বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে ইতালো ক্যালভিনোর দুইটা ইন্টারভিউ (১)
বই : দ্য ইউজেস অফ লিট্রেচার, ১৯৮০
টেলিভিশনে দেয়া সাক্ষাৎকারের উপর ভিত্তি করে ল্য’ প্রদো লিত্তেরারিও (রোম)-এ প্রকাশিত
জানুয়্যারি-মার্চ ১৯৬৮
বাংলায় অনুবাদ : শফিউল জয়, ২০২০
ইন্টারভিউয়ার : আপনার মতে, আজকের দিনে বিজ্ঞানের সাথে সাহিত্যের রিলেশ্যনটা কী?
ক্যালভিনো : কিছুদিন আগে রোলাঁ বার্থের একটা আর্টিকেল পড়লাম ‘সাহিত্য বনাম বিজ্ঞান’ নামের। বার্থ মনে করেন, সাহিত্য হচ্ছে ভাষার ভাষা নিয়ে, এর নিবিড়তা এবং স্বাধীন অস্তিত্ব সম্পর্ক নিয়ে তার নিজের এক ধরনের সচেতনতা। সাহিত্যের কাছে ভাষা কখনোই ট্র্যান্সপ্যারেন্ট কিছু না, বা অন্যভাবে বলতে গেলে — ভাষা শুধু ‘মিনিং’, ‘ফ্যাক্ট’, ‘থট’ বা ‘ট্রুথ’ প্রকাশের মিডিয়াম না। সোজা কথায়, ভাষা নিজেকে ছাড়ায়া কখনো অন্য কিছু হয়ে ওঠে না। অন্যদিকে, বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ উল্টা। বিজ্ঞান মনে করে, ভাষা হচ্ছে এমন একটা নিরপেক্ষ টুল যেটা সবসময়ই ভাষার বাইরের কিছু নিয়ে বলতে চায়, ভাষার থেকে আলাদা কিছু-একটা বোঝানোর চেষ্টায় থাকে। এটাই বিজ্ঞান আর সাহিত্যের আসল তফাত। এইভাবে আগায়া বার্থ বলতে চান, সাহিত্য বিজ্ঞানের থেকেও বেশি সায়েন্টেফিক কারণ সাহিত্যের বিজ্ঞানের ওই নিরপেক্ষতার ভড়ংটা নাই। লেখালেখির ক্ষেত্রে সাহিত্য এর সাথে সম্পর্কহীন কিছু বলার দায় নেয় না। এবং সাহিত্য এমন কোনো সত্য প্রকাশের বাহাসে যায় না যেটা লেখালেখি নামের আর্টের সীমানার বাইরে। ফলে বিজ্ঞানের ভাষা বিজ্ঞান হয়ে উঠতে চাইলে তা অবশ্যই সাহিত্য হয়ে উঠতে বাধ্য এবং শেষ পর্যন্ত তাকে ভাষার ভেতরে মজতেই হয়। তবে ভাষায় মজার এই দাবিটা এখনো সাহিত্যের একক অধিকার হিশাবে গোণা হয়ে থাকে।
কিন্তু আজকের দিনের বিজ্ঞানকে কি এমন অ্যাবসোলুট কোড অফ রেফ্রেন্সের প্রতি ঈমান আনা দিয়ে ডিফাইন করা যায়? না কী বিজ্ঞান এরই মধ্যে এর ভাষাতাত্ত্বিক কনভেনশকে ক্রমাগত প্রশ্ন করার ভেতর দিয়েই আগাচ্ছে? মূলত বিজ্ঞান নিয়ে বার্থের প্রস্তাবনা বিজ্ঞানের প্রচলিত ধারণার থেকেও কমপ্যাক্ট। আর এর মধ্যে ম্যাথমেটিক্সকে টানলে আর্গুমেন্টকে ট্রুথ হিশাবে তার নিজের ঊর্ধ্বে থাকার যে প্রক্রিয়ার দিশা পাই, ওইটা প্রমাণ করে বিজ্ঞানের ফর্মুলেটিভ প্রসেসটাও নির্দোষ কিছু না। ওই প্রসেসকেও একটা ঘষামাজার ভেতর দিয়েই আগাইতে হয়।
উপরে বার্থের যে আর্টিকেলটার কথা বললাম সেটা কয়েক মাস আগে টাইমস লিট্রেরি সাপ্লিমেন্ট-এ ছাপানো হইছিল। এই ইস্যুটা ছিল কন্টিনেন্টাল ইউরোপের সাহিত্য নিয়ে। মূলত সাহিত্যের সাথে অন্য সকল ফিল্ডের রিলেশ্যনের আলাপই ছিল পুরা আয়োজনটার মূল উদ্দেশ্য। একই ইস্যুতে রেমো কিন্যু নামের আরেক ফ্রেঞ্চ লেখক বিজ্ঞান নিয়ে বাহাস করছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটা জায়গা থেকে। বয়সে কিন্যু বার্থের সিনিয়ার আর উনার কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ডটাও আলাদা। উনি মেইনলি রাইটার হইলেও ম্যাথটা উনার শখের জায়গা। আর দোস্তির জায়গাতে সাহিত্যের থেকে ম্যাথমেটিশিয়ানদের সাথেই উনার বেশি দহরম-মহরম। উনার আর্টিকেলটায় উনি বলার চেষ্টা করছেন, হিউম্যান সায়েন্সের ক্রমাগত ‘ম্যাথমেটাইজেশন’-এর কারণে এই যুগে ম্যাথমেটিক্যাল চিন্তাভাবনার হিউম্যানিস্টিক কালচারে একটা প্রভাব লক্ষণীয়। উনি উনার আরেক বন্ধুর সাথে মিলে উলিপো নামের দশজনের একটা দল বানাইছিলেন ম্যাথমেটিকো-লিট্রেরি রিসার্চের উদ্দেশ্যে। তেল কেল গ্রুপের লেখালেখি বা বার্থের কাঠখোট্টা অ্যানালিসিসের থেকে এই গ্রুপের আবহটা ছিল আলাদা। উনাদের মূল ফিচারটা ছিল প্লে আর বুদ্ধি ও কল্পনার অ্যাক্রোবেটিক্সকে ঘিরে। উলিপো আসলে আলফ্রেড জেরির স্মরণে প্রতিষ্ঠিত মকারি আর প্র্যাক্টিক্যাল জোকের ‘অ্যাকাডেমি’, যেটা কোলেজ দ্য প্যাতাফিজিকের একটা শাখা। ফলে এদের সংযোগটা কোনো হুদাই ঘটনা না। কোলেজ দ্য প্যাতাফিজিকের ম্যাগাজিন (সেমিক্ল্যান্ডেস্টিন) ‘সুবসিদিয়া প্যাতাফিজিকা’-তেই মেইনলি উলিপোর লেখাপত্র ছাপানো হয়। উনাদের বিষয়বস্তুর একটা নমুনা হইলো — প্রভসাঁ (ও দান্তে) কবিদের স্যাস্টিনায় মেট্রিকাল ফর্মে যে রাইম সিরিজ লেখা হইছে সেগুলার উপস্থিত ম্যাথমেটিক্যাল প্রবলেমের গবেষণা। উনাদের মতে, এই সিরিজটাকে স্পাইরাল হিশাবে হাজির করা সম্ভব।
আমার মনে হয় সাহিত্য বিষয়ক যে দুইটা সমস্যার কথা আমি হাজির করলাম এখানে, তা বর্তমান অবস্থাকে বেশ ভালোভাবেই খোলাসা করতে পারছে। মোটামুটি দুইটা পোলের ভেতরে আমরা দুলতেছি, সবাই না হইলেও অন্তত আমার কথা হলফ করে বলতে পারি। বলতে গেলে, এই দুই দিকই আমাকে টানে, এবং দোনোটার সীমাবদ্ধতা নিয়েই আমি সজাগ। একদিকে বার্থ আর তার শিষ্যরা, উনারা মূলত বিজ্ঞানের ‘শত্রু’ যারা চিন্তায় আর আলাপে বৈজ্ঞানিক প্রিসিশান নিয়ে অ্যাক্টিভ; অন্যদিকে কিন্যু আর উনার সায়েন্সবাডিরা — যাদের কথাবার্তা অনেকটাই ফাজিল টাইপের। উনারা চিন্তায় ও আলাপে ভাষা-ভাবের খামখেয়ালি আর পোল্টিবাজির ধর্না নেয়।
ইন্টারভিউয়ার : আপনি কিছুদিন আগে বলছেন, গ্যালিলিও নাকি গ্রেইটেস্ট ইতালিয়ান লেখক। কেন?
