গার্ডিয়ানে-ই মনেহয় দেরিদা মরার পরে উনার একটা ইন্টার্ভিয়্যু শেষ ইন্টার্ভিয়্যু বইলা ছাপা হইছিল। ওইখানে ইন্টার্ভিয়্যুয়ার শেষে কনক্লুশন দিছিলেন এইভাবে, — দেরিদা এখন সারাদিন বাসাতেই থাকেন আর টেলিভিশন দেখেন আর যা দেখেন তার ডিকনস্ট্রাকশন করতে থাকেন। ইন্টার্ভিয়্যুয়ারের এই বলাটাতে আম্রিকান টাইপ বেয়াদবি না থাকলেও বৃটিশ টাইপ তাচ্ছিল্য তো ছিলই। মানে, কেউ টিভি দেইখা সারাক্ষণ ডিকনস্ট্রাকশন করতেছে, এইটা বেশ ফানিই মনে হইছিল বলার টোনটাতে। অ্যানালাইসিস করতে পারার, ব্যাখ্যা করতে পারার, বিচার করতে পারার যে আনন্দ, সেইটা তো অন্য কোনোকিছুতে নাই। ব্যাপারটা এইরকম এক্সট্রিম যে, একটা ডিজিজও হইতে পারে। মানে, এই অ্যানালাইসিস/ডিকনস্ট্রাকশন/জাজমেন্ট হইতেছে কি হইতেছে না সেইটা না, না কইরা যে থাকা যাইতেছে না, সেইটা টু সাম এক্সটেন্ট একটা সমস্যা হইতে পারে মনেহয়।
এই জিনিশটা মনে হইতেছে দ্য হাম্মা স্যংটা দেখার পরে। গানটা তো এমনিতে ভাল্লাগছে, কিন্তু তারপরও অ্যানালাইসিস যে করা লাগতেছে সেইটা এই রোগের কারণেই মনেহয়। তামিল ‘ও কাদহাল কানমানি’ সিনেমার রি-মেইক হিন্দি ‘ওকে জানু’-র গান এইটা। ২১ বছর আগে ১৯৯৫-এ বোম্বে সিনেমাতেই যখন গানটা বাজছিল তখন থিকাই আমার ফেভারিট। এ.আর. রহমান ‘রোজা’ দিয়া শুরু করছেন খালি, তখনই তারে জিনিয়াস ভাবতে আমার কোনো সমস্যা হয় নাই। যদিও ইউনির্ভাসিটিতে ছাত্র ইউনিয়ন কইরা হিন্দি গান গাওয়াটা কবিরা গুনাহ’র মতো ব্যাপার ছিল, কিন্তু আমি গাইতে পারতাম; জিনিয়াস তো জিনিয়াসই, হিন্দি সিনেমার গানের সুরকার হইলেও। এইরকম নন-পলিটিক্যাল বা অ্যান্টি-বাংলাভাষার পজিশন নিতে পারছিলাম। ‘রোজা’-র যেই মিউজিক সেইটা আরো এনহেন্স হইছিল ‘বোম্বে’-তে। আমার কাছে এইটার প্যারামিটার ছিল : ‘রুকমিনি’ ভার্সেস ‘হাম্মা হাম্মা’।
রুকমিনিটা বাজে তা না; রুকমিনিটা ট্রাডিশন্যাল। এইরকম ইরোটিক গানগুলি সব কালচারেই আছে। সেক্সটারে পাওয়ার হিসাবে ইউজ করা হয় তো, যে কে জিতছে আসলে? এই টেনশনটা থাকে। হাম্মার লিরিক্সটাতে প্রশংসা কইরা দখল করার একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু মিউজিক কমপ্লিটলি ডিফ্রেন্ট, যেই জায়গা থিকা ডিল করছে। যদিও বলা যায় আর্বান এস্থেটিক্স, কিন্তু এইটা আসলে গ্লোবাল ফেনোমেনাই। সার্টেন লোকাল কালচাররে পুঁজি হিসাবে ইউজ করা লাগে নাই আর। মুরাকামির ব্যাপারেও আমার এইরকমের অ্যাজাম্পশন আছে যে, জাপানি জিনিশ উনার বেচা লাগে না, মার্কেসরে যেইরকম লাতিন আম্রিকার কালচার বেচা লাগত বা ধরেন কাউরে কাউরে বরিশাল-নোয়াখালী-ময়মনসিংহ বেচা লাগে আর্ট করতে গেলে। এইটা ডিগ্রেডিং একটা ব্যাপারাই আসলে, এই সেন্সে যে, একটা ‘কারণ’ আপনার লাগে যেইটা টু সাম এক্সটেন্ট ইথিক্যাল একটা বাউন্ডারির মধ্যেও আটকাইয়া ফেলে, লেখাটারে। যা-ই হোক …
https://www.youtube.com/watch?v=j4e_DmnoODk
