ইন্টার্ভিয়্যু : জননী শ্রীদেবী

ইন্টার্ভিয়্যু : জননী শ্রীদেবী

প্যেহ্লে পান্দ্রা সাল কা গ্যাপ থা। আভি পাঁচ সাল কা। কাজেই, ইম্প্রুভ হচ্ছে আমার। — বলছিলেন সাক্ষাৎকারে শ্রীদেবী (Sridevi)। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ দিয়া কামব্যাক ম্যুভি হিশেবে ব্যাপক দর্শকানুকূল্য লভেন তিনি বছর পাঁচ আগে, এরপর গত বছর ‘মম’ দিয়া আবারও ম্যুভিসার্কিটে দেবী নিজের প্রেজেন্স ভালোভাবেই জানান দেন। মনে হচ্ছিল, শোনাও যাচ্ছিল অথেন্টিক সোর্সগুলো থেকে, সক্রিয় হতে চলেছেন শ্রীদেবী নিয়মিত ম্যুভিস্ক্রিনে। এরপর চব্বিশ ফেব্রুয়ারি দ্বিসহস্রআঠারো। বলিউডের একদা ক্যুয়িন শ্রীদেবী ইন্তেকাল করেন অকস্মাৎ। জীবনাবসানকালে তার বয়স হয়েছিল চুয়ান্ন। গর্ভজাত দু-কন্যাকে রেখে গেছেন দুনিয়ায়, স্বামী বনি কপুর রইলেন বটে, এবং রেখে গেছেন বাণিজ্যপয়মন্ত অনেক সিনেমা।

পাঁচ বছরের গ্যাপ মাঝখানে, ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ আর ‘মম’ শীর্ষক দুই সিনেমার মধ্যবর্তী সময়ব্যবধানের কথা পাড়া হচ্ছে এখানে, এর আগে এবং পরে শ্রীদেবী সিনেমাজাগতিক হাতছানি ভুলে থেকেছেন কেমন করে এইসব নিয়া সাক্ষাৎকারে আলাপ হচ্ছিল। যদিও উল্লেখ করা যায় যে দেবীজি ইন্টেরিম সময়টায় তামিল-তেলেগু ম্যুভি করেছেন ফোকরে-ফাঁকে, বলিউডে অ্যাবসেন্ট ছিলেন একেবারেই, এক-সময়ের বলিউডে মাঝারি হিটের হিরো কমল হাসান থেকে শুরু করে রজনীকান্ত্ ও চিরঞ্জিত প্রমুখের সঙ্গে ননহিন্দি শ্রীদেবীর ম্যুভিসংখ্যা পাঞ্জায় হিসাব দিয়া সারবার নয়। আনিল কপুরজির সঙ্গে দেবীর বলিউডি হিট তো হিউজ।

‘মম’ মুক্তির পরে এই ইন্টার্ভিয়্যু গ্রহণ করা হয়। এইখানে শ্রীদেবী নিজের মাতৃভূমিকায় দায়িত্ব পালনের ব্যাপারে কথা বলেছেন অত্যন্ত অন্তরঙ্গ ও প্রাঞ্জল বাচনে। কেবল ব্যক্তিজীবনে নয়, রিয়্যাল লাইফে এবং রিল লাইফে, সিনেমায় শ্রীদেবী ফিরেছেন জননীভূমিকাতেই। ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ এবং ‘মম’ দুই সিনেমাতেই শ্রীর পার্ট স্মর্তব্য। কৌতূহলের উর্দ্রেক করে যে একদা নায়িকা শ্রীদেবী ইচ্ছে করলে এই ভূমিকায় অ্যাক্টিং অ্যাভোয়েড করতে পারতেন, করেন নাই। হিন্দি সিনেসার্কিটে হেমা মালিনী কিংবা রেখা বা মাধুরী প্রমুখ সকলেই কিন্তু জননীরোলে এত বোল্ডলি রাজি হবেন না অভিনয় করতে। যেমন আমরা দেখব যে এককালের সুচিত্রা সাংঘাতিক দর্শকক্রেইজ সত্ত্বেও ঘরের ভিতরে সেঁধিয়ে গেছেন সময়েরও অনেক আগে এবং মধ্যবয়সের রোলে অ্যাক্টিং এড়ায়ে একদম হিরোয়িনের মেমোরি দর্শকমনে গেঁথে যেন থাকে সেই মানসে এমনকি পাব্লিক লাইফ থেকে কঠোর সাধনায় নিজেরে সরায়ে নিয়ে গেছেন। বয়স লুকাইতে সবাই না-পারলে বয়স্ক চরিত্র লুকাইতে কে না চায়! এইটা চাইতে দেখা যায় নাই শ্রীদেবীজিকে।

