ভাবছিলাম হেডস্টাডি বিষয়টি নিয়ে। একের-পর-এক মাথা এঁকে যাওয়া। মানুষ শুধু নয়, এছাড়া মানুষ তো অবশ্যই, বিচিত্র প্রাণিপশু-জীবজন্তুর মাথা। ভ্যান গগ করতেন কাজটা নিয়মিত। যদিও এই নামেই তিনি পরিচিত আমাদের কাছে বেশি, ভিনসেন্ট মূলত নাম তার, ভ্যান গগ ওদের পারিবারিক পদবী। ভিনসেন্ট ভ্যান গগ, ছোটভাইয়ের নাম থিয়ো ভ্যান গগ। ছোটভাইয়ের কাছে লেখা ভিনসেন্টের পত্রাবলির সুবাদে থিয়ো আমাদের নিকট অতি পরিচিত। বস্তুত ভিনসেন্টের শিল্পপ্রচেষ্টার শর্তহীন সহযোগী ও সমর্থক, শুরু থেকে শেষাবধি, থিয়ো।
তো, এই জিনিশগুলো সকলেই জানি আমরা, ভ্যান গগ, অথবা ভিনসেন্ট, রাতদিন উন্মাদ ও ঘোরগ্রস্ত হেডস্টাডি করতেন। শুরুই করেছিলেন তিনি, ভিনসেন্ট, বিলম্বে। চেয়েছিলেন প্রিস্ট হতে, বা ঠিক তিনি চেয়েছিলেন অথবা চাননি কিন্তু তার পরিবারের অভিভাবক তথা তার বাপ-মা চেয়েছিলেন বড় ছেলেটা তাদের মুখোজ্জ্বল করবে নামজাদা যাজক হয়ে। সেইভাবেই জীবন শুরুও তো করেছিলেন। খনিশ্রমিকদের মাঝখানে যেয়ে যিশুকথামৃত প্রচারে নেমেও তো ছিলেন। কিন্তু সদাপ্রভু তখন অন্তরীক্ষে কিংবা পাতালে মুচকি-মুচকি হাসছিলেন। পরের, এবং আগেরও, ঘটনা জানা দুনিয়ার। কিন্তু সেই কবে থেকে এই ব্যাপারটা, আইডিয়াটা, মাথায় ঘুরছিল। করোটি আঁকার আক্ষরিকতাটাই না শুধু। অঙ্কনপ্রচেষ্টা, আঁকাআঁকি বা লেখালেখি, হেডস্টাডি ইত্যাদি।
দেরিতে শুরু করেছিলেন বলে, কিংবা ট্র্যাডিশন্যাল আর্টএডুকেশন অথবা কনভেনশন্যাল স্কুলিঙের ভিতর দিয়া যান নাই বলে হয়তো, সবসময় অস্থির ভাবতেন তার আঁকা শেখা বাকি অনেক। সবসময় নিজেকে নিয়োজিত রাখতেন অঙ্কনে। এবং ভাবতেন অনুশীলন অনেক বেশি বাড়ানো দরকার। ভিনসেন্টের অনেক কাজ আছে যেগুলো বহু বহু বছর বাদে ম্যাগনামোপাস্ বলে জেনে উঠব আমরা, ছোটভাই থিয়োকে লেখা চিঠি খুঁটিয়ে পড়ে গেলে দেখা যাবে, সেগুলো ভিনসেন্ট অনুশীলনের বেশিকিছু মনে করছেন না! কাজেই তিনি সারাক্ষণ হন্টেড থাকতেন, অনেক বেশি এক্সার্সাইজের ভেতর দিয়ে যেতেন সবসময়, ফলে একজীবনে এঁকে যেতে পেরেছেন এত।
তবে এর একটা বড় চ্যালেঞ্জ এ-ই যে, হেডস্টাডি কিংবা অঙ্কনপ্রচেষ্টা যাকে বলছি, কোনোভাবেই যেন সেইটা আদর্শলিপির পাতায় পাতায় আঁকা বিচিত্র বর্ণানুক্রমিক পশুপ্রাণির মাথা হয়েই রয়ে না-যায়। স্বরে-অ বর্ণের জন্য অজগরের মাথা আঁকলাম, তা যেন না-হয়। বা আঁকলামই যদি, তো যেন সেটা অজগরের বাইরের একটা ইম্প্রেশনও জোগায় আমায়। এইটুকু তো একজন শিল্পীর কাছে চাইবই আমরা। আর শিল্পী ও মিস্ত্রী কিংবা কারিগরের মধ্যে একটা তফাৎ তো রয়েছেই, খুব মিহি পর্দার ফারাক, সেইটা তো থাকবেই।
ষাঁড় গরু গাধা ঘোড়া জেব্রা জিরাফ পিঁপড়া কাক মৌমাছি সজারু সাপ ব্যাঙ মহিষ শূকর বক্রি ভেড়া হাতি চিল কোকিল কাকাতুয়া কবি … ইত্যাদি ইত্যাদি … কত কিছুর মাথা আঁকা যায়! এবং আঁকা যায় কতই-না বিচিত্রভাবে! বস্তুর ভেতর থেকে বস্তু ভেঙে, প্রাণের ভেতর থেকে প্রাণ বের করে, গানের ভেতর ছেনে গান আর তার সুরের শরীর। কতভাবেই-না আঁকা সম্ভব!
এবং আল্টিমেইটলি আঁকা যায় মানুষ … রঙিন ফানুশ … হর্ষ, বিষাদ, বিদ্রোহ, প্রেম ও প্রতারণা … তার দর্দ ও নির্মমতা … আকাশগঙ্গা আর দুগ্ধপন্থ … কতভাবে-যে!
লেখা / জাহেদ আহমদ ২০১৪
… …
- শরৎরাত্রিতে || আনম্য ফারহান - September 23, 2023
- হাওর সিরিজ || শামস শামীম - September 23, 2023
- জনমানসে বিরাজিত সাংস্কৃতিক সংঘাত ও মাতিয়ার রাফায়েলের কবিতা || আহমদ মিনহাজ - September 23, 2023
COMMENTS