দহনের দাহ্য পদার্থ || ইমরুল হাসান

দহনের দাহ্য পদার্থ || ইমরুল হাসান

এইটা একটা সাংবাদিকতামূলক সিনেমা। মানে, সংবাদপত্রের নিউজ কি-রকম হওয়া উচিত এইরকম সাজেশন ছাড়াও, দেখানোর ভঙ্গিমাটা — ইন্ডিভিজ্যুয়ালের গল্প এবং সাধারণের আবেগ, ফ্যাক্টস, অনুমান, নৈতিক সাজেশন এইরকম যে একটা ফর্মেশন সংবাদপত্রের/টিভিনিউজ/ভিউজের, সেইটা আছে। হইতে পারে যেহেতু কাহিনিটা নেয়া হইছে পত্রিকার নিউজ থিকা, এর প্যাটার্নটাও বাই-ডিফল্ট কিছুটা এম্বেডেড হইছে। কিন্তু এর অ্যাস্থেটিক্যাল আলোচনা দিয়া তো এর যে ইথিক্যাল আর্গ্যুমেন্ট তারে এড়ানো যায় না।

এর যে ইথিক্যাল ইমপ্লিকেশন টু অডিয়েন্স সেইটা জাস্ট অ্যা প্যজ, একটা বিরতির মতো। কলকাতা শহরের মধ্যবিত্ত সমাজের সেক্সচুয়াল সিচুয়েশনের সম্ভাব্য সব এলিমেন্টই দেখানোর চেষ্টা হইছে যে, নারীকল্পনাই কিভাবে নারীরে আরো বেশি কইরা নারী বানায়া দিতেছে। কি কি ধরনের অব্জেক্টিফিকেশন ঘটতে পারে এই সাব্জেক্টের, তার ডিটেইলিঙটা আছে।

যেহেতু আর্ট হিসাবে সিনেমাটা তার অডিয়েন্সরে ইথিক্যালি এনগেজ করতে চায়, এইটা নতুন কোনো ইথিক্সের দিকেও নিয়া যাইতে পারত। আসলে সমস্যাটা তো সবসময় ফিনিশিংটা নিয়াই যে, কে কিভাবে দ্য এন্ড করতেছে। একটা ইথিক্যাল ইশ্যুর সলিউশন ঋতুপূর্ণ ঘোষ দিতেছেন প্রচলিত এস্থেটিক্যালের প্যাটার্নের ভিতর যেইটা দিয়া উনার ইথিক্যাল ইন্টার্ভেনশনটা আন্ডার্মাইন্ড হইছে।

কিন্তু অ্যাপার্ট ফ্রম দ্যাট, দর্শকের ‘চেতনা জাগ্রত করার’ যে মিশন ঋতুপূর্ণ ঘোষ নিছেন, সেইটাতে উনি সাক্সেসফ্যুল হইছেন। বিশেষ কইরা একটা সিনে উনি তো খুবই ক্লোজ, যখন হাজব্যান্ডটা বউরে রেইপ করে, সে একইরকমের অব্জেক্টিফিকেশনের ভিতর দিয়াই ব্যাপারটারে সম্ভব কইরা তোলে, যেইটা মেট্রো-রেলস্টেশনের তরুণেরা কইরা উঠতে পারছিল।

Dohon movie posterযে-কোনো ধরনের রেইপের জন্যই এক ধরনের অব্জেক্টিফিকেশন জরুরি। একটা সাব্জেক্টের বিভিন্ন পরিচয়ের পার্সপেক্টিভে এই অব্জেক্টিফিকেশনগুলা ঘটে। সিনেমার মূল ঘটনাটাতে, কলকাতার মেট্র্রো-স্টেশনে কয়েকজন তরুণ একজন নববিবাহিত নারীর শ্লীলতহানির (ওয়ান্স অ্যাগেইন, এই শ্লীলতা জিনিশটা অ্যাজ অ্যা হোল ক্রিটিক্যাল করা হয় নাই। বলা হইছে, কতটুকু শারীরিক অভিঘাতরে আমরা শ্লীলতাহানি বলব, মানে এইটা নিয়া কেন আমরা কথা বলব না? কিন্তু নারীর শ্লীলতা কেন এত জরুরি একটা বিষয়, এই জায়গাটা মিসিঙই ছিল।) চেষ্টা যখন করছিল তখন আরেকজন তরুণী আইসা তারে উদ্ধার করে। এই জায়গাটা সিনেমাটাতে যেইভাবে দেখানো হইছে তাতে দুইটা পর্যায়ে অব্জেক্টিফিকেশনের ঘটনাটা ঘটে — প্রথমত, পরমা যখন সাইড চায় রাস্তায়, এক্সকিউজ মি বইলা। এইটারে এক ধরনের প্রভোকেশনের ভিতর দিয়া দেখা সম্ভব। নর্ম্যালি কি হয়, ‘নারী’ তো অ্যাপ্রোচ করে না, চুপ কইরা দাঁড়াইয়া থাকবে, তা না হইলে স্বামীরে কইব, ওদেরকে একটু সরতে বলো না (‘গো’ও অ্যাড করতে পারে, নট অ্যাজ গরু অবভিয়াসলি, অ্যাজ টু এনশিওর হিজ ওনার্শিপ আপঅন হার) বা যা-ই বলুক আগে ভাইয়া বইলা নিতে পারে; ভাইয়া/দাদা একটু জায়গা দেন, যাব (অবশ্যই ভিখারির মতন না, ভগ্নীভাব জাগ্রত করে)। কিন্তু সে ‘পুরুষ’-এর মতো কথা বইলা ওঠে এবং সেইটা ইংরেজিতে। হাউ অ্যারোগ্যান্ট! একজন নারী এবং শি ক্যান স্পিক আউট লাউড! এইটা আবশ্যিকভাবে তার নারীপরিচয়ের একটা ডিপার্চার। অব্জেক্ট হয়া ওঠার সম্ভাবনা।

