ক্রিস কর্নেলের সদ্যপ্রয়াণের মধ্য দিয়ে নব্বই আরেকটু ফিকে হয়ে আসলো। আর এই মুহূর্তেই পৃথিবীর সুবিধাবাদী নাগরিক সংগীতশিল্পীরা হয়তো জাগতিক নানা বাহানায় প্র্যাগ্মাটিজমের মুলা ঝুলায়া হাতে হাত কচলায়া এস্টাব্লিশ্মেন্টের দিকে অগ্রসরমান।
ক্রিস ঋষি ছিলেন না, নিদেনপক্ষে সাধুও নহে। তবুও একপ্রকারের স্বভাবজাত আত্মজিজ্ঞাসার উদ্বেগ দ্বারা তাড়িত ছিল তার মস্তিষ্ক ও হৃদয়। যিনি সৃষ্টিকর্তার কাছে আর্জি পেশ করসিলেন – জীবন তো দিলা, এইবার বলো বাঁচব কীভাবে! জীবনের থেকে মুখ ফিরায়া ছাপোষা কর্পোরেট রকস্টারদের মতো প্রেম-ভালোবাসা প্ল্যাস্টিক দ্রোহের গান কখনো গাইসেন বলে মনে হয় নাই। কিংবা অসংবেদনশীল ক্রোধের অপরিণত এবং পোশাকী শৈল্পিক পরিণতিও ক্রিসের ভেতর দেখা যায় না।
এই দুইয়ের মাঝেই ক্রিস কর্নেল। ক্রিস্টোফার জন বয়েল যার আদি নাম।
তারপরে কিন্তু ঈশ্বর তার সহায় হন নাই, সহায় হয় নাই তার সুপারস্টার জীবন, সিয়াটলিয় গ্রাঞ্জ মুভমেন্ট। সাউন্ডগার্ডেনের ট্রেইডমার্ক হেভি গ্রাঞ্জ, তারপর অডিওস্লেইভে পোলিটিক্যাল স্বরটা উচ্চে তুলে আবার কোথায় মিলায়া গেল ক্রিস। শ্রোতারাও বুঝলেন, ওই রগরগে রাজনীতির প্যাচপ্যাচে মারদাঙ্গা অ্যাক্টিভিজমকে শিল্পে রূপান্তরের দায় সরাসরি নিতে অক্ষম কর্নেল। মানবিক কারণেই হয়তো। অতিমানব তো ছিলেন না, স্বাভাবিক প্রণোদনার দায়েই গানটা গেয়ে গেলেন সারাজীবন। কর্নেলের লিরিকের পরিক্রমায় এই দোটানায় নিমজ্জিত ব্যক্তি আর সমাজ নব্বইয়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হোক টেম্পল অফ দ্যা ডগে, সাউন্ডগার্ডেন আর অডিওস্লেইভে। অথবা জেমস বন্ডের গানে। অ্যামেরিকার সমাজনীতির শীতল উপরিতলের ভেতর দিয়ে একজন শিল্পীর পক্ষে যা করা সম্ভব, তার সবটুকুই হয়তো করসিলেন, করার চেষ্টা করসিলেন। তারপরও অভিযোগ তোলা সম্ভব নানা দিক থেকে, কিন্তু প্রজন্মান্তরের অক্ষমতার দায় ব্যক্তি ক্রিস আর কতটুকুই বহন করতে পারতেন! রাজনীতিবীক্ষক বিচক্ষণ সমালোচকদের হৃদয় বলে কিছু নাই?
এই জটিল সূত্রের ধাঁধা মিলাতে না-পেরে একবার চোখের সামনের পর্দা টানার আহ্বান করসিলেন কর্নেল, একদা তার গানে বলছিলেন অনেক ঘুমের কথা, ক্লান্তির কথা। বিস্মৃতির কথা। ডাজেন্ট রিমাইন্ড হিম অফ অ্যানিথিং। ভুলে যেতে চাইছিলেন সবকিছু একটু ঘুমের জন্যে। কিন্তু শেষমেশ দায়টা এড়াইতে পারেন নাই, আবার নিতেও পারেন নাই। লিখসিলেন – এই অন্ধকার দিনে কেউ ক্ষমা পাবে না, সবাই অপরাধী। অপরাধ আমাদের নীরবতা, ভেতরে ভেতরে করা আপোসের সকল দায় আমাকে-তোমাকেই নিতে হবে। অবগুণ্ঠন আর বাস্তবতার মধ্যে যে-শূন্যস্থান থাকে, কর্নেল সেই ভূমিতে দাঁড়ায়া, সেই প্যারাডক্সে দাঁড়ায়া কালো জাদুকরের মতো অনুচ্চ অন্তর্মুখিতায় পার করে দিলেন মহাজীবন।
————————————————————————————–
“সফলতা বলতে যা বোঝায় সেটা নিয়ে আতঙ্ক আছে আমার”
ক্রিস কর্নেল
সাক্ষাৎকার গ্রহণকাল : ২৯ ডিসেম্বর ১৯৯৪
সাক্ষাৎকার প্রকাশস্থল : রোলিং স্টোন ম্যাগাজিন
ভাষান্তর ও ভূমিকা : শফিউল জয়
————————————————————————————–
প্রশ্ন : পেছনে ফিরে তাকাইলে সিয়াটলের দিনগুলা নিয়ে এখন কী মনে হয়?
