এরেবাস বাই অমম || প্রান্তর চৌধুরী

এরেবাস বাই অমম || প্রান্তর চৌধুরী

 

অমমের ‘এরেবাস’ শুনতে শুনতে কিছু কথা নাড়া দেয় বিচ্ছিন্ন মস্তিষ্কে; সাইকেডেলিক এই রকব্যান্ডের প্রতিটা গানই একেকটা আলাদা ধাঁচের। আজকের লেখা তাদের অদ্য-রিলিজ-হওয়া ‘এরেবাস’ নিয়ে!

এরেবাস মূলত একজন গ্রিক পৌরাণিক দেবতা, যাকে বলা হয় অন্ধকারের দেবতা। অন্ধকারের সৌন্দর্য আমাদের নির্বিঘ্নেই আঁকড়ে রাখে কোনো-না-কোনোভাবে। সারাদিনের যানজটঝঞ্ছাট, সাংসারিক ঝুটঝামেলা, বাস্তবতার গ্যাঁড়াকলে ফেঁসে একটা সময় আমরা হাঁপিয়ে উঠি। নিজেদের ভেতরে খুঁজে ফিরি নিজেদেরে, শতভাগ হিসেবের মেশিন হয়ে যাই গোটা পৃথিবীর কাছে। কর্পোরেট এই ক্ষণিকের জীবনকে বানিয়ে ফেলি জটিলতার কারখানা, তারপর খুঁজি অন্ধকার, গাঢ় অন্ধকার। যেখানে হিসেব মিলাতে যাই জীবনের লেনদেনের, সব হিসেব কি মিলানো যায়? — যায় না হয়তো; কোনো ধূসর বাতাস এসে মিলিয়ে দেয় আবার। আমাদের আধো-আলো জীবনে আমরা যন্ত্রমানব হয়ে যাই আবেগ খুঁজতে খুঁজতে, কারো কারো কাছে যন্ত্রণাও।

পৃথিবী নামক গ্রহে আবেগ খুঁজি নির্জনতার সন্ধ্যারাতে, নিজেদের তুলনা করি সব গ্রহনক্ষত্রদের সাথে। অথচ আমরা কিছুই হয়ে উঠতে পারি না, না নিজেরদের কাছে না অন্য কারো। দিব্যি গভীর রাতে ঘুরে ফিরি নেক্রোপলিস এই গ্রহে, খুঁজে বেড়াই জীবনের টানাপোড়েনে এক আশ্চর্য দুঃস্বপ্ন।

ধূসর কিংবা কালো আধো-আলো জীবনে
আমি এক যন্ত্রমানব, ঘুরি আবেগের সন্ধানে।

মানুষ সুখ কিনতে গিয়ে প্রতিনিয়ত সদাই হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর কাছে, নিজেদের বিলিয়ে দিচ্ছে অমীমাংসিত এক দুর্লভ সময়ের কাছে। হতাশার চাদর দিয়ে গা ঢেকে ছুটে চলছে নির্বোধ পাখির মতো মানুষের বেশে। সর্বক্ষেত্রে পরাজয় মেনে নিয়ে ছুটে চলতে হয় অসাড় এই ব্রহ্মাণ্ডের আনাচেকানাচে। তবুও খুঁজে পায় না নির্দিষ্ট গন্তব্যস্থল। ক্লান্ত শরীরে অন্ধকার নির্জনতা খুঁজে হাঁটু গেঁড়ে কামনা করি মুক্তির। নির্দয় গ্রহ ক্রমশই আমাদের নির্জনতা কেড়ে নেয়, সব প্রার্থনা তাচ্ছিল্য করে ছুঁড়ে ফেলে জীবন নামের কোলাহলে। আমাদের জীবনের অদৃশ্য কালোগুলো অন্ধকারে স্পষ্ট হয়, বয়ে যায় ভাসমান নৌকার মতো দিগন্তহীন মহাসমুদ্রে। অনেককিছু আমরা অন্ধকার ছাড়া কাউকে বলতে পারি না। না-বলার আক্ষেপ থেকেই অদ্ভুত এই জীবনমুখী গানের সৃষ্টি।

শুনেছি তোমাদের গ্রহে
নাকি আবেগের হাট বসে
রোজ রাত্তিরে সন্ধে নামার পরে
তাই সদাই করতে আসি নির্জনতার হাত ধরে
যখন থেমে যায় কোলাহল, যন্ত্রণা যায় অবসরে।

এর পেছনে রয়েছে কঠোর পরিশ্রম আর ডেডিকেশন, Fayid Rahman-এর তেজি কণ্ঠস্বর যেন গানের বিচিত্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। এরেবাসের লিরিসিস্ট কিন্তু ফায়িদ রহমান নিজেই। ব্যান্ডের প্রতিটা মেম্বারের ভালোবাসা আর অক্লান্ত পরিশ্রমেই এরেবাসের সৃষ্টি। লিডগিটারে এক ম্যাজিক্যাল সলো ও গানে গিটারের কারুকার্যের অবদান ছিল Prosonjit Ghosh-এর, এক অমায়িক ফিডব্যাক তো বটেই। শিশিরদার ড্রামিং তো আর মাইন্ডব্লোয়িং, অল্টারনেটিভ এক ড্রামার তিনি, হ্যাভি ড্রামিং-এ গানের আপার নোটগুলো তিরের মতো বিঁধে যায় মস্তিষ্কের অন্তঃস্থলে; প্রশংসনীয় সুমনভাইয়ের বেজের কেরামতিও;—প্রথমে ভেবেছিলাম বেজবাবা সুমন বোধয় স্বয়ং বেজ কাভার দিচ্ছেন, পরে দেখি আমাদের প্রিয় সুমনভাই ছিলেন। গানটির মাস্টারিং করেন রাহুলদা, তিনিও আমাদের একজন মাস্টার মিউজিশিয়ান।

সবশেষে, জীবনের একটা বড় অংশ নিয়ে গানের কথাগুলো — ‘এরেবাস’ — যা আমাদের বর্তমান সময়ের প্রতিটা মানুষের সাথেই ঘটে যায় কোনো-না-কোনোভাবে। এরেবাস শোনার আহ্বান রইল। আপনাদের ভালোবাসাই তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাবে।

ভালোবাসা অমমের জন্য, অমমের জন্য শুভকামনা যাতে এভাবেই সর্বোচ্চটা দিয়ে নতুন কিছুর আগমন ঘটে। সেই অপেক্ষায়। কিপ ইট আপ, অমম!

অমম ইউটিউবচ্যানেল
অমম ফেইসবুকপেইজ


প্রান্তর চৌধুরী রচনারাশি

প্রান্তর চৌধুরী

Support us with a click. Your click helps our cause. Thank you!

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you