গুরু ও চণ্ডালনামা || বিজয় আহমেদ  

গুরু ও চণ্ডালনামা || বিজয় আহমেদ  

বহুদিন আগে, বন্ধু সারয়ার সামুর কাছ হতে নিয়া আহমদ ছফার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পড়ছিলাম। তারপর থেকে এ বইটা আমার খুব নিকটের হয়া ওঠে। যে-কারণে সামুকে বইটা আর ফেরত দেয়া হয় নাই। অনেকদিন পর সামুরে এইটা জানাইলেও সে বেজার হয় নাই। প্রথম পাঠের পর থেকে আরো অনেকবার ‘যদ্যপি আমার গুরু’ পড়ছি। কিন্তু কহনোই পাঠতৃষ্ণা শেষ হয় নাই আমার। বইটা শুধু তার গুরু আব্দুর রাজ্জাক, তার চিন্তা, যাপন ও পাণ্ডিত্যকে জানার জন্যেই প্রিয় ছিল না আমার। আমার কাছে এটি আরো বেশি গ্রহণীয় এর ক্র্যাফটম্যানশিপ ও প্রকৌশলের কারণে। মানে বলতে চাইতাছি যে, একজন মানুষের পাণ্ডিত্যকে, নিজের লেখা দিয়ে নির্মোহভাবে, স্মৃতিকথারূপে, নিজের মন্তব্য সহ পাঠকের সামনে হাজির করা — এমনকি যেখানে গুরু ও তার শিষ্য (আহমদ ছফা) দুইজনেরই বিশালত্ব জারি থাকে; তা যে কী অদ্ভুত কাজ, তা আমি মোহিত হয়া বারবার পড়ছি। খেয়াল করছি।

তো ঘটনা হইল, ২৭/০৮/১১ তারিখে দুপুরবেলায়, মামুন খানের সাথে ভরপেট খায়া, তারে বিদায় দিয়া আমি যাই ‘নতুন ধারা’ অফিসে। মানে টিপুভাইয়ের কাছে। গিয়া গল্পগুজব করি। টিপুভাই বলেন, আমি মুগ্ধ হইয়া শুনি। উনার দপ্তরে প্রচুর বইপত্র আসে। টেবিলের ওপর ছড়ায়াছিটায়া থাকে। এর মধ্যে ‘সম্প্রীতি’ নামের একটা ম্যাগাজিনে তরুণদের স্মৃতিকথা সংখ্যাটার দিকে নজর যায়।  হাতে তুইলা লই। উল্টাইপাল্টাই। দুইপেইজের লেখকসূচি দেখি, গল্প করতে করতে। ফলে অনেকের নাম চোখে ধরা পড়ে না। আর তাই মনও ভরে না। ফলে সম্পাদকীয় পড়ি, চমকাই — দেখি যে, ওখানে মাহবুবভাইয়ের একটা স্মৃতিকথা, যা ৪০টি পৃষ্ঠা দখল করেছে বলে জানা হয়। আর সাথে সাথে এইবার, পুনরায় দুইপেইজের লেখকসূচিতে যাই। তারপর মাহবুব মোর্শেদের লেখাটায় নজর বুলাই।  লোভ হয়। আর গুমরে-ওঠা এই লোভের কারণে ফেরার সময় টিপুভাইরে বইলা ম্যাগাজিনটা নিয়া আসি। তারপর রাত্রে যখন ‘গুরু ও চণ্ডাল’ পড়া শুরু করি, টানা দুইঘণ্টার পাঠজার্নি শেষে, দেখি যে তখন রাত ১.৩০টা। মাহবুব মোর্শেদরে ফোন দেওনের ইচ্ছাটা ফাল দিয়া ওঠে। কিন্তু নিজেরে সামলায়ে লই। নিজেরে এইভাবে সামলাইতে পারলেও, একটা অসাধারণ গদ্য পাঠের যে তৃপ্তি তা একপ্রকার বুঁদ কইরা রাখে আমারে। ফলে পরদিন সকালে উইঠা পুনরায় পড়া শুরু করি। আর এবার সেলিম আল দীন সম্পর্কে তার চকিত কিন্তু গভীর মূল্যায়ন বা কথার ফাঁকে ফাঁকে, শিল্প-সাহিত্য-নাটক-ফিল্ম নিয়া মাহবুব মোর্শেদের মন্তব্যগুলা কালো কালিতে দাগাতে থাকি। যতই দাগাই ততই অবাক হই। বোঝার চেষ্টা করি এই লেখার সততা ও প্রণোদনাকে। অবাক হয়া দেখি, একজন প্রায়-মিথের-মতন বিগত লেখকমানুষকে নিয়ে, তার সাহিত্যিক অভিলাষটা আসলে, মাটিতে নামিয়ে আনার চেষ্টা। মানে মিথ হতে একজন মানুষকে তার আসল চেহারা-সুরত ও অবয়ব দানের চেষ্টা। দেখি যে কী অদ্ভুতভাবে, গুরুর শিল্পচেতনা, তার সাথে আর্গুমেন্ট ও গ্রহণ-বর্জনের এক পার্থিব বয়ান তুলে ধরছেন। যে-বয়ানগুলো সাহিত্যিক বিষয়আশয় হিসাবেও অদ্ভুতভাবে গুরুত্বপূর্ণ  হয়া ওঠে, আমাদের কাছে। শুধু তা-ই নয়, মাহবুব মোর্শেদের জাদুকরী গদ্যও প্রণম্য মনে হতে থাকে। দেখি যে গদ্যে মাহবুব মোর্শেদ, খুব ধীরে ধীরে ব্যক্তি সেলিম আল দীন হতে শুরু করে, একজন নাট্যকার সেলিম আল দীনের কাছে পৌঁছান। তার শিল্পচিন্তাভাবনা বলতে বলতে, কখনো-বা মত বা প্রতিমত তুলে ধরতে ধরতে। ফলে মনে হতে থাকে মজলিশি ঢঙে একটা ব্যাপক ঘটনা ঘটে চলছে।