কর্নেল : সিয়াটলের দিনগুলা নিয়ে তিক্ততা না থাকা অসম্ভব। আমার বন্ধুদের হারাইসি সেই সময়ের কারণে। এবং আস্তে আস্তে উপলব্ধি করলাম সিয়াটল ম্যুভমেন্টের সম্পূর্ণ ব্যাপারটা এখন ফ্যাশনস্টেইটমেন্ট ছাড়া কিছু না। মনে হচ্ছে বুলডোজার আর ওয়াটার কম্প্রেশর নিয়ে কেউ একজন আচমকা শহরে হাজির হয়ে আমাদের পাহাড়ের সব খুঁড়েটুড়ে একাকার করে দিয়ে গেছে। সবকিছু তছনছ করে তাদের মনমতো জিনিশগুলাকে পিক করসে সাবধানে। আর তাদের সাথে যেসব মিলে নাই সেগুলো ছুঁড়ে ফেলে দিছে, ক্রমশ নষ্ট হওয়া ছাড়া গত্যন্তর নাই এসবের। এত্ত খারাপ অবস্থা!
ব্যান্ড হিশাবে তো লাভ হইছেই। মিউজিক নিয়ে বা নিজেদের নিয়ে বক্তব্য, চিন্তাভাবনা প্রকাশ করতে পারসি। কিন্তু সিয়াটল তো এমন ছিল না। লোকজন সিয়াটল মিউজিকের খবরাখবর টিভিতে দেখতেছে এবং যাদের তুমি পছন্দ করো, তারা তোমার সম্পর্কে ভুল আইডিয়া পাইতেসে নিউজের মাধ্যমে। সব লুট করে নিয়ে যাওয়া হইতেসে। এটা শুধু আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা না, মোটামুটি সবার ক্ষেত্রেই।
প্রশ্ন : কিন্তু তুমি যা বিশ্বাস করো তাতে সফলতার মুখ দেখলে আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ বিদ্যমান। খুব শাদামাটা শোনালেও কথাটা তো সত্য।
কর্নেল : তা তো বটেই। কিন্তু জিনিশটা এমন হয়ে গেছে যে তুমি কোনো-একটা ঘটনার অংশ ছিলা এবং তারপর পুরা ঘটনাপ্রবাহ তোমার নিয়ন্ত্রণের এত বাইরে চলে গেছে যে তার সাথে তালই মিলাইতে পারতেসো না। তাছাড়া আমরা সবসময়ই একটু আলাদা আর বিপর্যস্ত ছিলাম।
অন্যান্য ব্যান্ডগুলার মতো আমরা সেইভাবে অংশীদার ছিলাম না পুরা ব্যাপারটার। কেউ আমাদের চিনত না, আমরা পার্টিটার্টিতেও যাইতাম না। কিন্তু সিয়াটলের বাকি ব্যান্ডগুলা যখন সফলতা আর পরিচিতি পাওয়া শুরু করল তখন ভালো লাগসে এর সাথে সংযুক্ত থাকতে পাইরা।
কিন্তু সিয়াটলের বাইরে থেকে যারা এই হিড়িকটার সাথে যুক্ত ছিল, এমনকি সিয়াটলের অনেক ব্যান্ডও মনে করে সিয়াটল ম্যুভমেন্টটা শুধু সাউন্ডগার্ডেন, পার্ল জ্যাম, নির্ভানা আর অ্যালিস ইন চেইন্সকে কেন্দ্র করে। পিরিয়ড। কাহিনি শেষ। এরকমই চলতেছে।
যেসব জিনিশ বাদ পড়ে গেছে এই হিড়িক থেকে তা হলো এক্সপেরিমেন্টাল মিউজিক, ফ্রি জ্যাজ, থিয়েট্রিক্যাল ব্যান্ড থেকে শুরু করে গথিক-বেন্ট ব্যান্ডস। আমাদের ভেতর থেকে অনেকেই ফাকড-আপ ছিল পুরা ব্যাপারটা নিয়ে। সিয়াটল যে সংকীর্ণ ধারণাটা দিচ্ছিল সেটা অনেক সভ্যকেই ভুগাইসে এবং তারা বীতশ্রদ্ধ হয়ে সরেও আসছে দৃশ্যপট থেকে।
প্রশ্ন : অ্যান্ডি উডের সাথে কী হইসিলো?
কর্নেল : তোমার পরিচিত কেউ যখন রহস্যজনকভাবে মারা যায় তখন কোনো মন্তব্য করা অসম্ভব। কিন্তু কথা হচ্ছে, কেউ যদি তোমার ব্যাকইয়ার্ডে আইসা আচোদা ঝামেলা বাঁধায় মানুষজনের সাথে, সেটা খুব বিরক্তিকর। আমরা ভাবসিলাম সবকিছু নিজ থেকেই নির্ঝঞ্ঝাট থাকবে, আর সত্যদর্শী – তারপর বাকিটা দেখা যাবে। এরকম মনোভাব খুব বেশিই শাদাসিধা ছিল।
প্রশ্ন : কার্ট কোবেইনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল তোমার?
