বাংলা গানের লোকায়ত গরিমা, বাউলিয়ানা, ব্যান্ডগানাবাজানা

বাংলা গানের লোকায়ত গরিমা, বাউলিয়ানা, ব্যান্ডগানাবাজানা

বাংলাদেশের ব্যান্ডসংগীত নিয়া হাজারটা আপত্তি ছিল যাদের এককালে, এখনও উন্নাসিকতা উবে গেছে বলা যাবে না বরং ফর্ম বদলে সেই নাসিকাকুঞ্চিত সমুজদারদল ইংরেজি-হিন্দুস্তানি মিউজিকে ক্ল্যাসিক্যালে রসাতলায়িত লক্ষ করব আজকাল, সেইসব আপত্তির মধ্যে একটা ছিল যে ব্যান্ডসংগীতের অনুশীলক-পরিবেশকেরা নাকি বাংলা গানের বাংলা কালচারের ঐতিহ্যানুগত নয়, আবহমান বাংলা হেরিটেজ্ নিয়া ব্যান্ডসংশ্লিষ্টদিগের কারোরই নাকি বিশেষ শিক্ষাদীক্ষা-জানাশোনা-আশনাই-প্রীতিপ্রণয় নাই; বিদেশী বিশেষভাবেই ইংরেজি মিউজিকের একটা অনুকারবৃত্তিই নাকি ব্যান্ডের গানবাজনার বেসাতি। কিন্তু লক্ষ করব যে ব্যান্ডসংগীতের গোড়ার দিন থেকেই বিবৃতিটার পক্ষে এক্সাম্পল্ মেলে না। আজম খানের ‘আলাল-দুলাল’, ‘সালেকা-মালেকা’ বা ‘বাংলাদেশ’ ইত্যাদি কিংবা জিঙ্গা শিল্পীগোষ্ঠীর গানে এবং অব্যবহিত পরের পিলু মমতাজ বা নাজমা জামান বা ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রমুখের প্যপগানে যে-সুরকাঠামো তা সবই কিন্তু ওয়েস্টার্নাইজড প্রেজেন্টেশনরীতি ফলো করেও ঐতিহ্যানুগ। মোটা দাগেই পাওয়া যায় আবহমান বাংলার লতানো ধুন। পরবর্তীকালে ব্যান্ডসংগীতপরম্পরায় হেরিটেজের নবরূপায়িত উপস্থাপনা আরও গতি নিয়েছে বেশ বৈচিত্র্য ধরেই। এমন একটা ব্যান্ডগানের অ্যালবাম পাওয়া যাবে না যেখানে একডজন গানের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ফোক্-স্ট্রাকচার অবলম্বন করে নাই। ফিডব্যাক, সোলস, মাইলস, এলআরবি, রেনেসাঁ, নোভা, চাইম, আর্ক, এমনকি ওয়ারফেইজও ঐতিহ্যানুবর্তী মিউজিক করেছে তাদের প্রত্যেকটা অ্যালবামে।

