অ্যান্টনি’ অস্তিত্ব ধরে রেখেছিল। শ্রোতাকে চপল আনন্দে বার্তাটি দিচ্ছিল : মারকাটারি দুনিয়ায় নিজেকে গুড ফর নাথিং  বলে চিনতে পারলেও সে এখনো আত্মহত্যা করেনি, ভবঘুরে বাউণ্ডুলে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এদিক-ওদিক, আচমকা ঢুকে পড়ছে পাড়ার ফাংশনে, যেখানে কিশোর কুমার এখনো বাজাচ্ছে লোকজন।

আমি ভবঘুরে সমাজের MLA;—কিশোরকণ্ঠে অ্যান্টনির এই ডিক্লারেশনের দিনকাল আঙুলে গুনলে ত্রিশ-চল্লিশ বছরের কম হবে না। পুলক বন্দোপাধ্যায়, ‘অ্যান্টনি’ গানের গীতিকার তখনো বেঁচে আছেন। লোকের কাছে কবিস্বীকৃতি না পাওয়ার অভিমানে গঙ্গাবক্ষে ঝাঁপ দিতে দেরি আছে। দু-হাত খুলে ছবির জন্য গান লিখছেন পুলক। আনন্দ বকশির লেখা আর লক্ষ্মীকান্ত-পেয়ারেলালের সুরে শ্রোতামাতানো মাই নেম ইজ অ্যান্টনি গনজালভিস-র পরোক্ষ প্রেরণায় আমার নাম অ্যান্টনিটা লিখছেন। দুটি গানের মধ্যে বিশেষ মিল নেই, মতলব ভিন্ন, তবে গান দুটি কিশোর কুমার গাইবেন সেটি অবধারিত ছিল। যুযুধান দুই পরাশক্তির ঠাণ্ডা লড়াইমাঝে অমর আকবর অ্যান্টনি-র অ্যান্টনি গনজালভিস আর মাদার ছবির অ্যান্টনি ধরে রাখবে বেলাশেষের রেশ।

ভ্যাগাবন্ড কিশোর কুমার

সমাজ পাল্টানোর প্রেরণা বা খোয়াব যা-ই বলি না কেন, সেগুলো তখনো নিঃস্ব নয়, তা-বলে তাকে সবল ভাবা অপলাপ ঠেকছিল। আমার নাম অ্যান্টনি  গানটি কিশোর কুমার গেয়ে দেওয়ার দিনক্ষণ এবং ছবির সিচুয়েশনের সঙ্গে মিল করে পুলক সেটি লেখার সময় গেরিলা ক্যামোফ্লেজে টিকে থাকার উপায় খুঁজছিল। অ্যান্টনিকে যে-কারণে গানের এন্ট্রি পয়েন্টে বায়বীয় লাগে দেখে। এর জন্য তাকে যদি অবান্তর ভাবি তাহলে ভুল হবে। হিসাবী দুনিয়ায় তার বিচরণ বায়বীয় হতে পারে কিন্তু অবান্তর নয়। নিজেকে কেজো প্রমাণে যেসব যোগ্যতার দরকার পড়ছে সেগুলো তার নেই এবং এর জন্য কোনো আফসোসও নেই;—গানের শুরুতে ডিক্লারেশনটি শ্রোতাকানে সে ঝেড়ে দিচ্ছে। ঐশ্বরিক স্বাচ্ছন্দ্যে কিশোর কুমার গাইছেন : ‘আমার নাম অ্যান্টনি /…কাজের কিছুই শিখিনি / Learning কিংবা painting or singing / আমি আজকের দুনিয়াতে / Good for nothing.’

গুড ফর এনিথিং  হওয়া যেখানে মোক্ষ সেখানে অ্যান্টনি গুড ফর নাথিং  পরিচয়টি শ্রোতাকানে রাষ্ট্র করছে। সে ভাবছে, হিসাবী দুনিয়ায় যেসব পরিমাপক হাতে মানুষের যোগ্যতা ও জাত বিচার চলে তার কুছ শেখার ভাগ্য করে ধরায় আসেনি। তার মধ্যে আবার পেইন্টিং বা সিংগিং টাইপের কারুসাফল্যকে মই হিসেবে ব্যবহার করে জাতে ওঠা ভীষণ মুশকিল। ছবিতে যে-কারণে অমল পালেকরের দেহে ভর-করা অ্যান্টনিকে চাকরির ইন্টারভিউতে লাইন দেয়ার বদলে সেখান থেকে কাট্টি মারতে দেখি। চাকরি নামক সোনার হরিণের সঙ্গে তার এই ডিটাচমেন্ট অবশ্য এটি মিন করে না গড়পড়তা মধ্যবিত্ত খোঁয়ারি থেকে বেরিয়ে আসতে সে আকুল। অনেককিছু শেখাটেখার কসরত শেষে মধ্যবিত্ত গুড ফর সামথিং  হইতে চায় এবং বেলাশেষে গুড ফর নাথিংয়ে তাকে হামেশা আছাড় খেতে দেখি আমরা। সেখান থেকে অতঃপর ওঠার কসরত চলে। গুড ফর এনিথিংকে কবুল বলে সুবোধ বালকের মতো চাকরির লাইনে দাঁড়ায়। অ্যান্টনির বায়বীয় প্রতিরোধ এদিক থেকে ব্যতিক্রমী।

চাকরিভুখা মধ্যবিত্ত;—সমাজে তার এই ভূমিকাটি মার্কস সায়েবকে ইয়াদ করলে অনিবার্য মানতে হবে। মধ্যবিত্ত চিরকাল চাকরিপ্রত্যাশী। সে নেমেসিস কিন্তু পৌরাণিক নিয়মফেরে নয়। গ্রিক পুরাণে নেমেসিস হচ্ছে প্রতিশোধের দেবী। ন্যায় ও ন্যায্যতার প্রশ্নে দুষ্টকে দমন করতে শাণিত কৃপাণ। অন্যের ছায়াকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা রাখে। প্রতিশোধস্পৃহা দেবীর মধ্যে প্রবল। দেবতার বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহ দমনে নিঠুর। ওদিকে অপছন্দের দেবতাকে হেনস্থা করতেও ভীষণ পটু। সে তার নিজস্ব পরিমাপকে ন্যায়নিষ্ঠ এবং আত্মকামী;—নার্সিসাস। নিজেকে নেমেসিস গণ্য করলেও মধ্যবিত্ত সেরকম নয়। যারা তার ভোগান্তির কারণ তাদের ওপর শোধ তুলতে যেয়ে নিজের ছায়াকে ঢেকে রাখতে দিন যায়। চাকরির লাইনে তাকে তখন দাঁড়াতে দেখি। পাতিবুর্জোয়া বিবেকবৈকল্য বলে একে যতই ছুপা বিদ্রুপ হানি তাতে ইতর বিশেষ ঘটে না। অন্যের নয় বরং নিজছায়াকে ঢেকে রাখার মন্ত্র মধ্যবিত্তের মারণাস্ত্র। মায়ের পেট থেকে বেরিয়ে মন্ত্রটি শিখে বেচারি! বলা উচিত তাকে শিখতে বাধ্য করা হয়। কিশোর কুমারের গানে সতেজ অ্যান্টনি ফিকিরটি আন্দাজ করতে পেরে চাকরির লাইন থেকে আগেভাগে কাট্টি মারছে।