কর্নেল : আমরা তো বন্ধুও ছিলাম না। বেন (সাউন্ডগার্ডেনের বেইজিস্ট) আর ও বন্ধু ছিল। বেন নির্ভানার সাথে ট্যুরও করসে রোডি হিশাবে। বেন আর কিম (সাউন্ডগার্ডেনের লিড গিটারিস্ট) আসলে ওর বন্ধু ছিল। কয়েকবার দেখা হইসে, একসাথে কয়েকটা শো করসি। এইটুকুই। কিন্তু নির্ভানার কাজ নিয়ে আমরা অনেক গর্বিত ছিলাম, এবং জানতাম ওরা অসাধারণ ব্যান্ড। ওদের প্রথমদিককার ডেমোগুলা শুনসি, এবং শুনেই তৎক্ষণাৎ ভালো লাগসিলো।
প্রশ্ন : পার্ল জ্যাম নাকি অহেতুক তাড়াতাড়ি খ্যাতি পায়া গেছে – এডি ভেডারের (পার্ল জ্যামের ভোক্যাল)এই মন্তব্যের পর তো প্রচুর সমালোচনার মুখে পড়ছে। আসলেই কী তাই?
কর্নেল : হ্যাঁ। ওদের কাছে থেকে শিক্ষাটা ভালোভাবে আত্মস্থ করসি এবং কৃতজ্ঞ এর জন্যে। কেউ চেয়ারে বসে বসে আরাম করে বলতেই পারে, ‘এইটা নিয়ে অভিযোগ করার কী আছে?’ কিন্তু চেয়ারে বসে বসে এসব বলাই যায়। তুমি যদি রাতারাতি খ্যাতি সফলতা পায়া যাও তাহলে তোমার চোখের সামনে মানুষের নানা দিক উপস্থাপিত হবে যেটা একটা গড় মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব না। এবং সেই জিনিশগুলা হৃদয়বিদারক। তোমাকে নিঃসঙ্গ করে দিবে একেবারে।
প্রশ্ন : তুমি তো বেশকিছু মৃত্যুভারাক্রান্ত গান লিখসো। একজন স্যঙরাইটারের মৃত্যুর পর কি তার লেখা গানের সাথে সেসব লিরিক মিলায়া দেখা উচিত?
কর্নেল : অ্যান্ডি যখন মারা গেল আমি প্রায় দুইবছর ওর গান শুনতে পারি নাই। কারণ শুনলেই মনে হইত সামহাউ ওর গানের ভেতরে মৃত্যুর ইঙ্গিতগুলা দিয়ে গেছে। আমার ক্ষেত্রেও তেমন হইতে পারে। সবকিছু জীবন আর মৃত্যুর ভেতর দিয়ে দেখলে সেভাবেই তুমি লিখবা। সেটাই তো অনুভবটা, তাই না? লেখকের অস্বাভাবিক মৃত্যু হইলে তার লেখা থেকে পুরো ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করাটা এক ধরনের মর্বিড আদানপ্রদানের অংশ।
কার্ট কোবেইনের লিরিকে কিন্তু তার মৃত্যুবিষয়ক তেমন কোনো নিশানা সোজাসুজি লক্ষ করা যায় না। এটা শুধুমাত্র একটা স্ট্রিম অফ থট, একটা সম্ভাবনা – লেখার সময়কার মুহূর্তে সেই অনুভবটা যা তাকে তাড়িত করসে। এর মানে এই না যে এটা সরাসরি তেমন কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে। আবার একইসাথে – এটা একপ্রকারের ইঙ্গিত।
প্রশ্ন : তোমার মতে হেরোইনআসক্তিটা কি অন্য যে-কোনো জায়গার থেকে সিয়াটল মিউজিক সিনের ক্ষেত্রে অধিকতর প্রাসঙ্গিক?
কর্নেল : এটা নিছক গালগল্প। কোনো ইশ্যু না এটা। মাদকাসক্তির সমস্যা অনেক জায়গায়ই আছে যেটার সাথে মিউজিকের কোনো যোগাযোগ নাই। শহরের গুটিকয়েক মানুষকে দিয়ে পুরা ব্যাপারটার গুরুত্ব বিবেচনা করা সম্পূর্ণ অ্যাবসার্ড। মানুষজন এটা নিয়ে মাথা ঘামায় কারণ বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে গসিপ করা মানুষের স্বভাবজাত। সবচেয়ে বড় অপরাধ হইল যাদের টাকা নাই পয়সা নাই অথচ মাদকাসক্তির সমস্যায় ভুগতেছে কিন্তু সেসব নিয়ে কেউ কখনো কথা বলে না। এইসব নিয়ে যারা নিরন্তর সময় ব্যয় করতেসে তাদের সম্ভবত অনেক বাজে সময় আছে খরচ করার মতো।
প্রশ্ন : ‘সুপারআননোউন’ অ্যালবামের ‘দ্যা ডে আই ট্রাইড টু লিভ’ গানটা কি হেরোইন নিয়ে?