এড়াতে পারতেন শ্রীদেবীও, পরপর দুইটা ছায়াছবিতে দেবী নিজের রোলটারে একটু গড়েপিটে নেয়ায় ডিরেক্টরদেরে পারতেন রাজি করাতে, কেন করেন নাই, নিশ্চয় একটা বক্তব্য থাকতেই পারে তার তরফে। এই সাক্ষাৎকারে এইসব সওয়াল-জওয়াব আমরা পাবো। দ্রুত বঙ্গানুবাদে এই সাক্ষাৎকারটা আমরা হাজির করছি। সিনেমায় অভিনয়ে এত লম্বা গ্যাপ এবং দুই কন্যা জাহ্নবি আর খুশির সঙ্গে তার দিনযাপন নিয়া সাক্ষাৎকারটায় আলাপ সঞ্চালিত হয়েছে। একজন সিনেঅ্যাক্ট্রেসের ব্যক্তিজীবন নিয়া আজেবাজে কৌতূহলের পাপারাৎসিকীর্তিকলাপে আমাদের বিনোদনসাংবাদিকতা ঠাসা। চাইব অন্তত মরণের পরে এইসব অধরা বাস্তবের নটনটি নিয়া আকাইম্মা আজাইরা প্যাঁচাল পাড়ার বাইরে যেয়ে যেন দৈনন্দিন স্বাভাবিকতার ছবিসম্বলিত গল্পগাছা খুঁজিয়া বাইর করি আমরা। আদৌ অসম্ভব নয় চাইলে। কেবল বদখাসলতটা বদলাইতে হবে। ম্যে বি না-বদলাইলেও হয়। যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক, মেশিন ও মর্দামি, না-চাইলেও চলবে। এবং বদমজাতেই যদি তিষ্ঠোতে পারে একটা জাতি, তাইলে তেষ্টাক্ষিদা মিটাক এইভাবে। বদমজাও তো মজা; তা যা বলেছেন, বটে!

এই সাক্ষাৎকারের মূল ভাষ্য একটা আংরেজি অনলাইন ডেইলিতে পাওয়া যায়। অরিজিন্যাল ইন্টার্ভিয়্যুলিঙ্ক ভাষান্তরের শেষে অ্যাটাচ করা রইল।

Sridevi

গোটা পাঁচটা বছরের গ্যাপ ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ থেকে ‘মম’ ম্যুভিদ্বয়ের মধ্যিখানে। এর মাঝে একটাও ম্যুভিতে অভিনয়ের অফার পান নাই আপনি?

অফার পাওয়া বা না-পাবার ব্যাপার এইটা না। খালি সিনেমা করার খাতিরে সিনেমা করিয়া যাওয়া আমারে দিয়া হবার নয়। আমার ফার্স্ট প্রায়োরিটি সবসময় আমার বাচ্চারা। কাজেই ‘ইংলিশ ভিংলিশ’ করার সময় আমার কনভিনিয়েন্স অনুযায়ী শিডিউল হয়েছিল বলিয়াই সিনেমাটা হাতে নিয়েছি। সিনেমাটার প্রোডিউস্যর আর. বল্কি ভীষণ বন্ধুমানুষ আমাদের, উনি শিডিউল করার সময় এমনভাবে সেইটা সাজায়েছিলেন যেন সংঘর্ষ না বাঁধে আমার দৈনন্দিন সংসারপ্রায়োরিটির সঙ্গে, মেয়েদের ছুটি ছিল সেই সময়টায় এবং সেই ইশকুলছুটির সুবাদে একটানা মাস-দুইয়ের কাজে আমার অংশটা আমি সেরে নেবার সুযোগ পেয়েছিলাম। এরপরে বেশকিছু অফার আমার কাছে এসেছিল, যদিও সম্ভব হয় নাই হ্যাঁ বলা। কারণ অবশ্য এক নয়, কারণ অনেক। অফার ফিরায়ে দিতে হয়েছে, কেননা বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকা আমার পক্ষে অসম্ভব এবং কখনো স্ক্রিপ্ট যুৎসই মনে হয় নাই বলেও অফার রাখা যায় নাই। সিনেমাগুলো করার ব্যাপারে আমার মন আগায় নাই। নিজেকে ব্যস্ত রাখার জন্যে আমারে ফিল্ম করে যেতে হবে, ব্যাপারটা তা না। আমার নানান ব্যস্ততাই বরং ফিল্ম না করার জন্যে দায়ী। ফিল্ম করব যদি স্ক্রিপ্ট আমারে টাচ করতে পারে তবেই। হৃদয়স্পর্শী স্ক্রিপ্ট হলে ভেবে দেখা যায়। আমার নিজের ক্যারেক্টারটাই শুধু নয়, আশেপাশের ক্যারেক্টারগুলোও পছন্দ হতে হবে আমার। যদি মিলে যায় এইসব, তবেই সিনেমাটা হাতে নিতে পারি। জিনিশগুলা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সবচেয়ে বড় কথাটা হচ্ছে, আমার কনভিনিয়েন্স অনুযায়ী হতে হবে সবকিছু।