চাকরিভুখা মধ্যবিত্ত স্বভাবে সক্রিয় বৈকল্যকে ফোকাস করে ইন্টারভিউ  নামে একখানা ছবি বানিয়েছিলেন মৃণাল সেন। কাহিনির প্রোটাগনিস্ট রঞ্জিতের জন্য লোভনীয় চাকরির অফার ছিল ছবিতে। শর্ত সহজ,—চাকরির ইন্টারভিউ দিতে হলে সায়েবি পোশাক পরে যেতে হবে। চাকরিদাতার সমুখে বিলেতি সাজে হাজির হয়ে প্রমাণ দিতে হবে এই সাজপোশাক ও বুলিতে সে দিব্যি সহজ। শ্রমিকরা ওইসময় ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বসায় রঞ্জিত বিপাকে পড়ে। যে-লন্ড্রি থেকে কোটপ্যান্ট ছাড়িয়ে আনবে ভাবছিল সেটি তখন বন্ধ। কিছুতেই খুলবে না পণ করে বসেছে। বাপেরটা পরে যাওয়া যেত কিন্তু ওটা তার গয়ে ফিট করে না। কী করা! ধারে একখান স্যুট বাগিয়ে বেচারা ইন্টারভিউয়ের জন্য নিজেকে তৈরি করার কথা ভাবে। স্যুটখানা ওদিকে বাসে যাওয়ার পথে খোয়া যায়! নিরুপায় রঞ্জিত চাকরি বাগাতে ধুতিকুর্তা গায়ে চাপিয়ে ইন্টারভিউ দিতে ছোটে!

ছবির অন্তরালে বিচ্ছুরিত মাহাত্ম্য নিয়ে কথা বলার জায়গা এখানে নেই। তার বিশেষ প্রয়োজন আছে বলেও মনে হয় না। মোদ্দা কথা তো এটুকুন,—মধ্যবিত্ত স্বেচ্ছায় এবং অনিচ্ছায়, উপায় থাকুক অথবা না থাকুক…শর্তাধীন জীবনছন্দে সদা বিশ্বস্ত কুক্কুট। তার তালুকমুলুক, হ্যান ভালো না ত্যান ভালো, ইয়ে করেঙ্গা ও করেঙ্গায় সয়লাব প্রলাপ চায়ের কাপে ঝড় তোলা শেষ হলে থিতিয়ে আসে। পরের উমেদারি করতে চাকরির লাইনে দাঁড়ায়। সমস্যাটি থেকে অ্যান্টনিকে এক্সিট নিতে দেখছি। চাকরিভুখা বিদ্যা রপ্ত করার চান্স জোটেনি বিধায় দরোজাটি তার জন্য বন্ধ থাকছে। কামিলিয়াত হাসিলের এক-একটি ছক থেকে সে তাই এক্সিট নিতে থাকে। ভবঘুরে যেমন যায় তেম্নি করে তারও মঞ্জিল হচ্ছে সমাজে চারিয়ে তোলা সকল লার্নিং  থেকে সাঁট করে সরে পড়া।

কিশোকণ্ঠে ধৃত গানের প্রোটাগনিস্ট এদিক দিয়ে বেশ স্ট্রং। গানটিকে যদি ছবির কাহিনি থেকে সরিয়ে দেখি তাহলে তার মধ্যে উঁকি দিচ্ছে এমন এক ক্যারেক্টার যে এটা বুঝে গেছে ধরায় টিকতে হলে ভবঘুরে হওয়া ছাড়া গতি নেই। অভিযোগ করে ফায়দা মিলবে না। পেশি ফুলিয়ে হাসিল হবে ঘণ্টা। সুবোধ বালক সেজে কেরানির দিন কাটিয়ে শান্তি নেই! দেখা হবে তোমার আমার অন্য গানের ভোরে  বলে হাঁক ছাড়াটা পণ্ডশ্রম। যা করা যেতে পারে এবং অ্যান্টনি ওই সময়ে করছে সেটি হলো ক্লিয়ারকাট ভ্যাগাবন্ড  পরিচয়ে নিজেকে জাতে তুলছে সে। দিন তখনো ছিল, ভেড়ার পালে গা মিলিয়ে গুড ফর এনিথিং  হওয়ার দৌড়ে শামিল দু-চারজন আলগোছে সেখান থেকে সটকে পড়তেন। কিশোর কুমার তখনো সশরীর ধরায় বিচরণ করছেন। মজাকঠাসা কণ্ঠে ওই তো দিব্যি ডেলিভারি দিচ্ছেন গায়ক : ‘আমি ভবঘুরে সমাজের MLA / বাবা, MLA / …উধাও হয়ে যাই কিছু না বলে / আমি বাঁধা ছকেতে কখনো চলিনি কোনোদিন।’

ভ্যাগাবন্ড মাদার ফিল্ম

ভ্যাগাবন্ড ওরফে ভবঘুরে তো সেই আদমি যার কিনা কারো কাছে প্রত্যাশা থাকে না। অন্যরাও তার কাছে কিছু আশা করে না। নিজের কাছে ভবঘুরের কোনো প্রত্যাশা থাকে কি? বোধহয় না। মাদার  ছবিতে অমল পালেকরের প্রত্যাশা কী ছিল, ওটা আদৌ ছিল নাকি দর্শক ধরে নিচ্ছে ইত্যাদি ঘোরপ্যাঁচে আপাতত না যাই। পুলক কীসব ভেবেটেবে গানখানা লিখেছিলেন আর কিশোর কুমার বেশ গেয়ে দিলেন…ওসব ভ্যানতারায় ফুলস্টপ বসিয়ে এইটে ভাবা যায়,—জলজ্যান্ত ভবঘুরে হওয়ার মওকা সমাজে অল্পস্বল্প টিকে ছিল। যেখানে রাত সেখানে কাত হওয়ার চার্ম, নো চিন্তা ডু ফুর্তি টাইপের বিন্দাস আবেশে মজে ইধার-উধার হুটহাট গায়েব হওয়া ও পুনরায় লোকালয়ে ফেরত আসার চান্স একটু হলেও বেঁচে ছিল তখন। ভবঘুরে বাউণ্ডুলেকে নিয়ে লোকজনের মুখের রেখায় রাগ-বিরাগ, তাচ্ছিল্য বা বিদ্রুপের সঙ্গে একটুখানি মজাক আর প্রশ্রয়বিধুর দরদ অবশিষ্ট ছিল। ঘোর বিষয়াসক্ত এবং অতিলোভে ডেকে আনা বিচিত্র সমস্যায় পেরেশান লোকের মনে নির্বেদ দেখা দিলে অ্যান্টনির মতো কাউকে তার মনে পড়ত। সে ভাবত, লোকটা সুখে আছে! বাঁধা ছকের গোলামি না করে ইচ্ছেমাফিক ঘুরছে-ফিরছে! তার মতো হওয়ার ক্ষণিক আকুলতা বিষয়াসক্তের মনে হঠাৎ দোলা দিয়ে যেত। মনের তারে গুনগুন করতেন কিশোর কুমার : ‘আমার নাম অ্যান্টনি/ কাজের কিছুই শিখিনি/ শিখিনি তো learning or earning/ আমি আজকের দুনিয়াতে/ Good for nothing.’ গানটি সেকালে যে-কারণে হুটহাট বাজত। ঘরে এবং পাড়ার ফাংশনে যখন-তখন বাজত। একালে তাকে আর বাজতে শুনি না!


