৪৭

৪৭

একটা জাড্য চলে এসছে দেখবেন দুনিয়ায় অ্যাকশন্ থ্রিলার ধাঁচের ম্যুভিগুলোতে, একটা আবদ্ধ জড়তা, চেনা ন্যারেটিভের বাইরে বেরোনো হচ্ছেই না আখ্যান কিংবা ছায়াছবিগত অন্যান্য কারিকুরির। ঘুরেফিরে সেই মিত্র-শত্রু, খোঁজতালাশ ও খোয়ানো, কন্ট্রাক্ট কিলিং ইত্যাদি। বিশেষ ভালো হলে এরই মধ্যে একটু ট্যুইস্ট। ব্ব্যাস্। তদুপরি থ্রিলারে সেক্স অ্যান্ড অবধারিত ভায়োলেন্স, অনিবার্য বৈশ্বিক চক্রান্ত ও চক্রভেদ, গৎবাঁধা সাস্পেন্স। বড়জোর সাই-ফাই পাঞ্চ করা। আজকাল আবার লিনিয়ার ন্যারেটিভের ভিতরে সাই-ফাই ইঞ্জেক্ট করে দিয়ে একটা জাতে-উঠানোর খায়েশে জাত-খোয়ানো না-নৌকা না-জাহাজ দশা আংরেজি ফিল্মি ইভেন্টগুলোতে রেগ্যুলার দেখা যায়। সেইসঙ্গে যুক্ত রয়েছে ড্যান্ ব্রাউনের সেই ভিঞ্চিকোড কায়দায় ডিসাইফারের একটা কারবার, এনকোডিং আর ডিকোডিং ইত্যাদির কমন্ কয়েকটা রাস্তা। তাবৎ ম্যুভিমেইকাররা যেন উম্বের্তো একো মহাশয়ের উপন্যাসের পাঁড় পড়ুয়া। আর সবাই যেন বন্ডের সুপারহিউম্যান্ ক্যারিশ্মার জব্বর ভক্ত। অথবা এমআই অ্যাজেন্ট হান্টের। জেমস বন্ড আর ইথান হান্ট থেকে ক্যারেক্টারগুলো খুব-একটা আলাদা প্রায়শ হয় না। আমাদের অকালপ্রয়াত জসিম বা মান্নাকে কেমন করে টেক্কা দিবেন উনারা?

তা বাছা, বুঝতে তো হবে, কারখানায় একবছরে ডেলিভারি হয় হাজারেবিজারে সিনেমাশিশুর, সবাই সমান সবল সুপুষ্ট হবে এমন আশা করা ভালো তবে আশাপূরণ হওয়া ন্যাচারাল্ না, বিকলাঙ্গ বলি কিংবা ডিফ্রেন্টলিঅ্যাবল্ ছবিছায়াগুলোতেও উপভোগ্য অনেক অ্যাস্পেক্ট থাকে। ডেফিনিটলি। কিন্তু সব প্রসঙ্গের অনুপুঙ্খ ধরে আলাপ করা তো সম্ভব হয় না। কাজেই ডিস্কাশন্ বলতেই ইন্ অল্ সেন্সেস্ খেয়ালি একটা ব্যাপার। মানে, একটা জাজমেন্ট অলক্ষেই সেরে নেয়া হয় লিখতে বসার আগে যে এইটা ভালো হোক মন্দ হোক আলাপযোগ্য ম্যুভি এবং এইটা নিয়া আমি লিখব। ইত্যাদি। কিন্তু আখেরে হয়তো থোড়-বড়ি-খাড়া ছায়াছবি এইটাও।