একদম পূর্ণাঙ্গ ফোকঅ্যালবাম করা ব্যান্ডের তখনও শুরু হয় নাই। ফিডব্যাক প্রথম ঘটনাটা হাজির করল ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে তাদের ‘বাউলিয়ানা’ অ্যালবাম দিয়ে। এই অ্যালবাম রিলিজের পরে সেই বিকটপ্রজাতি ক্রিটিকরা তাদের পিন-আটকে-যাওয়া ভাঙা রেকর্ড পুনরায় বাজাতে শুরু করে, এইবার তাদের গলায় হেরিটেজ্ বিপদাপন্ন বলিয়া আওয়াজ শোনা যায়; ব্যান্ডের পাল্লায় তাদের সাধের ঐতিহ্য কৌলীন্য খোয়াতে চলেছে, এমনটা হাহাকার বাতাসে বেশ কিছুদিন প্রকম্পিত শব্দে ঘুরে বেড়ায়, ফের মিইয়েও যায়। তারপর তারা বলতে থাকে, ব্যান্ডের হাতের সব তাস দেখানো হয়ে গেছে বলেই এখন নাকি লোক-ঐতিহ্যের এই রেস্টোরেশন। যদিও শ্রোতার রেস্পোন্স বলছিল অন্য কথা। ‘বাউলিয়ানা’ ব্যাপক শ্রোতাগ্রাহ্য হয়েছিল। পরে (ম্যে-বি আগে, ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ ও ‘বাউলিয়ানা’ অ্যালবামদ্বয়ের মাঝামাঝি, একদম ভুলে গেছি ক্রোনোলোজি) এই ফিডব্যাক থেকেই ‘দেহঘড়ি’ শীর্ষক একটা অ্যালবাম বাইর হয় আব্দুর রহমান বয়াতীর সঙ্গে একটামাত্র গান দিয়ে, একগানে একটা আস্ত সংকলন বাংলায় সেইবারই প্রথম, এবং ব্যবসাসাফল্যে বাজার সরগরম করে তোলে। এর পরপরই শুরু হয় বাউলিয়ানাধাঁচে একক ও দলীয় সংকলন বার করবার ব্যাপকতা। আইয়ুব বাচ্চু থেকে শুরু করে সমস্ত ব্যান্ডসিঙ্গারদের কম্পোজিশনে বেহদ্দ ফোকের টিউন শুনতে শুনতে রেগ্যুলার রকশ্রোতাদের নাভিশ্বাস উঠতে থাকে ক্রমে। একসময় ব্যাপারটা যথেষ্ট মনোটোনির কারণও হয়ে ওঠে। এমনকি জেমসের কণ্ঠেও পূর্ণাঙ্গ ফোক একটা গান বাইর হয় সেই-সময়, “বেলা গেল রে / ভবের মায়ায় রইলি রে তুই ভুলিয়া” লাইন্স দিয়া আরম্ভ সেই গানটি, মিক্সড অ্যালবাম ‘রঙ্গমেলা’-য় সেই গান বাজারে আসে, টেরিফিক রেন্ডিশন হয়েছিল সেইটা। কাজেই, বাউলিয়ানা অ্যালবামের ইম্প্যাক্ট বাংলাদেশের নতুনদিনের নাগরিক গানের বাজারে ব্রেইক-থ্রু এনেছিল বললে অল্পই বলা হয়। এই নিবন্ধে আমরা সেই দিশারী অ্যালবামের ইনলে-কার্ড থেকে টেক্সট প্রিজার্ভ করব শুধু।

সংকলনের প্রচ্ছদে অ্যালবামনাম এবং ব্যান্ডনাম দুইটারই লোগো ছিল মনকাড়া দৃষ্টিনন্দন। প্রচ্ছদগাত্রে অ্যালবামনাম বাংলায় ফের ইংরেজিতেও প্রতিবর্ণীকৃত, তলায় চিকন হরফে লেখা ছিল ‘প্রথম খণ্ড; যদিও পরের কোনো খণ্ড আর বাইর হয় নাই, ফিডব্যাক থেকে প্রধান কণ্ঠ এবং জায়ান্ট সমস্ত প্ল্যানের উদ্গাতা মাকসুদুল হক বেরিয়ে    যেয়ে ব্যান্ড গড়েন আলগ। অ্যালবামনামের নিচেই আয়তক্ষেত্রাকারে ব্যান্ডমেম্বার্স সকলে চিত্রিত বহুবর্ণিল পাঞ্জাবি পরিধান করে ন্যাচারাল সহাস্য দাঁড়ায়ে। এর তলায় বিলো-অ্যালাইনমেন্টে ব্যান্ডনাম বাংলায়-ইংলিশে এবং বাঁদিক ঘেঁষে ‘সবসময় কোকাকোলা’ স্পন্সর। এর দুইবছর আগে এই স্পন্সরকেই ফিডব্যাকের ‘বঙ্গাব্দ ১৪০০’ অ্যালবামের ইনলে-কার্ডের ভিতরগাত্রে গেছিল পাওয়া। ফারাক শুধু এইবার স্পন্সর সটান প্রচ্ছদে।

