পাহাড়ের দিকে উড়তেছে এইরকম এক পাখির কথা ভাবতেছি; খোলা আকাশের ঝড় আর তার ভিতর মুহূর্তে-মুহূর্তে উধাও হইতেছে পাখির ক্রম-অগ্রসরমান চিহ্ন। উড়তেছে পাখি — ডানায় নিয়া পৃথিবীর অবশেষের গল্প; কোনোখানে সমুদ্র উঠতেছে কেঁপে আর জুঁইফুল নিজেরে বিলাইতেছে সকাতরে; অপরিচিত কোনো মুসাফির নতুন শহরে আইসা ঠাঁই খুঁজতেছে দূরত্ব-মাপা বিকালের অবসাদে। সন্ধ্যায় — কীভাবে যেন পাথরের পথ শহর দখল করে। তখন পাহাড়ের দিকে উইড়া-যাওয়া পাখি কার খোঁজ করে? পাথর-কাটা ফুল? ধীরে; অবিরাম — এক বিষণ্ণ মৃত্যুর দিকে দুলতেছ তুমি; একা একা এত লোকজন নিয়া। তোমার? যেন পাখির গানে উৎসব হইয়া বাজতেছ তুমি। কেন? পাখি উড়তেছে পাহাড়ের দিকে।
পাহাড়ের কথা যখন বলতেছি তখন তুমি এইরকম একটাকিছু ভাইবাও দেখতে পারো — যেমন একটা রঙহীন অবয়বহীন সেইফ-হাউজের দিকে, লুকানো একটা আস্তানার দিকে, রাডারে কোনোদিন ধরা-না-পড়া এক বাঙ্কারের দিকে ছুইটা যাওয়ার কথা ভাবতেছি আমি। মানে পাখি। মানে তুমিও হইতে পারো; হাঁটতে হাঁটতে যার মুখ একবার দেইখাও ভুইলা গেছ কোন দুপুরবেলা — সে অথবা তার মতো কেউও হইতে পারে। পালাইতেছে কি সে? তুমি? আমি? পাথরের পথে সন্ধ্যা দখল হওয়ার আগে, অবসাদের বিকালে সব জুঁই শুকাইয়া যাওয়ার আগে, মোমের মতো গইলা-গইলা আরো রাত নামার আগে, শহরের একপাশে সমুদ্রের নিইভা যাওয়ার আগে? অতএব এইভাবে এইসব প্রতীকে ভর কইরা আমরা একে অন্যরে শুইনা যাইতে পারি। তোমার সিম্বলিজমে আমারে বাঁচাইয়া রাখবা তুমি, আমার সিম্বলিজমে তোমারে বাঁচাইয়া রাখব আমি। যেই উৎসবের গানে বাজতেছ তুমি, তার সুর হইয়া থাকতেছি আমি; দূরের কোনো লাইটহাউজে জ্বইলা উঠবে বাতি — এই আভাসে।
পাহাড়ের দিকে উইড়া-যাওয়া পাখিরে একটা জেট-প্লেনের মতো লাগে। উড়তেছে পামির মালভূমির উপর, কান্দাহার আর হেরাতের আকাশে, মসুলের অ্যান্টিক মনুমেন্টের নিঃশ্বাসে, বসরা আর কিরকুকের হাহাকারে, ফিলিস্তিনের ইন্তিফাদায়, কাশ্মিরের বরফ-জমা পাহাড়ের শাদা-অহঙ্কারে, ফেলানিরে ঘিইরা-থাকা কাঁটাতারের ফেরোশিয়াস থাবায়, সাগরের তীরে দোল-খাওয়া আইলানের নিথর শরীরে, ইয়েমেন টু সিরিয়া, আরব-বসন্তের অল্পবয়সী কবরে, ক্রিমিয়ায়, উত্তর-কোরিয়ায়; তোমার আর আমার থলে-ভর্তি নির্জনতায়, সুখ আর সুখ বাওয়া ঘাসে। পৃথিবীর আরো ভিতরে; সবখানে।
ব্যাগ গোছানোর পরে
তোমার দরজার কাছে অপেক্ষা করতেছি
চলে যেতে হবে
এই সকালে
তোমার ঘুম ভাঙাইয়া বিদায় নিতে হবে;
এইরকম এক যন্ত্রণার মুখোমুখি আমি …
আরো ভীষণ গাঢ় হইতেছে এই সকাল
বাইরে অস্থির হইয়া বাজতেছে ট্যাক্সির হর্ন
এমনিতেই এত নিঃসঙ্গ লাগতেছে আমার
একটু কাঁদব কি? মাথা ঠেকাবো কই?
অতএব ঘুম থেইকা উইঠা একটু হাসবা তুমি?
আমারে বিদায় দিবা?
আর কথা দিবা — এই পথ চাইয়া রইবা চিরদিন
আমারে ধইরা রাখবা যেন ছাড়তে চাও নাই কোনোদিন …
এই জেট-প্লেন, আমারে উড়াইয়া নিতেছে দূরে
আবার ঠিকই আসব আমি ফিরে
প্রেমিকা, এই বিদায় এত যন্ত্রণার কেন?
কত কত বার তোমারে টুকরা করছি আমি
মশকরা আর ঠাট্টায় তোমারে আঘাত করছি কত
বিশ্বাস করো, ওইসব ছিল যত মুখোশ-পরা ছল
আমি যেইখানে গেছি — তুমি ছিলা আমার ভিতর
আমার সব গানে — জ্বলো তুমি অদেখা আগুন
তোমার চেয়ে-থাকা পথে — একদিন ফিইরা আসব আমি
অতএব ঘুম থেইকা উইঠা একটু হাসবা তুমি?
আমারে বিদায় দিবা?
আর কথা দিবা — এই পথ চাইয়া রইবা চিরদিন
আমারে ধইরা রাখবা যেন ছাড়তে চাও নাই কোনোদিন …
এই জেট-প্লেন, আমারে উড়াইয়া নিতেছে দূরে
আবার ঠিকই আসব আমি ফিরে
প্রেমিকা, এই বিদায় এত যন্ত্রণার কেন?
[মূল গান : লিভিং অন অ্যা জেট-প্লেন (Leaving on a Jet Plane)।। রিটেন অ্যান্ড সাং বাই জন ডেনভার]
তারপর — এইভাবে; তবুও ফিইরা আসার কথা থাকে। একটা দরজা দেখা গেলে — যার পাশে বইসা থাকো তুমি অথবা অগুন্তি লাশ আর আর্তনাদের ডার্ক ফ্রিঞ্জে এইরকম এক দৃশ্য আবছাভাবে ঝুইলা থাকতে দেখা গেলেও — এই ফিইরা আসার গান তোমারে শুনাইতে পারা যায়। তোমারে শুনাইয়া যাব আমি। আমারে শুনাইয়া যাবা তুমি।
https://youtu.be/xFEhzS0hYco
… …
- জন ডেনভার : তবুও শুনাইয়া যাব ফিইরা আসার গান || হাসান শাহরিয়ার - December 31, 2017
- রিলোডিং শিরোনামহীন অ্যান্ড জাদুকর রিঅ্যাওয়্যাইকেন || হাসান শাহরিয়ার - December 9, 2017
- কমিউনিকেশনের কলকাকলিমুখর করুণ দুনিয়ায় || হাসান শাহরিয়ার - November 26, 2017
COMMENTS