৯২, কি ৯৩ হবে, ১৯০০। ওই দুই খ্রিস্টানী ইয়ারের একটা, আগে নয় পরেও নয়, আমি নিশ্চিত। স্পষ্ট মনে থাকার নেপথ্যে একাধিক ঘটনা আছে। ব্যক্তিগত। যাহা ব্যক্তিগত, পবিত্র যদি কিছু দুনিয়ায় থাকিয়া থাকে তবে সেইগুলোই। ঠিক আমার কথা না, সাম্ পোয়েটের, নাম মনে নাই। কিন্তু ‘কবি বলেছেন’ সন্দেহ নাই তায়। অ্যানিওয়ে। যেইটা বলছিলাম। উনিশ শতকী ৯২ কি ৯৩ দিককার ঘটনা। আমার মনে আছে যে একটা গান খুব শুনতাম ক্যাসেটের অন্যান্য কপিয়িড গানের সঙ্গে এবং হামেশা গাইতাম আরও সমস্ত মহা হিট কিংবা আন্ডারকারেন্ট গানগুলোর সঙ্গে। সেই সময়টায় ক্যাসেটদোকানে ব্ল্যাঙ্ক ‘টিডিকে’ ব্র্যান্ডনেইমের ফিতা খরিদ করে নিজের বা বোন-কাজিনদের পছন্দফর্দ অনুসারে ‘রেকর্ড’/কপি করতে দিতাম, অল্প খরচে একসঙ্গে বিশ/পঁচিশটা গান এবং বিভিন্ন ঘরানা আর গায়কের মেলবন্ধ ঘটানো সম্ভব হতো। বঙ্গের সঙ্গে ইঙ্গ, ইন্দোপপের সঙ্গে নেপাল-ভুটান প্রভৃতিধারা ‘জাতীয়’-‘বিজাতীয়’ পরিচয়ে রেডক্লিফের বিভাজনলাইনের বালাই নাই, বেতার এবং বিটিভির কল্যাণে সার্ক কালচারাল এক্সচেঞ্জ প্রোগ্র্যামের আওতায় ইংরেজি-হিন্দির বাইরে শ্রীলঙ্কান সহ আরও পাঁচটা ভাষার দুর্বোধ্য ‘হিব্রুবুলি’-র মজার মজার সমস্ত সুর দোকানে অ্যাভেইল্ করা যাইত। ‘অমুক দিন সপ্তডিঙা অনুষ্ঠানে যে-কয়টা গান দেখাইল ওইগুলা আছে আপনার কাছে?’ — এইভাবে ক্যাসেট-রিটেইলার দোকানিকে যেয়ে জিগ্যেশ করতে হতো। অনেকগুলো উল্টাপাল্টা ভাষার ঠারেঠোরে শেখা গানলাইন্স আজও গুনগুনাইতে পারি। কিন্তু বর্তমান-প্রসঙ্গত সংগীতখানা বাংলাদেশেরই কোনো-একটা ব্যান্ডের। আমি নিশ্চিত, সেন্ট পার্সেন্ট ড্যাম শিয়্যুর, গানটা বাংলাদেশের কোনো মহান ব্যান্ডমিউজিশিয়্যানের। তবে যেহেতু কপি-করা ক্যাসেটের গান, এবং দোকানি নিজের সৌজন্যে স্পেস্ খালি থাকলে বেশকিছু বোনাস্ ট্র্যাক দিয়ে দিত ফর্দের বাইরে, ফলে এভাবে-পাওয়া গানের শিল্পীনাম কিংবা অ্যানি-আদার ডিটেইলস্ অজ্ঞাত রইত অনেক-সময়। এক্ষেত্রে সেইটাই ঘটেছে। কিন্তু অন্যান্য সমস্ত অজ্ঞাতকুলশীলের কুষ্ঠি-ঠিকুজি ঠিকই নিয়েছি ইমিডিয়েট জেনে এক-সময়, এইটার ক্ষেত্রে চেষ্টা সত্ত্বেও সম্ভব হয় নাই তিল-পরিমাণ অবহিত হওয়া। আজকালকার ‘সমস্ত সুলভ’ জমানায় এই গানের পয়লা কলি লিখে কত অনুসন্ধানিয়াছি, কিন্তু অমীমাংসিত, দিবসের প্রথম ও শেষ উভয় সূর্যই চিরুনিতল্লাশকর্মে হয়রান। তবে এখনও আশা আছে টিমটিমে। এখনও অন্ধ-বধির হই নাই, কিংবা পাখাও বন্ধ করি নাই। ৯২/৯৩ হবে। এই গানের সঙ্গে তুলনীয় গতিনান্দনিক গান আমি আজও দ্বিতীয়টা পাই নাই। ইট ওয়্যজ্ সিম্পলি ডিফ্রেন্ট। অনেকটা … কার মতো বলব … না, এত বলিষ্ঠ এবং মাতোয়ালা মাজারের উদ্ভিদ-দর্দবারি-দোক্তা খাওয়া ছ্যাঁচা গায়নভঙ্গি কিন্তু অত্যন্ত রক্-অ্যা-রল্যা, নান্-বাট-সেকন্ড। পয়লা দুই লাইন : “এই সুন্দর দুনিয়া কয়দিনের এই গর্ব তোর আর কয়দিনের / চক্ষু বুঁজলে কই যাবি তুই কি হবে তোর ঐশ্বর্যের … কি হবে তোর ঐশ্বর্যের” … এই লাইনদ্বয় রিফ্রেইনের ন্যায় ফেরে গান জুড়ে, একটু-দুটো শব্দ বদলে, ‘এই রঙিন ফানুশ কয়দিনের এই রঙমহল আর কয়দিনের’ … এইভাবে ইত্যাদি। ঠিক মাঝখানে যেন মন্দ্র ও তারসপ্তকে একীভূত সুরের চূড়ার দিকে আরোহণ, ‘ওরে ইনসান গা রে সেই গান / যেই গানে তুই পাবি আসান’ … এভাবেই। কিন্তু হদিস করা আজও হয়নি। ইন্-ফ্যাক্ট গতকালকেও চেষ্টা করেছি। রিসেন্ট সার্চ প্রোগ্রামেও ফল আসে নাই।
লেখা : জাহেদ আহমদ
… …
- যেহীন আহমদ, অনেক অনেক দিনের পরে… - December 12, 2024
- কথাকার, কবিতাকার ও ফিলোসোফার - November 26, 2024
- বর্ষীয়ান কবি ও বাংলা সাবান - November 24, 2024
COMMENTS