কার্ডের একদিকে সর্ববামে ক ও খ দুই পিঠে পাঁচ-দু-গুণন দশটা গানের শীর্ষশব্দ/শব্দগুচ্ছ, তলায় ‘প্রযোজনা ও পরিবেশনায় সাউন্ডটেক’ লেখা। তার ঠিক পরের ভাগে কাভারফোটো, অতঃপর দুইশ শব্দের একটা প্রিফেইস্, এই পৃষ্ঠার সর্বকর্নারে আটজন শিল্পী-কলাকুশলীর ডাকটিকেটসাইজ ছবি ছাপানো, পরপর তারা হলেন : হিরু শাহ, সন্তোষ বাউল, ফোয়াদ নাসের বাবু, মো. পিয়ারু খান, মাকসুদুল হক, সেকান্দার আহমেদ, লাবু রহমান এবং ফিডব্যাক-ব্যাবস্থাপক কিউ.এম. আলম বাচ্চু। কোকাকোলা সাইনবোর্ড এই পৃষ্ঠাতেও রক্তলাল জ্বলজ্বল করছে।

ডিজিটাল মাধ্যমে রেকর্ডকৃত ও সম্পাদিত এ-অ্যালবামে ধরা আছে বাংলাদেশের লোকগানের অক্ষয় ও সপ্রতিভ এক ধারা। আর এ আয়োজন ফিডব্যাকের অনেক দিনের। গানের আসরে এ-বছরই ফিডব্যাকের কুড়ি বছর পূর্ণ হলো। এদেশের লোকপরম্পরার গৌরবকে স্মরণ করার মধ্য দিয়ে আমরা তা উদযাপন করতে চাই। দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে-থাকা আমাদের তরুণ মনের শ্রোতাদের হাতে তুলে দিতে চাই এ-সংকলন। আমরা আশা করি বিচিত্র রুচির নানা বয়সী আরও বহু শ্রোতার কাছে সংকলনটি পৌঁছে যাবে।

মূলত বাউলাঙ্গের গান ও স্তরে স্তরে গড়ে-ওঠা আমাদের সুরবোধ মিলেমিশে নাম নিয়েছে ‘বাউলিয়ানা’। এসব সুরগরিমার যারা অধিকারী তারা সত্যিকার অর্থে বড় ধরনের সাধক ও জ্ঞানী। সে-গরিমার স্পর্শে ফিডব্যাকের সৌকর্য আরও বেড়েছে। একটানা সাত বছর ধরে চলেছে গবেষণা ও সংকলন। মুখে মুখে ফেরা লোকসংস্কৃতি থেকে সংগৃহীত হয়েছে মূল্যবান সব রচনা। খসড়াভাবে তা রেকর্ড করা হয়েছে। যেসব বাউল আমাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করেছেন, এ-মলাটে আমরা তাদের ঋণস্বীকার করছি … যদিও অনেক গানের স্রষ্টা আমাদের অজানা।

বাউল সাধক ফকির লালন শাহ্-এর কিছু গান এ-অ্যালবামে ঠাঁই পেয়েছে। জীবিতদের মধ্যে সন্তোষ বাউল ও হিরু শাহ্ আমাদের সঙ্গে গানে কণ্ঠ দিয়ে ধন্য করেছেন। গানের সুর ও কথা উদ্ধারের জন্যে হিমাংশু বিশ্বাসের কাছে আমরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ।

গানগুলোকে পরিবেশনগত ভিন্ন এক মাত্রা দেবার জন্যে আমরা জ্যাজ্, রক্ ও রেগের সাহায্য নিয়েছি। যথাসম্ভব মূল সুরের কোনও অঙ্গহানি না-করেই তা করা হয়েছে।

