বাংলার অনুবাদকালচার বড্ড টপচার্টভিত্তিক, ব্রাদার!  || সুমন রহমান  

বাংলার অনুবাদকালচার বড্ড টপচার্টভিত্তিক, ব্রাদার!  || সুমন রহমান  

আমাদের দেশের অনুবাদকালচার টপচার্টভিত্তিক। অর্থাৎ যে বই নোবেল বা বুকার পেল, তার ওপর হামলে পড়েন অনুবাদকেরা। তাছাড়া কেউ কেউ আছেন, কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি নন, সকালসন্ধ্যা নামকরা লেখকদের নিয়ে থাকেন। মার্কেজ, বোর্হেস, লোরকা, কাফকা, মুরাকামি, সো অন অ্যান্ড সো ফোর্থ। ফলে অনুবাদকের ব্যক্তিত্ব বুঝবার উপায় থাকে না। রুচি তো দূর অস্ত। যিনি মার্কেজ অনুবাদ করেন, একটা যাদুবাস্তব ভাব নিয়া চলেন। যিনি বোর্হেস করেন, তিনি ধরেন অধিবিদ্যক ভাব। অনুবাদ কঠিন কাজ। সেটা তারা করেন। কেউ কেউ যথেষ্ট যত্নের সাথেও করেন। কিন্তু এই বাজারি টপচার্ট আর অ্যাওয়ার্ডভিত্তিক নির্বাচনী কালচারে অনুবাদকের রুচি বুঝবার উপায় নাই। বাংলাদেশের খুব কম অনুবাদককেই অনুবাদের একটি নান্দনিক ভূমিকা দিতে দেখেছি এ জীবনে।

আলীম আজিজ অনুবাদ করেছেন নাজিম হিকমতের উপন্যাস। নাজিম হিকমত পুরনো দিনের কবি। একসময় বহুলপঠিত ছিলেন। তাঁর উপন্যাস আছে, এই তথ্য অনেকেরই জানা নেই। নাজিম হিকমতের কবিতা পোস্ট-সোশ্যালিস্ট দুনিয়ায় হয়তো খুব বেশি মিনিং ক্যারি করে না। কিন্তু প্রচুর নস্টালজিয়া তৈরি করেছে তার কবিতা। ফলে তার উপন্যাস বিষয়ে অনেকেরই কৌতুহল হয়। আলীম কতখানি ভালো অনুবাদ করেছেন সেটা পড়বার পরেই বলা যাবে। অবশ্য তিনি এমনিতেই দেশের সেরা অনুবাদকদের একজন। কিন্তু আমার সবচে গুরুত্বপূর্ণ লেগেছে আলীমের নির্বাচন। স্বকীয়, সমসাময়িক, কিন্তু টপচার্ট আর হাল-ফ্যাশনের ডামাডোলমুক্ত। অথচ কী আশ্চর্য, বেরোবার সাথেসাথেই পাঠকের মনোযোগের কেন্দ্রে চলে গেছে এ বই।

অনুবাদক মানেই কেবল ভাষার কনভার্টার না। তার নির্বাচন পঠনকালচারকে প্রভাবিত করে। সাহিত্যকেও। যারা ক্রমাগত মার্কেজ-বোর্হেস-মুরাকামি-লোরকা-কাফকা ঘষাঘষি কিংবা পুনর্ঘষাঘষি করছেন, আর বাংলা অ্যাকাডেমির অনুবাদ পুরস্কারের লাইনে খাড়ায়া আছেন, তারা আরেকটু স্বাধীন চিন্তার অধিকারী হলে, আরেকটু নান্দনিক বোধসম্পন্ন হলে আমাদের অনুবাদসাহিত্য আরো বিচিত্র হয়ে উঠতে পারত।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you