কর্নেল : না। হেরোইন নিয়ে আমার কোনো গান নাই। পুরো গানটা অন্তর্মুখিতা আর নিঃসঙ্গতার নকশা থেকে বের হয়ে আসা নিয়ে – যে-সমস্যাটার সম্মুখীন আমাকে হইতে হইছে বারবার। আর-দশটা মানুষের মতো জীবনযাপন আর আনন্দমুখর হওয়ার প্রচেষ্টা আর সংগ্রাম নিয়েই গানটা। দেখা যায় আমি প্রায়ই দিনের পর দিন মানুষের সাথে যোগাযোগ করি না, কল দেই না, কথা বলি না।
বলতে গেলে এক প্রকারের আশাবাদের কথাই বলা হইছে। বিশেষ করে ‘One more time around / Might get it’ – এই লাইনগুলোতে। আমি চেষ্টা করতেছি মানুষের সাথে মেশার, তাদেরকে বোঝার এবং বারবার ব্যর্থ হইতেসি। কিন্তু, তারপরেও ভাবসি – আগামীকাল হয়তো আরেকবার সুযোগ পাবো। অনেকেই গানটাকে আক্ষরিকভাবে ধরে নিয়ে স্যুইসাইড স্যঙ হিশাবে ব্যাখ্যা করে। যে-দিনটায় আমি বাঁচতে চাইছিলামের মানে নিজেকে ভেঙে চারপাশের সব অভিজ্ঞতার অংশীদার হওয়ার চেষ্টাকেই বুঝছিলাম। সবকিছু এলোমেলো করে ফেলে গুহার ভেতরে আত্মসমর্পণ করাকে বুঝাইতে চাই নাই কোনোভাবেই।
প্রশ্ন : তুমি তো সিয়াটলেই বেড়ে উঠসো। সিয়াটলের কোথায়?
কর্নেল : হাইওয়ে ধরে গেলে চার থেকে পাঁচ মাইল আগায়া যাইতে হবে। জায়গাটা খুবই সিয়াটলিশ ছিল। শব্দস্বল্পতার কারণে ‘শাদা’ বলতে বাধ্য হচ্ছি। আর্বান বা সাবার্বান – কোনো ক্যাটাগরিতেই জায়গাটাকে ফ্যালা যায় না। নিম্নমধ্যবিত্ত শাদা লোকদের এলাকা ছিল এটা। আমার বড় হওয়ার এলাকাটায় জনসংখ্যা বিস্ফোরণের শেষদিককার এলাকা। ফলে চারপাশে অনেক বাচ্চাকাচ্চা ছিল। হাজার হাজার পোলাপান। ফলে, ড্রাগের আসল আড্ডাখানা। একেবারে আদর্শ সিয়াটলের প্রতিচ্ছবি।
প্রশ্ন : এইসব পোলাপান কি ঝামেলার ভেতর দিয়ে যাইতেছিল?
কর্নেল : তা তো অবশ্যই। বছরের পর বছর ধরে ঝামেলা চলতেছিল। কেউ গাড়ি চুরি করতেছে, কেউ ড্রাগস বিক্রি করতেছে। বারো বছরের ভেতরেই সবাই মোটামুটি ড্রাগস বিক্রি করা শুরু করে দিতাম, বা অন্য যে-কোনো একটা। গাঁজা, পিল – সবকিছু একেবারে হাতের নাগালে ছিল। আমার বয়স যখন এগারো তখন আমার থেকে বছর পাঁচেক বড় দুই প্রতিবেশি একেবারে ড্রাগসে আসক্ত ছিল। একবার মনে আছে বেইজমেন্ট দিয়ে হাইটা যাইতেছি। তো এই দুইজনের একজন আমার দিকে জানলা দিয়ে সিরিঞ্জে করে কিছু ছুঁড়ে মারসিলো। ওই ছেলেটার বিশাল চুলদাড়ি ছিল লিনার্ড স্কিনার্ডের অনুকরণ করে। জানতামও না ওইগুলা কী, কিন্তু প্রায় পনেরো ফিট দূর থেকে সেগুলা ছুঁড়ে মারা হইসিলো আর আমি চেষ্টা করতেছিলাম এড়ায়া সামনে যাওয়ার। এইধরনের লোকজনের ভেতরে বেড়ে উঠছি।
প্রশ্ন : তোমার প্রথম ব্যান্ড নিয়ে কিছু বলো।
কর্নেল : জোন্স স্ট্রিটে থাকতাম, তাই আমাদের ব্যান্ডের নাম ছিল জোন্স স্ট্রিট ব্যান্ড। প্র্যাক্টিস করতাম গ্যারাজে। রাশ কিংবা এসিডিসির মতো সমসাময়িক রক-শিট থেকে শুরু করে রেমন্স, সেক্স পিস্তলের মতো পাঙ্ক মিউজিক – সবই বাজাইতাম। লোক্যাল কিছু পাঙ্ক ব্যান্ড ছিল যাদের মিমিক করতাম আমরা। একটা ব্যান্ড ছিল দ্য ফার্টস নামের – ওদের গান শুনেও মিমিক করার চেষ্টা করতাম। আর ড্রামার হিশাবে পুলিস ব্যান্ডটা ভালো লাগত।
প্রশ্ন : এটা কি হাইস্কুলের সময়ের কথা?