প্রথম মহাসমর ও দ্বিতীয় মহাসমরের চিপায় আটক চার্লি চ্যাপলিন নাকি এ-রকম ভবঘুরে টাইপ ছিলেন। বাস্তবের নয় আমরা এখানে পর্দায় সচল চ্যাপলিনের কথা বলছি। জীবনকে নিখাদ কৌতুক ঠাউরে একে নিয়ে রঙ্গ-তামাশা-উপহাস সবটাই করে গেছেন ভদ্রলোক। লোক হাসিয়েছেন আবার তাদের চোখে আঁসু আনতে দেরি হয়নি। অ্যান্টনিকে ও-রকম ভাবা সম্ভব কি? ছবির কথা যদি বাদও দেই তথাপি কিশোরের গানে সক্রিয় ভবঘুরেকে চার্লির সঙ্গে গড় করা কঠিন হবে। ভাঁড়ামিতে ইস্তফা দিয়ে এই অ্যান্টনি ভবঘুরে হতে চাইছে মনে হবে। ভাঁড়ামি বাদ দিলে চার্লি নয় বরং তার খোলস পড়ে থাকে। খোলসে আর যা-ই থাকুক, চার্লি চ্যাপলিনে দবদব-করতে-থাকা পরিহাসের আগুন খুঁজে পাওয়ার নয়। অ্যান্টনিকে এক্ষেত্রে ইংরেজ গোলামির অফিশিয়াল এন্ডিং  ও তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকে জাত খোঁয়ারি ভাবা সহজ। ভারতবাসীর কপালে নেমে আসা গর্দিশকে যে কিনা ইরেজার দিযে মুছে ‘জীবন সহজ’ বাক্যটি কপচানোর তাল করছে।

চার্লির নকলি রাজকুমারের আওয়ারাকে মনে হচ্ছে অ্যান্টনির গলিভাই হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। মোটের ওপর একখানা ফ্রি সোল  রূপে নিজেকে যে দাগাতে ইচ্ছুক : ‘ঘরবার নাহি, সংসার নাহি / মুজসে কিসিকো পিয়ার নাহি / …উস পার কিসিকো মিলনে কা একরার নাহি / …শুনসান নগর আনজান ডাগর কা / পিয়ার হো।’ পুলকের গানে ছলকে ওঠা অ্যান্টনিমাঝে চ্যাপলিনের পরিবর্তে আওয়ারার ছাপ বেশ গভীর মানতে হয়। সে কিছু হইতে চায় না তবে জীবন থেকে আনন্দ কুড়িয়ে নিতে তার আগ্রহ ষোলোআনা : ‘যত হাসিখুশি ছেলেখেলা পেয়েছি / আমার দু-পকেটে ভরে নিয়েছি / …ডলার টাকা পাউন্ড আমি চাই না / চাই না তো ইস্টারলিং…’

মিনিং অতএব একটাই করা যাইতে পারে : কী ঘটলে কী ঘটতে পারত, কারা তাকে কোন ইঁদুরকলে ঘুরিয়ে মারছে অথবা কী করলে এর থেকে নিষ্কৃতি মিলবে ইত্যাদির কানাকড়ি অ্যান্টনিকে বিব্রত করে না। কেমন করে কিছু না হওয়ার চেষ্টায় বহাল থাকা যায় ওই চেষ্টা গানের প্রতি কলিতে সে জারি রাখে। চার্লস বুকোওস্কি এই পরামর্শটি লেখক হইতে চাওয়া অথবা নিজেকে লেখক গণ্য করে খুশহালদের ওপর একদা বর্ষণ করেছিলেন। ঠেকে শেখার দাম জগতে অনেক। বিস্তর উপায়ে কবিতা লেখার চেষ্টা পণ্ডশ্রম যতক্ষণ সেইটা ভিতর থেকে বেরিয়ে না আসবে। রহস্যটি দিমাগে সাফসাফ ঠার হলে বুকোওস্কি বাণী ঝেড়েছিলেন : কিছু হইতে চাওয়ার ভালো উপায় হইতেছে কিছু না হওয়ার চেষ্টায় থাকা। নাম ফাটানো, টাকা কামানো আর অন্যের মারহাবা পাওয়ার মতলবে জোরজবরদস্তি করে হলেও লেখার কসরত করা ভালো না। এর ফলে যা বেরিয়ে আসে সেইটা সাচ্চা হইতে পারে না। চোখ ধাঁধানো সব কেরদানি থাকতে পারে কিন্তু লেখকের দিল থেকে বেরিয়ে আসা বাতের হদিশ সেখানে পাওয়ার নয়। ওইটা ভুষিমাল। এ-রকম কিছু হইতে আকুল লোকজনের কারণে জগৎসংসারে কত বালামুসিবত গিজগিজ করে সেটি এখন কারো অজানা নেই।

ভ্যাগাবন্ড

সমস্যা হলো নিজেকে নিষ্ক্রিয়-নিশ্চেষ্ট রাখা প্রকারান্তরে আত্মঘাতী। ওই পথে অটল থাকা কঠিন। সম্ভব নয় একদম! বুকোওস্কিকে স্বয়ং যে-কারণে Don’t Try  কথাখানার মতলব বোঝাতে বিস্তর লিখতে হয়েছিল। সমাধিলিপিতে উক্তিখানা ঠুকে রাখার ওসিয়ত করে গিয়েছিলেন কিছু হওয়ার চেষ্টায় উন্মাদ গ্রহে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিশ্চেষ্ট থাকতে আকুল কবিবর। সেদিক থেকে নিজেকে গুড ফর নাথিং  বলে প্রচার করা কিশোর কুমারের অ্যান্টনি উদ্দেশ্যহীন ভবঘুরে যাপন সত্ত্বেও বেশ ছিমছাম দেখতে একখান গুড ফর সামথিং  হয়ে ওঠে। গানে তার মুভমেন্ট দেখে মনে হয় স্পেসটি সমাজে বজায় ছিল। পেছনে রেখে আসা নয়ের দশক ও পরবর্তী দশকি যাত্রায় যদিও ওটা আর টিকে থাকেনি!

