বিয়িং জন মাল্কোভিচ || সাব্বির পারভেজ সোহান

বিয়িং জন মাল্কোভিচ || সাব্বির পারভেজ সোহান

How often we see, watch or experience a film like Being John Malkovich ? Have we seen any film like that before? Perhaps or most probably the answer would be no & from my side the answer is a big NO!

সিনেমার গল্প শুরু হয় ক্রেইগ নামক এক পাপেটশিল্পীকে কেন্দ্র করে। ক্রেইগ নিতান্ত একজন ভাঁড় পাপেটার নয়। পাপেটের মাধ্যমে সে তুলে ধরে ব্যক্তিমানবের অন্তর্দ্বন্দ্ব, মানবীয়-জৈবিক দ্বিধা। একদিক দিয়ে পাপেট তার কাছে শিল্পমাধ্যম, আরেকদিক দিয়ে এই পাপেট সে নিজে। তার পাপেট তার চিন্তা, চেতনা, কামনার প্রকাশ; — অবয়বে ও প্রকাশভঙ্গিমায়।

ক্রেইগের স্ত্রী লোটে। ঘরভর্তি জন্তুজানোয়ার নিয়ে তার জগৎ। পাপেট আর জন্তুজানোয়ারে ভরা অদ্ভুত এক চিড়িয়াখানায় ক্রেইগ আর লোটেই যেন প্রকৃতপক্ষে বহিরাগত। বিশেষত এক শিম্পাঞ্জির প্রতি লোটের সন্তানসুলভ অস্বাভাবিক স্নেহ ও যত্ন স্বভাবতই ক্রেইগ-লোটের অসুখী যৌনজীবন সম্পর্কে আলোকপাত করে; যা গোটা সিনেমা জুড়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি চরিত্রের যৌনতা এবং দ্বিধান্বিত মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা এই চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ শিকড়ও বটে।

পাপেট আর্থিক দিক থেকে যুৎসই মাধ্যম না-হওয়াতে ক্রেইগ নতুন চাকরি নেয় জনাব লেস্টারের প্রতিষ্ঠানে, যা অবস্থিত 7½ ওরফে সাড়ে-সাত তলায়! অস্বাভাবিক নিচু ছাদ আর নিচু ছাদের পেছনের হাস্যকর অথচ মোটিফধর্মী ইতিহাসের এই সাড়ে-সাত তলাতেই তার পরিচয় ঘটে আরেক নারী ম্যাক্সিনের সাথে। ফিল্ম নোয়া ঘরানার ‘ফিম ফ্যাটাল’-এর মতোই এই ম্যাক্সিন, যার প্রতি স্বভাবতই আকৃষ্ট হয়ে পড়ে ক্রেইগ।

হঠাৎ একদিন ক্রেইগ আবিষ্কার করে তার অফিসরুমে আছে ছোট্ট একটা দরজা, যার পেছনে সুড়ঙ্গের মতো পথ। এই দরজা তথা পোর্টালে প্রবেশের পর ক্রেইগ পৌঁছে যায় অন্য এক জগতে, — স্বয়ং জন মাল্কোভিচের (আধুনিক আমেরিকান চলচ্চিত্র ও থিয়েটারের গুরুত্বপূর্ণ এবং পরিচিত অভিনেতা) মস্তিস্কে, অস্তিত্বে, কায়ায়; — যা ক্রমশ সূত্রপাত ঘটায় ক্রেইগ, লোটে, ম্যাক্সিন, মাল্কোভিচের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত দ্বান্দ্বিক যৌনতা, মনস্তত্ত্ব, অশান্ত-অস্থির-অসংজ্ঞায়িত অস্তিত্বের; — যা ক্রমশ প্রবেশ করে জটিল থেকে জটিলতর অথচ অত্যন্ত স্বতন্ত্রভাবে অভিনব, উত্তেজক, চমকপ্রদ, paradoxical স্তরে; — যা কেবলমাত্র বিরক্তিকর তথাকথিত absurd film style নয়, বরং genre beyond genre-এর উৎপত্তি ঘটায়।