কর্নেল : আমি তো কখনো হাইস্কুলে যাই নাই, এইটথ গ্রেইডই শেষ করি নাই বলতে গেলে। অনুপস্থিতির কারণে সেভেন্থ গ্রেডে আমাকে একবার আর এইটথ গ্রেডে দুইবার বের করে দেয়া হয়। তারপর অল্টার্নেটিভ হাইস্কুলে ভর্তি হই, যেটা মোটামুটি নাইন্থ আর টেন্থ গ্রেডের সমমানের। এটা ছিল মূলত বিপথগামী তরুণদের জন্যে, যাদের কোথাও যাওয়ার ছিল না তারা শেষমেশ এইখানে আসতো। কিন্তু পুরা সিস্টেমটার সাথে খাপ খাওয়াইতে পারি নাই। কারণ এইখানে নিজের গতিতে, নিজের চেষ্টায় সবকিছু করতে হইত আর সেখানে স্কুল বলে নিজের কিছু ছিল না। ফলে সেখানে গিয়েও কিছু করি নাই। আমার জন্যে এইসব ছিল সময়ের অপচয়।
ষোলো বছর বয়সে যখন ড্রাম বাজানো শুরু করি তখনই আমি স্কুলের বাইরে। কখনো রেস্টুরেন্টে ডিশওয়াশারের কাজ করসি, ফ্লোর স্যুইপারের কাজ করসি। এবং শেষপর্যন্ত রাঁধুনিও হইছিলাম।
প্রশ্ন : খুব কঠিন সময় ছিল সেটা?
কর্নেল : হ্যাঁ। জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় বলা যায়। তেরো বছর বয়সে ড্রাগস নেয়া শুরু করি এবং বাজে অভিজ্ঞতার কারণে চৌদ্দ বছর বয়সে সেইখান থেকে বের হয়ে আসি। ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত কোনো বন্ধু ছিল না। দুই বছর অন্তত অ্যাগোরাফোবিয়াতে ভুগসি, কারো সাথে কথাবার্তা বলতাম না। যেসব বন্ধু ছিল আগের তারা সবাই ড্রাগস নিয়ে মারা খাইতেসিল আর ওদের সাথে আর কিছুই মিলতো না।
প্রশ্ন : তারপর?
কর্নেল : মিউজিক নিয়ে আমি সিরিয়াসলি চিন্তাভাবনা শুরু করি। প্র্যাক্টিস থেকে শুরু করে ড্রাম বাজানো, লেসন নেয়া সবকিছুর একটা গতি এসে যায়। এরপর কিছুটা অস্পষ্ট সময় কাটে। লোক্যাল ব্যান্ডগুলার অডিশনের অ্যাড দেখে যোগাযোগ করতাম, এবং দেখা যাইত অডিশন দিয়ে ঢোকার সাত দিন পর বের হয়ে আসছি। কারণ এসব বুলশিট মনে হইত।
প্রথম যে ব্যান্ডে ঢুকি, সেখানে ড্রাম বাজানোর সাথে সাথে গান গেয়ে বেশ প্রশংসা কুড়াইছিলাম। এবং ভাবতে শুরু করি, ‘শিট, আমার শুধু গানই চেষ্টা করা উচিত’। ওই ব্যান্ডের লিডার বেশ ভালো গিটার বাজাইত, কিন্তু তার ধান্দা ছিল একটা ব্যান্ড করে নিজের পকেট ভারি করার। কিম আর হিরো (সাউন্ডগার্ডেনের বেজিস্ট) ওদের ফ্রেন্ড ছিল। ফলে ওদের সাথে পরিচিত হই এবং বেশ কয়েকটা শোতে বাজাই। মনে হয় না তারা আমাকে খুব পছন্দ করসিলো, এবং আমিও যে করসি তাও না। ফলে নিজের গরজেই বের হয়ে আসি।
তারপর একদিন সেই গিটারিস্ট আমাকে ফোন দেয়। কথায় কথায় বলি যে আমার রুমমেটের সাথে একটু ঝামেলা চলতেছে। ও জানাইলো হিরো নাকি রুমমেট খুঁজতেছে। পরে হিরোকে ফোন দিয়ে আমরা রুমমেট হয়ে যাই। ও তখন আরেক ব্যান্ডে, সেটাও প্রায় ভাঙা ভাঙা অবস্থায়। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নেই নতুন ব্যান্ড করার। কিমের সাথে আমরা যেদিন প্রথম জ্যাম করি, সেদিনই তিনটা গান লিখে ফেলি। এবং পরের জ্যামে পাঁচটা। দুইমাসের মধ্যে গানের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াইলো পনেরোতে। এইভাবেই সাউন্ডগার্ডেনের সূচনা।
প্রশ্ন : সেই সময়কার সাউন্ডগার্ডেনের অন্তর্গত চালিকাশক্তি কী ছিল?
কর্নেল : আমরা ব্যান্ডকে যা দিতাম এবং আমাদের অতৃপ্তি – দুইটাই সমান ছিল বলা যায়। আমার ধারণা নতুন কিছু করার উৎসাহ পেয়ে বসছিল, একই সাথে একে অপরকে খুব ক্রিটিক্যালিও দেখতাম।
বন্ধুত্বের থেকে মিউজিকই পারস্পরিক খাপ খাওয়ার স্পেইসটা ধরে রাখসিলো। একসাথে ঘুরেফিরে বেড়াইতাম নিজেদের মধ্যে চেনাজানা বাড়ানোর জন্যে, এবং সিয়াটলের মিউজিক সিন তখন খুবই শক্তিশালী। কিন্তু ফুর্তিফাট্টার ক্ষেত্রে আমরা আলাদাই ছিলাম। একমাত্র আমিই যে অন্তর্মুখী ছিলাম তা না – বেন, ম্যাট এবং কিমও একইরকম ছিল বলা যায়।
প্রশ্ন : মিউজিক্যালি তোমাদের মতৈক্য ছিল?