এবং প্রচারিত থাকে যে, গদ্যটার নাম ‘গুরু ও চণ্ডাল’ হইবার কারণও এই যে, গুরুকে আদিখ্যেতার বাইরে রেখে, তার বড়ত্ব ও সীমাবদ্ধতা উভয় নিয়াই একটা সফল জার্নি এখানে জীবন্ত হয়া উঠতে থাকে। এবং ঐ যে প্রথমেই বলছিলাম, একটা মিথকে বাস্তবিক অবয়ব দিয়েছেন তিনি এই গদ্যে — প্রকারান্তরে দেখি, তিনিই আবার  শেষে, সেলিম আল দীনের মৃত্যুর পরের কান্নাকাটির দৃশ্য দেখে লেখেন, “বন্ধুদের কান্না আমি অহরহ দেখি কিন্তু গোপন ও প্রকাশ্য শত্রুরা যখন কাঁদে তখন জীবনের আরেকটা গভীর সত্যের মুখোমুখি হইতে হয়। সেই সত্য কী এইখানে বলব না। সেই সত্যের কথা লিখতে হলে সেলিম আল দীনের জীবন নিয়া আরেকপ্রস্ত রচনা আমাকে লিখতে হবে।” এবং পুনরায় সেলিম আল দীনকে মিথই করে তোলেন। বোধকরি মিথের অন্তর্নিহিত শক্তি এমনই যে, তার দুইসহস্র ডানা উড়াল শুধুই সূর্যগামী। উর্ধ্বগামী। আর রূপকথার মতোই তার একটা ডানা কাইটা দিলে, হয়তো ৫টা কইরা নতুন ডানা জন্মায়!

তবে কথা হইতাছে, মিথটিথ বুঝি না। যেইটা বুঝি, তা হইল — ভবিষ্যতে, সেলিম আল দীনের পাঠক হবেন যারা, তাদের জন্যে এই গদ্য অবশ্যপাঠ্য হবে বলেই বোধকরি। তা সেটা জীবনীরূপে কী সেলিম আল দীনের শিল্পচিন্তার খোঁজে — যা-ই হোক। শুধু তা-ই নয়, মনে হয়, এই গদ্য, আমাদের জন্য একটা উদাহারণ হয়া থাকল। তবে মাহবুব মোর্শেদের আশ্চর্যময় আরো দুটি গ্রন্থ (‘ব্যক্তিগত বসন্তদিন’ ও ‘দেহ’) পড়া আছে বইলাই বোধকরি, ‘গুরু ও চণ্ডাল’ পাঠের পর আমি অবাক হই না। শুধু বিশ্বাসটা আরো পোক্ত হয়। ভাবি যে, মাহবুব  মোর্শেদের গোলায় এমন সোনার ধানই তো উঠবার কথা বারবার।

০২
গদ্যটা পুরাটা যদি আমি এইখানে লেইখা দিতে পারতাম, তাইলে ভাল্লাগত। কিন্তু সেইটা সম্ভব নহে। তবে কয়েকটা লাইন কোট করার লোভ সামলাইতে পারলাম না। (তবে পাঠকের জন্যে আনন্দের কথা হইতে পারে, গদ্যটা বই আকারে বাইর হইছে, ২০১৩ বইমেলায়। ঐতিহ্য থাইকা।)