এ-ক্যাসেটের গানগুলোতে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তবলা, বেহালা, বাংলাঢোল, একতারা, খঞ্জনি ও মন্দিরার উপযুক্ত সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে। আর এগুলো বাজিয়েছেন এদেশের প্রখ্যাত সব বাদ্যযন্ত্রী। বিশেষ করে বাউলশিষ্যরা কোরাস কণ্ঠদানে আমাদের পরিবেশনকে সমৃদ্ধ করেছেন।

শুভেচ্ছা জ্ঞাপনান্তে ফিডব্যাকের পাঁচ মাঝিমাল্লার নামস্বাক্ষরের আগে “আশা করি আমাদের এ-নিবেদন আপনাদের ভালো লাগবে” — এই বিনয় সেরে ‘ফিডব্যাকের ছিয়ানব্বইয়ের নিবেদন বাউলিয়ানা ১ম খণ্ড’ শীর্ষক ইনলে-কার্ডের চিলতে ফ্ল্যাপকথিকা তামামশোধ করা হয়েছে। এই প্রিফেইস্ কে লিখেছেন বলা না-হলেও বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয় যে এইটা মাকসুদুল হক লিখেছেন। ইতিস্বাক্ষরের জায়গায় ‘শুভেচ্ছা সহ’ ফোয়াদ নাসের বাবু, মো. পিয়ারু খান, মাকসুদুল হক, সেকান্দার আহমেদ, লাবু রহমান : এই পাঁচের নাম লেখা। তার তলায় “যোগাযোগ / ফিডব্যাক / ১৮১ বড় মগবাজার, ঢাকা ১২১৭, বাংলাদেশ।” ডানকোণায়, বাহুল্য বলা, ‘সবসময় কোকাকোলা’।

ফ্ল্যাপের পৃষ্ঠা উল্টালেই বিশাল বোল্ডেন হরফে ‘ফিডব্যাক-এর বাউলিয়ানা’। তারপর দশটা গানের নাম-পরিচয় গীতিকার-সুরকার ইত্যাদি তথ্যতালিকা। গানতথ্য হুবহু নিচে রেখে এগোনো যাক :

করি মানা ।। ফিডব্যাক ও বাউল-শিষ্য ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ
দিবার কিছু নাই ।। ফিডব্যাক ।। কথা : আখতার ফিরোজ ।। সুর : ফিডব্যাক
লোকসান ।। ফিডব্যাক ও সন্তোষ বাউল ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ
গুরুর ভাব ।। ফিডব্যাক ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ
শ্যামকালিয়া ।। ফিডব্যাক ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ ।। কৃতজ্ঞতা : হিমাংশু বিশ্বাস, হ্যারল্ড রশীদ ও ‘ওজান’
কেহই করে বেচাকেনা ।। ফিডব্যাক ।। কথা : ড. মো. মনিরুজ্জামান ।। সুর : আলী হোসেন
ধুঁয়ার দানা ।। ফিডব্যাক ।। কথা : মো. পিয়ারু খান
প্রাণ কান্দে ।। ফিডব্যাক ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ
জনমদুখী ।। ফিডব্যাক ও বাউল-শিষ্য ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ
হাওয়া আদমে ।। ফিডব্যাক ও হিরু শাহ ।। কথা ও সুর : সংগ্রহ

