আজকাল একটা মারাত্মক বদ প্র্যাক্টিস্ দেখতে পাই নিউজ্ মিডিয়াগুলোর মধ্যে, বাংলায়, একেবারে আননেসেসারি তিন-কথার মাথায় ব্র্যাকেট দিয়া মানুষের বয়স উল্লেখ করার বদহ্যাবিট। দরকার হলে তো বয়সোল্লেখ বাঞ্ছনীয়, করা হয়েছে চিরকালই বয়সোল্লেখ ব্র্যাকেটে কিংবা ন্যারেশনে রচনার, তবে বেকার একজন মানুষকে বয়স মনে পড়িয়ে দেয়াটা আমাদের যেন গণকর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। রেস্পোন্সিবিলিটি বলতে এই দুইটা সাকুল্যে, এক হচ্ছে ‘আছে’ আর ‘নাই’ নিয়া মারামারি, আর দুই হচ্ছে ব্র্যাকেটে বেচারা বান্দাদের বয়সোল্লেখ। তবে এক্ষেত্রে আদমের অবস্থা নাজুক বেশি, হাওয়ারা গাড্ডায় না-পড়লে রেয়াত পান বয়সোল্লেখ থেকে। দেশের সেলিব্রিটি ফিমেলদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা লক্ষণীয়। অন্তত ডজনখানেক শোবিজনেসের ষাটোর্ধ্ব (বয়স আন্দাজমতো) ফোটোজিনিক ক্যামেরাফ্রেন্ডলি ফিমেল অ্যাক্টোর-সিঙ্গার মুহতারিমাদিগের উইকিপৃষ্ঠায় আঁতিপাঁতি খুঁজেও বয়সোল্লেখ বর্তমান প্রতিবেদকের আসে নাই নজরে।
এইটা বাজে একটা খাসলত এবং বদমায়েশির চূড়ান্ত, অপ্রয়োজনে নাগরিকের সম্মতি বিনে এইজের উল্লেখ সর্বসমক্ষে, তবে কেবল গণমাধ্যম নয় এমনকি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলনের পরিমণ্ডলেও বয়সোল্লেখ করার মাধ্যমে হেয় প্রতিপন্ন করা বা হাসিঠাট্টার টেন্ডেন্সি ভীষণ। সমাজে ব্যাপারটা আরও পুরনো ও অলমোস্ট আদিকাল হইতেই বিরাজিত। প্রবাদ-প্রবচনগুলোর ভাণ্ডার চোখ বুলায়ে গেলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে। অ্যানিওয়ে। এখানকার এই নিবন্ধে সেই রিডিক্যুলাস্ বিহেইভিয়্যরটাই করা হলো অমিতের পাশে লাবণ্য না-বসিয়ে শেষের কবিতা বসিয়ে। এর একটা কারণ অবশ্য অবর্তমান নয়, সেইটা যা হোক, সাফাই দিয়ে গেলেও দোষ খণ্ডানো হয় না।
আমরা দেখছিলাম ‘ওয়াজির’, দেখতে দেখতে এবং দেখা সাঙ্গ করে এহেন কথামালা সাজাতে লেগেছি। জিনিশটা ছাপিয়ে রাখার নয় যে বাচ্চানজির বয়স হয়েছে। এই বয়সে যেসব রোলে কাস্ট হচ্ছেন তিনি এবং যে-রেটে ব্যাটিং করছেন তাতে সাচিনজিও দশবার হা হয়ে গ্যালারিতে দাঁড়াবেন ফের বসবেন। ‘ওয়াজির’ আস্তটা বস্তুত অমিতের কবিতা। বাচ্চান ওর্ফে অমিতজিকে কেন্দ্র করেই সিনেমা রাস্তায় নেমেছে, রেস্ লড়েছে, শেষমেশ ঘন ক্ষীর অবশ্য বলা যাবে না ম্যুভিটিকে। কেন, বলতেই তো বসেছি।
কিন্তু অমিতাভ বচ্চনকে কেন্দ্র করে কেচ্ছান্যারেটিভ গড়ে তোলা আজকে থেকে শুরু হয়েছে এমন নয়। এর সিলসিলা আশির দশক থেকে। অ্যাংরি ইমেইজের একটা নায়কছক কালক্রমে এতদঞ্চলে গেঁড়ে বসেছে এই হিরোরই পত্তনি মারফতে। এরপর লম্বুজিকে কেন্দ্র করেই সিনেমাস্ক্রিপ্ট রচিত হয়েছে, বাকি কলাকুশলী এসেছেন ফিলার হিশেবেই মোস্টলি, এবং ক্রমশ ছকটা সাফল্য পেলে এইটাই ম্যাস্যালা ম্যুভির দাঁড়া হিশেবে মাথার সঙ্গে ধড় হয়ে দেখা দেয়। বেঙ্গলে, তেলেগুতে, তামিলে সর্বত্র গোলেমালে এই সূত্র প্রধান হয়ে ওঠে কম্যার্শিয়্যাল্ ভেঞ্চারগুলোর ক্ষেত্রে। এইটা হিস্ট্রি এবং অমিত এই হিস্ট্রির পথিকৃৎ।