hitman 2

সন ২০১৫-তে একটা ছায়াছবি দেখে বেশ অনেকটাই ডিফ্রেন্ট মনে হলো। ওই থ্রিলার অ্যাকশন্ ম্যুভি। ‘হিটম্যান্ : অ্যাজেন্ট ফোর্টিসেভেন্’ ম্যুভির নাম। ত্রিদেশীয় প্রযুক্তিমৈত্রী এবং শত্রুতার অ্যাকশন্ থ্রিলার ম্যুভি। ব্রিটিশ-অ্যামেরিক্যান্-জার্ম্যান্ ভেঞ্চার। ব্যাকস্টেজ্ কাজগুলো থেকে শুরু করে ক্যারেক্টার ডিস্ট্রিবিউশন্, কাহিনিবিন্যাস, অভিনয়শিল্পী নিয়োজিতকরণ সবখানেই ত্রিমিলিত উপস্থিতি ও উপস্থাপনা আমরা লক্ষ করি। কিন্তু এই ধাঁচের এবং ছাঁচের সিনেমা আগেও হয়েছে। এইটা তাহলে, ‘অ্যাজেন্ট ৪৭’, ভিন্ন কোন জায়গায়? এর গতি, স্পিড, ছন্দোবদ্ধ প্রযুক্তিপ্রয়োগ। গতিঋদ্ধ ম্যুভি নির্মাণের সময় একটা ব্যাপার ঘটে যে, ম্যুভিটাকে এক্সেসিভ লাউড করে ফেলা হয়; সেই বিচ্যুতিটা ‘অ্যাজেন্ট ৪৭’ অ্যাভোয়েড করতে পেরেছে। এইটা লাউড না মোটেও।

hitman 2গল্পের ধর্তাই কিছুটা রাখিয়া যাওয়া যাক এখানে। জেনেটিক্যালি অত্যুন্নত বুদ্ধিমত্তা আর দক্ষতাসম্পন্ন যোদ্ধা বা সুপারসোলজার বানানোর প্রযুক্তি প্রণয়ন ও বেহাত হয়ে যাওয়া নিয়াই সিনেমাখ্যান গড়িয়েছে। ইন্টার্ন্যাশন্যাল্ কন্ট্রাক্টস্ অ্যাজেন্সি শিরোনামের এক অসরকারি সংস্থায় এহেন প্রযুক্তি ভীষণ দরকার। হাফডান্ এক্সপেরিমেন্টের একটা পর্যায়ে সেই-রকম দুই তীক্ষ্ণ দক্ষতাসম্পন্ন সোলজার তৈরিও হয়েছিল পরীক্ষণ পোস্টপোন্ড হবার প্রাক্কালে। এই দুইজনই আমাদের নায়ক-নায়িকা। বারকোড আছে উভয়ের মাথার পেছনে। অ্যাজেন্ট ৪৭ এবং অ্যাজেন্ট ৯০। রবীন্দ্রনাথের ‘রক্তকরবী’ মনে পড়িয়ে দ্যায় কি? বিশু পাগলার ডায়লগ ইয়াদ হয়? ইনডিড, উচ্চতর প্রযুক্তির জয়গাথা গাওয়া ছায়াছবিগুলোতে ট্যাগোরের ‘রাজা’ আর ‘রক্তকরবী’ বিভিন্ন উসিলায় উঁকি দিতে দেখি; ‘পিঙ্ক ফ্লয়েড’-এর ‘ওয়েলকাম টু মেশিন’ গানটাও মনে পড়ায় মাঝেমধ্যে; সেইটা আমার/আমাদের সমস্যা, ব্যক্তিগত, ম্যুভির বা পরিচালকের সঙ্গে এর কোনো যোগসূত্র অতীব ক্ষীণ। অথবা, আমরা তো বলব, অতটা ক্ষীণও হয়তো নয়।