প্রশ্নটা কাউরে করি নাই, কিন্তু প্রশ্নটা আছে সেই ছিয়ানব্বই থেকেই নিবন্ধকারের ভিতরে যে ব্যাপকভাবে যে-গানগুলো লালনের নামে পরিচিত বা রাধারমণের নামে, সেই গানগুলো বাউলিয়ানা অ্যালবামে ক্রেডিটলাইনে কেন ‘সংগ্রহ’ বলিয়া চালানো হলো? যদিও ভূমিকায় লালনের নাম উচ্চারিতও হয়েছে, বেনামে রাধারমণের গান চালানো হয়েছে এবং বেচারার নামটা অ্যালবামের কোত্থাও উচ্চারিত হয় নাই। নিশ্চয় এর পেছনে একটা কারণ থাকতে পারে অ্যালবামকর্তাদের, কোথাও খোলাসা করা হয় নাই। কিন্তু কি এমন কারণ থাকতে পারে যে ক্রেডিট দিতে এই কার্পণ্য করা হলো? অন্তত ‘শ্যামকালিয়া’ গানের ভনিতাপদ শুনেও তো স্যংরাইটার-কম্পোজার হিশেবে রাধারমণজিকে ক্রেডিট দেবার ব্যাপারে সার্টেইন হওয়া যাইত। ভনিতাপদে নাম থাকলেই কি সেইটা লালনের হয় সবসময়? কিংবা ভনিতাপদে-নাম-না-থাকা লালনের গান কি নাই একটাও? অনুরূপ রাধারমণেরও? মনে হয় এমনটা ভাবা হয়েছে যে একই গানের বিভিন্ন ভার্শন থাকে লিরিকের এবং সুরের, লোকের মুখে মুখে ফেরে একেক জায়গায় একেকটা ডালে একই গান; সেক্ষেত্রে পদকর্তার নামটা নিশ্চিত হয়ে কোত্থেকে এবং কার কাছ থেকে এইটা কালেক্ট করা হয়েছে তা বলে নিলে বেহতর হতো। হয় নাই। ফিডব্যাকের কাছ থেকে ব্যাখ্যা-না-দেয়া এই নামচোপানো কাজটা মানানসই মনে হয় নাই। কেননা আমরা দেখেছি ফিডব্যাক ক্রেডিট দেবার ব্যাপারে সবসময় সচেতন ছিল। বাউলিয়ানা অ্যালবাম হাতে নিয়ে এই কাঁটাটা আজ থেকে বাইশ বছরে আগে যেমন আজও তেমনি পীড়িত করে। এখন একটু কমলেও ওই-সময় একটা ব্যাপার করতে দেখা যেত শহুরে ক্যাসেটশিল্পীদেরকে যে গ্রামীণ পদকর্তা-সুরকারের নামের জায়গায় ‘সংগ্রহ’ শব্দটা বসিয়ে দেদার গানের সার্কুলেশন।

ইনলে-কার্ডের এই পৃষ্ঠস্থ পরবর্তী ভাগে অ্যালবামনেপথ্য কলাকুশলীদিগেরে ক্রেডিট দেয়া রয়েছে, ক্রেডিটলাইনগুলো নিম্নরূপা :

সহযোগী যন্ত্রী : মিলন ভট্টাচার্য (তবলা ও মন্দিরা), সাদেক আলী (ঢোল ও খঞ্জনী), সুনীল চন্দ্র দাস (বেহালা), আলমাস (বেহালা), নজরুল ইসলাম (বাংলা ঢোল)
সহযোগী কণ্ঠ : শুক্লা, রীতা, কনি, সাবিনা, নার্গিস, আমীর হোসেন, জব্বার মিয়া, মো. আলম
শব্দধারণ ও সংমিশ্রণ : ইমরান আহমেদ ও চারু
স্টুডিয়ো : সাউন্ড গার্ডেন
ফিডব্যাকের পোশাক ডিজাইন : কাজী রকিব ও মাসুদা কাজী
বাউলিয়ানা ও ফিডব্যাক লোগো : এনায়েত হোসেন
বিশেষ ধন্যবাদ : নাঈম হাসান, ক্যাথরিন মাসুদ ও তারেক মাসুদ
ফোটোগ্র্যাফি, প্রচ্ছদ ও পোস্টার পরিকল্পনা : জাভেদ আক্তার সুমন
কনসেপ্ট : ফিডব্যাক
কম্পিউটার গ্র্যাফিক্স : হুমায়ূন কবির, ডিজিগ্রাফ লিমিটেড, ঢাকা
প্রচ্ছদ ও পোস্টারের ছবি বাংলা অ্যাকাডেমির বটমূলে তোলা