পুলকের ফুর্তিছলে লেখা গান কাউকে ক্রিটিসাইজ করে না। ক্রিটিসাইজ যদি থাকে সেটি অ্যান্টনি নিজেকে করছে। মেনে নিচ্ছে সে একটা অকম্মার ধাড়ি এবং এর জন্য তার মনে কারো প্রতি শোধ-প্রতিশোধ-আক্ষেপ নেই। আবার বলছি, ছবি থেকে আলাদা করে যখন দেখছি তখন এই অ্যান্টনিকে পাওয়া যাচ্ছে। লোকটি ক্ষমতাহীন। লক্ষ্যহীন। উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে অপারগ। দিবাস্বাপ্নিক লাগে দেখে। মটকা মেরে পড়ে থাকতে জানে। নির্বাধ ও সদানন্দ চিত্তে ইধার-ওধার ঘুমতে-ফিরতে পারে বেশ। দস্তয়েভস্কি ও বুকোওস্কির মিলিত মিথস্ক্রিয়া রূপে তাকে মার্ক করাটা যারপরনাই আজব ঠেকে না। উনাদের ভারী উপদেশ এইবেলা মজাকছলে খানিক নিজমধ্যে ধারণ করছে : Don’t try to be something better rather you would be better if you trying not to do better. এও একপ্রকার আদর্শ বা বেঁচে থাকার তরিকা বৈকি!

স্পেসটি বোধ করি মার্শাল ম্যাকলুহানের গোটা বিশ্বকে একটি গ্রাম নামে মার্কামারা করে তোলার থিয়োরি বাজার মাত করার আগে অবধি হতভাগা এই দেশে বেঁচেবর্তে ছিল। আড়াল-আবডালে গায়েব হওয়ার মওকা জীবিত ছিল তখন। মওকা না থাকলেও নিজেকে রাজ কাপুরের আওয়ারা ভেবে সুনসান  নগর আনজান ডাগর-এ গুম হওয়ার অতিকল্পনায় কিছুখন বুঁদ থাকা যেত। নবারুণ ভটচাযের ফ্যাতাড়ু  না হয়েও দিব্যি থাকা যেত। বাজারে ম্যাকলুহান একচেটে হয়ে যাবার দিনকালে তাকে মরহুম দেখছি। কিশোর কুমারের মতো ক্যারেক্টার এবং তাঁর কণ্ঠে উচ্ছল অ্যান্টনি সেদিন থেকে নীরব। উনাদের পক্ষে ফেরত আসা অবান্তর। পেয়ারে ভাই ওর বেহনো বখত বদল গায়া। পুজোমন্ডপ কিংবা পাবলিক ফাংশনে কিশোরবাবু ও অ্যান্টনি দুজনেই লাপাত্তা;—একযোগে নিখোঁজ।

অ্যন্টনির লেজ ধরে যদি নচিকেতায় পা রাখি তাহলে দেখব পরিবেশটা আর নির্মল ঝর্ণা নেই। আমি ভবঘুরে হবো, এটাই আমার অ্যাম্বিশন;—নচিকেতার কালজয়ী গানের কলি জবরদস্ত হলে কী হবে সেখানে নিজের দেনাপাওনা বুঝে নেওয়ার রাগটি প্রবল। দেখানেওয়ালাদের এক হাত দেখে নেওয়ার ভাবখানা স্ট্রেইট গেয়ে দিচ্ছেন গায়ক। সোজা ব্যাটে চালানো ছক্কার মতো শুনতে লাগে এই গান। গানের দেহে নচিকেতার সাক্ষাৎ হাজিরায় তাঁর নিজেকে শো করার ভাও চলে এসেছে। সাত কিংবা আটের দশকে মোটামুটি কোমায় চলে যাওয়া অ্যাংরিম্যান কামব্যাক করছেন গায়কদেহে। অ্যান্টনির বালসুলভ ফিচলামি আর সহজ মানুষ থাকার ভ্যানতারা তাঁর পোষাচ্ছে না। কিশোর কুমারের নকলি কুমার পানুর ওপর মহা খাপ্পা গায়ক। সোজাসাপটা ডেলিভারি দিচ্ছেন : ‘আনন্দ কী আনন্দ / এসে গেছে কোকাকোলা / গেছে সব দেনার দায়ে বাকি আছে কাপড় খোলা / পায় না খেতে যারা গাইত খেয়াল টপ্পা ঝানু / গেয়ে গান হচ্ছে ধনী রাম শ্যাম আর কুমার পানু।’

তো এই যখন অবস্থা তখন বলিপাড়া নাকি একটা কিশোর কুমারের জন্য হেদিয়ে মরছিল! ভালো কথা, তাঁকে তো পাওয়ার উপায় নেই! মজাক মশগুল জীবনছন্দে সহজাত সন্ত, নিজেকে ক্লাউন ভাবতে নিঃসঙ্কোচ, মাঙ্কি ব্রান্ডো ডঙ্কি ব্রাউন  পরিচয়ে চিনিয়ে দিতে নিলাজ কিশোর কুমারকে তারা পাবে কোয়ানে? যেটা পাওয়া যাচ্ছে সেইটা কুমার পানু থুক্কু কুমার শানু ও তাঁর স্ট্রাগল। কিশোর কুমারের ভাও ধরে হলেও ইন্ড্রাস্ট্রিতে জায়গা করে নেওয়ার দাঁতচাপা লড়াই করছেন বেচারা! পরে যা হওয়ার হবে। সাকসেস এলে কিশোর কুমারের খপ্পর থেকে বের হওয়ার রাস্তা খোঁজা কঠিন হবে না কিন্তু তার আগে টিকতে হবে এখানে। এই মরণসমরে বুকোওস্কি খাটবে না বিলকুল। কার বাপের ঘাড়ে কটা মাথা যে ওসব কপচিয়ে ম্যাকলুহানের মার কাটকাট বিশ্বগ্রামে টিকে থাকবে?

