২০২৩-এর ‘বাংলা একাডেমি’-অ্যাওয়ার্ড রেসিপিয়েন্টদের লিস্টি দেখে এই নিবন্ধ পয়দানো হলেও গত দুই-তিন-চাইর দশকের যে-কোনো বছরের লিস্টিই নিবন্ধটির ভিত্তি-উৎস হতে পারত। মূল রচনাভাগে যাবার আগে এই প্রিফেইস/পোস্টস্ক্রিপ্ট দরকার মনে করতেসি ডিসক্লেইমার দিবার জন্য। ফার্স্ট কথা হলো, রচনাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, প্রতিবছর পশ্চাৎপদ প্রগতিশীলদের পুরস্কার প্রতিযোগিতার প্রহর ঘনিয়ে এলে এদেশের গরিব মিসকিন কবিসাহিত্যিকদের প্রতিবন্ধী বুদ্ধিবৃত্তি নিয়া হাসিঠাট্টা আয়োজন করা আজকের সমাজমাধ্যমে ট্রেন্ডি ইভেন্টে উন্নীত হয়েছে। সেকেন্ড বিষয়, দেশস্বাধীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত শত শত বুভুক্ষু কবিসাইত্যিকদেরে এই ‘ইন্সটিটিউশন’ থেকে ‘পুরস্কারে ভূষিত’ করা হয়ে আসছে এইটা আমরা জানি। রীতিমতো ‘প্রতিযোগিতা’ হলে একদিক থেকে ব্যাপারটা ভালো হতো, ওপেন থাকত সকলের পার্টিসিপ্যাশনের জন্য, যদিও কখনোই ছিল না তা। ব্যাপারটা আজব অন্ধকার একটা প্রক্রিয়ায় চালিত হয়ে এসেছে এর জন্ম থেকে এ-অব্দি। কিন্তু জনগণের করের পয়সায় যেসব প্রতিষ্ঠান চলে, যেমন বাংলা বা শিল্পকলা বা ফোকলোর প্রভৃতি অ্যাকাডেমি, সেসবের কোনো স্বচ্ছতা কোনো জবাবদিহিতা না থাকা বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলারে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন উপহাসের ঠাট্টাতামাশার জায়গা বানিয়ে রেখেছে। শেখ হাসিনার দুঃশাসনের কমিবেশি দুই দশকে এইগুলা ভাগাড়ের চেয়েও বদবু ছড়িয়েছে চারিপাশে এবং এইগুলা নিয়া ধান্দাবাজ দুঃসহ কবিসাহিত্যিকগুলা ছাড়া আর কারো কোনো প্রণয় ছিল না। অ্যাডমিন ক্যাডারের সচিব পদমর্যাদার কোনো চাকরের স্বাক্ষরিত ফর্দে নিজের নাম দেখবার লোভে লবেজান এই কবিসাইত্যিকগুলা আচোদা কায়কারবারে দেশকাল আবিল করে রেখেছিল কমিবেশি বিগত দুই দশক! সম্ভব হলে এই কবিসাইত্যিকগুলার প্রত্যেকটার নাম সোনার হরফে ইতিহাসের মোটা বালাম বইটায় লিখে রাখা দরকার যারা জাতির বারোটা বাজিয়ে গেছে পনেরো ষোলো সতেরো বছর ধরে। এই ইতিহাস না লিখে এদেশের সাহিত্য শিল্পকলা এস্থেটিক্স রত্তি পরিমাণে আগাবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কাজেই, শহীদুল্লাহ সুনীতিকুমারের ইতিহাসবই দিয়া বাংলাদেশের সাহিত্যের গতিধারা হারাম ধরা যাবে না। হাজার হাজার বদমাইশ সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবীদের ন্যুইস্যান্স, স্টুপিডিটি, সিলি আর নক্লি জিনিশের সাতমিশালি দিয়া লাইফ চালানো পঞ্চাশপারানো গোটা জাতির পাপক্ষালনের কাজটা যার যার জায়গা থেকে স্টার্ট করতে হবে অবিলম্বে। এলোমেলো নয়, একদম গুছিয়ে লিস্টি ধরে ধরে এই কাজটা করা সম্ভব এবং তা না করলেই আর নয়। আমি, নিম্নস্বাক্ষরকারী, নিতান্ত আমার ভাবে এই কাজটা ট্রাই করব সামনের দিনগুলায়। নিচের নিবন্ধটা আরদ্ধ সেই কাজের একটা তাৎক্ষণিক পটভূমিকা আকারে এখানে গেঁথে রাখা গেল। — জাআ