বাউলিয়ানা অ্যালবামটা বাংলাদেশের গানে-বাজনায়, বিশেষভাবে ব্যান্ডসংগীতের অ্যারেনায়, একটা ফেনোমেনা। নাগরিক তরুণ-যুবাদেরেই শুধু নয়, এই অ্যালবাম আকৃষ্ট করেছিল তাদেরেও যারা ব্যান্ডসংগীতের রেগ্যুলার শ্রোতা নন। সেই-সময় ইন্ডিয়ান বাংলায় রিমেক আর রিমিক্সের একটা হাওয়া এসেছিল, হুল্লোড় শুধু, বাউলিয়ানা অ্যালবামটা আজও প্রথম শ্রবণে যে-কেউ বুঝবেন এইটা রিমেক-রিমিক্স নয়। সেই-সময় ফিডব্যাক যে-টার্মটা আমদানি করেছিল ‘ফোক্-ফিউশন্’ বলিয়া, আজকের গানদরিয়ায় নেস্ক্যাফে-কোক্ প্রভৃতি কিসিমের স্টুডিয়োগুলোতে সেই ফিউশন্ সেই ফোকেরই দিশাহারা কারবার। ইট ওয়্যজ্ টুয়েন্টি ইয়ার্স ব্যাক্, কথাটা খালি ইয়াদ রাখি যেন। অমলিন, অনিন্দ্য, আজও।

সবশেষে যে-কথাটা আপাতত বলে রাখতে চাইছি, কথাটা আন্দাজেরই হিসাব যদিও, ঠিক এই অ্যালবামটা ব্যান্ডসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী মাকসুদ তথা ম্যাকের গানজীবনে ব্যাপক অভিঘাত রেখে গেছিল। ভূমিকায় “একটানা সাত বছর ধরে চলেছে গবেষণা ও সংকলন। মুখে মুখে ফেরা লোকসংস্কৃতি থেকে সংগৃহীত হয়েছে মূল্যবান সব রচনা” … কথাগুলো বলা আছে খেয়াল করব; পরবর্তী জীবনে ম্যাক দীক্ষাই নিয়ে নেবেন বাউল তরিকায়, বাউলাঙ্গ হয়ে উঠবে তার জীবনেরই অংশ নয় একেবারে কেন্দ্র। ‘গরিমা’ শব্দটার ব্যবহারও নজর এড়ায় না প্রারম্ভিকাভাষ্যে, যেখানে ‘সুরগরিমা’ শব্দটা আমাদের করোটিভুক্ত হয়ে যাবে বাকি জিন্দেগির জন্যে, ম্যাক পরে একটা গানের দলই গড়ে তুলবেন এই শব্দযোগে, ‘গরিমা গানের দল’, যেখান থেকে ‘মাআরেফাতের পতাকা’ নামে একটা অ্যালবাম বাইর হয়েছিল প্রায় আখড়া-মেজাজের আবহ বজায় রেখে, দারুণ একটা কাজ হয়েছিল ‘গরিমা’ আয়োজনটা। বাদে এর কোনো দ্বিতীয় সংকলন হয় নাই, যেমন হয় নাই বাউলিয়ানারও। রকারের ধর্মই কি তা? মানে, একজায়গায় থিতু না হওয়া? সাফল্যের কন্টিন্যুয়েশন রেখে একই জিনিশ বোতল ও লেবেল পাল্টে পুনরুৎপাদন না করা? ব্যান্ডশিল্পীদের রথী-মহারথী সকলেই নিজেদের চর্বিতচর্বণ দিয়া বাজারসদাই ভালোই করেছেন, শুধু মাকসুদ ছাড়া।

ভাষ্য ও গ্রন্থনা : জা. আ.
অনিয়মিত অবদায়ক, গানপার

… …

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you