যৌবনে কেটি কিংবা লাবণ্যপ্রভাবে, যে-কারণেই হোক, অমিতের ইমেইজ্ ছিল গতানুগতের, ইলিয়াসের গল্পভাষায় এইটেকে মনোরম মনোটোনাস্ বলা যায়। মাস্তানি ছিল বটে, একঘেয়ে এখন লাগলেও তখনকার দিনে এর কদরদারি করেছে লোকে টিকিট কেটে প্রেক্ষাগার উপচিয়ে, যেটুকু সুযোগ অমিতজি পেয়েছেন অভিনয় দেখিয়েছেন তখনও। বক্স ফাটিয়েছেন একাদিক্রমে, কিন্তু অভিনয়ের স্কোপ্ যৌবনে তেমন পেয়েছেন বলিয়া আজকে দেখে মনে হয় না আর। যতই ‘সিলসিলা’, ‘আন্ধাকানুন’, ‘মর্দ’, ‘শোলে’, ‘দিওয়ার’, ‘জঞ্জির’ বলুন, অমিতাভের সত্যিকারের অভিনয় শুরু হয়েছে সেইসব ব্লকবাস্টারগুলোর পরে এইকালে এসে, এই বয়সে, লাস্ট দুই ডিকেড ধরে। নব্বই দশকে তিনি কিছুটা টালমাটাল হালতের ভিতর দিয়ে গেলেও অচিরে সামলে নেন। ধরাশায়ী হয়েছিলেন চাঁদ সদাগর বনতে যেয়ে এবিসিএল দিয়ে, ব্যাঙ্ক্রাপ্ট হয়ে গেছিলেন পুরো, ধরাধামে ফের প্রত্যাবর্তিলেন অভিনয় বা শোম্যানশিপ্ লগ্নি করে কেবিসিপি দিয়ে। অ্যানিওয়ে। প্রথম দশকের কবি কি বলা যাবে তাকে? নাকি দ্বিতীয় দশকের? আর তৃতীয়, অনোয়ার্ডস্, ওয়েইটিং। তবে দশকসৈন্যরা বাচ্চানজিরে দলে ভেড়াইলে বেশ হতো।
‘ওয়াজির’ সিনেমায় ফারহান আখতার থাকলেও বোবার মতোই ছিল অস্তিত্ব তার। খুব বেশি কিছু করার ছিল না তার, চেসবোর্ড কন্ট্রোল্ করেছেন শেষের কবিতার অমিত, বেচারা ফারহান মির্জার করার কিছুই ছিল না তাতে, ঠাকুরের কারসাজি তথা ডিরেক্টরের পক্ষপাত তো অমিতেরই পক্ষে। এমনকি লাবণ্যেরও দরকার ন্যূন রবিনাথের রাজানাট্যে। এতে আমরা আপত্তি করি না, কারণ কবিই তো ‘সত্য রাজা’, ঠাকুরের কবিপক্ষপাত আমরা সাপোর্ট করি, আর কে না জানে যে অমিত নিজেও কবিতানুরাগী এবং ইন্ রিয়্যাল্ লাইফ কবিতনয়।
এই সিনেমার নায়িকার ব্যাপারে, যদিও নায়ক বেচারার মতোই কিংকেন্দ্রী আনাগোনা তারও ম্যুভি জুড়ে, অদিতি রাও হৈদরি, একটা কথা না-বললেও হয় যে এ-প্রতিবেদকের নেক্ নজরে রয়েছেন তিনি। ইনি বিশেষ একটা ছাঁচে ফেসকাটিং নিয়া আল্লার দুনিয়ায় এসেছেন, ঠিক প্রথাগত রূপঝরা না-হলেও আনকনভেনশ্যন্যাল্ বিউটি বোধহয় এই জিনিশটাকেই বলে বেত্তাদের নজরে। অ্যানিওয়ে। এই রিপোর্টার কিছুকাল হয় বাচ্চাকাচ্চাদেরে নিয়া পাখিদোকানে গেছিল অবকাশবৈকালে, সেখানে একজোড়া পায়রার মধ্যে একটার নাক-চোখ হুবহু হৈদরির সঙ্গে মেলানো। যদিও অদিতি হৈদরির গোটা-চারেক ম্যুভিতে স্বল্পব্যাপ্তির অভিনয় দেখা হয়েছে রিপোর্টারের, এরপরও বলতে বাধ্য যে এর নাম হৈদরি না-হয়ে কবুতর বা সিলেটিয়া বাচনে কৈতরি হলেও মন্দ ছিল না। কালক্রমে একটা ভালো অবস্থানে যেতে সক্ষম হবেন ইনি, রাশি না-জেনেই রায় দেয়া হলো অবশ্য, কিন্তু নজর এবং নিশানা না-বিগড়ালেই হয়। ইন্ডাস্ট্রির যা অবস্থা, কার মতি কখন বিগড়ায় কে বলতে পারে। এমনিতেই দিপিকা আর কাঙ্গানা ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, রাধিকা আপ্তে এবং আরও কত ট্যালেন্টের রো-কলাম্ কাতারে কাতারে, এদিকে ঘাড়ের নিকটে মিষ্টি নিঃশ্বাস ফেলতে সোনামও কম যায় না, বা আলিয়া।