*
‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ কথাটার সঙ্গে পরিচয় ছেলেবেলায় আমাদের দেশে যখন ক্রীড়া উন্নয়ন তহবিলের লটারি চালু হয় এবং দিনরাইত চব্বিশ ঘণ্টা রাস্তাঘাটে রিকশায় ঠ্যালাভ্যানে বেবিট্যাক্সিতে টেম্পোয় মাইকে মাইকে লটারি বিক্রি হতে থাকে। সেইসময় বিকেএসপির (এলাবোরেইটলি জিনিশটা ‘বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ নামেই চিনতে পারব) কর্মকর্তা/কর্মচারী আর তাদের পরিবারপরিজনবর্গ চোখে-লাগার মতো লটারির লাখটাকা পাইতে শুরু করলে একসময় কী একটা ঝামেলায় সেইসময়কার কোনো-এক পত্রিকায় আইনি ওই টার্মটার সঙ্গে পরিচয়। এরপর বড় হয়ে এই কথাটার ব্যবহার দেখেছি জীবনের কর্মক্ষেত্রে। দেখেছি কী করে এই ইন্টারেস্ট সফলভাবে লোকে সামলায়। অ্যানিওয়ে। এইবার ২০২৩-এর ‘একাডেমি’ (বাংলা) অ্যাওয়ার্ড রেসিপিয়েন্টদের তালিকা দেখে এই কথাটা আরেকবার মনে পড়ল। প্রাপকদের সবার কথা বলতে পারব না, সবাইকে তো চিনি না, মানে পড়ি নাই তাদেরে। এখন পড়ব ‘বাংলার নোবেল’ (অভিনন্দনবার্তায় কে যেন আবেগে বলে ফেলল কথাটা, দেখলাম সোশ্যাল মিডিয়া হ্যান্ডেলে) লরিয়েটদের লেখাপত্র। তো, ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’ কথাটা মাথায় এল তপন বাগচী নামটা দেখে। ‘একাডেমি’ (বাংলা) যে-তালিকা প্রকাশ করেছে সেইখানে দেখলাম ‘ফোকলোর’ শাখায় অ্যাওয়ার্ড শেয়ারে পেয়েছেন দুইজন : তপন বাগচী ও সুমনকুমার দাশ (শেয়ারের অ্যাওয়ার্ডই লিস্টিতে বেশি অনুপাতে লক্ষ করা গেল)। এখন, তপন বাগচী নামটা আগে যেন কোথায় দেখেছি মনে হওয়ায় সার্চ দিলাম, দেখি উনি বাংলা একাডেমির গুচ্ছগুচ্ছ উপপরিচালকদের মধ্যে একজন। উনার নামটা আগে কোথায় দেখেছি ইয়াদ হলো ২০২২-এর কয়েকটা নিউজলিঙ্ক পড়ে। সে-বছর উনার একটা বই বেরিয়েছিল বোধহয় যা ব্যান করা হয় একাডেমি (বাংলা) থেকে এবং তা চুরির অভিযোগের সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে, কোটেশন মারতেসি একটা লিঙ্ক থেকে : “চৌর্যবৃত্তির অভিযোগে বাংলা একাডেমির উপপরিচালক ড. তপন বাগচী সম্পাদিত ‘মাতাল রাজ্জাক : গীতিমালা’ গ্রন্থটি অমর একুশে বইমেলায় প্রবেশ, প্রদর্শন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে কর্তৃপক্ষ। বাংলা একাডেমির পরিচালক (বিক্রয়, বিপণন ও পুনর্মুদ্রণ বিভাগ) এবং অমর একুশে গ্রন্থমেলার সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ সারাবাংলাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।” সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলাম তপন বাগচী নামটা কেন-যে চেনা চেনা মনে হচ্ছিল। অনেক আগে ‘রাধারমণের গীতিমালা’ নামে একটা বইয়ের ব্যাপারেও ঘটনা ধামা দিয়া চাপা দেয়া গিয়েছিল, ঘটক ছিলেন সেইম ব্যক্তিটিই। কিন্তু, আমার কথা হলো, ‘ফোকলোর’ এবং ‘চৌর্যবৃত্তি’ বাংলাদেশে সমার্থক এবং সেইটা জসীম উদদীনের আমল থেকে বা তারও আগে থেকেই। ইন প্র্যাক্টিস, বাংলাদেশে ফোকলোরচর্চা মানেই হচ্ছে একজন-কোনো গ্রামীণ গীতিকার-সুরকার-গায়কের পাণ্ডুলিপি মোটা থানইটের সাইজের গ্রন্থে দেড়/দুইপাতা ভূমিকার আওতায় হাজির করা। কাজটা ততটা গবেষকের নয়, যতটা সাংবাদিকের। কাজেই, চুরি নিয়া আমার সমস্যা নাই। চুরি চলবে। অ্যাকাডেমির মহাপরিচালকের চুরি হোক বা তার অধীন কর্মচারীর। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন তুললে তুলতে হবে অ্যাওয়ার্ডটা গ্রামীণ সেই গীতিকার মানুষটার প্রাপ্য নাকি তার গানের গ্রন্থরূপদানে সহায়তাকারী সুমহান ‘গবেষক’ তকমাধারীটির। আর ‘কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট’? আল্লায় জানে এই জিনিশটা বাংলাদেশের কোনো সেক্টরে খেয়াল করা হয় কি না। হাজার হাজার সচিবের বই কীভাবে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পাবে এইটা খেয়াল করলে? একটা ব্যাপার টুকে রেখে স্ট্যাটাস স্টপ করি আপাতত। ওই যে, আদুরে অভিনন্দনবার্তায় যে-লোকটা ‘বাংলার নোবেল’ বলেছেন একাডেমির (বাংলা) অ্যাওয়ার্ডটাকে, তিনি ঠিকই বলেছেন। বহু বছর ধরে, ব্যতিক্রম দুইয়েকটা বাদ দিলে, সুইডেনের নোবেল যাদেরে অ্যাওয়ার্ড দিয়েছে তারা প্রায় বেবাকেই ছিলেন আমাদের ‘অপূর্ব’ অচেনা। আমাদের ‘পূর্বচেনা’ ভালো ভালো ‘কবিসাইত্যিকেরা’ অ্যাওয়ার্ড পায় না। অ্যাওয়ার্ড পাবার পরপরই চিরচেনা বানাতে অবশ্য টাইম লাগে না আমাদের, বাংলাদেশের সাহিত্যলোকদের, আর রসায়ন নয় ফিজিক্স নয় আমরা ‘নোবেল পুরুস্কার’ বলতেই বুঝি লিটারেচারে যেইটা দেয়া হয় সেইটা। আমরা ‘সাহিত্য-অন্তপ্রাণ’, খোদার কসম জান, আমরা সাহিত্যেই ‘নিবেদিতপ্রাণ’। নিবেদন ও নৈবেদ্য না-থাকলে এখানে সুবিধা করা যাবে না। এইবার কথাসাহিত্যে নূরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (শেয়ারে অ্যাওয়ার্ড) এবং প্রবন্ধ/গবেষণা বর্গে জুলফিকার মতিন (শেয়ারে নয়, এককভাবে) অর্জন করেছেন ‘বিজয়’। এই তিনের বইপত্র খুঁজতে বেরোতে হবে এখন। তার আগে অভিনন্দন জানাই নির্বিশেষে সবাইকে, অ্যাকাডেমিঅ্যাওয়ার্ড যারা পেলেন এবং যারা পাবার লাগি দৌড়ঝাঁপ করলেন সবাইকে। ফেইলার ইজ দি পিলার অফ সাক্সেস, স্মর্তব্য। অলমিতি।
খোঁজপাত্তা / ১. উপপরিচালকের চুরি; ২. মহাপরিচালকের চুরি; ৩. বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩
- প্রকাশ্য সন্ধ্যায়, শীতে - January 4, 2025
- মর্মস্পর্শী মিসকিনদের দেশে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড - January 1, 2025
- যেহীন আহমদ, অনেক অনেক দিনের পরে… - December 12, 2024
COMMENTS