ননাই

ননাই

গল্পের বই। ছোটগল্পের। শর্ট স্টোরিস্। মোট গল্পের সংখ্যা আনলাকি থার্টিন, অপয়া তেরো।

বইয়ের লেখক হুমায়ূন সাধু। মূলত অভিনয়শিল্পের লগে জড়িত লোক বলেই চিনিজানি তারে আমরা। আইডেন্টিক্যাল একটা ডিস্পোজিশনের অধিকারী তিনি, ফিজিক্যাল অ্যাপিয়ারেন্সের দিক থেকে, ন্যাচারাল সিলেকশন। অভিনয় দিয়ে তো নজর কেড়েছেনই, কিন্তু উনি স্ক্রিপ্ট রাইটিং আর ফিল্ম মেইকিং নিয়া কাজ করবার দিকেই ঝুঁকেছেন বেশি। স্ক্রিপ্ট রাইটিং স্কিলের চমৎকার প্রকাশ আমরা তার প্রত্যেকটা গল্পে প্রেজেন্টেড দেখি এই বইতেই।

ডিটাচড সেন্টেন্সের মতো মনে হলেও গল্পের প্রত্যেকটা বাক্য খুবই ইন্টারকানেক্টেড, ইন্টারটোয়াইন্ড, পরস্পরলগ্ন। অত্যন্ত কাটাকাটা বাকবিন্যাস। হুমায়ূন আহমেদের লিখনশৈলীর বুদ্ধিদীপ্ত প্রয়োগ খুব কম লেখকই করতে পেরেছেন দেশে, আনিসুল হক ইত্যাদি কলমপেশাজীবীদেরে আমরা যদি ব্যক্তিগত রুটিরোজগারের ফায়দাজনিত তোষামুদি না করে লেখক খুঁজি তাইলে হুমায়ূনধারায় যে-কয়জন মুষ্টিমেয় তরুণ সম্ভাবনাদীপ্তি দেখায়েছেন সাধু তাদের মধ্যে একজন।

হুমায়ূন আহমেদের মতোই সাধুকেও গল্পে এক-দুইটা বাক্যের আঁচড়ে ক্যারেক্টার বা সিচুয়েশন এঁকে ফেলতে দেখা যায়। পার্ফেক্টলি ওয়েল ডান বলতেই হয় গল্পপাঠকালে। ভ্যানতারা করেন না সাধু। ধরেন, একটা গল্পে ব্যবসায়ী গুম হবার কাহিনি পড়তেসি আমরা, ব্যবসায়ীটি রিসেন্টলি বিজনেসলসের ভিতর দিয়া যাইতেসেন। কেন বা কীভাবে এই লস হইতেসে? বাংলার সাহিত্যিকেরা সেই লসের হিডেন কারণ দেখাইতে গিয়া বাণিজ্যগবেষণা হাজির করতেন যেখানে, হুমায়ূনীয় কায়দায় সাধু বলতেসেন যে পরপর কয়েকটা ফ্লাইট গড়বড় হওয়ায় ইন্টারন্যাশন্যাল মার্কেটে তার ব্যবসা ধসে যেতে থাকে। ব্যস। স্রেফ এইটুকুই। বিউটিফ্যুল!

স্ক্রিপ্টরাইটার হবার কারণে এই স্কিলগুলা তার করায়ত্ত অনেক বৈচিত্র্যসমেত। তবে এই স্ক্রিপ্টরাইটিং ক্যাপাবিলিটিই আবার পড়ার ক্ষেত্রে একটা মনোটোনি নিয়া আসে এমনকিছু ল্যুপ সবসময় প্রায় সব গল্পেই হাজির করে। মে বি টিভিফিকশনে বা ফিল্মে একটি সিকুয়েন্সের পরে আরেকটি সিকুয়েন্সে যেভাবে ফেশিয়্যাল এক্সপ্রেশনের মাধ্যমে কাভার-আপ করতে পারত, লৈখিক রচনায় তা তো সম্ভব না। কাজেই তিন-চারটা গল্প পড়ার পরে একঘেয়ে একটা ভাবের বেসাতি প্রায় দেড়শ পৃষ্ঠার এই বইয়ের ললাটলিখন বলা যায়। কিন্তু ইন্ট্রেস্টিং, নো ডাউট, কৌতূহলোদ্দীপক। সবগুলা গল্পই  ইন্ট্রেস্টিং, শার্প, ক্ষুরধার শাণিত মোমেন্ট প্রচুর পাওয়া যায় এই বইয়ের পাতায় পাতান্তরে।

