লেখকদের কথা ভাবি —
কী হৃদয়বিদারক হতে পারে একটা জাতির অবস্থা
যার লেখকগুলা না তামা না দস্তা
খায়দায়
জামা গায়ে ঘুরে বেড়ায়
বিভাগীয় কমিশনারের সাহিত্যমেলায়
হামাগুড়ি দিয়া মাচায়
চিৎ ও উপুত হয়া মালজোড়া গায়
কেউ কখনো খুঁজে কী পায় ড্রিমডোমেনের চাবি …
কিন্তু ওদের কথা ভাবলে বেজায় হৃদয়ব্যথায় কাৎরাই
কী করতেসে এরা তার কোনো সেন্স বোধয় এদের নাই
বিহোল্ড! খাড়াও! কোনো সেন্স নাই নয়
দ্বিসহস্রতেইশে যে-লেখকেরা অ্যাডমিনের বশংবদ হয়
তারা পাক্কা সেয়ানা
কার সাথে খেলে খানা
অ্যাওয়ার্ড ও অনুষঙ্গ কনফার্ম ষোলোআনা
তারা তা জানে এবং তদনুযায়ী নিজেরে স্টেজে ওঠায়
টানিয়া নামায়
ল্যাংচায়া ল্যাংচায়া হাঁটে ডেপুটি কমিশনারের ফ্যুটস্টেপ ফলো করে
এই লীগলাঞ্ছিত উন্নয়নধ্বংসস্তূপের শহরে
একটা-না-আরটা আকাঙ্ক্ষা পূরণের আশায়
আমাদের লেখকদের এমনই হীনাবস্থা
না তামা না দস্তা
প্যান্টের ধামায় চাপা দিয়া যার যার স্বর্ণদণ্ড ও রৌপ্যরন্ধ্র লুকায়
গেস্টলিস্টে লেখকতালিকায় নারী নিরুপস্থিত দেখে
না তামা না দস্তা আকামা রাইটারদেরে একটা সার্কেলে রেখে
বেরিয়ে পড়ি আমরা, আসো, জায়নামাজ বিছায়া ভাসব অকূল সুরমায়।।
*
স্টেইজে অ্যাসেন্ড করসেন
উনি তৃণমূল, গলাধারী চিৎকৃত বক্তা, জাতীয়য় অ্যারাইভ করবেন
প্রয়োজনে মেকুরের নামে নেবেন প্রাতঃরাশ মুখে
মেকুরটারে একবারও চোখের আড়াল করা যাবে না, রাখব চোখে চোখে
যেন নখ দিয়া না কাটে আঁচড়
কথাটা রাষ্ট্র করলেন কবি চিবাইতে চিবাইতে ম্যান্দামারা চাউলগুঁড়ার পাঁপড়
ক্ষমতাধরের কদর উনি করেন
যথেষ্ট, সম্যক
নগদে, রকেটে, বিকাশে
এবং ক্যাশে
লেখক স্বনামধন্য বহুরূপী, কিম্ভূত, বুড়বক
ক্ষমতার ছক
যতটা হাঁটতে দ্যায় হাঁটেন
প্রশংসায় ফাটেন
বহুবিচিত্র ক্ষমতাধর শাহেনশাহের
পুরাকালে সেরের উপর ছিল ছিল সোয়াসের
বর্তমানে কেজি কি লিটার
সুপ্রিয় তখনও কর্ড খুঁজতেসে, এমন সময়
আমার মনে হয়
গিটার নয়
রিমোট কোথাও লকলক লতায়া উঠতেসে বনবিথার
তেলে ভক্তি তেলে মুক্তি তেলে মিলায় মহোদয়ের মনের বিকার।।
*
ওই যারা হাজারতেইশের প্রশাসনমঞ্চে
চেহারায় গাট্টাগোট্টা আচরণে ধঞ্চে
ল্যাট্টা খায়া আছে বসে অ্যাডমিন ক্যাডারের উঠানে
দেখি হৃষ্টপুষ্ট রূপে, গুণে, সম্মানে
এদের তৎপরতা
মানুষের মঙ্গলের কল্যাণের কুশলের বিরুদ্ধতা
তাদের কাজ
মোটের ওপর এ-ই আমাদের পঞ্চাশ বছরের স্বাধীন সাহিত্যসমাজ।।
*
হায়াচামড়া নাই
শিয়াল নাকি?
শীতসন্ধ্যায় রাবারের গাছে দ্যায় একটানা ঝাঁকি
ইড়িঙ্গির আওয়াজে জেগে ওঠা চায়ের বাগান
সহসা চারদিক সচকিত অরণ্যজংলায় মাগ্রেবের আজান
ডুবন্ত সূর্যের স্মৃতি নিয়া চাঁদ হাতড়াই
মিল খুঁজি মনে মনে
লেখকের সনে
কে বেশি মিলিয়া যায়
আচরণে, চেহারায় —
শিয়াল নাকি নিম্রা বিলাই?
নিজের মুখটা আয়নায় নিজে দেখতে না যাই।।
*
কিন্তু গোলামগুলার নাম মুখে এনো না
আদিকাল থেকে এরা আচরণে চেহারায় এক ও অভিন্ন
ওইজন্য
ওরা নামাবলির ব্যবসা পাতায়
নানা বাহানায়
নামোচ্চারে টেনে নামায়
টাইমের অপচয় ছাড়া আর কিসু না
কালের কলকণ্ঠ কবিসাইত্যিকগুলারে ভেসে যেতে দাও সোনা
অ্যাডমিন-ক্যাডারশাসিত গড্ডালিকায়।।
*
কী করব, বলো, আমি তো কর্ণ!
অসহায়
নিয়তির বিরূপতায়
আমি পরাজিতপক্ষী
কী করব, গোটা মানবজীবনটাই
বৃষ্টি চরাই
কিংবা মায়ার মতো রৌদ্র বহাই
নিতান্ত প্রতিবাদ করি, বিস্ময় এবং বিবমিষা জানাই, নিজের লেখায়
দেখতে দেখতে জেলা সাঙ্গ করে বিভাগীয় সাহিত্যমেলা এসে যায়
তৃণমূলের কবি তৃণমূলের লেখক আলোচক প্রভাষক সম্পাদক ও সাংবাদিক
সকলেরই ভিতরে একটা সাংঘাতিক
সাহিত্যবাতিক
আছে সেটা ন্যাশন্যাল জানে
এবং আল্লায় তাদেরে বসায়া রাখসে সেইটুকু সম্মানে
বেশি নয় কমও নয়
ন্যাশন্যালে যেতে একটু সুবিধা যদি হয়
সেইখানে যাবে এরা যেইখানে যেতে এমনকি শয়তানেও শরমায়
দ্বিসহস্রতেইশে ডিভিশন্যাল সাহিত্যমেলায় স্টেইজে-বসা সাহিত্যিক
প্রশাসনের কাছে বিবেচিত হয় আদরণীয়, লক্ষ্মী!
— জাহেদ আহমদ / জুন ২০২৩

রিলেটেড রচনারা
গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১
সাহিত্যমেলা নিয়া দু-চার কথা :: আহমদ মিনহাজ
প্রশাসনের সাহিত্যমেলা আয়োজন ও বয়কটকারীদের অবস্থানপত্র
- রিপ্রিন্ট রিফ্রেশিং - November 7, 2025
- কোচবিহার ও আব্বাসউদ্দীন - November 7, 2025
- দেবেশ রায়ের ফ্যাসিবাদের বিত্তান্ত - November 6, 2025

COMMENTS