আপনার বয়সী শিল্পী অভিনেত্রীরা প্রায় সকলেই ফিরেছেন নিয়মিত অভিনয়ে, কামব্যাকের পরে রেগ্যুলারও হয়েছেন। তবে আপনার বাছাবাছি ভিন্নঢঙা, ড্রামাটিক্যালি ডিফ্রেন্ট। মন্তব্য করুন।

খুবই ইন্সটিঙ্কট দিয়া আমি চলি। সিনেমার চরিত্রটা আমারে স্যুট করছে কি না দেখতে হয়। এইটা আগে, বাদে বাকিসব। দশবছর কুড়িবছর আগে যেমন ভূমিকায় আমি অভিনয় করেছি এখন তো বললেও ওই ভূমিকায় আমি অভিনয় করব না। আরাম পাবো না আমি নিজেই ওইভাবে অভিনয়ে। যে-কাজটাই আমি করি না কেন আমার বাচ্চারা যেন আমারে নিয়া প্রাউড ফিল্ করে এইটা আমারে মাথায় রাখতে হয়। এইটা আমি চাই উয়িলিংলি। নিশ্চয়, সিনেমা আমি করব। তবে এমন সিনেমা আমি করব না যা আজ থেকে এক/দুই দশক আগে করে ফেলেছি। ডিম্যান্ড যদি থাকে তেমন ভূমিকার, আমি ফিরিয়ে দেবো। গল্প ভালো হতে হবে, চরিত্র বলিষ্ঠ হতে হবে, এ-ই তো। অন্যকিছু করা, মানে এক-দেড় দশক আগের ভূমিকা আমারে দিয়া মানানসই যেমন হবে না তেমনি লজিক্যালও তো হবে না।

কামব্যাক করেছেন যখন, নিশ্চয় দেখছেন বহুকিছু পরিবর্তন ঘটে গেছে এর মধ্যে। যেমন কুড়িবছর আগে তো চুক্তিটুক্তি করতে হতো না আজকের মতো, লোকে ফেসভ্যালু বা ধরেন রিলেশনশিপ দেখেই নিয়া নিত ম্যুভিতে …

… (কথা কেটে) … হ্যাঁ, এইটা আসলেই হতো তখন, খুব হতো। কোনো প্রোডিউস্যর প্রোব্লেমে থাকলে আমরা তারে হেল্প করতাম, ছবিটা করে দিতাম। আমি নিজেও অনেক ছবিতেই ইনক্লুড করেছি নিজেরে এইভাবে ফ্যেলোফিলিংস্ থেকে। আর চুক্তির কথা তো দূর, অনেক সময় এমন হয়েছে যে একটা চিত্রনাট্যও নাই কিন্তু ছবি শুরু করে শেষও করে দিয়েছি। স্ক্রিপ্টটাও ধরাবাঁধা থাকত না আগে থেকে। একটা আন্দাজ দেয়া হতো শুধু। বোঝা যেত না রিলিজের আগে পর্যন্ত কতটা দাঁড়িয়েছে গোটা ব্যাপারটা।