jhon malkovichচার্লি ক্যফমান — আধুনিক চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম মেধাবী, স্বতন্ত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ চিত্রনাট্যকার। ক্যফমানের চিত্রনাট্য ব্যতীত এই চলচ্চিত্র অসম্ভব ছিল! স্থান-কাল ও দৃষ্টিকোণের স্বাভাবিক ও পরিচিত মাত্রাকে ভেঙে ফেলে ক্যফমান আমাদেরকে নিয়ে যান অভূতপূর্ব এক জগতে, তা এতটাই তীব্র, স্পষ্ট এবং তীক্ষ্ণ যে আমাদের মনে, অন্তত আমার মনে একবারও প্রশ্ন জাগে না যে এই-যে সাড়ে-সাত তলায় পোর্টালের মধ্য দিয়ে জন মাল্কোভিচ হয়ে যাওয়া ১৫ মিনিটের জন্য তা কতটা বাস্তব; এমনকি যখন জন মাল্কোভিচ ক্রেইগ হতে শুরু করে তখন তা যেন আরো স্বাভাবিক, সত্য বলে মনে হয়। ক্যফমান প্রশ্ন তোলেন, পাপেট খেলেন আমাদের চারপাশের বাস্তব জগতের বর্তমান, অস্তিত্বশীল মানুষগুলোর আদি, অকৃত্রিম, বুনো, একান্ত মানবীয় কামনা, বাসনা, আকাঙ্ক্ষার সুতো দিয়ে; — যে-খেলার শেষ অথবা শুরু খুঁজতে যেতে হয় আমার আপনার সজ্ঞা-প্রজ্ঞার অবয়বে ক্রিয়াশীল সম্পূর্ণ নতুন এক জগতে; — যে-জগতে কেউ বেঁচে থাকতে চায় অনন্তকাল, কেউ-বা আবার শারীরিক অথবা বিক্ষিপ্ত মানসিক বৈকল্যের তাড়নায় রক্তমাংসের মানুষকে শিম্পাঞ্জির সাথে একই খাঁচায় বন্দী করে; — যে-জগতে শিল্প, শিল্পী, আদিম রিপু ছোঁয় চূড়ান্ত স্বাভাবিক অসহায়ত্বের আয়নায় বিমূর্ততা, নিরর্থকতা, উন্মত্ততার সীমানা; — যে-জগতে প্রশ্নবিদ্ধ হয়, উত্তর খোঁজে ক্রেইগ, লোটে, ম্যাক্সিন এবং স্বয়ং জন মাল্কোভিচ; — যে-জগতে ক্রেইগ ও লোটে একই সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে ম্যাক্সিনের উপর; — যে-জগতে একমাত্র স্বাভাবিক প্রাণী মনে হয় Handheld Shaky Video Style-এ দেখতে-পাওয়া শিম্পাঞ্জির দলকে; — এ-জগৎ নিউরনে অনুরণনের, দহনের, বিষণ্ণতামাখা রহস্যময় অভিযানের।

অত্যন্ত অদ্ভুত ও স্বকীয় ভঙ্গিমার স্পেসের ব্যবহারের ফলে এই চলচ্চিত্রের সিনেমাটোগ্রাফি কেবলমাত্র নিতান্ত নির্মাণশৈলীতে সীমাবদ্ধ থাকেনি, — তৈরি হয়েছে এই সিনেমার একান্ত নিজস্ব ভাষা, কবিতাকে ছুঁয়েছে যা প্রতিটা ফ্রেমে। একই কথা খাটে Apocalypse Now, The Conversation, A Clockwork Orange, Tree Of Life, Taxi Driver, In The Mood For Love, Mulholland Drive, Mirror-এর মতো চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে। চলচ্চিত্রের নিজস্ব ভাষা! — যে-ভাষা কথা বলে ফ্রেমে … ফ্রেমের বাইরে! — আমাদের চিন্তার জগতে।

আবহ সংগীত ও সম্পাদনার ক্ষেত্রে সাবলীলতা এবং পরিমিতিবোধ মুগ্ধ করার মতো। We hardly feel that there are any kind of actual editing or use of music; they are subtle, sublime, exotic. অভিনয়ে মন ছুঁয়ে যায় ক্যামেরন ডায়াজ। কী অসাধারণ ভঙ্গিমায় তিনি কেবল লোটে, কেবল লোটেই হয়ে গেলেন! এই সিনেমায় মুগ্ধতার আরেক নাম তাই ক্যামেরন ডায়াজ।

‘Being John Malkovich’ নিঃসন্দেহে Spike Jonze-এর অন্যতম সেরা অর্জন। এই সিনেমা কি ক্যফমান আর সে ছাড়া আর কারোর পক্ষে সম্ভব ছিল? সম্ভবত না। চলচ্চিত্রের এই স্বোপার্জিত যাত্রা তাই আমার কাছে এক অসংজ্ঞায়িত, রহস্যময় অথচ তীব্র, স্পষ্ট, পরম আরাধ্য কোনোকিছু; যার জন্য বারবার ফিরে যেতে হয় মেটামরফোসিসের গ্রেগর সামসার কাছে, মোপাঁসার হোরলায়, কামুর কপাটে, লালনের সুরে, মরিসনের The End-এ অথবা স্বয়ং নিজের মাঝে!

 

Film Title: Being John Malkovich ।। Released Year: 1999 ।। Genre: Comedy, drama, fantasy ।। Duration: 1h 52 min ।। IMDb Score: 7.8/10 ।। Director: Spike Jonze ।। Stars: John CusackCameron DiazCatherine KeenerOrson BeanMary Kay PlaceJohn Malkovich ।। Music Score: Carter Burwell ।। Net profit approximately $ 32.4 million

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you