কর্নেল : ঠিক সেটা না, আমরা একজন আরেকজনকে ভাউ দিয়ে চলতাম। ওই সময় সিয়াটলের বাইরের কয়েকটা ব্যান্ড আমাদের ভালো লাগত – মিনিটমেন, দ্য মিট পাপেটস, দ্য বাটহোল সারফার্স। কিছু ইউরোপিয়ান ব্যান্ড ছিল – ওয়্যার, জয় ডিভিশন।
প্রশ্ন : সত্তরের প্রথম দিককার হেভি মেটাল তোমাকে আগ্রহী করসিলো কখনো?
কর্নেল : একবারেই না। বিন্দুমাত্রও না।
প্রশ্ন : তা সত্ত্বেও তো সাউন্ডগার্ডেনকে ব্ল্যাক স্যাবাথ আর লেড যেপেলিন-এর সাথে তুলনা করা হয়।
কর্নেল : ‘ইনছেছ্যান্ট মেইস’ নামের ব্লুস ঘরানার একটা গান করসিলাম আমরা শুরুর দিকে, খুবই ধীর লয়ের। লিরিক্যালি আর গায়কির দিকে থেকে এটাকে ইউরোপিয়ান গথিক বলা চলে। কিন্তু ছোটবেলার ইনফ্লুয়েন্স আর অ্যামেরিকান হওয়ার কারণে লোকজনের এই গানের সাথে ব্ল্যাক স্যাবাথ বা যেপেলিন-এর সাদৃশ্য খুঁজে পাইছে, এবং লোকজনের গানটা ভালো লাগার কথা না। এটা ছিল আমাদের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া। এবং তৎকালীন মিউজিকের দৃশ্যপটে শহরে এইরকম কিছু করার থেকে খ্যাত কিছু করা সম্ভব ছিল না। ওইটা ছিল আমাদের মিউজিক ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। কারণ আমরা অ্যাটোনাল, পোস্ট পাঙ্ক, অদ্ভুতুড়ে যে-কোনোকিছু বাজানোর সক্ষমতা রাখতাম এবং সবাই তাতে হয়তো ভাবত আমরা গ্রেইট ব্যান্ড। কিন্তু, তারপরেও আমরা ওই গানটাই করতাম এবং আরও বেশি প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হইত। ফলে সেটাই শুরু করলাম।
প্রশ্ন : ‘বিগ ডাম্ব সেক্স’ গানটা তো প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হইসিলো এটার কোরাসের কারণে, ‘I want to fuck you’. গান্স অ্যান্ড রোজেস তো গানটা রেকর্ড করছে। তো তোমার কি মনে হয় গানের প্যারোডির জায়গাটা কি এখনো আছে?
কর্নেল : প্যারোডি একমাত্র উইয়ার্ড আল ইয়াংকভিককেই মানায়, এটা আমরা বুঝতে পারসি। কিন্তু আমাদের সাউন্ড শুনে লোকজন ধন্দে পড়ে যায় যে আমাদেরকে পোস্ট পাঙ্ক হার্ড রকের সাথে মেলাবে নাকি অ্যারোস্মিথের সাথে। তুমি যদি ব্যান্ড সম্পর্কে না-জেনে এই গানটা শুনো, এবং জানা না থাকে যে আমরা ইয়ার্কি করতেসি – তাহলে এটাকে অ্যারোস্মিথের গানই ভাববা।
প্রশ্ন : সাবপপ লেবেল আর সাউন্ডগার্ডেনের নাম তো ওতপ্রোতভাবে জড়ায়া আছে। কীভাবে হইছিল?
কর্নেল : ব্রুস তো কিম আর হিরোর সাথে শিকাগোতে একসাথে বড় হইসে। আমি কিছু-একটা টেইপ করে নিয়ে গিয়ে ব্রুসকে শুনায়া বলতাম – ‘কী মনে হইতেছে?’ নতুন শিল্পীদের ব্যাপারে ওর অনেক খেয়াল ছিল। আমাদের কিছু জিনিশ বাজায়া ওকে শুনাইলে ও হয়তো ওর পছন্দের কিছু বাজায়া বলত, ‘আমার ধারণা এইটা আরও ভালো। আরেকটু দ্যাখো।’ ওর মতামতের সততায় আমরা বিশ্বাস করতাম।
ব্রুস আর জোনাথান অনেক বেশি কৃতিত্বের দাবিদার। জোনাথানই সর্বপ্রথম বলছিল আন্তর্জাতিক মানের কিছু করা সম্ভব আমাদের দ্বারা। সুজান ম্যানেজার হিশাবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম রেকর্ডিং যখন ব্রুসের হাতে দেই, ও আমাদের জড়ায়া ধরে বলছিল সিয়াটলে অনেক বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ওরা দুইজন দূরদর্শী ছিল।
প্রশ্ন : সুজান ম্যানেজারের দায়িত্ব নেয় কখন থেকে?