দ্বিতীয়টা আরো মারাত্মক, সঙ্গে স্বামী থাকাটা। বিয়া জিনিশটার সোশ্যাল মিনিং তো হইল, সেক্সচুয়াল অ্যাক্টিভিটির অধিকার। স্বামী-স্ত্রী মানে আমরা দুইজন একসাথে সেক্স করতে রাজি আছি। তার যে স্বামী আছে এই পরিচয়ের মানেই হইল, তিনি সামাজিকভাবে সেক্স করার অধিকার অর্জন করছেন। তার সাথে বাপ বা ভাই থাকলে, নারীরে যে সেক্সচুয়াল অব্জেক্ট হিসাবে ইম্যাজিন করা যাইত না তা না, তার সেক্সচুয়াল পরিচয়ে মালিকানাটা ‘ভোগদখল’-এর চাইত ‘হেফাজত’-এর দিকে ঝুইলা থাকত একটু বেশি। যিনি স্বামী তিনি রক্ষা করেন তার মালিকানার এক্সক্লুসিভনেস ধইরা রাখার জন্য। বাপ-ভাই তারে হেফাজত করে সম্পত্তিরূপে। মানে, চিন্তার দিক থিকা এইটা ‘দাস’-এর চাইতে ভিন্ন কিছু না, এক্সচেইঞ্জের প্যাটার্নটা এখনো স্টক-মার্কেট পর্যন্ত যায় নাই আর-কি।

ব্যাপারটা এইরকম না যে, মলেস্টেশনের ঘটনাটা এই কারণেই ঘটছে, কিন্তু এই জায়গাগুলা থিকাই এক্সপ্লোর্ড হইছে বইলা সিনেমাটা দেইখা আন্দাজ করা যাইতেছে। একটা সাব্জেক্টরে কি কি ভাবে তার এক্সিস্টেন্সের বাইরে গিয়া কল্পনা করা যাইতেছে। সাব্জেক্ট > অব্জেক্টিফিকেশন > সাব্জেক্ট হিসাবে পুনরাবিষ্কারের ঘটনা এইখানে ঘটে।

সবচে’ ভয়ংকর হইল, সহানুভূতির জায়গাগুলা, কোর এক্সপ্লয়টেশন অ্যারিয়া। যারা রেইপের ঘটনা থিকা ইরোটিক আনন্দ নিতেছেন তারা না, যারা রেইপটারে সর্ব্বোচ অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করেন, তারা যতটা না নারীরে একটা অব্জেক্ট হিসাবে দেখতে পারার জায়গাটাতে কন্সার্ন, তার চাইতে অনেকবেশি ‘পবিত্রতা’ নিয়া টেনশিত থাকেন। দুইটা জিনিশ জাস্ট অপজিট। নারীরে বরং একটু অপবিত্র থাকতে দেন।

ঋতুপর্ণ ঘোষ কোনো নারীরেই অপবিত্র করতে পারেন নাই উনার অ্যাস্থেটিক্যাল জায়গা থিকা। এই তুলনায় ‘স্টিলিং বিউটি’-তে প্রথম সিনেই দেখা যায় নায়িকার মুখ দিয়া ঘুমাইবার সময় লালা পড়তেছে (হাউ স্যুইট! তাই না?)। টিভিতে ডেইলি সোপগুলাতে দেখবেন যে, নারীরা ঘুমানোর সময়েও মেকআপ নিয়া ঘুমাইতেছে (মেকআপ করা বা সৌন্দর্যচর্চা অবশ্যই বাজে কাজ না; বরং সৌন্দর্যচর্চাই যে একমাত্র সুন্দর, এইটা একটা ফ্যাসিস্ট জিনিশ; সৌন্দর্যচর্চা না-করাটারে যারা একমাত্র সুন্দর বইলা ভাবতে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রেও ঘটনাটা একইরকম)। এইভাবে, নারীর যে অ্যাস্থেটিক্স তৈরি হইতেছে সেইটা নারীকল্পনারে একভাবে কনস্ট্রাক্ট করতেছে। কত রকমের নারী-কল্পনা যে এক্সিস্ট করে সেইটা আইডেন্টিফাই করাটা খুব অসম্ভব না। কিন্তু এইটা যে আছে, প্রাথমিকভাবে এই ভাবনাটা জরুরি।

এইটাই পুরাটা না, কিন্তু এইভাবে দেখলাম আর-কি সিনেমাটারে।

… …

আগের পোষ্ট

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you