আজকাল তো অনেক স্ট্রাকচার্ড আর অনেক প্রোফেশন্যাল হয়েছে ব্যাপারগুলা যে …

… এইটা আমার ভাল্লাগে। আই ল্যভ দ্যাট। সবকিছু অনেক প্রোফেশন্যাল হয়েছে আগের চেয়ে, এখন একটা টাইমফ্রেইম থাকে। এনভায়রনমেন্টটাও চমৎকার। প্লাস, প্রত্যেকটা কাজের জন্যে আলাদা বিভাগ আলাদা লোকজন। সবাই স্কিল্ড। ম্যুভিদুনিয়াটা আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সিস্টেম্যাটিক, সো দ্যাট’স্ রিয়্যালি গ্যুড।

‘মম’ ম্যুভিতে কেন অভিনয় করলেন আপনি, জিগাই যদি?

অবশ্যই সিনেমাটার প্লট। গল্প। এবং সম্পর্কটা। মা-মেয়ের মধ্যকার রিলেশনশিপ, ব্যাপারটা টাচ করেছিল আমায়। আর, আরেকটা ব্যাপার, ওই-যে বলছিলাম একটু আগে, আমি ইন্সটিঙ্কট দিয়া চলি, ইন্সটিঙ্কট বলছিল আমারে ভেতরের কানে যে এইটাই হবে এই-মুহূর্তে বেছে নেয়া আমার পক্ষে বেস্ট ম্যুভি।

কিছুদিন আগে একটা সাক্ষাৎকারে আপনি বলছিলেন যে এখন কেউ আপনারে মা বলিয়া ডাক দিলে ভালো লাগে আপনার। ম্যুভিনির্বাচনে এইটাই কি কাজ করেছে?

হ্যাঁ, অ্যাবসোল্যুটলি। বিকজ্ আ’য়্যাম অ্যা মাদার। আর মা হবার কারণেই আমি জানি যে ক্যারেক্টারটা কতটা যাতনার ভিতর দিয়া যাইতেছে। এই বেদনা এই যন্ত্রণার লগে আমি নিজেরে রিলেইট করতে পারি। ‘মম’ সিনেমার ক্যারেক্টারটারে আমি ফিল্ করতে পারছিলাম। শি ইজ্ অ্যা স্ট্রং মাদার। সন্তানদের প্রতি ডিভৌটেড, নিজের ছেলেমেয়েদের কল্যাণের জন্যে যে-কোনো উৎসর্গ করতে সে পিছপা না। আপনারও তো নিশ্চয় এই গুণগুলা ভালো লাগে এবং স্ক্রিনে এইসব ফোটানোর মওকা পাইলে আপনিও তো ছাড়বেন না নিশ্চয়।

এইটা কি একটা রিভেঞ্জ ড্রামা বলবেন না? নিজের মেয়ের …

… (বাধা দিয়ে) … না না, এইটা প্রতিশোধ না। আমি বলব এইটা পানিশমেন্ট, নট প্রতিশোধ

কোন জিনিশটা আপনারে একজন মা হিশেবে ভয় পাইয়ে দেয়?

এমন বহুকিছুই আছে ভয় পাইয়ে দেয়। বাচ্চারা বাইরে বেরোলে একটা আজব ইনসিকিউরিটির ভয়, বাসায় ফিরে না আসা পর্যন্ত ভয়টা কাটে না। আমি কিছুক্ষণ পরপর ফোন দিয়া তাদেরে জিগাই, কি, কই তোমরা, কতদূর, গাড়ি কি ঠিক আছে, কোথাও কোনো সমস্যা আছে কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। জিনিশগুলা মায়েদেরই হয়। বেইসিক এই ভয়গুলা সব মায়ের মধ্যেই থাকে তাদের বাচ্চাদের ব্যাপারে।

মা হিশেবে আপনি কি নিজেকে পোসেসিভ মনে করেন, না প্রোটেক্টিভ?

নো, পোসেসিভ মোটেও না। বাট, আ’য়্যাম এক্সট্রিমলি প্রোটেক্টিভ।

আপনার দুই কন্যার ব্যাপারে আপনি কি কড়াকড়ি আরোপ করেন এমনকিছু আছে? যেমন ধরেন কার্ফিয়্যু টাইম বা এমনকিছু?