ক্যালভিনো : আপনি দেখবেন, যিবালদোনেতে লেপার্দি গ্যালিলিওর গদ্যকে একইসাথে এলিগ্যান্ট আর প্রেসাইজ বলে তারিফ করছেন। লেপার্দি তার ইতালিয়ান গদ্যের অ্যান্থলজিতে গ্যালিলিওর যে প্যাসেজগুলা নিছেন, সেগুলার দিকে চোখ দিলেই বুঝতে পারবেন উনি লেপার্দির ভাষার কাছে — এমনকি কবি হিশাবেও গ্যালিলিওর কাছে কতটা ঋণী। কিন্তু আগের কথায় ফিরে গেলে, গ্যালিলিও ভাষাকে নিরপেক্ষ টুলের চাইতে এক ধরনের সাহিত্যিক সচেতনতা নিয়ে ব্যবহার করায় আগ্রহী ছিলেন। এই কমিটমেন্টটা থাকার কারণে তার ভাষাটাও হয়ে উঠছে আরও এক্সপ্রেসিভ, কল্পনাপ্রবণ — এমনকি লিরিক্যাল বললেও ভুল হবে না। গ্যালিলিও যখন চাঁদের কথা বলেন, সূক্ষ্ম সব ডিটেইলিঙের কারণে প্রথমবারের মতো চাঁদটা মানুষের কাছে চাঁছাছোলা বাস্তব হয়ে ওঠে। ফলে যখন চাঁদ ওঠে, গ্যালিলিওর ভাষার চাঁদটা আর বিমূর্ত কিছু থাকে না। ওই চাঁদ একটা ভাসাভাসা হাল্কামির ফিল দেয়। ফলে যে-কেউ সেই চাঁদের জাদুময় সাসপেনশনটার সাথে কানেক্টেড ফিল করতে পারে। এটা কোনো কোইন্সিডেন্স না যে গ্যালিলিও কসমিক-চন্দ্রগ্রস্ত কবি অ্যারিওস্তোকে পছন্দ করতেন। উনার নিজের লেখাতেও উনি অ্যারিওস্তোর লেখার দোহাই দিছেন (গ্যালিলির লেখাতে আপনি টাসোকে নিয়েও উনার কমেন্ট পাবেন। তবে অ্যারিওস্তোর প্রতি তার আন্ধা টানের কারণে সেগুলা খুব কাজের আলাপ হয়ে ওঠে নাই)। গ্যালিলিও দুনিয়াকে যেভাবে দেখতেন, সেটা আসলে লিট্রেরি-কালচারের ভেতর দিয়েইউঠে আসা– এমনকিউনিযখন বিজ্ঞানী হিশাবে কথা বলতেছেন সেইমুহূর্তেও। ফলে অ্যারিওস্তো থেকে শুরু করে গ্যালিলিও হয়ে লেপার্দি পর্যন্ত আসতে আসতে যেই রাস্তাপাড়ি দিতে হয়, সেটা আমাদের মেইনস্ট্রিম লিট্রেচারের অন্যতম রাস্তা হিশাবেই ধরা যায়।
আমি যখন মন্তব্য করছিলাম গ্যালিলিও এখনো শ্রেষ্ঠ ইতালিয়ান লেখক, কার্লো ক্যাসসোলা লাফায়া উঠছিল, ‘‘কী? আমি তো মনে করতাম দান্তে!’’ আচ্ছা, আপনাকে ধন্যবাদ সেটা জানানোর জন্যে। প্রথমত, শ্রেষ্ঠ বলতে আমি বুঝাইছি শ্রেষ্ঠ ‘গদ্যকার’, ফলে শেষমেশ প্রশ্নটা গিয়ে দাঁড়ায় ম্যাকিয়াভ্যালি অথবা গ্যালিলিওতে। এই জায়গায় আমি অবশ্য ধরা খায়া যাই, কারণ আমি ম্যাকিয়াভ্যালিরও বিশাল ভক্ত। সেক্ষেত্রে যেটা বলতে পারি তা হলো, আমার কাজ এই মুহূর্তে যে ডিরেকশানে আগাইতেছে সেদিক থেকে দেখলে গ্যালিলিওর আঁটসাঁট