নচিকেতা যখন রাগ ঝাড়তে উলটো রাজার দেশে  গানটি গাইছেন ততদিনে বার্লিন প্রাচীর ধসে গেছে। সোভিয়েত ধরাশয়ী। মস্কোয় বিশাল হোর্ডিং টানিয়েছে কোকাকোলা। তাও আবার ইংরেজিতে! তন্বী কোমর বাঁকানো বটলপানে রুশিরা হা করে তাকিয়ে! দিমাগে ধরছে না চিজটা আসলে কী! পানীয় নাকি রমণী! নচিকেতার অবস্থা অনেকটা সে-রকম। স্থিতাবস্থা ভেঙে পড়লে যে-দিশেহারা ভাব মনে জাগে তাঁর গানের দেহে সেইটা দুর্নিবার ক্রোধ হয়ে ভর করেছে। দাঁড়ানোর মাটি খুঁজে পাচ্ছেন না বেচারি! সকল রাগ গিয়ে পড়ছে কুমার শানুর পরে। বেচারি যদিও নির্দোষ। মৃণালের ইন্টারভিউ ছবির রঞ্জিতের মতো কার্যত অসহায়। তাঁকে তো করে খেতে হবে। সে নাহয় হলো, কিন্তু নচিকেতাকে থামাবে কে? কুমার শানুকে গাল পেড়ে ফায়দা নেই জেনেও গাল পাড়ছেন। গালিগালাজটি তাঁকে এইবেলা আরেকটু টিপিক্যাল করে তুলছে। মধ্যবিত্ত নেমেসিসকে চিনিয়ে যাচ্ছে বেশ! যে কিনা রেনিগেড এবং কিছু ঘটাতে অক্ষম। ভিতরে বারুদ উসখুস করছে কিন্তু অ্যান্টনির নো চিন্তা ডু ফুর্তির শান্ত প্রতিরোধ সেখানে নিহত। ম্যাকলুহানের বিশ্বগ্রামে পা রাখার দিন থেকে এনকাউন্টার মারণাস্ত্রে মোড় নিয়েছে। বিরুদ্ধস্রোতে লড়াইয়ের একমাত্র পুঁজি হিসেবে যাকে নিজের রক্ষাকবচ গণ্য করছেন গায়ক। গানে ক্লিয়ার করছেন :

ঠকানোই মূল মন্ত্র, আজকের সব পেশাতে,
পিছপা নয় বিধাতাও, তেলেতে জল মেশাতে।
ডাক্তার ভুলছে শপথ, ঘুষ খায় ইঞ্জিনিয়ার,
আইনের ব্যবচ্ছেদে, ডাক্তার সাজে মোক্তার।
(যদি চাও সফলতা, মেনে নাও এই সিস্টেম,
ফেলে দাও স্রোতের মুখে, আদর্শ বিবেক ও প্রেম)
(এ সমাজ মানবে তোমায়, গাইবে তোমারই জয়গান)।
(আমি কোনো বাউল হব, এটাই আমার অ্যাম্বিশন)।

সবটাই ঠিক ছিল কিন্তু লাস্টের কলিতে এসে গড়বড় লাগছে গানটা। সক্কলকে ধুয়ে ফর্দাফাই করার পরে গায়ক বুঝিয়ে দিলেন তিনি আসলে ভবঘুরে হয়ে মোটেও খুশি না! তাঁর অ্যাম্বিশন আছে। কিছু হইতে চান তিনি। হইতে যদি না পারেন তাহলে বাউল হবেন। অ্যান্টনির ভবঘুরে হইতে চাওয়ার সঙ্গে এর তফাত আসমান-জমিন। বেচারি সোজাসরল আদম। মনে অতো রাগফাগ নেই। ভবঘুরে হওয়ার পয়লা মন্ত্র রাগ বিসর্জন। সিস্টেম থেকে পাওয়ার কিছু নাই;—এই আক্কেলদাঁত গজানোর পরে যা কিছু অবশিষ্ট থাকে সেগুলো কুড়িয়ে-বাড়িয়ে পেট ভরো ভাই। গানের দেহ জুড়ে অ্যান্টনি কাজটি করে বেড়ায়। পকেটে আনন্দ ও দুঃখ কুড়িয়ে নিতে থাকে। হুটহাট লাপাত্তা হয় এবং ফেরত আসে আচমকা। নচিকেতার পক্ষে যাপনটা সম্ভব নয়। চান্স থাকলে তো যাপন করবেন! গানে অগত্যা দেনাপাওনার হিসাব খুলে বসেছেন গায়ক। কুমার পানুর মতো নেম-ফেম-মানি খুঁজছেন তলেতলে। ওই ব্যাটা পেরেছে আর আমি শালা হেদিয়ে মরছি! তাঁর গানটিকে কাজেই ভবঘুরের ঐতিহাসিক ইশতেহার ভাবা যায় কিনা এই প্রশ্ন ও সন্দেহ পয়দা করে যায়।

নচিকেতা

বুকোওস্কির Don’t Try  লবজে বিলকুল একরার নেই গায়কের। তা-সত্ত্বেও আশ্চর্য গানখানা পয়দা হয়েছে! পয়দা হইতে পারে, পয়দা জরুরি হয়ে ওঠে, যেহেতু আমি ভিতরে যা হইতে চাই সেইটা এখন গলায় যদি টেনে বের করতে পারি তাহলে ভিতরের আওয়াজ বোমার মতো ফাটবে। নচিকেতার পয়লা জামানায় লেখা গানগুলোয় বোমাটি দুমদাম ফেটেছে। কবীর সুমনের মতো ভোঁতা কিংবা পেলব সুরেলা আওয়াজে ফাটেনি। রাগী আর জান্তব ছিল তার গঠন। রাজশ্রী থেকে শুরু করে সকল গানে কেবল চাওয়া এবং না পাওয়ার ঝড় বইছে! নেমেসিসের ভুল ভার্সনকে কারেক্ট করতে শিল্পী যেন মরিয়া ছিলেন। অন্যকে নিজের ছায়ায় ঢাকা দিবেন আর নিজেকে রাখবেন আলোয়। ডিজায়ার ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস হুয়েন ইউ এক্সপ্রেস ইট উইথ পাওয়ার;—নচিকেতার গানে বলাবাহুল্য ওই সময় শক্তিটি দুর্বার ছিল।