হ্যাঁ, জাহ্নবি আর খুশির জন্যে একই নিয়ম বলবৎ সবসময়। বাসায় ফেরার সময়টা তারা জানে যে একদম কড়াকড়ি। বাইরে বেরোও, ঠিক আছে, সময়মতো ঘরে ফেরো। নো সময়ের এদিক-ওদিক। তাছাড়া, আমি তো ফোন হাতে নিয়া সারাক্ষণ ওদেরেই রিং করতে থাকি এবং ইনক্যুয়ারি তো করিই।

রিয়্যাক্ট করে না তারা? আপনার এমন কড়াকড়িতায় কেমন রিয়্যাকশন হয় তাদের?

বার্গেইন করে সাধারণত। যেমন ধরেন যে, আচ্ছা মা, আরেকটু, ধরো যে এই হাফ-অ্যান-আওয়ার? … আম্মা, আরও কুড়ি মিনিটের মধ্যেই ফিরছি, ঠিকাছে? … এইভাবেই। কিন্তু ওরা মাশাল্লা আমার অবিডিয়েন্ট খুবই। ভীষণ স্পর্শকাতর ওদের মনটা। জাহ্নবি আর খুশি দুইজনেই ভীষণ বুঝদার। তারা তাদের লিমিটটা জানে। কেউ ভোগায় না খুব-একটা। … (হাসি) …

নিজের মায়ের কথাটা মাথায় রেখে যদি নিজেকে একজন মা হিশেবে মূল্যায়ন করতে বলা হয় আপনাকে, কেমন হবে মূল্যায়নটা? মা হিশেবে আপনি নিজে কতটা আলগ হতে পেরেছেন আপনার মায়ের সঙ্গে তুলনায়?

আমার মায়ের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা কেমন ছিল, যদি ঠিকঠাক বলতে পারি তো বলব যে, আজকের মেয়েরা, আমার মেয়েরা, গালগল্প মনে করবে নির্ঘাৎ। কমিয়েও যদি বলি, গল্প করি যদি আমার দুই মেয়ের সঙ্গে তাদের নানুজান কেমন ছিল সেই-সময় আমার ব্যাপারে, মেয়েরা বলবে, ব্যাগবোঁচকা বান্ধো আর যাও গিয়া থাকো তোমার চেন্নাইয়ের অজগাঁয়ে। … (হাসি) … এইটা আমি অবশ্যই আশা করতে পারি না যে আমার সঙ্গে সেই-যুগে যেমন সম্পর্ক ছিল আমার মায়ের, এই যুগে আমার সঙ্গেও অমন হুবহু সম্পর্ক থাকবে আমার দুই মেয়ের। না, তা হয় না। পাল্টে গেছে দিনকাল, আর আমিও তো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে গেছি। আমার দুই মেয়েই জানে ভালো করে আমি কোত্থেকে এসেছি। আমি তো ভাই হাই-টেক মডার্ন মা না যাদের কাছে বেবাকতেই ফাইন এবং ক্যুল।

দুই কন্যার ক্ষেত্রে এমন কোনো ফর্দ রয়েছে কি আপনার বেঁধে-দেয়া, যা দেখে তারা তাদের কর্তব্য ও করতে-মানা জানতে পারে?

Sridevi with her daughtersহ্যাঁ, আলবৎ রয়েছে। এমন অনেককিছুই রয়েছে। এবং আমার মেয়েরা জানে যে কোথায় যেয়ে এবং ঠিক কোন মুহূর্তে তাদেরে থামতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যাপারগুলো ওরা নিজেরাই সামলায়ে নিতে পারে। সিদ্ধান্তটা তারাই নেয়। আমি শুধু ওদেরে মাঝেসাঝে বলি, ধরেন এইভাবে বললাম যে, গেট-টুগেদার আছে একটা আজকে, একটু জলদি ফিরে এসো; ওরা তখন হয়তো বলল যে, না মা, দেরি হবে ফিরতে, গেট-টুগেদারে থেকে আমি মনে হয় না আরাম পাবো। তো, এই-রকম। আর ওদের হেল্থ নিয়া আমারে তেমন ঝক্কি পোয়াতে হয় না, মাশাল্লা আমার দুই মেয়েই কিন্তু শরীরস্বাস্থ্যের ব্যাপারে কনশাস্। সবকিছুই-যে একদম টায়েটায়ে চলে এমন নয়, একদম পার্ফেক্ট তো হয় না কিছুই। নিজে থেকেই নিজের দেখভাল ওরা করতে পারে এবং করেও; বড় ঝক্কি থেকে বেঁচেছি যে ওদের হেল্থ নিয়া আমারে ভাবতে হয় না, ধাক্কাইতে হয় না স্বাস্থ্য সুন্দর রাখার ব্যাপারে।

বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপার নিয়া বাচ্চাদেরে জোরাজুরি করতে হয় না? বাইরে যেন এটা-সেটা না খায় তাই নিষেধাজ্ঞা জারি রাখতে হয় না? আপনি কি কিচেনে মেয়েদের জন্যে নিজহাতে রান্নাও করেন নাকি?

কিচেনে যাই ঠিকই, কিন্তু রান্নাটা আমি করি না। আমারে দিয়া রান্না হবার নয়। আমি তদারকিটা চালাই কিচেনে খাড়া থাকিয়া, আর ধরেন যে মেয়েরা খাবে কি এবং কীভাবে সেইটা রান্না করবে ক্যুক ইত্যাদি প্ল্যানটা আমিই করি রোজ। কিন্তু ক্যুকিং তো বহোৎ দূর কি বাত হ্যায়। মেয়ে দুইজনের মধ্যে বড়টা আবার ভ্যেরি ফন্ড অফ ক্যুকিং। রানতেবাড়তে বেজায় ভালোবাসে জাহ্নবি। শি ইজ্ ফন্ড অফ বেইকিং কেইক্স, কাস্টার্ড বানায়, ক্যুকিস্ ইত্যাদি অ্যান্ড অল্। আমি তো খাওয়াদাওয়ায় ভীষণ উৎসাহী। খাইতে এঞ্জয় করি সবসময়। … (হাসি) … ওদেরে রেঁধে খাওয়ানোর বদলা ওরাই বরং আমারে রেঁধে খাওয়ায় হামেশা, আর আমিও খাই। … (হাসি) …

পার্সোন্যালিটির দিক থেকে কে বেশি আপনার আদল পেয়েছে, কে বেশি ক্লোজার টু য়্যু — জাহ্নবি না খুশি?

জাহ্নবি ইজ্ মৌর লাইক মি। শি ইজ্ ভ্যেরি সেন্সিটিভ, নায়্যিভ, অবিডিয়েন্ট … আই সি সো-মাচ অফ মাইসেল্ফ ইন হার। খুশি ইজ্ ইন্ডিপেন্ডেন্ট, স্ট্রং অ্যান্ড হ্যাজ হার ঔন মাইন্ড।

জাহ্নবি তো বলিউডে এন্টার করছে। মেয়ের পয়লা ছায়াছবিটা আপনারা প্রোডিউস করছেন না, এইটা কি কনশাস্ ডিসিশন আপনাদের?

অ্যায়সা কুচ ন্যাহি হ্যায়।

রিসেন্টলি সাইফ আলি খানের মেয়ে স্যারা ইজ্ জয়েনিং ফিল্মস্, মেয়ে এই লাইনে যাচ্ছে দেখে বাপ সাইফ ইজ্ নট হ্যাপি দ্যাট শি চ্যুজ্ টু অ্যাক্ট; কেননা, সাইফ মনে করেন, ইট ইজ্ অ্যান ইনসিকিউর প্রোফেশন। ডু য়্যু অ্যাগ্রি?

