স্বপ্নচেতনায় শিস দেয় রেনেসাঁ || নকীব খান

স্বপ্নচেতনায় শিস দেয় রেনেসাঁ || নকীব খান

ভালো লাগে জ্যোৎস্নারাতে
মেঘ হয়ে আকাশে ভাসতে
ধানের শীষে বাতাস হয়ে
কিষাণীর মন ছুঁয়ে যেতে
ভালো লাগে রোদ হয়ে
ওই পাখির ডানা ছুঁয়ে খেলতে।।

আমার জানালায় উদাস দুপুর
কবিতার বই খুলে দেখছি
গায়ের সে-পথে জামের মুকুল
পড়ে আছে পাকা লাল বট ফল
এক গরুর গাড়ি সেই-সে পথে
ক্লান্তির ছাপ রেখে চলছে।।

সেগুন কাঠের ওই দরোজা ভেঙে
বিকেলের রোদ এসে থামলে
আমার কবিতা শুকসারি হয়ে
স্বপ্নচেতনায় শিস দেয়
আমি পিয়ানোতে হাত রেখে
ভালোলাগা সব ধরে রাখছি।।
কথা : ডাক্তার মোহাম্মদ আরিফ ।। সুর : নকীব খান ।। ব্যান্ড : রেনেসাঁ

প্রায় চৌদ্দ-পনেরো বছর আগের (বর্তমানে এই গানের বয়স প্রায় বত্রিশ বছর — গানপার)  কথা। আমি আর ডাক্তার আরিফ ট্রেনে করে এক বিকেলে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ফিরছি। দু-জনেই জানলা দিয়ে তাকিয়ে তন্ময় হয়ে দেখছিলাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য। দেখছিলাম, ধানক্ষেতের উপর দামাল হাওয়ার কী অক্লান্ত ছোটাছুটি! ধানগাছগুলো যেন সেই হাওয়ার পরশ নিতে কখনো শুয়ে পড়ছিল, আবার কখনো-বা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ছিল। দূরে নীল আকাশের বুকে উড়ে চলছিল কিছু পাখি আর তাদের ডানায় উছলে পড়ছিল পড়ন্ত বিকেলের সোনালি আলো।

রেনেসাঁএসবকিছু দেখতে দেখতেই ডা. মোহাম্মদ আরিফ আর আমি যেন খানিকটা উদাস হয়ে গেলাম। ডা. আরিফই এক-সময় লিখে ফেললেন, “ধানের শীষে বাতাস হয়ে / কিষাণীর মন ছুঁয়ে যেতে / ভালো লাগে রোদ হয়ে / ওই পাখির ডানা ছুঁয়ে খেলতে”  — এই কথাগুলো। তারপর ক্রমশ যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেল তখনই আকাশের বুকে আস্তে আস্তে হেসে উঠল একখানা চাঁদ, আর সেই চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠছিল ভেসে-থাকা মেঘগুলো। তখনই লেখা হয়েছিল “ভালো লাগে জ্যোৎস্নারাতে মেঘ হয়ে আকাশে ভাসতে” ।

প্র্যাক্টিসের সময় গানের স্বার্থেই পরে-লেখা এই লাইনটিকে গানের প্রথম লাইন হিশেবে নেওয়া হয়। এরপর আর ট্রেনে নয়, ঢাকায় এসে এই গানটিকেই সুর করে কম্পোজ করে ফেলি। গানের মুখটা তো ওই ট্রেনেই লেখা হয়ে গেল। বাকি অন্তরাগুলো ঢাকাতে বসেই আস্তে আস্তে লিখে ফেলেন ডাক্তার আরিফ।

দ্বিতীয় অন্তরাটুকু মোটামুটি একটা ঘরের অবয়ব ফুটিয়েছে, যে-ঘরটাতে বসে কাজ করছি, কবিতা লিখছি বা পিয়ানোতে হাত রেখে মনের কথাগুলোকে সুরের বাঁধনে বেঁধে রাখছি। এমনি কতকগুলো ভালোলাগার ব্যাপার যা আসলে বলে বোঝাবার নয়। এখানে আমার একান্ত নিজস্ব একটা ইনফ্লুয়েন্স কাজ করেছে।

মোটামুটি ৮৪-৮৫ সালের দিকেই গানটি শুরু করলেও অ্যালবামের জন্য রেকর্ডিং করা হয় প্রায় ৮৭-৮৮ সালের দিকে সারগাম স্টুডিও  থেকে।

  • রেনেসাঁর নকীব খান ‘ভালো লাগে জ্যোৎস্নারাতে’ গানের এই জন্মকথা জানিয়েছেন ২০০০ খ্রিস্টাব্দে এম. এস. রানা ও রাসেল আজাদ অনুলিখিত একটি ফিচার-আর্টিকেলে। এইটা ছাপা হয়েছিল তৎকালীন জনপ্রিয় বিনোদনম্যাগাজিন পাক্ষিক আনন্দভুবন-এর ঈদসংখ্যায়। গানপারে প্রকাশকালে নকীব খান কর্তৃক ব্যক্ত কথাগুলোর একটা বাড়তি শিরোনাম (‘স্বপ্নচেতনায় শিস দেয় রেনেসাঁ’) জুড়ে দেয়া হয়েছে শুধু। রচনাংশটুকু প্রথম প্রকাশের স্থান ও কাল : আনন্দভুবন, বর্ষ ৪ সংখ্যা ১৬, ০১ জানুয়ারি ২০০০।

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you