তেরো বছর বয়সে স্যানফ্র্যান্সিস্কোর অভিনয়শিক্ষার স্কুল থেকে সোজা ‘ল্যুকাস’ ছবিতে ঢুকে পড়েছিলেন। তবে সবচেয়ে আলোচিত হয়েছিলেন ‘হিদার্স’ ছবিতে অভিনয় করে। অথচ তার অ্যাজেন্ট সাবধান করে দিয়েছিলেন ওটায় অভিনয় না করার জন্য। বলেছিলেন এই ছবিতে অভিনয় করলে কেউ তাকে অন্য ছবিতে নেবে না। অথচ ওই ছবিতে তার অভিনয় সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। উইনোনা (Winona Ryder) করতে চেয়েছেন এমন ছবি যেগুলো মূলত অভিনয়নির্ভর। তাই ‘এজ অফ ইনোসেন্স’ ও ‘লিটল উয়োম্যান’-এর মতো ছবিতে সবসময় কাজ করতে চেয়েছেন তিনি। অবশ্য এটাও স্বীকার করেন যে এতকিছুর পরেও ‘বিটল জ্যুস’ বা ‘ড্রাকুলা’-র মতো বেশকিছু বাজে ছবিতে তার অভিনয় করা হয়ে গেছে।
নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে ‘অ্যালিয়েন : রেজারেকশন’ ম্যুভিতে অভিনয়ের অফারটা আসা মাত্র লাফিয়ে উঠেছিলেন। তার বাড়ির সকলে অ্যালিয়েন ছবিগুলোর ভক্ত, আর তিনি ভক্ত সিগার্নি উইভারের। সেইজন্যে অ্যাকশন সাই-ফাই জেনেও ছবিটি সাইন করেন। এই সিনেমার প্রয়োজনে চুলে একদম কদমছাঁট দিয়েছেন, শিখেছেন মারামারি। এমনকি এই সিনেমার শ্যুটিঙের পর থেকেই হাতাকাটা পোশাক পরলে উইনোনার নবলব্ধ মাসল অগোচরে থাকত না কারোরই।
মিনেসোটার যে-ছোট্ট শহরে জন্মেছিলেন উইনোনা, সেই শহরের নামে তার নাম রাখা হয়েছিল; আর তার পারিবারিক পদবী হারোইটস্। উইনোনার পরিবার আসলে রাশিয়ান-রোমানিয়ান। তার অ্যাজেন্ট যখন জিজ্ঞেস করেছিলেন নিজের নামটা তিনি পর্দায় কিভাবে দেখতে চান, তখন তার বাবা জ্যাজশিল্পী মিচ রাইডারের পদবীটা লাগিয়ে দিতে বলেছিলেন। ব্যস! সেই থেকেই নামটা উইনোনা রাইডার।
এক হিপি ও গরিব পারিবারিক আবহাওয়ায় তিনি বেড়ে উঠেছেন। বাবা মাইকেল ও মা সিন্ডি হারোইটস্ হিপিগুরু টিমোথি লিয়ারের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে ছিলেন। টিমোথি ছিলেন উইনোনার গডফাদার। জীবনে এই ব্যক্তিটির প্রভাব অপরিসীম বলে স্বীকার করেন উইনোনা। ছোটবেলায় একটু অস্বাভাবিক হয়ে পড়েছিলেন; নিজের ঘরের জানালায় টিন লাগিয়ে নিয়েছিলেন যেন সূর্যের আলো ঘরে না ঢোকে। আর বাসার টিভিটা নিজের কামরায় এনে দেখতেন শুধু পুরনো দিনের ছবিগুলো। বাবা-মা ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন সেসব দিনে উইনোনাকে নিয়ে।
বড় হবার সাথে সাথে সব রকমের অস্বাভাবিকতা কাটিয়ে উঠেছেন। মূলত সাংবাদিকদের জন্য একটু রক্ষণশীল জীবনযাপন করেন। সময় পেলেই ভীষণ সিনেমা দেখেন। কোয়েন্টিন টারান্টিনোর পরে তিনিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি সিনেমা দেখে বেড়ান। অবসরে বই পড়েন। জর্জ অরোয়েল, ইয়েটস, জেইন অস্টিন, ইএম ফস্টার, অস্কার ওয়াইল্ড … এরা সবাই উইনোনার পাঠতালিকাভুক্ত।
ক্যাথ্রিন হেপবার্ন যেমন বড় হবার পরও নিজের শৈশব ও কৈশোরের কথা সবসময় বলতেন তেমনি বলেন উইনোনাও। তার কাছে ছোটদের মতামত অনেক বেশি জরুরি। ছোটবেলায় বড়রা তাকে অবহেলা করে কথা বললে রেগে যেতেন। যখন বয়স কম ছিল, অভিনয়ের সেটে এসে মুখ খুললেই সবাই ভাবত, কী স্যুইট, ছোট্ট উইনোনারও নিজস্ব চিন্তাভাবনা আছে! ব্যাপারটা তার বিরক্তি উৎপাদন করত।
উইনোনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে পরিচালক মার্টিন স্কর্সিস্ বলেছেন, “ওর শক্তি আসে ওর চোখ দুটো থেকে। চোখদুটো আনন্দে জ্বলে, উৎকণ্ঠায় নিষ্প্রভ হয়ে যায়।” একইভাবে নিকোলাস হান্টার উইনোনা সম্পর্কে মূল্যায়নমন্তব্য করেছেন এভাবে যে, “নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে ওর খুব-একটা মাথাব্যথা নেই। তাই তো ক্যারিয়ারটা এত ভালো ওর। যা-কিছু ওর ভালো লাগে, ও সেইটাই করে। হলিউডি স্টার সিস্টেমের পাশাখেলায় উইনোনা বন্দী নয়।”
মেরিল স্ট্রিপের একটা উক্তি উইনোনার খুব পছন্দ, সবসময় সেই উক্তিটি তিনি মনে রাখেন, উক্তিটি হচ্ছে, “চল্লিশ বছরে পা দিয়েই প্রথম মনে হয়েছে জীবনে পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়েছি।” নিশ্চয় চল্লিশ পার করেছেন উইনোনা, আর পূর্ণতাও অনেক অনেক। আগামী দিনগুলো শুধু ভালো কাজেই নিয়োজিত রইতে চান এই গুণী অভিনয়শিল্পীটি।
প্রতিবেদন : অদিতি কবির
… …
- ভোটবুথ, ভূতভোট, বজরঙবলি ও বেবুন - November 26, 2024
- ক্বারী আমীর উদ্দিন সান্নিধ্যে সেদিন || তারেক আমিন - November 20, 2024
- পোয়েট ও তার পার্টনার - October 19, 2024
COMMENTS