কর্নেল : সাবপপে রেকর্ডের কিছু আগে। জোনাথানকে বলসিলাম ম্যানেজার হইতে, কিন্তু ও রাজি হয় নাই। তখন আমি সুজানের সাথে ডেইট করতেসিলাম। তিন বছর হয়ে গেছে সাউন্ডগার্ডেনের। এর আগে দরকারও ছিল না ম্যানেজারের। একটা লোক্যাল ব্যান্ড হিশাবে বড় একটা রেকর্ড লেবেলের সাথে ইন্ডি রেকর্ড বের করতেসি, আবার সেই লেবেলের প্রথম রেকর্ডও বের হয় নাই তখন – পুরা পরিস্থিতিটা ছিল এমন।
প্রশ্ন : সুজান তো তোমার স্ত্রী-ও। তো এটা নিয়ে গ্রুপে ঝামেলা হয় নাই?
কর্নেল : প্রথম দিকে মনে হইসিল ওর ম্যানেজার হওয়াটা বাজে আইডিয়া। কিন্তু সবাই ভালোভাবেই নিসিলো। আর সুজান খুবই দায়িত্বশীল ম্যানেজার ছিল। কারো ঘুণাক্ষরেও মনে হয় নাই কোথাও কোনো অযত্ন হইতেসে।
এরকমও হইসে মাঝে মাঝে যে ব্যান্ড আর সুজানের মাঝখানে একটা ঝামেলা হইসে আর আমি ব্যান্ডের পক্ষ নিয়ে রাগারাগি করে কথা বলতেসি। এর উল্টাটাও হইসে। আমরা যদি বিবাহিত না হইতাম তাহলে হয়তো ব্যান্ডের অনান্য সদস্যরা ওকে সহজেই খাটাশ বলে গালাগালি করতে পারত।
প্রশ্ন : সাউন্ডগার্ডেনের কি গ্রুপি আছে এখন?
কর্নেল : না, আমাদের ব্যবহার অতটা অমায়িক না। আর আমরা এইসব ব্যাপার নিরুৎসাহিত করার পক্ষে, কারণ গ্রুপি খুব আত্মসচেতন করে দেয়। শেষের শোগুলাতেও অনেক মেয়ে বাইরে বসে ছিল ভেতরে আসার জন্যে। কিন্তু ব্যাপারটা কী জানো? এই মেয়েগুলাই এই ভেন্যুতে হওয়া যে-কোনো শোতেই এইভাবে দাঁড়ায়া থাকবে। পুরা ব্যাপারটা অদ্ভুত লাগে আমার। ফ্যান হচ্ছে ফ্যান। তারা তোমার শোতে আসবে এবং স্টেইজ থেকে বাসে যাবার সময়টায় ভিড় করবে অটোগ্রাফের জন্যে। তাদের চোখ দেখেই বুঝতে পারবা তারা বলতেসে, ‘আমি তোমাদের গান লক্ষবার শুনসি।’ কিন্তু গ্রুপিরা কোনো ফ্যান না। তাদের আত্মমর্যাদাঘটিত সমস্যা আছে।
প্রশ্ন : তাহলে কি বলা যায় যে তুমি রকস্টার না?
কর্নেল : তুমি যেভাবে যা-ই করো না কেন, মানবজাতির অংশ হিসেবে তোমার জন্ম তো নারীদের থেকেই। অন্য যে-কারো মতো তোমারও দায় আছে চারপাশের সবকিছু নিয়ে। হয়তো একটু বেশি সচেতন হয়ে যাওয়া – এই যা!
প্রশ্ন : ‘ব্যাডমটরফিঙ্গার’-এ জিসাস ক্রাইস্টের পোজটা কি এই ধারণা থেকেই?
কর্নেল : না, গানের মূল শব্দটা হচ্ছে ‘পোজ’। ওই বছর বহু মডেল আর রকস্টারকে দেখসিলাম জিসাস ক্রাইস্টের ক্রুসিফিক্সের পোজে ছবি তুলতে, তো আমার পোজটা ছিল হেয়ালির মতো। কারণ পুরা ট্রেন্ডটাকে খুব মামুলি লাগসিলো আমার। মানুষজন যেভাবে নিজেকে দেখাইতে চায় আর-কী!
একবার শোয়ের পর এক মেয়ে আইসা আমাকে তার লেদার কোটের পেছনে আঁকা অ্যান্ডির ছবি দেখায়া বলল, ‘তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ কারণ তুমি অ্যান্ডিকে নিয়ে একটা গান লিখসো। অ্যান্ডি অতুলনীয়’। এই বলে সে চলে গেল। আমার মনে হইসিল মেয়েটার মনে এই ভাবনাটা কেন আসলো? তার লিরিক্স আর মৃত্যুর জন্যে? অ্যান্ডির লিরিকে লাইনের পর লাইন মূলত একই কথা বলসে, ‘আম ফাকড-আপ’। ও ইচ্ছা করলে একটা গান লিখতে পারত ‘আম ফাকড আপ’ নামের, তাহলে ওর অনেক গানের সারাংশ এক গানের ভেতরেই এসে যাইতো। কিন্তু এই মেয়েটাই কিন্তু অ্যান্ডিকে অতুলনীয় ভাবে।
প্রশ্ন : ‘ব্ল্যাক হোল সান’ গানটার ভেতরে একটা লাইন আছে ‘Times are gone for honest man’. তুমি আসলেই এটা বিশ্বাস করো?