ভাষা, বৈজ্ঞানিক-কাব্যিক কল্পনা আর অনুমান করার বিশাল ক্ষমতার কারণে আমার ওর দিকে ঝুঁকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্যাসসোলা বলবে — গ্যালিলিও তো বিজ্ঞানী, লেখক না। আমি মনে করি এই আর্গুমেন্ট অতটা আমলে নেয়ার দরকার নাই। দান্তের লেখাতেও গ্যালিলিওর লেখার মতো একটা ব্যাপার দেখতে পারবেন — আলাদা একটা কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ডের হওয়ার পরেও দান্তেও গ্যালিলিওর মতো একটা বিশাল এনসাক্লোপেডিক এবং কজমিক কাজ সৃষ্টির নেশায় বুঁদ হয়ে ছিলেন। এবং উনিও লিখিত শব্দ দিয়ে দুনিয়ার একটা ইমেইজ দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। গ্যালিলিও থেকে শুরু করে দান্তে পর্যন্ত ফলো-করা এই প্রবণতাটা ইতালিয়ান সাহিত্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য, যেটাকে আমরা বলতে পারি সাহিত্যকে দুনিয়ার ম্যাপিং হিশাবে হাজির করা, আমাদের ইলমের আন্ডারে যা আছে তার সবকিছুকে এর ভেতরে নিয়ে আসা। ইলমের অভিসারে এমন একটা বে’চ্যান জায়গা থেকে লেখালেখি করা যেটা শেষমেশ থিওলজিক্যল, ভাবপ্রবণ, জাদুময় বা এনসাইক্লোপেডিক হয়ে দাঁড়ায়। অথবা দেখা যায় সেটা ন্যাচ্রাল ফিলোসফি ঘরে চলে গেছে অথবা বিদিক এক রূপান্তরের সাক্ষী হয়ে গেছে। এই ট্র্যাডিশনটা সব ইউরোপীয় সাহিত্যেই আছে, কিন্তু আমি বলব ইতালিয়ান সাহিত্যের ক্ষেত্রে যে-কোনো প্রকারেই তা খুব ডমিন্যান্ট। ফলে আমাদের সাহিত্যের ধারাটা বাকিদের থেকে খুব আলাদা, খুবই জটিল কিন্তু একইসাথে নিখুঁতভাবে ইউনিক। গত কয়েক শতাব্দী ধরে এই ঝোঁক কিছুটা কমে আসছে, ফলে আমাদের সাহিত্যও তার আগেকার গুরুত্ব হারাইছে। হতে পারে এটা সেইসময় যখন ঝোঁকটাকে আবার আবিষ্কার করা জরুরি। আমাকে বলতেই হবে, রিসেন্টলি আমি যেভাবে লেখালেখি শুরু করছি, তাতে আমার কাছে ইতালিয়ান সাহিত্যের জরুরত আগেকার যে-কোনো সময়ের থেকে অনেক বেশি অপরিহার্য। মাঝে মাঝে মনে হয় যে রাস্তায় হাঁটতেছি, সেটা আমাকে ভুলে-যাওয়া ইতালিয়ান ঐতিহ্যের আসল পথের দিকে নিয়ে যাইতেছে।
ইন্টারভিউয়ার : আপনার শেষ বইগুলা পড়লে মনে হয় আপনার সিম্প্যাথি মানবজাতির থেকে সেলের (cell) দিকে বেশি, হৃদয়বৃত্তি থেকে অঙ্কের যোগবিয়োগের প্রতি আপনার টান। মানে, ভাবের থেকে মানসিক ঝোঁক দিয়ে আপনি নিয়ন্ত্রিত। এরকম কেন?