hitman 4জেনেটিক্যালি প্রোগ্র্যামড হিউম্যানমেশিন্, বলা উচিত মেশিনের ধারণা পাল্টানো হিউম্যান্ এবং হিউম্যানের ধারণা পাল্টানো মেশিন্, গোটা ছায়াছবিতে এতটাই মনুষ্যস্বাভাবিক কর্মকাণ্ড করেছে যে এরা আমাদের আবেগের স্তরান্তরে ছুঁয়ে গেছে নিজেরা নিরাবেগ থেকে। এই জায়গাটাই সিনেমাটার ওভারওয়েল্মিং দিক মনে হয়েছে আমার কাছে । এর আগে, এর বহু বহুকাল আগে, ‘টার্মিনেটর টু’ ম্যুভিটাতে মেশিনের মন ছুঁয়েছিল দর্শকভোক্তাদের হৃদি। বিশেষভাবেই থ্রিলার ম্যুভির নায়ক ক্যারেক্টারে একটা আলাদা বাতাস এনেছেন এই ‘হিটম্যান’ সিনেমার ৪৭ চরিত্ররূপী রুপার্ট ফ্রিন্ড। ক্যুল্, ইম্পাল্সিভ, কন্টেমপ্লেইটিভ। এলিট অ্যাস্যাসিন্ হিশেবে এর আগে এই হিমশীতল ধ্যানস্থ হননকৃত্যের অভিনয়টা ভালো ফুটিয়ে আসছিলেন একচেটিয়াভাবে জেইস্যন্ স্ট্যাথাম। বা আরেকটু পরিণত বয়সের ব্রুস্ উইলিস্। এই কাতারে যুক্ত হলো রুপার্ট ফ্রিন্ড।

২০০৭ সনে একটা ‘হিটম্যান্’ হয়েছিল, সমনামী জনপ্রিয় ভিডিয়োক্রীড়া থেকে ছায়াসূত্র সংগ্রহ করেই সিনেমার গল্প, যদিও কল্পনাভাগ তথা ছায়াছবি নির্মিতিতে ফ্রিডম অনেক বেশি নেয়া হয়েছে সেই ‘হিটম্যান কোডনেইম্ ৪৭’ নাম্নী ক্রীড়াসামগ্রীর চেয়ে, ২০১৫-মাঝামাঝি রিলিজ্-হওয়া সেকন্ড সিক্যুয়্যালে অবশ্য কলাকুশলী ভিন্ন শুধু চিত্রনাট্যকার স্কিপ্ উডস্ ছাড়া। আর ম্যুভিটি ডিরেকশন্ দিয়েছেন অ্যালেক্সান্দার বাখ, আগে টিভিসি বানাতেন জানা যাচ্ছে, এইটা বাখের ম্যুভিডিরেকশনে ডেব্যু।

যদিও ক্রিটিক্যাল্ অ্যাক্লেইমগুলো ম্যুভিটার পক্ষে রেস্পোন্সিভ হয় নাই, নিগ্যাটিভ রিভিয়্যু হয়েছে ‘রটেন্ টোম্যাটো’ থেকে শুরু করে ‘মেটাক্রিটিক্’ বা ‘সিনেমাস্কোর’ সর্বত্র, তবে এইটা যে উপভোগ্য ম্যুভি কথাটা কেউ উল্লেখে কার্পণ্য করে নাই। প্রিডিসেসর ম্যুভিমালার সঙ্গে এর তুলনা করে একে দুর্বল বলা হয়েছে শুধু। বর্তমান প্রতিবেদক শুধু প্রোট্যাগ্যনিস্টের, মেইল্ এবং ফিমেইল্ উভয়েরই, ভাবলেশহীন ভাবাবেগের ফেশিয়্যাল্ অভিনয়কলার জন্য ম্যুভিটাকে একগাদা মার্ক্স দিয়া ডিস্টিঙ্কশ্যন্ পাইয়ে দিতে চেয়েছে। রুপার্ট ফ্রিন্ড এবং হান্না ওয়্যার দুইজনকেই নেক্সট দিনগুলোতে দেখে যাব উইথ অ্যাটেনশ্যন্।

Film Title: Hitman: Agent 47 ।। Released Year: 2015 ।। Genre: ActionAdventureCrime ।। Duration: 1h 36min ।। IMDb Score: 5.7/10 ।। Director: Aleksander Bach ।। Stars: Rupert FriendHannah WareZachary QuintoCiarán HindsThomas KretschmannAngelababy  ।। Music Score: Marco Beltrami ।। Net profit approximately $82.3 million

প্রতিবেদনপ্রণেতা : জাহেদ আহমদ

… …

পরের পোষ্ট
আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you