কর্নেল : অবশ্যই। একজন ব্যক্তির পক্ষে নিজের জীবন আর স্বাধীনতার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা কষ্টসাধ্য। দিনকে দিন তা আরও কঠিন হয়ে যাইতেছে। মোহভঙ্গ মানুষ অসৎ আর ক্রোধান্বিত হয়ে পড়তেছে। ফলে আশেপাশের মানুষের গুয়া মারতে সে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করতেসে না। আমাদের পেশাগত ক্ষেত্রে তো একে অপরকে পেছন থেকে মারা দেয়া খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। ভাগ্য ভালো যে আমাদের এরকম কিছু করতে হয় নাই। এর কারণ অংশত আমাদের একাগ্রতা, আর আরেকদিক থেকে দেখলে আমরা খুবই ভাগ্যবান।
প্রশ্ন : তুমি কি অদৃষ্টবাদী? সবকিছু কি আসলেই খারাপের দিকেই যাচ্ছে?
কর্নেল : সত্যিকার অর্থে ভালো কিছু হওয়ার আগে আরও খারাপ কিছুর সম্মুখীন হয়তো হতে হবে। বহু মানুষ অক্লান্ত চেষ্টা করবে ভালো কিছুর জন্যে। কিন্তু দুনিয়ার এখনকার যা অবস্থা তাতে দেখা যাচ্ছে ইউরোপিয়ান সংস্কৃতি সবকিছু দখল করে নিচ্ছে, অ্যামেরিকা দুনিয়ার পুলিশগিরির ভার নিছে আর সবরকমের দূষণ আর ভোগের ক্ষেত্রেও সে এক নাম্বার। আর আমরা একজন শক্তিশালী এবং অশুভ মানুষের হাতে জিম্মি নাগরিক। এ যাত্রার অন্ত এত সহজে আসবে বলে মনে হয় না।
প্রশ্ন : তোমার আর সুজানের বাচ্চা হবে বলে গুজব শোনা যাইতেছে। কথা সত্য?
কর্নেল : না, এরকম কিছু হইতেসে না। শুনসি এরকমও আলোচনা হইতেসে যে, সাউন্ডগার্ডেনের কোন গানটা আমি হেরোইন খায়া লিখসি। তর্কটা এই নিয়ে না যে আমি কখনো হেরোইন খাইসি কী খাই নাই – তর্কটা হইতেসে কোন গানটা হেরোইন খায়া লেখা হইসে। আরেকটা জিনিশ শুনলাম যে, আমি নাকি পার্ল জ্যামের ম্যানেজার কেলি কার্টিসকে বিয়ে করসিলাম। ঘটনা সত্য যে কেলি কার্টিস আর আমার বাচ্চা হবে কিছুদিনের মধ্যে (কেলি কার্টিস পুরুষ)।
প্রশ্ন : তুমি তোমার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট?
কর্নেল : না। সফলতা বলতে যা বোঝায় সেটা নিয়ে আমার আতঙ্ক আছে। কারণ সফল হইলে মানুষ ভিন্ন চোখে দ্যাখে। তারা মনে করে যেহেতু তোমাকে টিভিতে দেখা যায়, তার মানে তুমি মিলিওনার – যেটা সত্য না। তারপরেও তারা এরকম কিছু একটা ধইরা নেয়, তোমার সম্পর্কে আঁতিপাঁতি করে। তাদের ভাবতে ভাল্লাগে যে তোমার হটটাবের পাশে টাকা গড়াগড়ি খায় আর তুমি ফেরারি নিয়ে ঘুইরা বেড়াও। কিন্তু সত্য ঘটনা জানার পর তারা হতাশ হয়।
বছর দুই আগে আমার হাইস্কুলের এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা হইসিল। দেখেই সে আমাকে হাত বাড়ায়া দিয়া বললো, ‘আরে বাহ। তোমাকে দেইখা খুব ভাল্লাগতেছে। শেষ পর্যন্ত তোমার দ্বারাই সম্ভব হইলো’। আমি ধন্যবাদ দিয়ে তার সাথে হাত মিলাইলাম। তারপর ভাবলাম, এই ‘সম্ভব হইলো’ বালের মানে কী? এর মানে কি আমি বাড়িতে গিয়ে পায়ের উপর পা তুইলা যে-কোনো জায়গায় যতখুশি ফোন কল করতে পারি? কিংবা আমি আমার বন্ধুদের সাথে রুড বিহেইভ কররার পরও তারা আমাকে পরদিন সকালে ভালবাসবে! এইসবের কোনো মানেই নাই আমার কাছে।
… …
- বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে ইতালো ক্যালভিনো ১ || শফিউল জয় - July 21, 2020
- ইন্ডি মিউজিকের ঢাকা : বঙ্গাব্দ ১৪২৫ || শফিউল জয় - June 7, 2018
- সাম্প্রতিক মেঘদল || শফিউল জয় - March 6, 2018
COMMENTS