লেখক চিটাগাঙের লোক, জন্মসূত্রে, ক্যারিয়ার ঢাকায়। নিজে যখন গল্প লিখতেসেন তখন ল্যাঙ্গুয়েজে এই জিনিশটা কেমন কায়দায় ডিল্ করতেসেন এইটা দেখার মতো। খুবই বুদ্ধিদীপ্ত অথচ সোজাসাপ্টা স্ট্যান্ড সাধুর ল্যাঙ্গুয়েজ ডিলিঙের জায়গায়। সাধুর গল্পগুলা যখন ওয়েবম্যাগগুলায় ছাপা হচ্ছিল তখনই জিনিশটা নোটিস্ করছিলাম। মোটেও বাড়াবাড়ি বিতলামি নাই ভাষাভুষা নিয়া। ন্যাচারালি লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা যেম্নে যেদিকে যাবার সেদিকেই যেতে দিতেসেন তিনি, এমনই মনে হয় পড়তে যেয়ে।

এবং কাহিনিগুলাও বানানি জিনিশ না। বানানি মানে সাহিত্যিক জিনিশ না বলতে চাইতেসি। প্রায় একটা জিনিশই মনে হয় পড়তে পড়তে যে এই সময়ের এই টাইমের একটা মানুষের স্বাভাবিক জিনিশ দেখতেসি। হ্যাঁ, দেখার কথাটাই মাথায় থাকে, পড়তেসি বলিয়া মনে হয় না। ফারুকী বা ভাইবেরাদরের কাজ দেখতেসি মনে হয়। এইটা সাধু সাক্সেসফ্যুলি করতে পারসেন এই বইয়ে।

তেরোটা কাহিনির সমাহার এই বই। ‘ননাই’। শীর্ষনাম নিয়া ভাবতেসিলাম পড়তে পড়তে। মে বি চিটাগাঙের ওয়ার্ড। অভিধান দেখি নাই। কিন্তু একটা গান মনে পড়তেসিল শব্দটা শুনে। ‘রেনেসাঁ’ ব্যান্ডের গান। “ননাইয়া ননাইয়া খতা খই / এই মন খাড়ি লই” … এই রকম লাইনের গান। ফয়সাল সিদ্দিকী বোগি গাইসিলেন। রেনেসাঁ তো চট্টগ্রামেরই অরিজিন। কাজেই, শব্দটা আহ্লাদ বা আজাইরা/আবোধা একটা ছাপ হাজির করে। নামগল্পে ‘ইনাইয়া-বিনাইয়া’ বাগধারাটা পাওয়াও গেল একজায়গায়। কাজেই, লেখকের হিউম্যরসেন্স সর্বত্র, বইয়ের নাম থেকে ভেতরের কামনাবাসনা সবখানে। সেক্সের একটা ভালো উপস্থাপনাও গল্পে ন্যাচারাল ওয়েতে এসেছে। ইনিয়েবিনিয়ে বা ফাঁপিয়েফুলিয়ে গল্প বলা হতেসে, এইটা সাধুর বিনয়।

এইটাই লেখকের পয়লা পাব্লিকেশন। অভিষেক হলো এই বই দিয়া সাধুর  সাহিত্যসোসাইটিতে। তেরোটা, থার্টিন, আনলাকি অপয়াসংখ্যক গল্প নিয়া হাজির হওয়া এই লেখকের শরীরী জীবনাবসান হয়েছে ভ্যেরি রিসেন্টলি। তার বইটা পাঠক হাতে নেবেন, পড়ায় আনন্দ হলে পড়বেন, অন্যান্য কাজগুলারও কদর নিশ্চয় করবেন। অত্যন্ত অকালে অল্পবয়সে সাধু চলে গেলেন। তার পারলৌকিক সদগতির জন্য দোয়া করি। আর তার রেখে-যাওয়া কাজগুলার মর্মার্থ ধরতে যেন মনোনিবেশ করতে পারি।

বইটা বাইরাইসিল ‘বৈভব’ নামে একটা পাব্লিশিং হাউজ থেকে। ডিসেম্বর ২০১৮য়। ঢাকার পাব্লিশার। কাভার ধ্রুব এষ। সুন্দর। বুকডিজাইন ইজ্ রিয়্যালি ক্যুল্। বুকডিজাইনের কাজটা কার করা সার্চ করতে যেয়ে খেয়া মেজবা নামটা পাওয়া গেল।

লেখা / বিদিতা গোমেজ

… … 

COMMENTS

error: