জার্নি বাই অ্যানিথিং || রাহাত শাহরিয়ার

জার্নি বাই অ্যানিথিং || রাহাত শাহরিয়ার

একা যাত্রাকালে মনমতো যাত্রাসঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। ভাগ্য আমার প্রতি বরাবর বিরূপ। যেহেতু মন পরিবর্তনশীল, তাই একেক বয়সে একেক আশা থাকে। টিনএজে বাসে-ট্রেনে সবসময় মনে হতো : আহা! যদি অপ্সরী কারও সিট পাশে পড়ে যেত, তাহলে দিলওয়ালে দুলহানিয়া হয়ে যেত! নাহ্। আমার ভাগ্যে পড়ত অবসরপ্রাপ্ত স্কুলমাস্টার, যারা আশু কেয়ামতের জন্য আমাদের প্রজন্মকে সরাসরি দায়ী করতেন; নইলে চিকিৎসার কারণে ঢাকা-সিলেট করেন এমন বৃদ্ধা প্রমুখ। একবার একজন ট্রেনে উঠেই তার ছেলের সাথে আমার কথা বলিয়ে দিলেন যাতে যাত্রাপথে তার যা যা প্রয়োজন, তা আমি করে দিতে পারি। যাত্রাশেষে কিছু আঙুর আর দোয়া নিয়ে আমি বাসায় গেলাম। এখন আর এই অবাস্তব আশা করি না। মেয়ে দূরের কথা, এমনকি নিজের সমবয়সী ছেলেদেরও আশা করি না। ইনডিফারেন্ট।

কথা হলো, অনেক চেষ্টা করেও আমি যাত্রাপথে মোটেই ঘুমাতে পারি না। অথচ যিনিই আমার পাশে থাকবেন তিনি ঘুমাবেনই। মাত্র ৬৫ মিনিটের পথ সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ। আমার পাশে একজন চাষী। সাথে তার ছাগল। ড্রাইভার পারলে বাস উড়িয়ে নিয়ে যায়। তিনি নির্বিকারভাবে ঘুমিয়ে পড়লেন। বাগড়া দিলো ছাগল। যখনি হার্ডব্রেক মারা হয়, বেয়াড়া ছাগল ভয় পেয়ে তার লুঙ্গির ভিতর আশ্রয় নিতে যায়। আর উনার ঘুম ভাঙে। লুঙ্গি মালকোচা দিয়েও কাজ হলো না। শেষে তার আদেশমার্কা অনুরোধে আমার উপর পড়ল ছাগল সামলানোর কাজ।

প্লেনে উঠেছি প্রথমবারের মতো। রাত-ভোর তিনটার সময় ছাড়ল। আগের দিন ঘুমাইনি, ভাবলাম এইবার ঘুম দিয়ে আকাশযাত্রা শেষ হবে। কিন্তু না। যথারীতি তিনজনের সিটে মাঝসিট আমার। ডানপাশে বৌকে-দেশে-রেখে-যাওয়া কাতারপ্রবাসী, বামপাশে নববধূ, বিলাত যাচ্ছেন প্রথমবারের মতো হাসব্যান্ডের কাছে। দুজনেই সেই ঘুম দিলেন। একজন বৌয়ের নাম ধরে ডাকাডাকি করলেন কিছু সময়। তারপর আমার দিকে কাত হয়ে নাক ডাকাতে লাগলেন। তাতেও কি আর হয়? তার হা-করা মুখ থেকে লালা পড়ছে আমার টিশ্যু-দিয়ে-ঢাকা ঘাড়ে। সরবার উপায় নাই, ওদিকে নববধূ সারাটা পথ ঘুমের মধ্যে কাঁদলেন। দোহা গিয়ে তবে ছুটি।

মাত্র আজকে মেট্রো রেলে, ১৫ মিনিটেরও পথ না, একজন ঘুমিয়ে পড়লেন আমার পাশে। ৫ মিনিটের মাথায় তার মাথা আমার ঘাড়ে পড়ল। পরের স্টেশনে নামব। আমি হাল্কা ধাক্কা দিয়ে ভাবলাম উঠে যাবে। আমি ভাবতে থাকলাম আর আমার স্টেশনও চলে গেল। কাজকর্ম তেমন ছিল না। ভাবলাম শেষ দেখে নিবো। দুই স্টেশন পরে গিয়ে দিবানিদ্রা ভাঙলো। মহিলা পেশায় ট্রেনেরই ড্রাইভার। চুল ঠিক করতে করতে কয়েকবার স্যরি বললেন। টানা ট্রেন চালিয়েছেন আটঘণ্টা। এইজন্য নাকি এই ঘুম। ভাগ্যিস তিনি ড্রাইভিং সিটে ছিলেন না! একসময় আমার উপর চটে গেলেন। ‘হা করে দেখছ কী? স্যরি তো বললাম। ভাগো এখন।’ সম্বিত ফিরে পেয়ে আমি উঠলাম।

আসলে তাকে বলা হয়নি, আমি মোটেই বিরক্ত হইনি। আমার খুব হিংসা হচ্ছিল। কেন আমি জার্নিতে ওভাবে যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়তে পারি না?

… …

রাহাত শাহরিয়ার

COMMENTS

error: You are not allowed to copy text, Thank you