  • “সেলিম আল দীনের সঙ্গে সংগঠিত বহু ফালতু সাহিত্য আলোচনা আমার স্পষ্ট মনে রইছে। পরন্তু আমি গ্রামে ও মফস্বল শহরগুলোতে বড় হইছি। বড় সাহিত্যিক হওনের বাসনা সেই কৈশোরেই আমাকে লোভাতুর করে তুলেছিলো। বড় সাহিত্যিক জীবনে দেখি নাই। লেখকরা কেমনে লেখে এইগুলো বইয়ে পড়ছি। কাছ থিকা লেখক, সাহিত্যিক ও তাদের জীবন দেখি নাই। সেলিম আল দীনের সান্নিধ্য আমার সেই সাহিত্যিক দেখার বাসনাকে তৃপ্ত করছিলো। সেলিম আল দীন কত বড় সাহিত্যিক আমি জানি না। তবে অল্পদিনেই আমি বুঝতে পারছিলাম, উনি বড় সাহিত্যিকের মতো জীবন যাপন করেন। নিজের নির্মিত একটা জগতে বাস করেন।”
  • “যদ্দুর মনে পড়ে, ২০০৩ নাগাদ ‘নিমজ্জন’ শেষ হইছিল। এইটা লেখার সময় আর উনি মঞ্চের কথা ভাবতেন না। একটা পরিপূর্ণ রচনার চিন্তাই শুধু তার মাথায় আছিল।”
  • “গদ্য যাযাবরবৃত্তির আঙ্গিক নয়। মানুষ নগর তৈরি কইরা নাগরিক না হওয়া পর্যন্ত, নগরে শ্রেণি তৈরি কইরা বিভিন্ন এলাকায় ভাগ হয়া বসবাস না করা পর্যন্ত লিখিত উপন্যাসের উদ্ভব হয় নাই।”
  • “কলকাতার কানাগলির বাইরে নিয়া গিয়া বাংলার বিস্তৃত ভূগোলের মধ্যে সাহিত্যকে প্রতিষ্ঠা করার যে অভিযান তারাশঙ্কর শুরু করেছিলেন, তা সাহিত্যের একটা নতুন অংশকে নতুন দিক ও দিশা দিয়াছিল সত্য কিন্তু ভিতর থিকা প্রাণভোমরা লুটে নিয়াছিল।”
  • “আন্দোলন-সংগ্রাম শুরু হইলে স্যারের সঙ্গে আমার একটা দূরত্ব তৈরি হইত। দেখাসাক্ষাৎ কমে যাইত। স্যার ক্ষমতাকাঠামোর মধ্যে নিরাপদ থাকতে পছন্দ করতেন। রাজনীতি না কইরা, একবার দুইবার ভোট দিয়া, বন্ধুদের সাথে তুইতোকারি কইরা অল্প সুবিধা নিয়া নিরাপদে থাকতে পছন্দ করতেন। অন্য শিক্ষকদের মতো রাজনীতি কইরা ভালো পোস্ট পজিশন আদায় কইরা সুখে থাকা তার পক্ষে সম্ভব আছিল না। সেই পদ্ধতি উনি জানতেনও না।”
  • “সেলিম আল দীন স্বভাবে খুব ভক্তিবাদী ছিলেন। তিনি নিজেও ভক্তি পছন্দ করতেন। যাদের ভক্তি করতেন মন থেকে করতেন। কৃতজ্ঞতাবোধ তাকে ভক্তির দিকে নিয়া যাইতো। ভক্তির মধ্যে কপটতা কি কখনো দেখা গিয়েছিল? আমার খুব মনে পড়ে না। তবে তার মধ্যে এক প্রকারের প্রতিহিংসা কাজ করত। মাঝে মাঝে মনে হতো প্রতিহিংসাবশত উনি লিখছেন। ভালো লিখে বিক্ষোভ জানাবেন বলে। উনি তীব্র বিক্ষোভ সহকারে ঘামতে ঘামতে লিখতেন।”
  • “রিডারের সার্বভৌমত্ব খর্ব কইরা তিনি নিজের টেক্সটকে একদেশদর্শী একটা প্লাটফর্মে দাঁড় করাইতে চাইতেন। যা তার সাহিত্য পাঠের ক্ষেত্রে অনেককে বিমুখ করছে। আমার ক্ষুদ্র বিদ্যায় আমি তার দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব এবং একাকারবাদী শিল্প আঙ্গিকের তত্ত্বকথার দ্বারা খুব বেশি তাড়িত হইতে পারি নাই। তাছাড়া তিনি দুর্বোধ্য সংস্কৃত ভাষায় প্রবন্ধ লেখতনে। তৎসম ও তদ্ভব শব্দের বাহুল্যে সেইগুলো ভারাক্রান্ত হয়ে উঠত। প্রবন্ধ দিয়া তিনি যে-কথা মানুষকে বুঝাইতে চাইতেন সেই কথা মানুষ উল্টা বুঝত।”