কিন্তু ভিজ্যুয়ালাইজেশন খুব প্যুওর আছিলো বোম্বেরটার। সোনালি বান্দ্রেরে যদিও পছন্দ ছিল আমার; সুন্দরীয় সাবুন নির্মার অ্যাডটাতে বরং বেটার লাগত। এইখানে শেষে তো শরীরে আগুন ব্যাকগ্রাউন্ডে লাগায়া দিয়া বুঝাইতে হয় যে, দূরে কোথাও কোনো সেক্সের ঘটনা ঘটতেছে। নাইন্টিসের হিন্দি সিনেমা বা মিউজিক ভিডিওর এই সমস্যাগুলি আছিলো। যেমন, মোহিত চৌহানের ব্যান্ড ‘সিল্করুট’-এর একটা গান আছিলো ‘ডুবা ডুবা’, লিটারালি পানিতে ডুবানো হয় আর্টিস্টদেরকে, মডেল সহ। বিশ্বাস না-ও হইতে পারে, এইজন্য লিঙ্কটাও দিয়া রাখলাম। একটা রিয়ালিটিরে ইম্যাজিন করা ছাড়া ভিজ্যুয়ালাইজেশন পসিবল ছিল না আসলে ২০/২৫ বছর আগে।
এখন যেমন, একটু হিউমার ছাড়া রিয়ালিটি ক্রিয়েট করা পসিবল না। দ্য হাম্মা স্যঙের শেষে আদিত্য কাপুরের পাছায় যে লাত্থিটা দিলো শ্রদ্ধা কাপুর, এইটুক হিউমার ছাড়া হইতেই পারে না আসলে ঘটনাটা। মানে, শেষে যদি ওরা সেক্স কইরা ফেলত বা জড়াজড়ি কইরা বিছনায় শুইয়া পড়ছে এইরকমকিছু দেখাইত, তাইলে খুবই সিলি একটা ব্যাপার মনে হইত। ২১ বছর আগে বোম্বে সিনেমাতে ধরেন এইরকম হইলে ঠিক ছিল, ভিয়্যুয়ার একটা ঢোক গিইলা সিনটা হজম কইরা ফেলল; কিন্তু এইখানে একটা হাসি দিয়া শেষ করা লাগব আসলে। ফান করতে পারাটা জরুরি না খালি, ফান করতে পারাটাই আসল রিয়্যালিটি। তবে এমনও হইতে পারত, সেক্স-টেক্স করল, তারপরে আদিত্য কাপুররে লাত্থি দিয়া বাইর কইরা দিলো শ্রদ্ধা কাপুর। ওইটা রিয়্যালিটিতে করতেই পারেন শ্রদ্ধা কাপুরেরা, কিন্তু ভিজ্যুয়াল যারা বানান সোশ্যাল রেস্পোন্সিবিলিটির কারণে শো করতে পারেন না, করতে আরো টাইম লাগবে মনেহয়।
আরেকটা মজার ব্যাপার আছে। গানের বিহাইন্ড দ্য সিন ভিডিওটা আমি দেখছি, ওইখানে আদিত্য রায় কাপুর আর শ্রদ্ধা কাপুর দুইজনেই বেশ সিরিয়াস হয়া কন যে, অরিজিন্যাল গানটা অরিজিন্যালের মতোই আছে। এইটা ঠিক রিমেইক না। এই বলাটা ইন্টারেস্টিং। শ্রদ্ধার সাথেই উনারা আগের ভার্শনটারে স্মরণ করতেছেন, কোনো বেয়াদবি নাই এইখানে। নিজেরা নিজেদেরকে নিয়া করতেছেন, কিন্তু আগেরটার সিরিয়াসনেসের সাথে এইটার কোনো সমস্যা নাই। আর এইখানে তো অরিজিন্যালটার আরেকটা ভার্শন হইছে, কিছু এক্সটেনশনও হইছে লিরিক্সে, কিছু জায়গা বাদ গেছে, তো টোটাল ইন্টেন্সিটিটা ওভারঅল একটু নরম করা হইছে। নুসরাত ফতেহ আলী খানের ‘আফরিন’-এরও এইরকম একটা ভার্সন হইছে, কোকস্টুডিওতে; একটু সফট টাইপ। খুববেশি পপুলার হইতে পারে নাই মনেহয় ওইটা। কারণ আফরিন-এ তো আসলে সাবমিশনের কোনো আর্জ নাই, ওইখানে একটা সাবমিসিভ ব্যাপার হয়া গেছে। ঝামেলাই হইছে। এইখানে ‘ফান’টা মনেহয় বাঁচায়া দিছে। রিমেইকের জায়গায় আরেকটা ব্যাপার মনে হইতেছিল, তামিল বা অন্যান্য রিজিওন্যাল ল্যাঙ্গুয়েজের হিন্দি রিমেইক হয় বা হলিউডও জাপানিজ বা জার্মানির, মানে ‘ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ ফিল্ম’ বইলা যে ক্যাটাগরি সেইগুলির, রিমেইক করে। উল্টাটা খুব-একটা হয় না, যেমন হলিউডের কোনো ফিল্মের রিমেইক করে না কোরিয়ানরা বা হিন্দি সিনেমার বাংলা-ভার্শন বানায় না তো কলকাতার ‘বাণিজ্যিক’ ( ) ফিল্ম-মেকাররাও বা বানাইলেও বলেন না; মে বি রয়্যালিটির টাকা দিতে পারবেন না বইলাই বা ছোট অডিয়েন্স থিকা বড় অডিয়েন্সের কাছে তো যাওয়াই যায়, বড় অডিয়েন্স থিকা ছোট অডিয়েন্সের কাছে যাওয়ার মধ্যে বলার কিছু নাই। বা যা আছে, সেইটা শরমেরই।
