গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১৪

গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১৪

প্রিয়,
পরম পূজনীয়!
কুসুমে ক্লেদ থাকলে যেমন অসুবিধা
আমি কী করব — বলব কি বলব না, সারাক্ষণই দ্বিধা
তাইলে তো মুশকিল

দুরুদশরিফ শুরু করতে করতেই ফিনিশ হয়ে এল মৌলুদ ম্যফিল

ধরেন আপনার ভাসুরের নাম
মুখে না-হয় না-ই নিলাম
আপাতত ততটুকু প্রকাশ করতে চাই
যতটায় সাময়িক কোনো অসুবিধা নাই
নিজের কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতার

সবাই নিজেরটা খায় কি না জানি না
আমেরিকান ফিল্মডিরেক্টার অ্যান্ড স্ক্রিনরাইটার
কোয়েন্টিন টারান্টিনা
পাল্পফিকশন বানায়া ছায়াছবিবিশ্বে একটা কাঁপন ধরান

পরম পূজনীয়, মুরদ নাই রগরগা ভায়োলেন্স প্রকাশিবার
অগত্যা গ্রাউল গলায় গাহি ঘিনঘিনা বাক্যভরা গ্রাসরুটসের গান।

*
অনেক হইসে পড়া, আর নয়
এইবার শুনি
দীক্ষামন্ত্রধ্বনি

পৃথিবী দীক্ষিত হবে আবার, নিশ্চয়।

*
শিক্ষা ব্যর্থ হইসে, এইটা আন্ধাকালায়ও চউখে দেখতে পায়
চাক্ষিক রূপকারেরা ধান্দায় ঘেঁষে বেমালুম অস্বীকার যায়

শিক্ষা ব্যর্থ হইসে, এখানে, ওখানে
এদেশে, সেদেশে, ঘরে ও ময়দানে
কবরে, সেমেটেরিতে, শ্মশানে
এডুকেটেড লোকগুলা আড়াইহাজার টাকা কিলোয় হিলশা ফিশ খায়

রাজা আসে রাজা যায় জাগরণে নিদ্রায়
সান্ত্রীসিপাইগুলা পাছার খাঁজে হাত ঢুকায়া খাউজায়
নানাবিধ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তাতে আরামে হাল্কা মাত্রায় শিহরায়
শিক্ষা ব্যর্থ হইসে, এই বিবৃতি স্বীকারে তবু নাই তাদিগের সায়

কী লিখব! সবই কপাল —
লোক্যাল এক অতিকায় টাইকুনের বন্দনায়
বিনীত ও বীররসপূর্ণ কবিতা পড়ে শুরু হয় আমার সকাল

লিখসেন যিনি, তিনি কবি, দশকশ্রেষ্ঠ, মনোবেদনামাতাল।

*
শিক্ষা ব্যর্থ হইসে, এইটা তারা স্বীকার যায়
টেবিলটকে, আড্ডায়
কিন্তু কদাপি নয় পাব্লিকলি, স্বীয় কর্মকাণ্ডকারখানায়
টেলেভিশনের পর্দায়

আর তাদের লেখায়?
আঁকায়? কাব্যচর্চায়? সিনেমায়?
গেরামভারি শিল্পকলাকৈবল্যেচ্ছায়?

প্রত্যেকে একেকটা নাঈমুল ইসলাম খান
মতিউর রহমান
দক্ষতায় দালালের উস্তাদ সমান
প্রত্যেকে একেকটা টাক্লা মুরাদ, বডিবিল্ডার সোহেল তাজ, কমেডিয়ান
প্রত্যেকে প্যাট্রিয়োটিক, মহান

সভ্যতার বিরুদ্ধে যায় এদের সমস্ত উচ্চারণ, অভিভাষণ, সামগান

মরে যায় নিসর্গ, নগর, মনুষ্য ও প্রজাতিকুল
উন্মুল —
ডকুমেন্ট্যাশন কোথায়?

বেচারা না-জন্মানো দুর্দান্ত রচনাগুলি ফিরিয়া তাকায়
লেখকেরে ছেড়ে যেতে-যেতেও থমকায়, মায়ায়।

*
দীক্ষা নাই
কিসুতেই দীক্ষা নাই টের পাই
তৃণমূল পর্যায়ের দশকমাতানো কবিগণ
উনাদেরে চেনে বটে প্রজাতন্ত্রের প্রশাসন
উনারা রাজার লোক
তস্করের তল্পিতল্পাবাহক
স্বৈরধর্মযাজক
শংসাবাক্য গুনে গুনে নেন কপর্দক
পূর্ণ করে যেটুকু সাধ্যে কুলায়
শারদীয় সংসারে কে না চায় আরেকটু সুনিশ্চয়তায়
কাটায়া যায় জিন্দেগি
ভোগী কিংবা ত্যাগী
দীক্ষিত হতেই হয়
নাইলে বেকার বরবাদিরই জয়-
জয়কার দেখব তাতে একটুকুও সন্দেহ নয়

লেখক চায় তারও সন্তানটা যায় আমেরিকায়, ক্যানাডায়!

*
কিসুই কী লিখব না তবে?
খালিহাতে এসেছি কী খালিহাতে
ফিরে যাব বলে?

একটাকিসু তো লিখতে হবে
এসেছি লিখতে
উঠতে বসতে শুতে
কেবলই লিখে যাবার ধান্দা আমার
কিসু নাই আর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো পবিত্র প্রভাতে
এবং অন্যান্য পোয়েটপ্রিয় দপদপানো দুপুরবেলায়, রাতে
লেখায় থাকতে চাই
বিরহে বেগুনি, মিলনে ম্যাজেন্টা স্কাই

নিরাই

আলোয়, ছায়ায়, এমনকি অন্ধকারেও দরকার হলে
কেবলই লিখে যাব ধ্বংসযজ্ঞে শেখ হাসিনার দলে
ভেড়া বাংলা সাহিত্যের তৃণমূলা রাইটারদের নাম

ন্যাশন্যালগুলার কথা না-ইবা বললাম

সবই ঠিকাসে, বুঝলাম, এর বাইরে কী কিসুই লিখবার নাই —
জিগাই;
রিপ্লাই পাই —
কী লিখব আর ভিতর-বাইর
টাইম যায় স্থাণুবৎ, স্থির
তৃষ্ণায় ড্রিঙ্কস্ খাই, প্রাণ

বসে থাকি
বিরানপ্রায় টিগার্ডেনে, একাকী
ইয়ার্ফোনে বেদম শুনি হৃদয়ব্যথার গান।

— জাহেদ আহমদ / ২০২৩

রিলেটেড রচনারা
গ্রাসরুটসের গান  ১ থেকে ১৩
সাহিত্যমেলা নিয়া দু-চার কথা
জেলায় জেলায় বিভাগে বিভাগে সরকারি সাহিত্যমেলা
প্রশাসনের সাহিত্যমেলা আয়োজন ও বয়কটকারীদের অবস্থানপত্র

COMMENTS

error: