বলেন হেলেন মিরেন (৩)

বলেন হেলেন মিরেন (৩)

পেইন্টারদেরে দেখবেন নিজের চিত্রকর্ম নিয়া ব্যাখ্যাবিশ্লেষণ করতে তেমন-একটা আগ্রহী না। তাদেরে হামেশা বলতে শুনবেন, “আপনি যা ভাবতে চান বা ভালো লাগে যা ভাবতে এই চিত্রকর্ম তা-ই।” আমার মনে হয় এইটাই চিত্রকরদের অভিপ্রেত। তারা চান চিত্রভোক্তাদের অবচেতনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাইতে, বেহুদা ভাবনার আরোপিত কুস্তি তারা চান না, একজনের কল্পনায় তারা চান না পথনির্দেশকারী হতে।

কাপড়চোপড় পরার ব্যাপারটা মানুষের একটা আজব পাগলামি। ধরেন যে ফ্যুটপাতের সস্তা গাট্টিদোকান থেকে একডলারে একটা জ্যাকেট কিনতে পারবে একজন, আবার হাজার ডলারে একটা জ্যাকেট খরিদ করবে কেউ ধরেন শহরের নামি ব্র্যান্ডের আউটলেট থেকে। এখন আপনি যদি এই দুই জ্যাকেটওয়ালারে শহরের রাস্তায় ভিড়বাট্টায় হেঁটে যেতে দেখেন জ্যাকেট গায়ে চাপায়ে, বুঝতে পারার সম্ভাবনা খুবই কম কোনটা হাজার আর কোনটা মাত্র একডলার।

পার্কিন্সন রোগটা অত্যন্ত মন্থর অথচ অনিবার্য একটা নিয়তির মতো। রোজকার জীবনে এর সঙ্গে মানায়ে চলা ভারি শক্ত। সবচে কঠিন যে ব্যাপারটার সঙ্গে এই রোগের ভিক্টিমদের যুঝতে হয় তা এ-ই যে, এরা দ্বিধা কাটায়ে উঠতে পারেন না হাতে-থাকা কাজটা তারা করতে পারবেন নাকি পারবেন না।

টগবগে তারুণ্যের বয়সে তুমি বিস্মিত হয়ে চারপাশে তাকায়ে ভাবতে যে এত এত বুড়া মানুষগুলা দুনিয়ায় করেটা কি। বিস্তর দিনগুজরানের ভিতর দিয়া তারা যে একটা শান্ত প্রজ্ঞা হাসিল করেছে তুমি তা মানতে চাইতে না। ভাবতে যে এদের প্রজ্ঞাপূর্ণ অভিজ্ঞতা তোমার কোনো কাজেই আসবে না। ভাবতে তারুণ্য হচ্ছে একটা প্রায় অপরিবর্তনীয় দশা। বুড়োদের অভিজ্ঞতাভরা কাহিনি শুনতে তুমি তাদের ধারকাছ মাড়াতে না। থ্যাঙ্ক গড। শুকরিয়া আল্লার দরবারে যে তরুণেরা বাইরে বেরোয়, মিছিলমিটিং করে, এবং বল্গাহারা দানব পুঁজিবাদ বা আরও দুনিয়ার এটা-সেটা নিয়া গায়েগতরে ব্যস্ত ও তৎপর থাকে।

অল্প বয়সেই জিনিশটা আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই জীবনের ময়দানে আমরা হচ্ছি দুইটা আলাদা মানুষ। এবং আমাদের জীবন ফুরায়ে আসবে একদিন কিন্তু কেউ কাউরে চিনতেই পারব না।

যখন তুমি ছিলে বয়সে তরুণ এবং দেখতে জেল্লাদার সুন্দর, ছিলে একটা সাংঘাতিক প্যারানোয়েড।

রানীর দৈনন্দিন জীবনে যে নিয়মনীতির বহর, আমার পক্ষে হ্যান্ডল করা প্রায় সম্ভবই নয়। আমি কেন শুধু, খুব অল্প লোকই এত বিধিবিধানের বালাই সামলাতে পারবে। এইটা, রানীর জিন্দেগিটা, আদতে একটা খাঁচা। সোনালি খাঁচা। রানীর ভূমিকায় যিনি থাকেন তার জীবন অভিশপ্ত একটা কারণেই, আর সেটা এ-ই যে তিনি একলা হতে পারেন না হাজার চাইলেও। সবসময় সেপাইসান্ত্রীরা তারে ঘিরিয়া রাখে।

চয়ন, সংকলন ও অনুবাদন : বিদিতা গোমেজ

… …

বিদিতা গোমেজ

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you