তালগোল বাদ দিলে ‘ওয়াজির’ মোটের ওপর কেমন সিনেমা? ভালো না, আবার মন্দও বলা যাবে না। কাশ্মিরকাণ্ড ম্যুভি জুড়ে থ্রিলারের প্রয়োজনে এলেও খুব-একটা দানা বাঁধে নাই ব্যাপারটা। স্থানিক রেফ্রেন্স যখন রাখাই হলো ম্যুভিতে, সেক্ষেত্রে শেষমেশ কেন মনে হবে যে এই জায়গায় কাশ্মির না-হয়ে স্রেফ কদমতলি হলেও ক্ষতি কিছু হতো না কাহিনিগত। সৎরাঞ্জ তথা দাবা যেই সিনেমার বুনট বেঁধেছে, চেসবোর্ড ঘিরিয়া সাস্পেন্স এবং ক্লাইমেক্স উঠানামা করেছে, কেবল দাবার কিস্তিগুলো খুব দ্রুত মাতানো হয়ে গেছে। এই সিনেমার ছন্দ, লয় এবং গতি কিঞ্চিৎ ধীর হলেই বেহতর হতো বলিয়া আন্দাজ করি। দুনিয়ার ঘোড়া দ্রুত চলুক, কিন্তু দাবার ঘোড়া বা মন্ত্রী-উজির অত উর্ধ্বশ্বাস ছুট লাগালে তো মুশকিল।
বইটাতে সেই-অর্থে গানবাজনা নাই, কিংবা নাচও, কিন্তু গোটা-চারেক গান তো শোনা হয়ই। কিংবা জারা হট কোনো সিনসিনারি তিনব্যাটারির টর্চ মেরেও খোঁজ মেলে না। আইটেম্? চোখে/মনে তো পড়ছে না। বাচ্চানজি গান গেয়েছেন, দু-দুটো, লিপ্ লাগানো নয়, প্লেব্যাক্ রীতিমতো। সংবাদ তো নতুন নয়। আবৃত্তি কিংবা গানা অ্যামিট রয়, নাইন্টিন্ নাইন্টিনে এর জন্মপ্রকাশ, কিংবা অমিতাভ বচ্চন, বর্ন নাইন্টিন্ ফোর্টি-টু, কোনোকালেই তো মন্দ করেন নাই। কাভি কাভি ম্যেরে দিল্ ম্যে খায়াল্ আ-তা হ্যায় … কেবল এইটাই তো নয় ইতিহাসে এককভাবে, এই সিনেমায় একটা আস্ত গান ম্যুভির অন্তিমে গেয়ে যেতে দেখি এবং শুনি কান পেতে শেষের কবিতার এই স্মরণীয় সংগীতসমুজদার কবিতনয়টিকে। এছাড়া আর বিশেষ কি বলি। কিস্ নাই, লিপলক্ বা ইভেন্ ডিস্ট্যান্ট কিস্ কিচ্ছুটিই ঠিক সেই-অর্থে নেই, হিন্দি কিসিং তো অলমোস্ট ফ্রেঞ্চের কাছাকাছিই যেতে লেগেছিল। পরিতাপের বিষয়, ইমরান হাশমিও সম্প্রতি কিসিং পরিহার করার পণ নিয়া আগাচ্ছেন। কম্যার্শিয়্যাল্ হিন্দি সিনেমার ফিউচার নিয়া এই রিপোর্টার যারপরনাই চিন্তিত। জনৈক সংসারবৈষয়িক বন্ধু সদুপদেশ বিতরিলেন, মিয়াঁ, আঙুরতরু লতিয়ে দাও কুটিরের চালায়, আঙুর শুকাইলেই কিসমিস। শোভনলালের মতো সফল লাবণ্যজয়ীর সঙ্গে বেশি কথা বাড়ানো অনুচিত। মন্ত্রীমিনিশ্টার সান্ত্রীসেপাইদের লাইফে কি কিসিং থাকতে নেই? কী মুশকিল! খামোশ!
Wazir ।। Crime Thriller Film in Hindi ।। Directed by Bejoy Nambiar ।। Produced by Vidhu Vinod Chopra ।। Written and Edited by Abhijat Joshi and Vidhu Vinod Chopra ।। Starring by Amitabh Bachchan, Farhan Akhtar, Aditi Rao Hydari, Manav Kaul, Neil Nitin Mukesh & John Abraham ।। Running Time 104 Minutes ।। Released in 2016
ম্যুভি রিভিয়্যুড বাই জাহেদ আহমদ
… …
- লঘুগুরু - November 8, 2024
- উলট কমল - November 7, 2024
- তথ্যপ্রযুক্তি, নিসঙ্গতা, নির্লজ্জতা, মননশীলতা ও সৃজনশীলতা - October 29, 2024
COMMENTS