ক্যালভিনো : মানুষের চাইতে সেলের দিকে বেশি ঝোঁক — আসলেই কি তাই? কারণ আমার কজমোকমিক নিয়ে এর ঠিক উল্টা অভিযোগটা আনা যায়; মানে সেলকে দিয়ে এমনভাবে কথা বলানো যেন তারা মানুষ। মানুষের ফিগার আর ভাষাগুলাকে প্রাইমিভাল ভয়েডে নতুনভাবে দেখানো তো অ্যান্থ্রপমরফিজমের পুরানা খেলা। যেসব লেখকরা আকাশ ‘হাসতেছে’ বা সমুদ্র ‘রাগ করছে’ বলে ল্যান্ডস্কেপকে হিউম্যানাইজ করতেন, অনেক আগেই রব-গ্রিয়ে সেইসব লেখকদের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনায় নামছিলেন।
আমি অ্যান্থ্রপমরফিজমকে স্পষ্টতই একটা চূড়ান্ত মৌলিক লিট্রেরি প্রোসিজ্যার হিশাবে সম্পূর্ণ মেনে নিছি। এই প্রোসিজ্যার তো সাহিত্য মিথিক্যল হওয়ার আগেই আদিম মানুষের বিশ্বব্যাখ্যার সাথে লিঙ্কড ছিল — যেটাকে অ্যানিমিজম বলা হয়। তো, এমন না যে রব-গ্রিয়ের ব্যাখ্যা আমার মনে ধরে নাই। লেখালেখিতে যে-পথের পথিক হয়ে উঠছি সেটা গ্রিয়ের ঠিক বিপরীত। আমার পথটা এক পজিটিভ ডেলিরিয়াম যেখানে হিউম্যান ফিগারের বাইরে দুনিয়া নিয়ে চিন্তা করার ইমপসিবিলিটিতে আমার আস্থা নাই। আরও গোছায়া বললে, এই আজব ভেংচানি আর আবোলতাবোল নিয়েই আমার কারবার। মানুষের চূড়ান্ত আলসেমির, তার বোঝাবুঝির আর তার চিন্তার ফুটানির যে ইমেইজটা আছে, আমার এই ঝোঁকটা সেগুলাকে একটা পরীক্ষা ভিতর ফেলে দেয়। এই পরীক্ষা হচ্ছে তার দেখার সীমানা, তার নাক গলানোর সীমানাকে বাড়ায়া এমন এক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া যেখানে গেলে সে কে এই নিয়ে তার আর কোনো দিশা থাকবে না।
আমার মতো যেসব লেখকেরা আছেন যারা সাইকোলজিতে বা অনুভূতির বিশ্লেষণে বা কোনো অন্তর্দৃষ্টিতে আগ্রহী না, তারা সেই হরাইজনের দিশা পান, যেই হরাইজন ক্লিয়ার-কাট রক্তমাংসের চরিত্র দিয়ে নিয়ন্ত্রিতদের বা যারা মানুষের মনের গভীরতা নিয়ে কারবার করে — তাদের দুনিয়া থেকে কোনো অংশেই কম বিস্তৃত না। মানুষের বিচিত্র নকশাদারি, তার সম্পর্কের বহুমুখী খেলা, কার্পেটের উপর স্পষ্ট-হয়ে-ওঠা তার সেটিং-এর বিচিত্র সব আঁকিবুকি আমাকে গভীরভাবে টানে। প্রতিটা লোমের গোঁড়া থেকে মানবিকতার ঘাম বের করার চাপ নিতে না চাইলেও যা মানবীয়, আমার পক্ষে স্বাভাবিক কারণেই তা এড়ানো অসম্ভব। যে-গল্পগুলা আমি লেখি সেটা মানুষের ব্রেইন থেকেই বের হয়। এবং সেটা করতে গিয়ে আমার আগে আসা হিউম্যান কালচারগুলার চিহ্নের কম্বিনেশনেরই আশ্রয় নেই। টি জিরো দিয়ে শেষ হওয়া আমার রিসেন্ট গল্পগুলা আমি খালি ডিডাকটিভ রিজনিং ব্যবহার করে বর্ণনার চেষ্টা করছি। আমার ধারণা, অ্যান্থ্রপমরফিজম নিয়ে এই হলো আমার শেষ কসরৎ। অথবা বলা যায়, বিশেষ একপ্রকারের অ্যান্থ্রপমরফিজমের কসরতের ইতি টানলাম কেননা যেহেতু মানুষকে প্রেজেন্ট করার কেতা তো নির্দিষ্ট একপ্রকারের সম্পর্কসিস্টেম আর ফাংশান দিয়েই শুধুমাত্র ডিফাইন করা হয়। আর এই উপায়ে প্রেজেন্ট করা মানুষেরাই আমাদের চারপাশের প্রতিদিনকার ভালো অথবা মন্দের দুনিয়ায় সয়লাব হয়ে আছে।
… …
- বিজ্ঞান ও সাহিত্য নিয়ে ইতালো ক্যালভিনো ১ || শফিউল জয় - July 21, 2020
- ইন্ডি মিউজিকের ঢাকা : বঙ্গাব্দ ১৪২৫ || শফিউল জয় - June 7, 2018
- সাম্প্রতিক মেঘদল || শফিউল জয় - March 6, 2018
COMMENTS