ওরে আমার পাগল মন
চিন্তাভাবনা কইরা তুমি
দিও তোমার মন
আপন আপন করিস যারে
সে তো আপন নয়
ওরে আমার পাগল মন।।
এদিক-ওদিক চাইলে তুই দেখবি কতজন
ঘর হারাইয়া পথ চইলা দেখবি এ-ভুবন
আসল মন পাইতে হইলে
সাধন প্রয়োজন।।
ভবেরই এ-মায়াজালে মন পুড়াইয়া হায়
সোনা হইলে পরে তারে সবাই পাইতে চায়
একজীবনের জগৎটারে
জীবন দিয়ে ভালোবেসে
আসল মন পাইবি তুই ঐ জগতে হয়
ওরে আমার পাগল মন।।
কথা ও সুর : রিদওয়ান চৌধুরী পঞ্চম ।। ব্যান্ড : আর্ক
এই গানটির সৃষ্টিরহস্যটা কিন্তু চমৎকার। আর্ক-এর কেউই ভাবেননি যে এই গানটিই তারা করবেন এবং গানটি হয়ে যাবে তাদের জনপ্রিয় গানগুলোর অন্যতম। কেননা এই গানটির শুরুটা করেছিল অন্তরালের এক মানুষ। আর অজ্ঞাত সেই অন্তরালের মানুষটিই হয়তো কখনো কল্পনাও করেনি যে তার মুখ থেকে গুনগুনিয়ে-বেরিয়ে-আসা গানটিই এক-সময় সব মানুষের মুখে মুখে ফিরবে।
আর্ক-এর প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য বেজিস্ট পঞ্চমের বোন সামিনা চৌধুরী। সামিনার বাসাতে যে কাজের মহিলাটি ঘর ঝাড়ু দেয়ার কাজ করতেন, তিনিই কখনো ঘর ঝাড়ু দেয়ার সময় কিংবা কখনো-বা ঘর মোছার ফাঁকে, কখনো-বা অন্য কোনো কাজের অবসরে গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠতেন “ওরে আমার পাগল মন / চিন্তাভাবনা কইরা তুমি দিও তোমার মন”। সেই বাসাতেই পঞ্চম একদিন কাজের বুয়ার গুনগুনিয়ে-গাওয়া গানের মুখটা শুনে ফেলেন। শুনেই কথাটা ভালো লেগে যায়। তাই মহিলার গাওয়াটা গিটারের কর্ড ধরে একদিন কম্পোজ করে ফেলেন।
যাক, শুরু যখন হলো শেষ তো হবেই। কাজে লেগে গেলেন পঞ্চম। সামিনার স্বামী স্বপন চৌধুরীর সহযোগিতায় গানের প্রথম অন্তরা “এদিক-ওদিক চাইলে তুই দেখবি কতজন / ঘর হারাইয়া পথ চইলা দেখবি এ-ভুবন / আসল মন পাইতে হইলে সাধন প্রয়োজন” পর্যন্ত লিখে সুরও করে ফেললেন। অতঃপর গানের বাকি অংশ “ভবেরই এ মায়াজালে …” পঞ্চম নিজেই লিখলেন। হয়ে গেল সম্পূর্ণ গান।
অবশেষে কম্পোজিং করে আশিকুজ্জামান টুলু-র কণ্ঠে রেকর্ডিং করা হলো স্টুডিওতে। সবশেষে তাজমহল অ্যালবামে ফিতাবন্দি করে উপহার দেওয়া হলো শ্রোতাকে। শ্রোতাও ভিন্ন আমেজের এই গানটি গ্রহণ করল বিস্ময়াভিভূত হয়ে। তাই আর্কের হিট গানগুলোর মধ্যে এই গানটি হয়ে যায় অন্যতম একটি গান যা আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে, কেউবা আবার নিজের অজান্তেই কখনো কখনো গেয়ে ওঠেন ‘ওরে আমার পাগল মন’ … আর অজ্ঞাতই থেকে যায় সেই কাজের বুয়াটি।
- ফিচার রচনায় এম. এস. রানা ও রাসেল আজাদ। অনুলিখন প্রক্রিয়ায় ড্রাফটেড রচনাটা ফার্স্ট পাব্লিশ হয়েছিল ২০০০ খ্রিস্টাব্দে একটি বিনোদনপাক্ষিকের ঈদসংখ্যায়। আনন্দভুবন সেই বিনোদনপাক্ষিকের নাম। প্রথম প্রকাশের স্থান ও কাল : আনন্দভুবন, বর্ষ ৪ সংখ্যা ১৬, ০১ জানুয়ারি ২০০০।
… …
- ফেঁসে-যাওয়া ফিতায় ফিলিংস ও নগরবাউল দিনগুলি || ইলিয়াস কমল - October 3, 2023
- চন্দ্রাবতীর পুত্রগণ :: পর্ব ২৬ || শেখ লুৎফর - September 28, 2023
- গ্রাসরুটসের গান, অনিয়মিত অসাহিত্যিক অবদমনাখ্যান ১৩ - September 26, 2023
COMMENTS