‘ব্রেখটিয়ান মুড অফ রেজিস্ট্যান্স’ বলে একটা কথা আছে ক্ষমতাশাস্ত্রে। ক্ষমতাধরের বিরুদ্ধে ইনায়েবিনায়ে প্রতিরোধ জারি রাখা। প্রথম আলো গত পঁচিশ বছর ধরেই ক্রমাগতভাবে এই রাজনীতি করে আসছে। এটি যদিও বাংলাদেশের সবচে ইনফ্লুয়েন্সিয়াল মিডিয়া, কিন্তু একটা শক্তিশালী এবং বেপরোয়া সরকারের সাথে লড়াই করার ক্ষমতা এর নাই। ফলে তাকে নানারকম গলিঘুপচি দিয়ে চলতে হয়। চামড়াও বাঁচাতে হয়, আবার কাজটাও করে যেতে হয় পেশাদারভাবে। ফলে আপনার কাছে ‘সাহসী’ সাংবাদিকতার যে সংজ্ঞা — প্রথম আলো অনেক সময় সেই মাপে পড়ে না। আবার, সরকারের কাছে ‘সুশীল’ মিডিয়ার যে সংজ্ঞা — প্রথম আলো সেই মাপেও পড়ে না। সে একটা ইন-বিটুইন। মাঝবরাবর থাকে।
এভাবে প্রথম আলো সরকার ও তার পাঠককে বিভিন্নসময় একটা দ্বিধার মধ্যে রাখে। পত্রিকাটির ব্যাপারে তাই কারো পক্ষেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হয় না। ফলে, নানারকম রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্লকেড-ব্যারিকেড দিয়ে রাখলেও সরকার যেমন প্রথম আলো বন্ধ করে দেয় না, আবার হাজার রকমের নিন্দা-সমালোচনা জারি রাখার পরেও বেশিরভাগ লোকে প্রথম আলোই পড়ে।
জীবনানন্দ দাশের কবিতায় সুবিনয় মুস্তফী নামক একটি চরিত্র আছে, যে কিনা একই সাথে বেড়াল আর বেড়ালের মুখে থাকা ইঁদুরকে হাসাতে পারত। প্রথম আলো হচ্ছে সেই সুবিনয় মুস্তফী, যার নড়াচড়ায় বেড়াল ও বেড়ালের মুখে-থাকা ইঁদুর উভয়েরই গোস্বা হয়। তবু তারা সুবিনয় মুস্তফীর কাছেই ফিরে ফিরে আসে। কারণ উভয়েই বিলক্ষণ জানে, প্রথম আলোই বাংলার শেষ স্বাধীন লিবারাল মিডিয়া।
সুমন রহমান রচনারাশি
গানপারে ম্যাগাজিন ও অন্যান্য প্রকাশনার রিভিয়্যু
- অক্টোবর নয় || তুহিন কান্তি দাস - October 9, 2025
- মায়ের চরণে মেমোয়ার - October 7, 2025
- সাধুসঙ্গ ও সাধনসংগীত || বিমান তালুকদার - October 3, 2025
COMMENTS