সাইফের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত। শুরুতে আমি জাহ্নবিকে অ্যাক্ট্রেস্ হিশেবে দেখতে একদমই চাই নাই। সে অভিনয়ে যাক এইটা আমি চাই নাই। প্যারেন্ট হিশেবে যে-কেউই নিজের সন্তানের ভবিষ্যৎ উদ্বিগ্ন রইবে এইটা স্বাভাবিক, আর সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত রাখতে কে না চায়। পেশাজীবনে সে যখন ঢুকছে তখন কিন্তু তাকে আপনি আর আগলে রাখতে পারছেন না, চাইলেও পারবেন না। দুনিয়ায় সে এক্সপোজড হয়ে যাচ্ছে, এক্সপোজার চাচ্ছে সে। এতদিন যারে আপনি বুক দিয়া আগলে রেখেছিলেন, নিজের জিন্দেগিতে সে সেটল করুক এইটা তো আপনি চাইবেনই। জাস্ট হ্যাপিলি সেটল করুক সে। একদিক থেকে স্ট্রেস-ফ্রি হয়ে যেতেছেন আপনি ঠিকই, মেয়ে যদি ঠিকঠাক লাইফে সেটল করে, কিন্তু তা তো অত সহজে হয় না। আজকাল তো অল্পবয়সেই ছেলেমেয়েরা ম্যাচিয়্যুরিটি অ্যাচিভ করে এবং শুরুতে এইসব সাতপাঁচ ভেবে মেয়েকে আমি সতর্কবাণী দিয়ে গেছি উঠতে-বসতে যে বাবা এইটা ভারি ঝক্কির এক কাজ, ভারি বিপাকের এক পেশা, অনিশ্চয়তার জিন্দেগি একটা। স্যাক্রিফাইস্ দরকার হয় এই পেশায় প্রচুর, দরকার হয় নিজের সেরাটুকু উজাড় করে দিতে এবং পেতে হয় না-পাবার ব্যাপক বেদনা। বেদনা ছাড়া এই লাইনে একটা আধুলিও অর্জন করা যায় না। জাহ্নবি কিন্তু মরিয়া, সিনেমায় সে ক্যারিয়ার করবেই মনে হয়। বাপ-মা হিশেবে আমরা তারে এখন সাপোর্ট করে যাব।

ডিড শি ড্যান্স টু য়্যুর স্যংস্ হোয়াইল গ্রোয়িং আপ?

Sridevi নো, নেভার। জাহ্নবি আমার কোনো ম্যুভিই দেখে নাই। বাচ্চাদেরকে লগে লইয়া আমি নিজের সিনেমা দেখতে একদিনও বসি নাই জিন্দেগিতে। বেশিরভাগ আমার অভিনীত ম্যুভির ব্যাপারে তারা খবরও রাখে না। খালি ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ দেখেছে, এবং এমন আরও গোটাকয় ম্যে বি। জাহ্নবি প্রথম অভিনয়শিল্পী হবার ইচ্ছা জানায় যখন তারে কেউ-একজন জিগায় যে সে বড় হয়ে কি হইতে চায়। জাহ্নবি রিপ্লায়েড, ডাক্তার হবে সে এবং অবশ্যই রিয়্যাল লাইফে নয়, সিনেমায়! সে সিনেমায় ডাক্তারের রোলে প্লে করতে চায় বড় হয়ে! এত্ত মজা লেগেছিল অতটুকুনি মেয়ের মুখে এই ইচ্ছার কথা শুনে এবং ফট করে মনে হয়েছিল যে, আরে আরে! কী বলে রে আমার পুঁচকেটা! … (হাসি) … ব্যাপারটা স্বাভাবিকই যে সে খুবই শাই এবং আমাদের কাছে মুখ ফুটে তার ইচ্ছার কথাটা বলার আগে অন্যের কাছেই ফাঁস করতে হয়। বেচারা! আস্তে আস্তে একদিন বোমাটা ফাটিয়েছে। … (হাসি) …

মেয়ের ইচ্ছা শুনে প্রথম কীভাবে রিয়্যাক্ট করেছিলেন আপনি?

আমি রাগি নাই। … (হাসি) … আই ডিড’ন্ট গেট অ্যাংরি। আমি সোজা বনিবাবুর সামনে গিয়ে মেয়ের সাধের কথাটা শোনাই। আমরা জামাই-বউ দুইজনেই মাথায় হাত দিয়া ভাবি বসে বসে। কি আর করব। আস্তে আস্তে মেনে নিই মেয়ের ইচ্ছা, আর নিজেদেরে প্রস্তুত করে তুলি।

কিন্তু জাহ্নবি তো হিন্দিটা জানে না বিলকুল। এখন কি শিখছে একটু একটু করে?

হ্যাঁ, বেশ তো প্রোগ্রেস করছে হিন্দিশিখনে। সে কিন্তু উর্দুটা আগে থেকেই খুব সুন্দর বলতে পারে। এবং এখন তো হিন্দিও গুছিয়ে বলতে পারে দেখি।

নিজের মেয়েদের কাছে আপনি তো বন্ধুর মতোই অনেকটা। তারা কি তাদের পার্সোন্যাল লাইফ নিয়া বা ধরেন যে তাদের বয়ফ্রেন্ড নিয়া আপনার লগে কথা বলে?