আরেকবার রিপিট করি, সব ঠিকঠাক কিন্তু বাউল  হইতে চাওয়ার ছলবাক্যটি লিটারেলি গানের সত্যনাশ করে দিয়েছে এখানে। নচিকেতা, গানটি শুনে মনে হচ্ছে কলকাতার গলিঘুঁপচি দিয়ে তাকাচ্ছেন। তাকানোর সময়টায় একতারা-দোতারা আর বেহালা কাঁধে বাউলকে ঘুরতে-ফিরতে দেখছেন গায়ক। তাকে বেশ সহজ আর অনায়াস লাগছে তাঁর। ভুলে যাচ্ছেন, বাউলের বেঁচে থাকার তরিকার সঙ্গে ভবঘুরেকে গড় করে দেখা বোধহয় ঠিক হচ্ছে না। ভবঘুরের কাতারে বাউলকে শামিল ভাবা শহুরে চোখের ভ্রান্তি। বাউল কস্মিনকালে ভবঘুরে নয়। ভ্যাগাবন্ড হওয়ার চান্স তার ভাগে কভু জোটেনি। সে বরং সমাজচ্যুত। তার দিকে ধেয়ে আসা সামাজিক চাল ও শঠযন্ত্রে নাকাল হয়ে পরম অজানায় নিজের আশ্রয় খুঁজে মরছে হতভাগা। নচিকেতার গানের কলিতে এই বাউল কার্যত অ্যাবসেন্ট।

গভীর নির্জন পথ  বলে বাস্তবে বাউলজীবনে কিছু নেই। কখনো ছিল না। নিজদেহে পথটি সে তালাশ করেছে সবিরাম। ক্ষয়িষ্ণু উপাদানে গড়া দেহমাঝে অসীম অনন্ত লীলা করছেন এবং এভাবে দেহ সাক্ষাৎ ব্রহ্মাণ্ডে পরিণত হচ্ছে। দেহের লয় ও বিনাশ আছে কিন্তু যেসব উপাদান দেহকে ফিরে-ফিরে গড়ে তোলে সেগুলো অবিনশ্বর। অবিনশ্বরটি এইবেলা বাউলের ঈশ্বর। তার মনের মানুষ। নিজদেহে সে ওই ঈশ্বরকে আস্বাদের উপায় খোঁজে। তালাশ করতে নেমে সমাজের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। তারা তাকে প্রতিহত করতে চায় আর সে তখন সমাজের ভিতরে আলাদা সমাজ গড়ে টিকে থাকার লড়াই করে। ভবঘুরের মতো হুটহাট সব ছেড়েছুড়ে ইধার-ওধার গায়েব হওয়া এবং আচমকা ফেরত আসা তার ধাতে নেই। সে সামাজিক জীব। সমাজমধ্যে সমাজ হয়ে থাকে। লোকের লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর প্রতিহত করার সকল জেদ সহ্য করে তাদের কদর ও সমীহ আদায় করে খানিক। সমাজকে সে বিনোদিত করে এবং বিনোদন যোগানোর বাহানায় তাকে এনকাউন্টার করতে ছাড়ে না। বিনয় তার ব্রহ্মাস্ত্র। একটাই একে ফর্টিসেভেন  আছে তার আর সেটি হলো অসীম অজানার আবেশ দিয়ে বিরচিত দেহকে বিনতচিত্তে ব্রহ্মাণ্ড ভেবে অর্ঘ্য নিবেদন। নচিকেতার গানের কলি এখানে এসে বাউলের ব্যাপারে ভুল বার্তা দিয়ে যায়। আরোপিত মধ্যবিত্ত রোমান্টিকতাকে গাঢ় করে মাত্র।

বাউলের ডিজায়ার সাক্ষাৎ পরমে নাশ হওয়া, যার ভিতর দিয়ে জীবনজ্বালা জুড়ানোর তালে থাকে বেচারি। শান্ত প্রতিরোধ। রাগফাগ সেখানে নিচুলয়ে চলবে। চাওয়া-পাওয়ার হিসাবনিকাশ অন্যের সঙ্গে বিলকুল বেমিল দেখাবে। নচিকেতার স্ট্যাটমেন্ট যারপরনাই ঘাপলা পাকায়। ভবঘুরে নয় বরং ক্ষমতাহীন মধ্যবিত্তের ক্ষমতা দেখানোর ফাঁপা দেখনদারিকে নগ্ন করতে বাউলকে কোট  করে তাঁর গান। ভুল সময়ে কি তবে ভুল গান গাইলেন নচিকেতা? নাকি তাঁর ‘ভবঘুরে’ গানটি এই অর্থে সঠিক, এর দেহের প্রতি অঙ্গে বিস্ফারিত ক্রোধ ও উপহাস ফাঁদে ধরা খাওয়া ভঙ্গুর মানুষকে তুলে ধরছে। কিছু করতে না পারার ক্ষোভে যে কিনা যাঃ শালা ভবঘুরে বাউল হবো  বলে ডাট মারছে এইবেলা? হতেও পারে।

বাংলা গানে খাঁটি ভবঘুরে কার্যত অ্যান্টনির সঙ্গে বিদায় নিয়েছিল। নিখাদ উদ্দেশ্যহীন ভবঘুরে ফেরত আসবে না আর। মজাকঠাসা জীবনরসিক কিশোর কুমারের সঙ্গে উচ্ছল সেই ভবঘুরে অ্যান্টনির মরণ ঘটেছে বাংলায়।

সংযুক্তি
১.
পাবলিকের পকেট কাটতে যেসব উপাদান গত শতাব্দীর ছয় থেকে আটের দশক অবধি চলেছে মাদার-এ সেগুলো মোটামুটি মজুত বলা যায়। অমল পালেকর ও শর্মিলা ঠাকুর লিড রোলে অভিনয় করেছেন। পালেকরের স্মার্ট অ্যক্টিং আর শর্মিলার টোলপড়া গাল ও কাজলটানা চোখের মাদকতা সত্ত্বেও তাকে ইয়াদ করার অনুষঙ্গ যে-কারণে সময়ের সঙ্গে জীবিত থাকেনি। স্বাভাবিক। ছবিখানা তো সত্যজিৎ রায়ের অপুর সংসার  বা দেবী  টাইপের কিছু নয় যে পাবলিক ইয়াদ রাখবে। দেবী  ছবির কথা স্মরণ করি একবার। জমিদারীতে ভাটা নামার দিনকালে কালীকিঙ্কর স্বপ্ন দেখে তার কিশোরী পুত্রবধূ দয়াময়ীর দেহে স্বয়ং মা কালী বিরাজ করছেন। জমিদারির পতন ঠেকাতে বিফল কালীকিঙ্কর ততদিনে ঘোর নিয়তিবিশ্বাসী লোক। তার এই দেবীভ্রমবৈকল্যের  ধকল সরলা দয়াময়ীর অবলা জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। একালেও প্রাসঙ্গিক ছবিখানায় চতুদর্শী শর্মিলাকে সাক্ষাৎ দেবীপ্রতিমায় আবেদনঘন করতে সত্যজিতের মুন্সিয়ানা ভোলার নয়। দেবী  ছবির শর্মিলাকে অগত্যা মেমোরি থেকে হঠানো কঠিন।