হাম্মার আরেকটা ভার্শন হইছিল। ‘রেস্পেক্ট ফর উইমেন’ ক্যাম্পেইনের লাইগা হ্যাভেলিস কোম্পানি বানাইছিল। যে, কিচেন অ্যাপ্লাইয়েন্স দিয়াও গান গাইতে পারেন নারীরা। একটা পোলা গিটার লইয়া বইছে, কিন্তু কর্ডটা ঠিকমতো বাজাইতে পারে নাই, আরেক পোলা না-বুইঝা সেইটার তারিফ করতেছে। তো, ভাসুদা শর্মা পপকর্ন লইয়া আইসা ঠিকটা বইলা দেয়; তখন পোলাটা চেইতা গিয়া কয়, আমার লাইগা স্যান্ডউইচ বানায়া নিয়া আসো। ভাসুদা শর্মা স্যান্ডউইচ না-বানায়া গানটা গাইয়া ফেলেন আর পোলা দুইটাও পরে জয়েন করে। হ্যাপি এন্ডিং হয়। নারীরাও গান গাইতে পারেন এই টাইপের একটা ফেমিনিজিম এস্টাব্লিশ হয়।
‘মজাটা হইল শেষে ভাসুদা শর্মা পোলাটারে কয়, — যাও বাচ্চু [যদিও বেটা সে, মাইয়ার কাছে হারছে বইলা বাচ্চা হয়া গেছে সে; ফান কইরা বলছে শে, আমিও ফানটারেই লোকেট করতে চাইতেছি যে বেটা হিসাবে আপনি একজন মাইয়ারে স্যান্ডউইচ বানায়া দিতে পারেন কি না? বাচ্চা হওয়া লাগে না একটু?] আমার লাইগা স্যান্ডউইচ বানায়া নিয়া আসো। কিন্তু পোলাটা পয়লা ধরতে পারে না, পরে তার দোস্ত জিনিশটা ধরায়া দেয়; তিনজনেই হাইসা দেয়। এই ভুইলা যাওয়ার ব্যাপারটা সিগ্নিফিক্যাক্ট মনেহয়; মানে, বেটা হিসাবে এইরকম বাজে বিহেভ আপনি করতে পারেন আর পরে ভুইলাও যাইতে পারেন। এইটা জায়েজ আছে। আর আমার ধারণা, শেষে ব্যাপারটা এইরকম যে, পোলাটারে স্যান্ডউইচ বানানো লাগে না আর। বা হয়তো বানাইতে যাইতে পারে, মাইয়াটা বলব যে, — না না, লাগব না, থাক! এইরকম ‘মাফ’ কইরা দিতে পারতে হয়, এইটা উইমেনলি বিহেভিয়ার আসলে।
যদি সত্যি সত্যি পোলাটারে দিয়া স্যান্ডউইচটা বানানো হয়, তাইলে অডিয়েন্সই কইব, — ব্যাপারটা ঠিক হয় নাই, রিভেঞ্জ হইছে। তো, হাসির মধ্যে আটকাইয়া দিয়া শেষ করাটাই বেশি ‘পোয়েটিক’ হইছে।
মানে, হাম্মা গানটা আসলে ভালো। সেক্সুয়ালিটিটারে এক্সপ্রেস করতে পারাটা বেটার সবসময়। ইউটিউবে নতুন ভার্শনটাতে ভিয়্যু দেখলাম ৩ কোটির উপরে আর পুরানটার সবগুলি লিঙ্ক মিলাইলেও মনেহয় ৫০ লাখ হইব না। ব্যাপারটা এইরকম না যে, ভিয়্যুয়ারশিপ বাড়তেছে, বরং আরো আরো বেশি মানুষ আমরা একটা জায়গাতে জড়ো হইতেছি, এইটা যদি একটা লিনিয়ারনেসের দিকেই মার্চপাস্ট করার ঘটনা হয়, তাইলে খুববেশি এনকারেজিং কিছু হওয়ার কথা না আসলে।
… …
- এন্ড্রু কিশোর আর ক্যাসেটে বন্দী আমাদের গানের জীবন || ইমরুল হাসান - July 22, 2020
- বাংলাদেশি সিনেমা : অ্যা ব্রিফ হিস্ট্রি ১ || ইমরুল হাসান - July 15, 2020
- আবারও কবিতার নয়া বই || ইমরুল হাসান - September 14, 2019
COMMENTS