ডিট-দেয়া জীবন
বাবা ছিলেন মাটির মানুষ, অল্পতুষ্টের এক বিরল সন্ত
মা সংসারের চাপে শাদা সবুজ ঘাস
যাপিত জীবনে সরল, বোঝেননি জগতের কঠিন জ্যামিতি
কাঁচা আইলে পাড়া না দিয়েই রেখে গেছেন কত তরতাজা স্মৃতি
সেই সাহসী জন্মদাগ ললাটে এঁকে কোনও-এক মানবজাতক
প্রতিদিন পেরোয় ঘাত আর প্রতিঘাতের বন্ধুর সড়ক
পথের নিরীহ ঘাস, দুর্মর বৃক্ষ, স্বাগত জানায় তাকে
দেড়হাত দূরের দৃষ্টিধারীরা লাই খেলে মিথ্যা সময়ের লগে
হিঙ্গি-নাই-বিলে তিতপুঁটির নাচ ভাল্লাগে না তার
ঐতিহ্যের ধনুক হাতে ছুটছে মধ্যদুপুর
পথের কোরাস বাজায় ঝলমলে ক্লান্তির সুর
ডিট-দেয়া জীবন নিয়ে কতদূর যাওয়া যায় আর
গিল্লা স্মৃতি নিয়ে হুঙ্কার দেয় কতশত ভাঁড়
সংসারজ্যামিতি
জোড়গড়ার মানুষ, দাইড় আর ছেইছই তার ঠিকানা
সকালের উঠোনে দাঁড়িয়ে
কতদূর দেখতে পারে সে দিগন্ত আকাশ
কতদূর হাঁটলে পরে
বুঝতে পারে জগজ্জ্যামিতি
ঘরগেরস্থির পৈঠায় অবহেলার দূর্বা আর ধুলো
ঝিকমিকি রোদের পরশে হয় পৌরাণিক ধূসর স্মৃতি
অভুক্ত পথিক বোঝে না জটিল নিয়ম, তালগোল-পাকানো অঙ্ক
বোঝে না দুপুরের ভাষা, সন্ধ্যার জ্যামিতি
হাটুরে বাবারা সদাই নিয়ে এলে
আলো জ্বলে পৃথিবীর ঘরে
সংসারের যতসব গহীন অন্ধকার উড়ে যায় দূরে
এ-সময়ের কবিতা
পোঁদে কাঠি দিয়ে ঘেউঘেউ চলে গেছে
হিংস্র কুকুরের দল
হিসাব মিলাতে বসে এখন কামড়াকামড়ি করে
কান্নার ঋণ মেটায় শুষ্ক হাসির উঠোনে
ধান্দামান্দা আর চান্দায় যায় না বেশিদূর এগোনো
নিজেদের অবিশ্বস্ত ছায়াও জানে সে-কথা; তবু…
তৃপ্তিতে ডালভাত খেয়ে প্রশান্তির ঘুম দেয় সরল মানুষ
বিস্মিত চোখ শিশিরভোরে দেখে, পৃথিবী বিশাল
পাতার হাহাকার
বসন্তপাতার মেয়ে মেঘের বোতলে জমা করে প্রেম
জানলার নীল প্রজাপতি তারে ওম দিতে চায়
পলাতক মাধবী দূরে দূরে থাকে, কাছেই আসে না
…তার বৃষ্টিস্বভাব, না ডাকলেও কেবল ঝরছেই অঝোর
অধরা পারদের মতো ঝরে গেছে কতশত ভোর
অভিমানে ছিটকে পড়ে গুড়ো গুড়ো হয়েছে রঙিন দুপুর
বোঝে না মেঘের ভাষা, দেখে না কিছুই
পিছনে তাড়া করে চৈতালি আর আফলাতুন বুই
পাতারা ধরতে জানে না বরষার জল
বাড়ছেই হাহাকার আর কান্না অতল
ছিতরিপড়া মুখ
সময় আর পথস্রোত একদিন মিশে যায় অনন্ত নদীতে
সেখানে লাই খেলে কতশত ছিতরিপড়া মুখ
সকরুণ হাসির তুফান ওঠে বিরান তীরে
পেরিয়ে ধু ধু মাঠ, শব্দহীন বনবাদাড়
আউড়্যা বালকের পিছু নেয় দলছুট ঘাসফড়িং
আগামী ভোরে খয়েরি শালিকের মুখে
তুলে দিতে চায় একপৃথিবী সকাল
তার সুরেলা ঠোঁটে নক্ষত্রপতনের গান
এক দুইন্যাই পিছিয়ে আছি
তাকিয়ে আছি আরেক দুইন্যাইর দিকে
বাদাইম্যা বালক আজ শ্রীহীন শালিকের সারথী
ভুলে গেছে সে হালটের বনেলা পথ আর গরুবারি দিন
বিদেশি বয়ার
পথে পথে বাজে গান; পথেরই নিরাভরণ নগ্নতায়
ছাদ ও রেলিঙে টানা চিকন সুতোয় ঝোলে হলুদ অন্তর্বাস
গীতালি গন্ধে খুলে যায় মগজের গিঁট
রাতের ক্লান্তি খেয়ে খোলা প্রান্তরে গান গায় অচিন বিদেশি বয়ার
ক্লান্তিহীন পথ বেসুরো হৃদয় অকালের বেভোতা মানুষ
হৃদয়ে আলোড়ন নেই, বোঝে না মরমি সংগীত
হৃদয়-ভেদ-করা বিদেশি বয়ারে ভেসে গেছে অফুরান কথা
বয়ালা বয়ার বোঝে জগতের নিঃশব্দ নিয়ম, দুপুরের ঝিকিমিকি নদী
নিজেকে হারিয়ে অকালে, নিজেরেই খুঁজে ফেরে নিরবধি
ক্ষমতা ও কবিতা
এক দুপুরে হেমন্তের পৌরাণিক রোদ
ঢুকে পড়ল শহরে
বিরল আলোর ছায়ায় ফ্যাকাশে অবয়ব
হাসতে গিয়ে দেখল ভয়ের চাবুক, তাড়া করছে
শক্তি আর দাপটের গরিমা দেখিয়ে
হাওয়ায় উড়ছে ক্ষমতার মোটরবাইক
চোখের তারায় নাচছে ধাতব তলোয়ার
আমরা এসব নাচানাচি আর দাপাদাপি দেখে
শিখে নিলাম আপোসের শিল্পকলা
বিরান বৃক্ষের ভারে কাঁপে মঞ্চ
শস্যহীন শহরে নামে শিল্পের আহাজারি
অন্তরে নিরন্তর বাজে হাহাকার
আমরা ভুলে যাচ্ছি সহজ জন্মকথা
শামস শামীম রচনারাশি
গানপার কবিতার, কবিতার গানপার
- বিরোধের দিন বিষাদের রাত || শামস শামীম - June 12, 2025
- শফিকুন্নূর স্মরণানুষ্ঠানে সতীর্থ সাধক ও সময় নিয়া ভাবনা || শামস শামীম - January 4, 2025
- চোখের জলে প্রজ্জ্বলিত প্রেম ও প্রতিরোধের কবিতা || শামস শামীম - December 30, 2024
COMMENTS