লিড রোলে শর্মিলা থাকলেও আন্তর্জালে সুলভ অন্য ছবির তুলনায় মাদার-র ভিউ তাই অনেকটা কম। আরেকটা কারণ, ইউটিউবে আপ করার সময় এর গানগুলো কেটে দেওয়া হয়েছিল। গান বাদ দিয়ে ছবি আপ করা দর্শকের পোষায়নি। কমেন্ট সেকশনে দর্শক সরাসরি মন্তব্য ঠুকেছেন, এই ছবির আত্মা বলে যদি কিছু থাকে সেটি হচ্ছে তার গান। গানগুলো বাদ পড়ায় ছবিখানাকে শূন্যগর্ভ লাগছে দেখতে। খামতি পুষিয়ে দিতে আটখানা গানকে একত্রে জোড়ে আলাদা ভিডিও অবশ্য আপ করা হয়েছে, যার ভিউ সংগতকারণে মূল ছবির থেকে বেশি। সে যাই হোক, ছবির সায়সাবুদের সবটাই আন্ডার ইরেজারে মুছে গেলেও এর গানগুলো মুছে যায়নি।


২. লোকগানের বিচিত্র সম্ভারে সৃমদ্ধ বাংলায় ঊনিশ শতকের শেষভাগ থেকে বিংশ শতকের গোড়া অবধি সময়টানে নতুন ছাদে গান বাঁধার তরঙ্গ জাগছিল। বিংশ শতাব্দীর সূচীমুখ থেকে পরবর্তী ছয়-সাত দশক জুড়ে শিক্ষিত নগরসমাজের জন্য সৃষ্ট গানের যুগতরঙ্গ নিয়ে যারা লিখেছেন সেখানে বাংলা ছায়াছবিকে কেন্দ্র করে বনতে থাকা গানগুলোর আবেদন ও জনপ্রভাব এড়িয়ে যাওয়ার জো নেই। তো ওই সময়টায় বিশেষ করে পাঁচ থেকে আটের দশক অবধি কানে আরাম বহায় এরকম রোমান্টিক গান তৈরির জোয়ার উঠেছিল। তার মধ্যে শিং নেই তবু নাম তার সিংহ-র মতো মজারু বা ননসেন্স রাইমের সঙ্গে দিব্যি লাগসই এরকম অজস্র গান বাংলা ও হিন্দি সিনেমার সিচুয়েশন বুঝে লেখা হতো। পুলক কিংবা অন্যদের বিবরণ থেকে জানতে পারছি, এই টাইপের গান অনায়াস কণ্ঠে তুলে নিতেন কিশোর কুমার। ব্যক্তিত্বে সক্রিয় আমুদে স্বভাব হয়তো গানগুলো গলায় তুলতে হেল্প করত তাঁকে।

কিশোর কুমার ছিলেন সেই লোক যাঁর মধ্যে সহজাত কৌতুক অভিনেতা সক্রিয় ছিল। সত্তাটি যেমন অভিনয়ে বেরিয়ে আসত তেমনি নিজের গানে সমানে সেই অভিনয়সত্তাকে হাজির রাখতেন কিশোর। জীবনে পীড়ন-টানাপোড়েন কম ছিল না। তাঁর বৈবাহিক জীবনের দিকে তাকালে সেটি আঁচ করা যায়। ক্যান্সারে মধুবালার অকাল প্রস্থান তাঁকে নিরন্তর দহন করেছে। রুমা গুহঠাকুরতা ও যোগিতা বালীর সঙ্গে বিচ্ছেদ সমানে পুড়িয়েছে। কপিল শর্মা শোতে কিশোরপুত্র অমিত বলেছিলেন বটে, স্ত্রীকে ভালোবেসে কেনা গাড়ি বিচ্ছেদের পর কিশোর কুমার নিজ বাড়ির উঠানে মাটিতে পুঁতে ফেলেছিলেন। ভিতরকার ক্লাউনিশ ডিজায়ার দিয়ে এভাবে চট করে ঢাকা দিতেন সকল মনোবেদনা। ভানভরতি ফাঁদে বোঝাই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার এটি এক তরিকা বটে! কিশোর কুমারের সত্তায় সদা সক্রিয় ক্লাউন আমার নাম অ্যান্টনি গানে কি ধরা পড়ে? নিখাদ নয় তবে খানিকটা অবশ্যই পড়ে। গানে সক্রিয় জীবনবেদ বিবেচনায় কিশোর কুমারকে অ্যান্টনি প্রতিভাসিত করে যায় বৈকি।


৩.
পুলক বন্দোপাধ্যায় তাঁর কথায় কথায় রাত হয়ে যায় বইয়ে সেকালের বাংলা ও হিন্দি ছায়াছবিতে কাহিনি ও সিচুয়েশন বুঝে কীভাবে এক-একটি গান তৈরি হতো সেসব নিয়ে জমিয়ে লিখে গেছেন। নিজের লেখা অ্যান্টনি গানটির ব্যাপারে বইয়ে কিছু ছিল কিনা এখন মনে পড়ছে না। যাই হোক, কিশোর কুমারের কণ্ঠে অনেকদিন পর গানটি শুনতে বসে মনে হলো কলের গানের যুগাবসান ঘটার পথে ক্যাসেট থেকে সিডি প্লেয়ার অবধি বহমান পরম্পরায় সমতা ছিল। গ্রামোফোন রেকর্ডের চাকতি ঘুরছে, লোকজন সাগ্রহে এপিঠ-ওপিঠ উল্টে গান শুনছেন। ক্যাসেট থেকে সিডি অবধি আট-দশটা গান নিয়ে অ্যালবাম প্রকাশের ধারা প্রকারান্তরে কলের গানের প্রসারণ ও আবেদন ধরে রেখেছিল। ঘরে বসে গান শোনা আর পাড়ার ফাংশনে প্রিয় গান বাজতে শোনার অভ্যাসে যে-কারণে বড়ো ছন্দপতন ঘটেনি। ক্যাসেট কিংবা সিডিবন্দি কিশোর কুমারকে তখন আকসার বাজতে শুনেছি। ঘরে তো বটেই, পাড়া-মহল্লায় আয়োজিত ফাংশনে আয়োজকরা তাঁর গান প্লে করলে কী দারুণ দেখতে-র সঙ্গে অ্যান্টনিটা বাজাতেন। গত পনেরো বছরে গানটি বাজতে শুনেছি বলে ইয়াদ হচ্ছে না। বারোয়ারি পুজো বিশেষ করে মা সরস্বতীকে নিয়ে ঘটা করে গানবাজনার হল্লায় কাত প্যান্ডেলে এখন কানে তালা লাগানো ডিজের দাপট চলে। মান্না, হেমন্ত, সতীনাথ, শ্যামল মিত্র থেকে আরম্ভ করে বেচারা কিশোর কুমার সেই আয়োজনে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন। শহুরে বারোয়ারি মেলাপার্বণে তাঁকে আগের মতো বাজতে শুনি না! ঘটনাটি খানিক অদ্ভুত মানতে হচ্ছে।


