এমন আনন্দ-বিষাদঘন—প্রকৃষ্টরূপে বরণ-নিষেধ করা রাতে আমাদেরও দেখতে, জানতে ইচ্ছে করে—‘কে কতটুকু জেগে আছে’।
কোজাগরী পূর্ণিমা / শারদ পূর্ণিমা / কৌমুদী পূর্ণিমা / কুমার পূর্ণিমা / নবান্ন পূর্ণিমা / প্রবারণা পূর্ণিমা / লক্ষ্মী পূর্ণিমায় সুরমাপারে গানআড্ডা।
শুধুমাত্র কল্পনার সুন্দর পৃথিবী নয়—বাস্তবে, যাপিত জীবনেও পৃথিবী সুন্দর হোক।
…
শারদ পূর্ণিমা উপলক্ষে জোছনাযাপন অনুষ্ঠিত হয় ৬ অক্টোবর ২০২৫। সুরমাপারে রাত ১০টা থেকে শুরু হওয়া এই গানআড্ডা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। অনানুষ্ঠানিক এ আড্ডায় মিলিত হয়েছিলেন সিলেটের কবি, সাহিত্যকর্মী, শিল্পী, সংগঠক, সংস্কৃতিকর্মী, আইনজীবী, পরিবেশকর্মী এমনকি সিলেটে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দও।
নগরীর কিনব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীর পাড়ে এই অনুষ্ঠান জোছনাপ্রেমীদের সমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অড্ডায় না ছিল কোনো অতিথি, না ছিল সারি সারি চেয়ার। সকলের স্বতস্ফূর্ত অংশগ্রহণ অনুষ্ঠানে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। সংস্কৃতিকর্মী বিমান তালুকদার ও সাংবাদিক দেবব্রত রায় দীপনের উদ্যোগে জোছনাযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয় মুর্শিদবন্দনা দিয়ে। আর শেষ হয় প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ‘আমি বাংলার গান গাই, আমি বাংলায় গান গাই’ দিয়ে। মাটিতে আসন করে বসেই গান চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
বাউল মঞ্জিল আহমদ ক্বারী আমির উদ্দিনের “বন্ধু তুমি আমার জানের জান, হৃদয়ে থাকো তুমি হৃদাকাশের চান”, “প্রাণসই সখি গো, দরদিয়া বন্ধু আমার কই”, “কে আমারে জাদু কইরাছে”, শিব্বির আহমদ শাহ আবদুল করিমের “আমি কি করিব রে ও প্রাণনাথ তুমি বিনে”, আজিজুর রহমান হাছন রাজার “সোনা বন্ধে আমারে দেওয়ানা বানাইছে”, শাহ আবদুল করিমের “আগের বাহাদুরি এখন গেল কই”, বাউল শীতন বাবু দীনহীনের “আজ মনার অন্তরে ধরল ঘুনে”, রঞ্জু কর উকিল মুন্সির “পূবালি বাতাসে বাদাম দেইখা চাইয়া থাকি আমার নি কেউ আসে”, পাগল হাসানের “ও আল্লাহ আমি এক পাপিষ্ট বান্দা”, সন্দীপন শুভ শাহ আবদুল করিমের “বন্ধু দরদিয়া রে আমি তোমায় চাই রে বন্ধু আর আমার দরদী নাই রে”, শ্রমিক সন্দ্বীপ কফিল আহমেদের “গঙ্গাবুড়ি গঙ্গাবুড়ি শোনো”, ঝলক চৌধুরী তার নিজের লেখা ও সুরারোপিত “বন্ধু আমার মনের ঘরে কোনজনা বসত করে”, বিমান তালুকদার জাহেদ আহমদের “স্বাগত জানাই”, “বুদ্ধায়ু, বুদ্ধবায়ু” গান পরিবেশন করেন। গিটারে প্রদ্যুৎ লিটন, মাউথ অরগানে বিশাল চক্রবর্তী, ঢোল ও মন্দিরায় ছিলেন দেওয়ান কাজল মনির, পথিক সুজন।
উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের সভাপতি শামসুল বাসিত শেরো, নাট্যজন আবু আজাদ, সময়পাঠ সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মনির হেলাল, নাট্যসংগঠক ও আইনজীবী অরূপ শ্যাম বাপ্পি, সাবেক সহ-সভাপতি খোয়াজ রহিম সবুজ, নাট্যকর্মী প্রলয় দে, উন্নয়নকর্মী আজিজুর রহমান, শিক্ষাব্রতী সুরঞ্জিত তালুকদার, আইনজীবী মোহাম্মদ মনির উদ্দিন, কবি রাজেশ কান্তি দাশ, সংস্কৃতিকর্মী শিব্বির আহমদ, সিলেটের সংস্কৃতি ও সমাজসেবী স্বপন মাহমুদ, বারীন্দ্র দাস, নাট্যকর্মী গৌরব চৌধুরী, ফটোগ্রাফি সোসাইটির সাবেক সম্পাদক বাপ্পী ত্রিবেদী, বাউল শীতন বাবু, নাট্যকর্মী দিবাকর সরকার শেখর, উন্নয়নকর্মী আনোয়ার হোসেন, সঙ্গীতশিল্পী সন্দীপন শুভ, সংস্কৃতিকর্মী শ্রমিক সন্দ্বীপ, নাট্যকর্মী তন্ময় নাথ তনু, আব্দুল মালিক, শ্রাবণ আচার্য্য, কবি রোদ্দুর রিফাত, যুবমৈত্রীর সাবেক সিলেট জেলা সভাপতি আবদুল্লাহ খোকন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল সিলেট জেলা আহবায়ক তানজিনা বেগম, আবির খান, মেহেদি হাসান, শিল্পী ঝলক চৌধুরী, শিল্পী অর্ণব রায়, সংগঠক আবদুল মালিক, শফিউল, মেহেক প্রমুখ।
সংবাদকর্মীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইমজার সাবেক সভাপতি বাপ্পা ঘোষ চৌধুরী, সিলেট মিররের রাজীব রাসেল, খবরের কাগজের স্টাফরিপোর্টার শাকিলা ববি, স্টাফফটোগ্রাফার মামুন হোসেন, এনটিভির আনিস রহমান, প্রথম আলোর স্টাফফটোগ্রাফার আনিস মাহমুদ, আনন্দ টিভির সিলেট প্রতিনিধি তাহের আহমদ ও ফটোসাংবাদিক রেজা রুবেল।
আয়োজনে অনেকেই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্বসময়ে এমন আয়োজন আরও বেশি করে করার প্রতি সকলেই গুরুত্বারোপ করেন। প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, সাংস্কৃতিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হলে দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে অবারিত সাংস্কৃতিক চর্চার পথ সুগম করে দিতে হবে। না হলে দেশ চললেও দেশের মানুষ অচলে পরিণত হবে।
এই প্রতিবেদনের সঙ্গে একটি ভিডিও যুক্ত করা যাচ্ছে মেঠোসুর ইউটিউবচ্যানেল সৌজন্যে। এই ভিডিওয় কোজাগরী উদযাপনের সংক্ষিপ্ত ও সম্পাদিত অংশ লক্ষ করা যায়। যারা আলোকচিত্র ও ভিডিও প্রেরণ করেছেন ধন্যবাদ সকলকে। পুরো আয়োজনে যারা সময় দিলেন ও নানাভাবে যুক্ত ছিলেন তাদেরকেও আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
কিনব্রিজে কোজাগরী
—বিমান তালুকদার অক্টোবর ২০২৫
বিমান তালুকদার রচনারাশি
- রিপ্রিন্ট রিফ্রেশিং - November 7, 2025
- কোচবিহার ও আব্বাসউদ্দীন - November 7, 2025
- দেবেশ রায়ের ফ্যাসিবাদের বিত্তান্ত - November 6, 2025

COMMENTS