০৩
মাহবুব মোর্শেদকে জানি এই শহরের ঘাড়ত্যাড়া লেখক হিসাবে। রাজনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র এবং সমকালীন যে-কোনো বিষয় নিয়াই তার তীব্র ও তীর্যক প্রতিক্রিয়া ও মতামত হাজির থাকে আমাদের সামনে। আর সেই বোঝাবুঝি একান্তই তার। এইটা স্পষ্ট তার এই বুঝ অনেক সময়েই গণমতেরও বিরুদ্ধে চইলা যায়। তবু বুঝি রাজনীতি ও রাষ্ট্র এবং তাদের যুগপৎ গতিবিধি নখদর্পণেই থাকবার লাগে একজন গদ্যশিল্পীর। যেমনটা দেখবার সুযোগ হয় আমাগোর ইলিয়াসের ডায়েরিতেও। যে ডায়েরিতে ছাত্র ধর্মঘট, ডেসার কর্মচারীদের আন্দোলন, প্রেসিডেন্টের ভাষণ এমনকি স্লোগানও পর্যন্ত লিখিত হয়, চরম বিশ্বস্ততায়। আর এইটাও আমাদের  বোধগম্য হয় যে, মাহবুব মোর্শেদ তার রসদ যোগাড় কইরা রাখতাছেন এইভাবে। আমরা ভাবি, শহরের এই কাউবয়, ঠিকই একদিন রোকসানার হাসবেন্ডের মতো কোনো ক্যারেক্টারের প্রিয় স্নেকগেইমের সাপগুলারে, নোকিয়া ১১০০ সেটের ছোট্ট স্ক্রিন থাইকা বাইর কইরা নিয়া আসবেন। দক্ষিণ মৈশুন্দির গল্পকারের দেহাবসানের পর, আমাদের চাওয়াটাও বাইড়া যাইতে থাকে এইভাবে। আর এইটা তো সত্য যে, পুরান ঢাকার ডাইলপুরির পেটে ডাইল না থাকনের যে পরাবাস্তব জীবন আমরা পাঠ করছি তার বাইরেও আরেকটা ঢাকা আছে। যে-ঢাকা শ্যাওড়াপাড়া, মিরপুর, কল্যাণপুর, ডেমরা, শনির আখড়া, কাওলা, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাপুর অথবা যাত্রাবাড়িতে শরীর ছড়ায়া থাকে। আমরা সেই শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমে-থাকা ঘাম, কাম, ধূলি, ফুর্তি, রস বা রসিকতার কথাও জানবার চাই। আর এই চাওয়াটাই জারি থাকে মাহবুব মোর্শেদের প্রতি। যে-কারণে, ‘ফেইস বাই ফেইস’ বা ‘মেলাঙ্কলিয়া’ ব্যক্তিগতভাবে আমি গ্রহণ করতে পারি না। কিন্তু ঠিকই রোকসানা হাসবেন্ড-এ বুঁদ হই। বনসাইয়ের অসাধারণত্বে  ও দার্শনিকতায়  ঘোরগ্রস্ত হই। ব্যক্তিগত এক আড্ডায় মাহবুব মোর্শেদ আমারে কইছিলেন, ‘আমি যে জীবন যাপন করি, তার বাইরে আমি লেখতে পারি না!’ কইতে ইচ্ছা হয়, তার জীবন ও যাপন শুধুই যেন আর্বান নৈসঙ্গতাড়িতের জীবন না হয়। নায়িকা, মদের টেবিল আর শরীর ছাড়াও সেখানে যেন রোকসানারা থাকে। তাদের যেন কর্পোরেট হাউস বা ব্যাংকে চাকরি হয়। তাদের হাসবেন্ডদের যেন নোকিয়া সেট থাকে। স্নেকগেইম থাকে। শ্যাওড়াপাড়ার সকাল ও জ্যাম থাকে। পুলিশের টিয়ারসেল অথবা ৬ নাম্বার বাস থাকে।

যা-ই হোক, ‘গুরু ও চণ্ডাল’ নিয়া লেখতে গিয়া আরো একজন চণ্ডালের জবান এখন বন্ধ করার দরকার মনে হইতাছে। কোনো এক সুন্দর সময়ে না-হয় মাহবুব মোর্শেদের গল্প ও গদ্য নিয়া লেখব। তার আগে যথেষ্ট মূর্খামি ও সাহস সঞ্চয় করতে থাকি।


‘লাল জীপের ডায়েরী’ ওয়েবপত্রে লেখাটা আগে একবার ছাপা হয় ফেব্রুয়ারি ২০১৩ নাগাদ। লেখকের অনুমতি নিয়া গানপারে পুনরাপ্লোড করা গেল। —  গানপার

… …

বিজয় আহমেদ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you