৪. খেয়াল করলে দেখব, কিশোর কুমারের শ্রোতাপ্রিয় গানগুলো মোটের ওপর ভারতীয় মিউজিক রিয়েলিটি শোয়ের গণ্ডিতে ঠাঁই খুঁজে মরছে। আন্তর্জালে যেসব শ্রোতারা স্মৃতিকাতর আবেশে এই শিল্পীর গান খোঁজেন সেখানে সংখ্যাটি অতীতের মতো ব্যাপক নয়। ভাইরালযুগে তাঁকে মনে করিয়ে দিতে চমকের দরকার পড়ছে। অনির্বাণ ভট্টাচার্যের সুবাদে যেমন অদ্য নয়নও সরসী কেন ভরেছে জলে লোকজন বেদম শুনছেন। কিশোর কুমারের বিখ্যাত গানের একটি। অভিজিৎ ভট্টাচার্য এর আগেও গানটি নিজস্ব ঢংয়ে গেয়েছেন। চমৎকার করে গেয়ে থাকেন সদা। এখন সারেগামাপার মঞ্চে উনার সঙ্গে গলা মিলাতে যেয়ে অনির্বাণের ইনপুট শ্রোতারা লুফে নিয়েছেন। গানটি নতুন করে শোনার আগ্রহ উসকে দিয়েছেন অনির্বাণ।

গানের ওপর বাড়তি আবেগ না চাপিয়ে কিশোর কুমার নয়নও সরসী কেন ভরেছে জলে  গেয়েছিলেন। গানের সুর ছিল নিজকৃত। অভিজিৎ সেখানে বাড়তি ইমোশন ও গায়নভঙ্গিতে ভ্যারিয়েশন নিয়ে আসায় ফলাফল মন্দ হয়নি। শ্রোতারা তাঁর গায়নপদ্ধতি পছন্দ করেছেন। অনির্বাণের কণ্ঠ অদ্য গানে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। মাত্রাটি এখন ইমোশন নাকি অনির্বাণের গায়নভঙ্গির বিশিষ্টতা সেটি আমাদের মতো গানঅজ্ঞ শ্রোতার পক্ষে বিশ্লেষণ করা কঠিন। তবে কথা সত্য, অনির্বাণের কণ্ঠে গীত গানের দু-চার কলি মনকে আর্দ্র করে। বেশ ভিজিয়ে দিয়ে যায়। অন্যরকম আবেদন পাওয়ার কারণে শ্রোতারা দিওয়ানা হয়ে গানটি শুনছেন। কিশোরকণ্ঠে অমরত্ব পাওয়া গানের পুনর্জীবন সুখকর অবশ্যই।

তো এই জায়গা থেকে মনে প্রশ্ন জাগে, তাঁর মতো ভার্সেটাইল গায়ককে রিয়েলিটি শো যেভাবে অবিরত ফি বৎসর পুঁজি করে এর কারণটি কী? সারেগামাপার মঞ্চে সংবৎসর শচীন কর্তা ও পঞ্চমের সঙ্গে কিশোর ফিরে-ফিরে উঁকি মারেন। এর বাইরে সুরসাগর হিমাংশু দত্ত, অখিলবন্ধু ঘোষ, মান্না দে, সতীনাথ, শ্যামল মিত্র বা হেমন্ত ছাড়াও আরো বহুপ্রজ শিল্পীদের কিন্তু বড়ো একটা রিকল করতে দেখি না। কারণ হয়তো এই, ওইসব মায়েস্ত্রোদের গানের কারুকাজে এমনসব ব্যাপার রয়েছে যার সিংহভাগ নামকরা এবং নবিশ উভয় ধারার গায়ককে দিয়ে কণ্ঠে তুলে আনা মেহনতের কাজ। কিশোর কুমার তুলনায় কমফোর্টেবল। তাঁকে অনুকরণ করা সম্ভব নয় তবে তাঁর গানকে নিজ আঙ্গিকে গাওয়া সহজ। হতে পারে, পপুলার কালচারে কিশোরের শ্রোতাপ্রিয়তা নীরবে এতটা শক্তি ধরে যে একে পুঁজি না করে রিয়েলিটি শোয়ের উপায় থাকে না। এভাবেও ভাবা যায়, ভারতীয় গানবাজনার জগতে প্রতিভাবান মিউজিশয়ান ও গায়কের কমতি না থাকলেও মোহাম্মদ রফি, মুকেশ, মান্না দে, হেমন্ত, কিশোর কুমার, সোজা কথায় যুগনায়ক হয়ে ওঠার ঐশ্বর্যে গরীয়ান শিল্পীদের প্রস্থান একটি এম্পটি স্পেস তৈরি করেছে, এখন একে ভরাট করার মতো গায়কের আকাল ভারতীয় সংগীত বাজার টের পাচ্ছেন। সুতরাং পাবলিক ফাংশনে কিশোর কুমার আগের মতো না বাজলেও বাংলা ও হিন্দি রিয়েলিটি শোয়ের মচ্ছবে তাঁকে স্মরণ করা ছাড়া গতি থাকছে না। কিশোর কুমার এভাবে নিজের ব্রান্ড ভ্যালুটি বোধ করি আজো ধরে রেখেছেন।


৫. নিজের লেখা ক্লাউন গানে কিশোর কুমার গাইছেন : ডাকে লোকে আমাকে ক্লাউন / মূর্খানন্দ মিথ্যাচন্দ্র / মাঙ্কি ব্রান্ডো ডঙ্কি ব্রাউন / …নেচে গেয়ে হেসে খেলে / দুটো কথা বলে যাই / …সুখে আর দুখে মেশা / এই তো জীবন ভাই / …এই তো আমার জীবন / মনে দুঃখ মুখে হাসি / তবুও পরের দুঃখে মন কেঁদে ওঠে আমার / সবার মুখে হাসি ফোটাতে চাই।

প্রাসঙ্গিক লিংক
. মাদার (১৯৭৯) ছবির গান
. মাদার (১৯৭৯) ছায়াছবি : নারায়ণ চক্রবর্তী
আমার নাম অ্যান্টনি : কিশোর কুমার
. মাই নেম ইজ অ্যান্টনি গনজালভিস : কিশোর কুমার
. আওয়ারা হু : মুকেশ
. ডাকে লোকে আমাকে ক্লাউন : কিশোর কুমার
So You Wanna Be A Writer by Charles Bukowski
. অ্যাম্বিশন : আমি ভবঘুরে হবো : নচিকেতা
. উল্টো রাজার দেশে : নচিকেতা 


আহমদ মিনহাজ রচনারাশি

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you