হ্যাঁ, এইটা আমরা করি। আমার দুই বাচ্চাই আমার সঙ্গে তাদের এভ্রিথিং শেয়ার করে। এমনকি নিজেও আমি মেয়েদের লগে আমার সবকিছু শেয়ার করি। আমরা মোটামুটি বন্ধুই বলতে পারেন।

আপনার মেয়েদেরে তো কথায় কথায় আপনার লগেই কম্পেয়ার করা হবে জিন্দেগিভর। এই ব্যাপারে ভেবেছেন কিছু?

এইটা তো এড়িয়ে যাবার উপায় নাই। শি হ্যাজ্ টু ফেইস দ্য প্রেশার। বলিউডে ঢুকবে যেহেতু, সিদ্ধান্তটা সে যেহেতু নিজে থেকেই নিয়েছে, পুরা ব্যাপারটা তার নিজেরই মাথাব্যথা। তারে এই সিচ্যুয়েশনের ভিতর দিয়া যাইতে হবে। এই গিভেন কন্টেক্সট সে জানে। সে এসবের জন্যে বেশ প্রিপেয়ার্ড, অ্যান্ড আ’য়্যাম অলসো প্রিপেয়ারিং মাইসেল্ফ ফর ইট। মাঝেমাঝে আমারও ভয় যে করে না তা নয়। সামটাইমস্ ইট স্ক্যায়ার্স মি। বিতিকিচ্ছিরি চিন্তাদুশ্চিন্তাও হয় এবং ভাবি যে মেয়েটা ভুলপথে যাচ্ছে না তো? পরক্ষণে মনে হয় যে মেয়ের স্বপ্নপূরণে আমরা সাপোর্ট করব তারে যেভাবেই হোক পাশে থেকে, যেভাবে আমার মা আমার জন্য করেছিলেন, যেভাবে আমার মা আমার লড়াইয়ের সময় পাশে থেকেছিলেন। উনি নিজে আমারে নিয়া কি স্বপ্ন দেখেছিলেন সেইটা আর মুখ্য থাকে নাই, উনি আমারে হ্যাপি দেখতে চেয়েছিলেন। আমিও আমার মেয়ের সঙ্গে সেই বিহ্যাভিয়্যরই করব যা আমার মা করেছিলেন আমার বেলায়। ব্যাপারটা আসলেই সিম্পল কিন্তু।

‘মম’ ম্যুভির সেটে আপনি কি আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলেন? কেঁদেছিলেন কি সত্যিই? নিজের মেয়ে জাহ্নবি আর খুশির কথাই কি মনে হয়েছিল ম্যুভির বিশেষ ওই দৃশ্যমালায় অভিনয়ের সময়?

না, আমি মোটেও জাহ্নবি বা খুশির কথা ভাবি নাই। আল্লা যেন কোনো মায়ের সন্তানের ক্ষেত্রে এ-রকমটা হওয়া থেকে রক্ষা করেন। ‘মম’ ম্যুভির ক্যারেক্টারগুলা দোজখের অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়াই গিয়েছে এবং আল্লা যেন এই দোজখযন্ত্রণা কারোর জন্যই বরাদ্দ না করেন দুনিয়ায়। আই অয়াজ সো ইনভোল্ভড এবং ইন-ক্যারেক্টার ছিলাম অভিনয়ের সময় এবং সারাক্ষণ ভাবছিলাম যে সেই মেয়েটার মা বাস্তবে কেমন দোজখযন্ত্রণার ভিতর দিয়া গিয়াছে, আহা! আমার চোখে বহুবার পানি এসে গেছে ন্যাচারালি। গ্লিসারিন ইউজ করেছি বলে মনে পড়ে না।

 

আংরেজি ইন্টার্ভিয়্যুয়ের শিরোনাম ও লিঙ্ক : Sridevi’s heartfelt interview on doing fewer films and life with Janvi and Khushi

ভূমিকা ও অনুবাদ : সুবিনয় ইসলাম

… …

সুবিনয় ইসলাম
Latest posts by সুবিনয় ইসলাম (see all)

পরের পোষ্ট
আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you